![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘এত স্বাধীনতা আপনি আপনার শত্রুদের দিয়েছেন! ওরা একদিন আপনার ঘাড়ে চড়ে বসবে’—১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনের সময় এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। এ সতর্ক বার্তা শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যই নয়, বাংলাদেশের জন্যও ছিল। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক উদারতার সুযোগে তাঁর শত্রু ও স্বাধীনতা-বিরোধীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা করেছিলেন কাস্ত্রো। দুই বছরের মধ্যে সে আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিল।
আলজিয়ার্সে ন্যাম সম্মেলনের সময় স্থানীয় প্রাসাদে বঙ্গবন্ধু ও ফিদেল কাস্ত্রোর বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে অনেক ইস্যুর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয় এসেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই উদ্বেগকে তেমন গুরুত্ব দেননি। ফিদেল কাস্ত্রো অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কাস্ত্রো বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু-কাস্ত্রোর বন্ধুত্বও ছিল বেশ জোরালো।
১৯৭৩ সালে ভুট্টো ন্যামের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আরেকটি বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করেন। আলজিয়ার্সে ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় জোরালোভাবে বলেন, তিনি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্ব বলে কিছু মানেননি। তাঁর কাছে বিশ্বে দুটি গোষ্ঠী আছে। এর একটি শোষক, অন্যটি শোষিত গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্যে কাস্ত্রোর মতো নেতারা তাঁদের অবস্থানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানের বেশ নৈকট্য আছে বলে মনে করলেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু ও কাস্ত্রো এবং বাংলাদেশ ও কিউবার মধ্যে আরো নৈকট্য সৃষ্টি হলো।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক শেষে কাস্ত্রো তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, তিনি হিমালয় দেখেননি; কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছেন। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্বতমালা হিমালয়েরই সমান। বঙ্গবুন্ধকে দেখা তাই তাঁর কাছে হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই।
বঙ্গবন্ধু-কাস্ত্রোর নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় রপ্তানি চুক্তি থেকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে কিউবা তার দেশের চিনি বিক্রি করতে পারছিল না। অন্যদিকে বাংলাদেশেরও পাট রপ্তানি করা প্রয়োজন ছিল। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে কিউবায় পাটের ব্যাগ রপ্তানির বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ওই চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়। আজ কেউ জোর দিয়ে বলে না যে ওই অভিযোগ মিথ্যা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার ২০১৩ সালে ফিদেল কাস্ত্রোকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’য় ভূষিত করে।
©somewhere in net ltd.