নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দারিদ্রজয়ের বিশ্বস্বীকৃতি

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৩

দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ এক অনুকরণীয় নাম। এত দিন সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মুখ থেকে কথাটি শোনা গেলেও এবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলল বহুজাতিক সংস্থা বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটি বলেছে, সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশে হতদরিদ্রের হার ১২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সংখ্যায় বললে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দুই কোটি ৮০ লাখ অতি দরিদ্র এখন। অথচ ২০০৫ সালে এ হার ছিল ৪৩.৩ শতাংশ। অর্থাত্ প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশি ছিল অতি দরিদ্র। ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশে এখন অতি দারিদ্র্যের হার বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলনের চেয়ে আরো কম। এই হার ১১.২ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে সরকারের নেওয়া সমন্বিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অতি দরিদ্রের হার কমে আসার মূল কারণ। সরকার গত ছয় বছরে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের আওতায় নেওয়া কর্মসূচি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে সড়ক-নেটওয়ার্কের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শহর কি গ্রামে সব ক্ষেত্রে সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে সাধারণ জনগণ। এখন কৃষক তার উত্পাদিত পণ্য খুব সহজে শহরে আনতে পারছে। এসব কারণে অতি দরিদ্রের হার কমে এসেছে। লক্ষণীয় বিষয় যে, কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে অতি দরিদ্রের হার কমেছে। গত বছর অর্থাত্ ২০১৫ সালে এ হার ছিল ১৩.৮ শতাংশ। আগের বছর ছিল ১৪.৭। তার আগের বছর ২০১৩ সালে অতি দরিদ্রের হার ছিল ১৫.৫ শতাংশ। এর আগের বছর ছিল ১৬.৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ এখন যে হারে মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ শতাংশের নিচে অতি দরিদ্রের হার নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়লে দারিদ্র্য কমে ১.৫ শতাংশ। বাংলাদেশ যদি প্রতিবছর ৮.৮ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, তাহলে ২০৩০ সালে অতি দরিদ্রের হার ২.৯৬ শতাংশে নেমে আসবে। আশা জাগার মতো তথ্য যে, গেলো দুই যুগে দেশে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় তিন কোটি। বিশ্বে যে হারে দারিদ্র্য কমেছে, বাংলাদেশে কমেছে তার চেয়ে দ্রুতগতিতে। এ তথ্য বিশ্ব ব্যাংকের। তারপরও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ৮ নম্বরে বাংলাদেশ। সরকার বলছে, দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো কমাতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান তৈরির বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রতি ১০ জনের আট জন অতিদরিদ্র মানুষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশে মাত্র সাড়ে চার দশকে দারিদ্র্য নামিয়ে এনেছে আট জনের এক জনে। বিশ্ব ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে দেশে এখন অতি দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর দরিদ্র মানুষের যে সংখ্যাটা নামিয়ে আনা গেছে অর্ধেকেরও নিচে। এই সময়ে পাশের দেশ ভারত তো বটেই। পুরো বিশ্বের চেয়েই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে বেশি দ্রুতহারে। শুধু গেল পাঁচ বছরেই দেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে ৮০ লাখ। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দরিদ্র মানুষের বাস এখন আফ্রিকার দেশগুলোতে। ১৯৯০ সালেও যা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায়। তারপরেও অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ দেশের চারটিই দক্ষিণ এশিয়াতে। যে তালিকায় প্রথম নামই ভারতের। প্রায় একশ কোটি মানুষের দেশটির ২২ কোটি ৪০ লাখই অতিদরিদ্র। এ হিসাবে আমরাতো পুলকিত হতেই পারি।
বাংলাদেশের সামনে অনেক সম্ভাবনা। উন্নয়নের ধারাবাহিতকা চলতে থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব। কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি অপরিহার্য। গোল্ডম্যান-স্যাকস ২০০৫ সালেই বাংলাদেশকে উদীয়মান ১১টি দেশের নেক্সট ইলেভেন তালিকায় রেখেছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বিনিয়োগের জন্য পূর্ব এশিয়া খুবই ব্যয়বহুল, পাকিস্তান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারত অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। আফ্রিকার দেশগুলোতে উত্পাদনক্ষমতা কম। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের যাওয়ার জায়গা এই বাংলাদেশই। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের সামনে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগানোর সুযোগ অসীম সময়ের জন্য থাকবে না। দেরি করলে ‘নেক্সট ইলেভেনের’ অন্য ১০টি দেশ তা দখল করে নেবে। সুতরাং বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মূল বিষয় সুশাসন। বাংলাদেশে সুশাসনের অভাবই সবচেয়ে প্রকট। এদিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি আরো একটি ঝুঁকি দূর করতে হবে। এই ঝুঁকি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাগুলো দূর করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সে সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.