![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পেশাদার ও নেশাদার লেখক, মাঝে মাঝে কবি
সেলিম আল দীনের জন্মোউৎসব উপলক্ষ্যে ঢাকা থিয়েটার আয়োজিত নাট্যোৎসবে স্বপ্নসন্ধানীর মঞ্চায়িত নতুন নাটক হরগজ-এর প্রতি অভিজ্ঞ দর্শকের আগ্রহটা বেশিই ছিলো। ১৯৯৭ সালে যখন স্বপ্নসন্ধানী প্রথম তাদের টিকটিকি নাটকটি ঢাকায় মঞ্চস্থ করেছিলো। দক্ষিণ এশীয় নাট্যোৎসবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশিত সে নাটককে ভুলতে পারেনি ঢাকার অনেক দর্শকই। তবে যারা এবার স্বপ্নসন্ধানীর প্রযোজনা দেখলেন তাদের অভিজ্ঞতা গতবারের চেয়ে ভিন্নই হলো। টিকটিকি নাটকে অভিনেতা ছিলো মাত্র দুজন আর হরগজ-এ অভিনেতার বিশাল বহর। টিকটিকির সেট ছিলো বিশাল আর হরগজ-এর মঞ্চ প্রায় ফাঁকা। টিকটিকির নির্দেশক ছিলেন অভিজ্ঞ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর হরগজের নির্দেশক তরুণ কৌশিক সেন। কিন্তু এই সব বাহ্য বিষয়ের বাইরেও সবচেয়ে বড় কথা এ্যান্টনি শেফারের টিকটিকি আর সেলিম আল দীন-এর হরগজ নাটকের মধ্যে সকল অর্থেই পার্থক্য যোজন যোজন।
প্রথমত আমাদের সবারই জানা, সেলিম আল দীন বাংলাদেশের সেই নাট্যকার যিনি জীবিতকালেই কিংবদন্তী হয়ে গিয়েছিলেন, মৃত্যু যেন তার অমরত্বকেও বাড়িয়ে দিলো; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তিনি যতোটা পঠিত, আলোচিত ততোটা মঞ্চস্থ নন। তীব্র আগ্রহ সত্ত্বেও তার নাটক মঞ্চায়নে ঢাকা থিয়েটার ছাড়া তেমন কোন দলই এগিয়ে আসেনি। শেকসপিয়র, মলিয়ের, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে চন্দন সেন, মামুনুর রশীদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, উৎপল দত্ত, মনোজ মিত্রের নাটকের মতো জেলায় জেলায়, গঞ্জে, মফস্বলে সেলিম আল দীনের মূল কাজগুলি মঞ্চস্থ হয়নি। এর কারণ হতে পারে, সেলিম আল দীনের নাটক মঞ্চায়ন খুব একটা সহজ নয়। যে কোন নির্দেশকের জন্য সেলিম আল দীন এক মূর্তিমান চ্যালেঞ্জ। স্রেফ একটি টেক্সট নয়, তার নাটক একটি আঙ্গিক, দর্শন ও দৃশ্য-কল্প-বোধের নিজস্ব জগত দাবী করে। তাই স্বপ্ন সন্ধানীর সেলিম আল দীনের হরগজ নাটকের মঞ্চায়ন উল্লেখযোগ্য ঘটনাই। নির্দেশক হিসেবে কৌশিক সেন সেলিম আল দীনের অন্যতম জটিল ও দূরহ এই নাটকটি নির্বাচন করে রীতিমতো সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।
সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ নামক টর্নেডো বিধ্বস্ত এক গ্রামের নাম হরগজ। সেই হরগজ গ্রামে ত্রাণ দিতে গিয়ে সেবা কর্মী আবিদ ও তার দলবল দেখে টর্নেডো শুধু ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দূর্যোগ নয় এ এক মানবিক বিপর্যয়ও। শিল্পপ্রেমী আবিদের আকৃতি ও বোধের জগতে হরগজের বিপর্যয় সরাসরি আঘাত হানে। বিপর্যস্ত ঘর বাড়ি, বিচ্ছিন দৈনন্দিন জীবন আর ছিন্নভিন্ন মানব দেহের বিকৃত টুকরোগুলো যেন বিশ্বব্যাপী নানা বিপর্যয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে। কাহিনী অতি সরল হলেও সেলিম আল দীনিয় ভঙ্গিতে হরগজ নাটকের বিস্ময়কর দৃশ্যকল্প, তীব্র দার্শনিকতা যে কাউকে ভাবায়। আর বোধ ও ভাবনার সেই মূল কেন্দ্রে নির্দেশক-অভিনেতা কৌশিক ১০০ ভাগ সাফল্যের সঙ্গে ছুঁতে পেরেছেন।
সেলিম আল দীনের নাটক মঞ্চায়নের গতানুগতিক ধারার বাইরে একটি ভিন্নতর দৃশ্যকল্প দেখার ভাগ্য হলো আমাদের। বর্ণনা, নৃত্য,
সঙ্গীতের পাঁচালিগত আঙ্গিকের সঙ্গে আধুনিক থিয়েটারের মাল্টিমিডিয়া প্রেজেনটেশন, অসাধারণ ক্রাউড সিন ব্যবস্থাপনা এ নাটকের বিশেষ শক্তি। প্রতিটি অভিনেতার পারদর্শীতা প্রমাণ করে নির্দেশক কতোটা যতœবান ছিলেন। প্রায় দুই ঘন্টার এই নাটকে কোন দর্শক ক্লান্ত হবারও সুযোগ পায়নি। আলো, শব্দ, রঙের নিজস্ব জগত সৃষ্টি কওে নির্দেশক সবাইকে সদা ব্যস্ত রেখেছেন। শুরুতেই নিস্তব্ধতার দীর্ঘ ব্যবহার এক এবসার্ডিটির দিকে নিয়ে যায়। এই এবাসর্ডিটি দিয়ে সেলিম আল দীনের নাট্য রচনার শুরু। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ দেশজ আঙ্গিক ব্যবহার করলেও প্রাশ্চাত্ত আধুনিক থিয়েটারের সব গুণই তার নাটকের অভ্যন্তরে বিদ্যমান কৌশিক সেন তা প্রমাণ করে দিলেন। দেশজ হওয়ার অর্থ যে আধুনিকতা বা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট অস্বীকার করা নয়, সেলিম আল দীনের নাটকের মাধ্যমে স্বপ্নসন্ধানী আমাদের তাই দেখিয়ে গেলেন। সেই সঙ্গে স্বপ্নসন্ধানী আমাদেরকে সেলিম আল দীনের নাটক মঞ্চায়নের ভিন্নতর দিগন্তের স্বপ্ন দেখালেন।
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৬
মামুন রশিদ বলেছেন: নাট্যাচার্য্য সেলিম-আল-দীন স্যারের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩
মাইবম সাধন বলেছেন: ভালো লেগেছে।