![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিজয়ের ৪৫ বছরে আমাদের প্রাপ্তি কোনো অংশে কম নয়। তবে প্রত্যাশা আমাদের অনেক। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি কিছুটা হলেও কম। এই দীর্ঘ পথ চলায় আমাদের নানা চড়াই-উতরাইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশের অর্জন আরো বেগবান করতে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রায় সাড়ে চার দশকে রাজনৈতিকভাবে আমাদের আরো ভালো করা উচিত ছিল। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়নি। অর্থনৈতিক সূচকের ভিত্তিতে আমরা ২০২১ সালে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালে উন্নত আয়ের দেশ হবো। মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে আমরা সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে সক্ষম হবো। মধ্যম এবং উন্নত আয়ের দেশের স্বীকৃতি নির্ভর করে বিশ্বব্যাংকের হিসাবের উপর। কেননা তারা ডলারের হিসাবে তা নির্দেশ করে। মাথাপিছু আয় এতো হলে মধ্যম আয় এবং এতো হলে উন্নত দেশ। দেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে, তাতে আমরা একসময় উন্নত দেশ হবো। কারণ কেউ না চাইলেও দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকসমূহ খুবই সক্রিয়। কেবল আইন-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বজায় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ বেগবান হবে। আমাদের এই দেশ সত্যিকার অর্থে অনেকগুলো আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা নিয়ে স্বাধীন হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। কিন্তু এই সোনার বাংলা ডলারের হিসাবে চিন্তা করেননি বঙ্গবন্ধু। তাঁর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা এমন হবে যেখানে মানুষের কোনো অভাব থাকবে না। মানুষে মানুষে কোনো দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং বিভেদ থাকবে না। একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং মুসলমানসহ সকল ধর্মের লোকের পারস্পরিক সহ-অবস্থান থাকবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান থাকবে না। আমাদের এই ভূ-খণ্ডে বিশেষ করে ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করার ইতিহাস দীর্ঘদিন থেকেই ছিল। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এর অবসান ঘটবে। এখানে একে অপরের বিরোধী মতামত গ্রহণ করে আমরা একসঙ্গে থাকবো। আমাদের কৃষ্টি-কালচারগত বৈচিত্র্য আমরা রক্ষা করবো। এসব বিবেচনায় আমাদের এখনো অনেক কাজ করার বাকি আছে। কাজেই ধর্মীয়ভাবে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার সম্মিলন ঘটেনি। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ। আমরা আশা করেছিলাম দ্বি-জাতিতত্ত্ব থেকে বের হয়ে এসে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্র্রিষ্টান এবং মুসলমান সবাই মিলে একটি দেশ গড়বো। আমাদের মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ডলার হতে সময় লাগুক, কিন্তু আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাবো। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমছে না। কিন্তু বলা হচ্ছে একসময় তা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ইতোমধ্যে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। আমরা এখন চরম বৈষম্যের একটি দেশের দিকে চলে যাওয়ার আশঙ্কার পর্যায়ে আছি। এসব বিষয়ে আমাদের অতিদ্রুত নজর দিতে হবে। আয়ের বৈষম্য দূর করা জরুরি। জাতির জনকের সোনার বাংলার স্বপ্ন ছিল সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকা। আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যে মেলবন্ধন রয়েছে, তা সুদৃঢ় করেই সোনার বাংলা গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অনুসারে বলা হয়, একজনও যদি ন্যায্য কথা বলে তবে তা মেনে নেওয়ার মাঝেই গণতন্ত্রের সার্থকতা নিহিত। গণতন্ত্র বলতে আমরা সংখ্যায়, দল ও গোষ্ঠীগতভাবে বেশি এমন বোঝায় না। ন্যায্য কথা গায়ের জোর দিয়ে বললে হবে না। কিন্তু আমাদের এখানে গণতন্ত্র বলতে বোঝায় বেশি সংখ্যক লোক যেদিকে, সেদিকেই ধাবমান হওয়া। অনেকটা হ্যাঁ বা না ভোটের মত। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেকটি কাজের দর্শন ছিল। তিনি দার্শনিক পথে অগ্রসর হতেন।
বর্তমানে আমাদের এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে জঙ্গিবাদ। যদিও জঙ্গিবাদ আমরা নানাভাবে মোকাবিলা করছি। ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ রুখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে জঙ্গিবাদ এভাবে শেষ হবে না। এটা হয় তো সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পথে অগ্রসর হতে হবে। চলতি মাসের গত তিন-চারদিনে অনেকেরই খোঁজ মিলছে না। হতে পারে তারা আইএসে যোগদানের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশে চলে গেছে। কিংবা তারা দেশের কোনো জায়গায় ফের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের এসব তত্পরতা রুখবে। কিন্তু তা হবে ক্ষণিকের জন্য, দীর্ঘদিনের জন্য নয়। যারা জঙ্গিবাদে লিপ্ত তারা দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা থেকে এসব করছে। তারা যা করছে তা ভ্রান্ত। কিন্তু তাদেরও একটি দর্শন রয়েছে। তারা সারাবিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু তাদের মাথায় গুলি করে ভ্রান্ত দর্শন দূর করা যাবে না। এর জন্য দরকার দর্শনের। দার্শনিক সংকট দার্শনিক মতবাদ দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। আমরা ভেবেছিলাম জঙ্গিবাদের উত্স কেবল ক্বওমী মাদ্রাসা। যেখানে প্রধানত এতিমরা পড়াশুনা করে। কিন্তু হলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের নতুন করে ভাবালো। ক্বওমী মাদ্রাসার প্রধান ভাষা হচ্ছে উর্দু। সেখানে যদি আরবি ভাষা শিখে তারা ভালোভাবে আরবি বলতে পারে তাহলে তাদেরকে কাজে লাগানো যেতো। আরবিতে তারা যা পড়ছে পড়ুক, তার সঙ্গে টেকনিক্যাল জ্ঞান দেয়া হোক। তাহলে তারা সৌদি আরবে গিয়ে কাজ করতে পারে। ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা খুব সহজ। যারা ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়ছে তারা বাঙালিত্ব ধারণ করে না। আবার বড়লোকদের সন্তানরাও এক প্রকার এতিম। কারণ তাদের সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক শিথিল। দামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সত্ত্বেও তারা আমাদের কৃষ্টি-কালচার ধারণ করছে না। যারা এতিমখানায় রয়েছে, তাদের বাবা-মা তো নেই। আর যারা ধনীদের সন্তান, বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও তারা এতিম। কাজেই আমাদের বাঙালির যে ঐতিহ্য একে অপরের পাশে থাকা সেটা তাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তবে ধর্মভীরু না হয়ে থাকা লোকের সংখ্যা কম। বিশেষ করে ধর্মভীরু লোক যদি নিরক্ষর হয়, কোনো শিক্ষার আলো যদি না থাকে, তবে সে শেষপর্যন্ত ধর্মান্ধ হতে বাধ্য। কারণ নানা উস্কানিমূূলক কথাবার্তা যা বলা হবে, তাতেই সে প্রলুব্ধ হবে। কাজেই ধর্মভীরুর সঙ্গে নিরক্ষরতা যোগ হলে সে ধর্মান্ধে পরিণত হবে। যারা দুনিয়াতে সাম্প্রদায়িক হামলা, দাঙ্গা ছড়াচ্ছে, তাদেরও একটি দর্শন রয়েছে। তা হলো সালাফি মতবাদ। সিরিয়া, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশেও খ্রিস্টান, ইহুদিরা মারা যাচ্ছে না, মুসলমানরাই মারা যাচ্ছে। আমাদের ইসলাম ধর্মের অনেক আকীদা রয়েছে, অনুশীলনগত ভিন্নতা রয়েছে। সালাফি মতবাদে বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে সামান্যতম বিচ্যুতি গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের ধর্মবিরোধ নিষ্পত্তি হবে হত্যার মাধ্যমে। শিয়া, সুন্নী, সালাফিয়া নামে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ রয়েছে। কাজেই ধর্মীয় উন্মাদনা বিশেষ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। তাহলে একে মোকাবিলা করা হবে কিভাবে? এজন্য আবার সেই দর্শনেই ফিরে যেতে হবে। পৃথিবীতে অনেক দার্শনিক রয়েছেন, যারা ধর্মান্ধতা এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ধর্মীয় সন্ত্রাস দমন করা যাবে কিভাবে? ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে রেসকোর্স ময়দানে প্রথম বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মুসলমান, আমি মানুষ।’ তাঁর এই বক্তব্যকে আমরা যদি একটি দার্শনিক মতবাদ হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে ধর্মীয় উন্মাদনা অনেকাংশেই কমে যাবে। আফগানিস্তান, তুর্কিসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এখানে লোকজন এসেছে। এখানে ইসলামের দাওয়াত দিতে এসেছিলেন সূফি সাধক, শাহজালাল, খান জাহান আলী, বায়েজিদ বোস্তামী। তারা পীর, ফকির, উদার মন-মানসিকতার লোক ছিলেন। তারা ইসলামের একেবারেই কট্টর কথাবার্তা বলেননি। যার কারণে আমাদের চেহারা লেবাস আরব দেশের মত নয়। বর্তমানে অনেক কিছুই দেখা যায়, যা কোনো বাঙালিত্বের লেবাস নয়। হাজার হাজার বছর আগে আমরা মানুষ ছিলাম। প্রথম মানুষ ছিলাম, পরে বাঙালি হয়েছি, অতি সামান্যকালে মুসলমান হয়েছি। সেটাও আবার সূফিবাদী মুসলমান।
কাজেই ‘মানুষ, বাঙালি, মুসলমান’- এই তিনটি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানিকৃত সালাফি মতবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব। কেবল র্যাব, সোয়াত, কোবরা দিয়ে এইসব দমন করা যাবে না। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সাম্যবাদ কায়েম করার নামে আমাদের এখানে লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। চরম অবৈজ্ঞানিক লোকদের দ্বারা হাজার হাজার তরুণদের জীবন শেষ হতে দেখেছি। শেষ পর্যন্ত কোনোটিই টেকেনি। এখনো ভারতের ঝাড়খণ্ডে নকশাল কিংবা মাওবাদী বাহিনী একই কাজ করে যাচ্ছে। নকশাল এবং মাওবাদীদের সাথে আইএস জঙ্গিদের পার্থক্য কোথায়? নকশাল এবং মাওবাদীদের বলে ধর্ম বলতে কিছু নেই। আর আইএস জঙ্গি বলে ধর্মই সব। কাজেই মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা সবসময়ই ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন হবে। কাজেই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তত্পরতার পাশাপাশি আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা বাঙালি আমরা মানুষ- এই দর্শনে বিশ্বাসী হতে হবে। আমরা যদি বাঙালি চাল-চলন, আচার-বিশ্বাস ধারণ করি তাহলে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব আমাদের মাঝে আসতে পারবে না। আমাদের এই অঞ্চলে শিয়া ও সুন্নির বিভেদ কোনোদিনই ছিল না। আমরা কোনোদিন এই বিভেদ চিন্তা করিনি। হিন্দু এবং মুসলমানদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সবাই অংশগ্রহণ করি। কিন্তু এখন এগুলোর মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করা হচ্ছে। আমি যখন কোনো কিছু শ্রেষ্ঠ বলবো তার মানে অন্যটি নিকৃষ্ট। কাজেই আমরা আবার যদি বাঙালির কৃষ্টি-কালচারে ফিরে যাই, তাহলে আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারবো। আমাদের টেকসই উন্নয়ন হবে তখনই, যখন ডলারের হিসাবের সঙ্গে মন-মানসিকতার উন্নয়ন হবে। গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরিমূলক শিক্ষার উপর জোর দেয়া দরকার। আয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে সুষম আয়ের দিকে গুরুত্বারোপ করা জরুরি। মানুষ যখন বঞ্চনার শিকার তখন বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হবে। কাজেই আজকে আমাদেরকে সেই দর্শনে পৌঁছতে হবে, যাতে করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দ্বন্দ্ব, সংঘাত, হানাহানিসহ ধর্মীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে পারি। যাতে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে পারি।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৯
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আমরা বাঙালি আমরা মানুষ- এই দর্শনে বিশ্বাসী হতে হবে।
এই লেখাটা আমরা এভাবে লিখতে পারতেন- আমরা বাঙালি আমরা মানুষ- পঞ্চিম বঙ্গ আমাদের, আসাম, কোলকাতা আমাদের- এই দর্শনে বিশ্বাসী হতে হবে।
কারণ সেখানেও বাঙালি ও তার পূর্বপুরুষের বাসস্থান।