নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

৫ জানুয়ারি আজ

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৯

৫ জানুয়ারি। তিন বছর আগে ২০১৪ সালে এই দিনে জাতিকে চরম এক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছিল। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল জাতি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট। এই জোট একদিকে আলোচনা বয়কট, নির্বাচন বয়কট আর অন্যদিকে গৃহযুদ্ধ বাধানোর হীন উদ্দেশ্যে পেট্রলবোমা আর আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ মারা ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করার রাজনীতি সামনে এনে দেশকে চরম অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। গণতন্ত্রবিরোধী অবৈধ শক্তি কবে কখন ক্ষমতায় আসবে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এটাই সত্য, একদিকে ১২৩ জন নিরীহ মানুষের জীবনের মূল্য আর অন্যদিকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখা সত্ত্বেও জাতি গণতন্ত্র ও সংবিধানবিরোধী ওই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছিল।
বাস্তবে ওই চ্যালেঞ্জটা চরম মূল্য দিয়ে মোকাবেলা করতে জাতি সক্ষম হয়েছিল বলেই ২০১৬ সালে জাতিকে রাজনৈতিক অরাজকতা, অনিশ্চয়তা, হানাহানি, রক্তারক্তির মধ্যে পড়তে হয় নাই। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সেই পাকিস্তানি আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো ক্যালেন্ডার ইয়ার গেছে, তার মধ্যে বিগত বছরটা ছিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সবদিক থেকে অন্য রকম। এমন বছর আমাদের হয়তো পাওয়া যাবে সেখানে রাজনৈতিক হানাহানি রক্তারক্তি হয়নি, কিন্তু তখন ছিল সামরিক শাসন। রাজনীতি ছিল ক্যান্টনম্যন্টে বন্দি। সামরিক শাসনের ফরমান দিয়ে চলত দেশ। কিন্তু ফেলে আসা বছরটির মূল্যায়ন করে নতুন বছরে এমনটাই বলতে হয় যে, এই প্রথম একটি বছর গেল, যা দেখিয়ে দিয়ে গেল অনিশ্চয়তা অরাজকতা বাংলাদেশের বিধিলিপি নয়। সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্র বজায় রেখে বাংলাদেশ সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে।
বিগত বছর সম্পর্কে এমন এক মূল্যায়ন সামনে নিয়ে ইংরেজি বছরের প্রথম কলামে কী লেখব যখন ভাবছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দৈনিক পত্রিকা খুলে ধরতে হলো। লক্ষ করলাম, নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশের প্রধান তিনটি (যদিও তিন নম্বর দলটি জনসমর্থন বিচারে ছোট) দলের প্রধান নেতা ভাষণ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন ২২তম আন্তর্জাতিক মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ভাষণ দিয়েছেন যথাক্রমে ছাত্রদল এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। বছরের শুরুর দিনে পাশাপাশি তিন দলের প্রধান তিন নেতার বক্তব্য পড়তে পারা দেশবাসী বিশেষত যে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকের জন্য ইন্টারেস্টিং হতে বাধ্য।
প্রভাতই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে- প্রবাদটির বিন্দুমাত্র যদি সত্য হয়, তবে বর্ষ শুরুর দিনের ওই তিন ভাষণের ভেতর দিয়ে অনুমান করা সম্ভব হবে আগামী বছরটা এই তিন দলের জন্য কেমন যাবে? আর এই তিন দলের কর্মকাণ্ডই যেহেতু দেশের রাজনীতির গতিনির্ধারক, তাই রাজনীতির গতিপ্রকৃতির আগাম সঙ্কেতও উল্লিখিত তিন ভাষণ থেকে পাওয়া সম্ভব। তবে রাজনীতির গতিধারা তো কখনও গৎবাঁধা পথে চলে না। এখানে থাকে পূর্বে-অনির্ধারিত আকস্মিক ছোট-বড় সব ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত। সেই দিকটি বিবেচনায় রেখেই তিন দলের তিন প্রধান নেতার ভাষণ নিয়ে আলোচনায় যাওয়া হলো। এখানে প্রথমেই বলে রাখি, আলোচনার সুবিধার জন্য তিন নম্বর দল থেকে এক নম্বর দলে যাওয়া হবে। প্রথমে থাকবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ভাষণ নিয়ে আলোচনা, মাঝে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আর সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ভাষণে বলেন যে, গত তিনটি সংসদ নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে করার কারণে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচন জাতীয় পার্টি এককভাবে করবে। আগামী সংসদ নির্বাচন হচ্ছে হয়তো তার শেষ নির্বাচন। ‘আমাকে বাঁচতে হলে জাতীয় পার্টিকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে।’ প্রথমেই তিনি বলেছেন ভুল। যদি নির্বাচন না করতেন এবং ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে না থাকতেন, তবে নির্ঘাত এখন থাকতেন জেলে। তাই এই ভাষণের সঙ্গে মিলিয়ে এটা বিবেচনায় নিতে হবে যে, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসেন। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বক্তৃতা দিতে উঠলে তারা দুজন তোপের মুখে পড়েন। এরশাদের মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়টি নিয়ে তখন হট্টগোল শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এরশাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে রওশন এরশাদ বলেন, আপনারা চিন্তা করবেন না। মামলা প্রত্যাহার হবে।
প্রকৃত বিচারে মামলার বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে রেখেই সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ভাষণকে বিবেচনায় নিতে হবে। আলাদা নির্বাচন করে যে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে না, এটা পরিষ্কার। আর ক্ষমতার সঙ্গে না থাকলে এরশাদ যে মামলার বিচারে শাস্তির মধ্যে পড়বে, এটাও দিবালোকের মতোই সুস্পষ্ট। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের অঙ্ক আর সেই সঙ্গে মামলা এলে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঐক্যের রাজনীতির ঘেরাটোপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঐক্যে থাকা আগামী দিনেও জাতীয় পার্টির জন্য কপালের লিখন। যার থেকে দলটির কোনো রক্ষা নেই। এরশাদকে তাই রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একদিকে সরকারে থাকা আর অন্যদিকে বিরোধী দলের পতাকা নিয়ে দ্বিমুখী রাজনীতির মধ্যেই থাকতে হবে। এরশাদের রাজনৈতিক ডেমাগোগী ভাষণ তাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসা আর বিরোধীদলীয় নেতাকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেয়ার মধ্যে শূন্যে মিলিয়ে গেছে। বছরের প্রথম দিন এই ইঙ্গিত বেশ ভালোভাবেই দিয়ে গেছে যে, মামলা আর সেই সঙ্গে সুকৌশলী দলীয় বিভেদের (পাতানো কি!) মধ্য দিয়েই আগামী দিনগুলোতে জাতীয় পার্টিকে থাকতে হবে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যা বলেছেন, তাও খুবই চিত্তাকর্ষক। ফাটা বাঁশের চিপা বলে যে প্রবাদটি আছে এটা বিএনপির জন্যও যে প্রযোজ্য, তা নেত্রীর ভাষণ থেকে সহজেই বোধগম্য। তিনি ‘সংঘাত চাই না’ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘আমরা অহেতুক কিছু বলব না। আন্দোলন হবে সময় মতো।’ দিনক্ষণ বা সময় না জানালেও আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের ‘ঘুমিয়ে না থেকে’ তিনি ‘জাগতে হবে’ বলেছেন। এদিকে তিনি দলীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিগত আন্দোলনে নেতাদের রাজপথে থাকার কথা ছিল, কিন্তু তারা রাজপথে থাকে নাই। দেশের পরিস্থিতির প্রশ্ন তুলে তিনি আরো বলেছেন, ‘এ জন্যই কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। এত শহীদ রক্ত দিল কেন? তাদের রক্ত কি বৃথা যাবে?’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই নয়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার প্রয়োজন।’
ভাষণের মধ্যে তিনি যে প্রশ্ন রেখেছেন, সেই প্রশ্নবাণে আসলে তিনিই হবেন জর্জরিত। কেননা মুক্তিযুদ্ধ কি তিনি করেছিলেন? তিনি তো ছিলেন বহাল তবিয়তে ছেলেদের নিয়ে জিয়ার ভারত যাওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী কবলিত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসী যখন মরণপণ সশস্ত্র সংগ্রাম করছে, তখন তিনি শত্রু জেনারেলের বাসায় থেকেছেন। আর তাই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মানসিক অবস্থানের কারণে এত কিছুর পর এখনো মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে রেখেছেন সঙ্গে। আবারো তাদের গাড়ি-বাড়িতে পতাকা তুলে দিতে চান তিনি। কাচের ঘরে বসে তিনি মুক্তিযুদ্ধের কথা তোলেন কীভাবে আর কীভাবে বিএনপির ভেতরে মুক্তিযোদ্ধারা তা শোনেন, তা বুঝতে কষ্ট হয় বৈকি!
সর্বোপরি আন্দোলন হবে সময়মতো কথাটির অর্থ কী? যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পর নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৪ সালে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে যে চোরাগোপ্তা হিট এন্ড রান ধরনের আগুন-সন্ত্রাস শুরু করা হয়েছিল, তা কি আদৌ আন্দোলন ছিল? এক বছর পর ২০১৫ সালে যুদ্ধাপরাধী নিজামী গংদের বিচার সামনে রেখে একই ধরনের যে তথাকথিত আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল, সেটাও কি আদৌ তা ছিল? ওসব কি ছিল সময়মতো বা সময়যোগ্য? সংঘাত চাই না কথাটি কি তখন স্মরণে ছিল? তখন পকিস্তানের কথাবার্তা ও আচরণ প্রত্যক্ষ করে সহজেই বোঝা যায়, তথাকথিত আন্দোলনের ওই সময়টা ঠিক করতে মদদ দিয়েছিল পরাজিত ওই বিদেশি শত্রুরা। আর সঙ্গে যে জামায়াত ছিল এটা তো সহজেই অনুমান করা চলে। প্রশ্ন হলো এখন সময়টা ঠিক করে দেবে কে? একই ওই দেশি আর এক বিদেশি পরাজিত শক্তি কী? ওই দুই সময়ে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তথাকথিত আন্দোলন করে তিনি মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছিলেন কেন, এই প্রশ্নের যথার্থ জবাব না দিলে আন্দোলনের যথাযোগ্য সময় যে তিনি ঢাকায় আর ‘সুযোগ্য পুত্র’ লন্ডনে বসে বহু চিন্তা করেও খুঁজে পাবেন না, এটা বিগত বছরে বিএনপি-জামায়াত জোটের কার্যকলাপ প্রমাণ করে দিয়েছে। আর পরিহাস ছলে বলি, ওই দুই সময়ে গোপন স্থান থেকে আহূত লাগাতার হরতাল ও অবরোধ আন্দোলন কি তিনি আদৌ প্রত্যাহার করেছিলেন! দেশবাসী তো জানে, প্রত্যাহার করেন নাই। আন্দোলনের মধ্যেই আছেন তিনি। তাতে আর সময় গুনতে হবে কেন?
এসব প্রশ্নবাণে তিনি ও তার সুযোগ্য পুত্র যখন জর্জরিত, তখন নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা বা গালি দেয়া কিংবা কর্মীদের না ঘুমিয়ে থাকার কথা বলা আসলে রাজনৈতিক কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সংগঠনের মূল বিষয়ই হলো দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি দলীয় নেতার আস্থা-বিশ্বাস। অবস্থাদৃষ্টে এটা প্রমাণিত, উদোর পিণ্ডি আসলে তিনি বরাবরই ভুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে ওস্তাদ। তাই স্মরণে আনলে দেখা যাবে, ক্ষমতার হারানোর পরপরই তিনি নেতাদের গালি দিয়েছিলেন ‘অঙুলচোষা’ বলে। ক্ষমতা হারানোর পর ‘পাগল বা শিশু’ হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়তবা তিনি নিজের ভুল বুঝতে না পেরে শুধু আঙুল আর মুখ দেখছেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের নেত্রীর এমন হওয়াটা শুধু দলের জন্য নয়, দেশের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক।
দুর্ভাগ্যটা যে কত বড় তা অনুধাবন করা যাবে, নেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দাবির প্রশ্নে পেন্ডুলামের মতো দোল খাওয়ার ধরনটা বিবেচনায় নিলে। তিনি ছিলেন নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এই সরকারের রূপরেখা সরকারকেই দিতে হবে বলে তিনি জেদ ধরেছিলেন। পরে চাপে পড়ে রূপরেখা দিয়ে হয়েছিলেন হাস্যাস্পদ। আর এখন! বিগত কয়েক দিন আগে তিনি ঘোষণা করলেন এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেও বললেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার তিনি চান। এই ঘোষণায় বিএনপিপন্থী মহল অতি উৎসাহী হয়ে নানা প্রশংসা বাক্য খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলতে থাকলেন। তখন এই কলামে বলা হয়েছিল, তিনি আবারো আগের পজিশনে চলে যেতে পারেন। আসলে অনেকটাই তা-ই হলো। নতুন বছরের ভাষণে তিনি সহায়ক সরকারের আগে ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটি যুক্ত করছেন। এটা আসলেই ডিগবাজি! একই ধরনের ডিগবাজি মুক্তিযোদ্ধার দল বলা আর জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়টি। প্রকৃত বিচারে দুই বড় দলের একটির এই ধরনের দুই মুখোশ পড়া অবস্থানই জাতিকে আজো গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বিপদের মধ্যে ফেলে রেখেছে। আগামী দিনে এই বিপদ থেকে উদ্ধারই হবে জাতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন বছরের প্রথম দিনের ভাষণকে বিবেচনায় নিতে হবে। ওই দিনের বক্তৃতায় সঙ্গত কারণেই তিনি কোনো রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের মধ্যে যাননি। এটা খুবই পরিকল্পিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দেশের উন্নতি সমৃদ্ধি কীভাবে একবিংশ শতকের উপযোগী করা যায়- এটাই ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মর্মকথা। তিনি ‘বিদেশি স্যারদের পেছনে না ঘুরে’ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জিএসপি সুবিধার পেছনে না ছুটে নতুন বাজার খুঁজুন।’ এছাড়াও গতানুগতিকতার ওপর একান্তভাবে নির্ভর না করে পণ্যের বহুমুখীকরণ, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং বাড়ানো, কৃষকদের উন্নতি, গবেষণা সেল স্থাপন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের যথাযথ ব্যবহার, শিল্পায়নের সঙ্গে পরিবেশে রক্ষা প্রভৃতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এক নীতি-কৌশল তিনি তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়েছেন।
দেশের প্রবৃদ্ধি যখন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা সাত পার হয়ে যাচ্ছে, মানবিক উন্নয়ন সূচকে যখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের দেশ অগ্রগামী, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ দিচ্ছি, জনপ্রতি বার্ষিক আয় যখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে; তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভাষণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়ের উপযোগী। প্রকৃতপক্ষে সঠিকভাবেই তিনি জাতির আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ-উদ্দীপনার উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এত যোগ্য, মেধা এত ভালো, একটু সুযোগ পেলেই তারা যে কোনো পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। সে ধরনের সক্ষমতা মানুষের আছে।’ দেশবাসীকে সাহস দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেখবেন ওরাই আপনাদের পেছনে দৌড়াবে।’ পেছনে দৌড়ানোর সময়টাতে এসে গেছে, এটা নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু গড়ে তোলাই প্রমাণ করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি পারছে পারবেও- এই আত্মপ্রত্যয় ধরে রেখে আরো উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করাটাই আজকের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকার প্রধানের প্রধান কাজ। এই কাজটাই রাষ্ট্রনায়কোচিতভাবে করলেন ২০১৭ সালকে বরণ করার দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সবশেষে তিন দলের তিন প্রধান নেতার ভাষণের উল্লিখিত পর্যালোচনা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, এই বছরের আগামী দিনগুলোতে জাতীয় পার্টি থাকবে মামলা জন্য ক্ষমতার সঙ্গে ঐক্যে থাকার বাধ্যবাধকতা নিয়ে, ‘আঙুলচোষা’ ঘুমন্তÍদের জাগ্রত করার চিন্তা নিয়ে বিএনপি চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকবে আন্দোলনের যথাযোগ্য সময় বের করা নিয়ে আর আওয়ামী লীগ থাকবে নানা সীমাবদ্ধতা ও বাধাবিঘ্নের মধ্যেও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সমৃদ্ধি তথা জনগণের জীবন ও জীবিকার মান বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে কর্মযজ্ঞে। এই কর্মযজ্ঞকে যদি শত লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর করতে হয়, তবে নিঃসন্দেহে প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার। এই স্থিতিশীলতা কীভাবে রক্ষিত হতে পারে, তার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাও রেখে গেছে বিগত ২০১৬ সাল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বছরের শেষে নাসিক নির্বাচনে আইভীর মনোনয়ন ও জয়লাভ করার ভেতর দিয়ে অনেক কিছুই দিয়ে গেছে বিগত বছরটি। ওই সব অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাকে সামনে নিয়েই বর্তমান বছরটা যেমন কাটাতে হবে, তেমনি আগামী নির্বাচনের ভেতর দিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক ক্রমে কমিয়ে এনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ শত লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.