নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরাপত্তা ইস্যু

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫০

বাংলা ভাষায় একটা প্রচলিত কথা আছে, ‘যায় দিন ভালো’, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মনে সব সময় এক ধরনের অজানা শঙ্কা কাজ করে। তাই আগামী দিনের কথা শুনতে মানুষ ভালোবাসে। একসময় ইংরেজ জাতি প্রায় সারা বিশ্ব শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করত। এত দিনে তাদের অনেক রেখাচিহ্ন মুছে গেলেও দিন, মাস, বছর গণনায় পৃথিবীব্যাপী ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকার কর্তৃত্ব এখনো বহাল তবিয়তে বজায় আছে। তাই বছর ঘুরে ২০১৬ পেরিয়ে ২০১৭ সালে পদার্পণের প্রারম্ভে নতুন বছরকে মহা ধুমধামে স্বাগত জানানোর সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটের কারণে মানুষের ভাবনায় আসছে সবে শুরু হওয়া বছরটি কেমন যাবে।
আধুনিক যুগের চরম উৎকর্ষে বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লবের জোয়ার মানুষের জন্য প্রতিটি আগামী দিনই বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করলেও নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন-পুরনো চ্যালেঞ্জ ব্যক্তিমানুষ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রতিনিয়তই শঙ্কায় ফেলছে। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় মুখ্য বিবেচনায় আসছে একটা নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকলে মানুষের অফুরন্ত শক্তির সম্মিলিত প্রয়াস দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেবে, সঙ্গে ঘটবে ব্যক্তিমানুষের উন্নতি। তাই প্রতিটি রাষ্ট্র পরিচালকই নিজ দেশের জন্য শান্তিময় ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে একলা চলার দিন শেষ। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যুদ্ধবিগ্রহ, সংঘাত, সংঘর্ষের প্রভাব ও প্রতিফলন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তাই ২০১৬ সালের বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ২০১৭ কেমন যেতে পারে তার আগাম বিশ্লেষণ সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, উগ্র ইসলামিস্ট জঙ্গিবাদ কর্তৃক সৃষ্ট নিরাপত্তা সংকটের জের ধরে অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের পাল্টা অ্যাকশন-রিঅ্যাকশনে বিগত কয়েক বছরের মতো ২০১৬ সালেও মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া ও ইরাকে। সিরিয়ার দুই কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে এযাবৎ তিন লাখের অধিক, কোনো কোনো সূত্র মতে পাঁচ লাখ মানুষের জীবন গেছে, যার ভেতর প্রায় এক লাখ বেসামরিক মানুষ। এর মধ্যে ১৫ হাজার শিশু ও ১২ হাজার নারী রয়েছেন। ৫০ লাখ মানুষ দেশ ত্যাগ করে শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছে। দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরো ৬৫ লাখ মানুষ। ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরেছে আরো কয়েক হাজার। ইরাকে প্রতিনিয়তই বোমার বিস্ফোরণে শত শত নিরীহ মানুষের জীবন যাচ্ছে। মুসলমান তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ সমর্থনে ৬৮ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েল কর্তৃক অবৈধ দখলদারি, শাসন, নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্যান্য বছরের মতো ২০১৬ সালেও ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখে। নতুন বছরেও ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কোনো ভালো খবর নেই। ২০১৭ সালেও পশ্চিম তীরে নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের রাশ টেনে ধরে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। গত আট বছর প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রশাসন নতুন বসতি স্থাপন ঠেকিয়ে রাখতে না পারলেও অন্যান্য ইস্যুতে কিছুটা হলেও একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। তবে নতুন বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের সব অবৈধ ও অপকর্মের যে কট্টর সমর্থক হবেন তা এরই মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের নতুন বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেটো প্রয়োগের আহ্বান জানান। কিন্তু ওবামা প্রশাসন ভেটো না দিয়ে ভোট দানে বিরত থাকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। আর এতেই বেজায় চটেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি দেখে নেবেন এবং প্রয়োজন হলে জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামো ভেঙে দেবেন। ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাম ঘোষণা করেছেন ডেভিড ফ্রাইডম্যানের, যিনি ইসরায়েলের একজন কট্টর সমর্থক। সুতরাং ২০১৭ ও তার পরবর্তী সময়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের পথ আরো জটিল হবে। হতে পারে ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থী হামাস গ্রুপ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে ২০০৮ ও ২০১২ সালের মতো আবার ইসরায়েল সর্বাত্মক সেনা অভিযান চালাবে। তাতে আগের মতো ফিলিস্তিনের নারী-শিশুসহ বেসামরিক লোকজন বেঘোরে প্রাণ হারাবে। এটাকেই পুঁজি করে আইএস-আল-কায়েদাসহ এশিয়া আফ্রিকার জঙ্গি সংগঠনগুলো বিশ্বব্যাপী মুসলমান তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার অতিরিক্ত সুযোগ পাবে। ফলে জঙ্গিবাদের আরো বিস্তার ঘটবে। ইউরোপ ও আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য জঙ্গি আক্রমণের ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পাবে।
নতুন বছরে সিরিয়া-ইরাক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখনো সঠিকভাবে বলা না গেলেও খুব একটা সুখবর দেওয়া যাচ্ছে না। সিরিয়া-ইরাকে আইএসকে কেন্দ্র করে এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের ক্ষমতায় থাকা না থাকা নিয়ে দুই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এই দুই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন আসাদকে হটানোর নীতিতে জোর দিলে সিরিয়ায় যুদ্ধের তীব্রতা বাড়বে। বর্তমানে সিরিয়া ও ইরাকে যথাক্রমে রাশিয়া ও সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর যৌথ অভিযান ও ইরাকের সম্মিলিত বাহিনী যেভাবে আইএসকে পিছু হটাতে পারছে তা ব্যাহত হবে এবং আইএস আবার পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন যদি রাশিয়ার কৌশল মেনে আসাদকে ক্ষমতায় রেখে আইএসকে পরাজিত করতে চায়, তাহলে ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ সিরিয়া ও ইরাক থেকে আইএস উত্খাত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সিরিয়ার মতো আইএসের নতুন ভূখণ্ডের জন্য নজর পড়বে লিবিয়ার দিকে।
২০১৭ সালের মধ্যভাগে বা শেষ দিকে আইএসের শক্তি খণ্ডিত এবং আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তখন আইএসের বড় একটি অংশ আফগানিস্তানে চলে আসার সম্ভাবনা আছে। তাতে নতুন বছরে আফগানিস্তানের ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ গৃহযুদ্ধের অন্যতম উপদল তালেবান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ সব রকমের সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছে পাকিস্তান। উদ্দেশ্য, কট্টর ইসলামিস্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে পারলে আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। আঞ্চলিক ও বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূরাজনীতির খেলায় দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান, যার থেকে অদূর ভবিষ্যতে বের হওয়া হবে বড় দুরূহ ও কঠিন চ্যালেঞ্জিং কাজ। উপমহাদেশের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায় ভারতের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি জঙ্গিদের নাশকতামূলক আগ্রাসী কর্মকাণ্ড এবং কাশ্মীর পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সীমান্ত ২০১৬ সালের বছরজুড়েই ছিল সংঘাতময়। সীমান্ত এলাকায় সামরিক-বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আফগানিস্তান ইস্যুতে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এবং কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে ভারত স্থিতিশীল করতে না পারলে আগামী বছরগুলোয়ও ভারত-পাকিস্তান উভয়কেই নিরাপত্তা ইস্যুতে অস্বস্তিতে দিন কাটাতে হবে। তবে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা আগামী দুই-আড়াই বছরের মধ্যে অন্তত কম হলেও পাকিস্তানের মতো চরম উগ্রবাদী রাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকায় ধর্মীয় উন্মাদনাবশত তার অপরিণামদর্শী ব্যবহারের আশঙ্কা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাড়া করে ফিরবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও উন্নয়নের চলতি ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগামী দিনেও আগের মতোই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে চীন-ভারত উভয়ের সঙ্গে একই সময়ে গঠনমূলক ও কার্যকর অংশীদারির সম্পর্ক বজায় রাখা। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনকে ঘিরে ফেলার নীতিতে এ অঞ্চলের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। কারো পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। নৌবাহিনীতে চীনের তৈরি দুটি সাবমেরিনের সংযোজন সমুদ্র সম্পদের নিরাপত্তায় বাড়তি ভূমিকা রাখবে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বড় হুমকি জঙ্গিবাদ দমনে ২০১৬ সালের শেষ ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটতে পারবে না। তবে জঙ্গি শেষ হয়ে গেছে—এমন ধারণা আগামী দিনের জন্য আত্মঘাতী হবে। গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় নারী জঙ্গিদের আত্মঘাতী হওয়ার মধ্য দিয়ে আভাস পাওয়া যায় ২০১৭ সালের তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। তবে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক পক্ষকে দেশের মানুষ ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করায় জঙ্গিরা আগামী দিনে বাংলাদেশে সুবিধা করতে পারবে না বলে আমরা নতুন বছরের শুরুতে প্রত্যাশা করতে পারি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.