নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ভুবন

মর্জি

মর্জি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুড়ি মা

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৮

তখন ছিল শীতকাল। বেশির ভাগ মানুষ শীতে কাতর হয়ে পড়ে। আমাদের বাসার পাশেই ছিল বিশাল একটি পুকুর। পুকুরটির নাম ছিল গড়ের পুকুর। সে পুকুরে অনেক মানুষ গোসল করতে আসতো প্রতিদিন। এমন দৃশ্য বারান্দাতে আসলেই প্রতিদিনই দেখতে পেতাম। আমাদের বাসার সামনে একটা খালি জায়গা ছিল, প্রতিদিন বিকাল হলে সেখানে আমরা খেলাধুলা করতাম।



আমরা যে বাসাতে থাকতাম, তার পাশেই একটি মোটামুটি বড় একটি বাসা ছিল। সে বাসার বারান্দাতে একজন বৃদ্ধ লোককে প্রতিদিন বসে থাকতে দেখতাম সবসময়। পুকুর থেকে গোসল করে পাশের বাড়ির বারান্দার এক কোণে বসে রোদ পোহাতেন এবং কি যেন গুণতেন একজন বয়স্ক মহিলা। এমন দৃশ্য প্রায়দিনই আমরা দেখতাম। প্রতিদিনের মত গোসল করে ঐ বারান্দায় সেদিনও বসেছিলেন বৃদ্ধ মহিলাটা। ৭০ উর্দ্ধ বৃদ্ধ লোকটি মহিলাকে লাথি দিয়ে বারান্দা থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন। শব্দ পেয়ে খেলা বন্ধ রেখে দৌঁড়ে গিয়ে দেখি উনি রাস্তাতে পড়ে আছেন। উনাকে রাস্তা থেকে উঠিয়ে আমাদের বাসাতে নিয়ে এসেছিলাম। সেদিন প্রতিবাদ করার মত বুদ্ধি ছিল না আমাদের।



ভাবীকে ঘটনাটা বলে আমাদের বাসাতে প্রতিদিন বসতে পারেন এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম আমি এবং আমার ভাতিজা মিলে। ভিক্ষা করা মহিলার পেশা ছিল। সারাদিন বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরে কিছু টাকা এবং চাল পেতেন সেগুলো গুনতেন আমাদের বাসাতে বসে। খুব ইচ্ছে করতো পয়সা গুনতে। বেশ কয়েকদিন যাওয়ার পর আমি উনা বল্লাম, আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো? উনি একটু মৃদু হাস দিয়ে বলেছিলেন আমাকে বুড়ি মা বলে ডেকো। একদিন বল্লাম ‌‌বুড়ি মা আমি আপনার টাকা গুণে দিব? উনি সাথে সাথে আমাকে বল্লেন প্রতিদিন তুমি আমার পয়সা গুনে দিও। প্রতিদিন বিকালে সময় কাটতো খেলা করে ও বুড়ি মার পয়সা গুনে।



একদিন জানতে চাইলাম বুড়ি মা আপনার বাড়ি কোথায়? ছেলে মেয়ে কয়জন এবং তারা কোথায় থাকেন? আপনাকে তারা দেখাশুনা করে না কেন? এমন নানা প্রশ্ন করতে থাকি, উনি থমকে থাকেন আমাদের কথা শুনে। আবারো জানতে চাইলাম বলেন না বুড়ি মা। একটু চুপ থেকে শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ চেপে কাঁদতেছিলেন। তারপর উনি বল্লেন বাড়ি ছিল রংপুর। উনারা রংপুরের প্রভাবশালী ছিলেন। একাত্তরের যুদ্ধের সময় উনার স্বামী এবং বড় ছেলেকে দূবৃর্ত্তরা মেরে ফেলেছিল এবং ছোট ছেলে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধের পর দু‌‌‌-একবার ছোট ছেলে মাকে দেখতে এসেছিল। তারপর আর কোন যোগাযোগ করেনি মায়ের সাথে। যেহেতু উনি একা হয়ে গিয়েছিলেন, সে সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিল এলাকার লোকজন। উনাদের বাড়ির মুল গেটে দুইটা হাতির মূর্তি ছিল এবং সে মূর্তির পেটের মধ্য অনেক কাচা টাকা রেখেছিলেন। উনাকে উচ্ছেদ করার জন্য খারাপ লোকেরা প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল গেটের মূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে। মুর্তি ভাঙ্গার পর অনেক টাকা পয়সা পাওয়ার পর এক সময় বুড়ি মাকে তাড়িয়ে দেয় রংপুর থেকে। তারপর থেকেই উনি মেহেরপুর আসেন এবং জীবিকা হিসাবে ভিক্ষা পেশাটাকে বেছে নেন।



আজ অফিসে আসার সময় সিএনজির জন্য মেইন রোডের দিকে আসতেছিলাম, এমন সময় একটা বাসা থেকে ১৮/২০ বছরের একটা ছেলে একজন বয়স্ক মহিলাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এবং ব্যালেঞ্চ না রাখতে পেরে রাস্তায় ছিটকে পড়ে। আমি প্রথম ছেলেটি কে জিজ্ঞাসা করলাম কেন এটা করেছো? আমার প্রশ্নের জবাব দিল সকাল বেলা ভিক্ষা কেন নিতে এসেছে! আমি যদিও তাকে বল্লাম, তুমি যে কাজটা করেছো সে কাজ মোটেও ভাল করো নি। বরং তাকে ভাল ব্যবহার করে বিদায় করতে পারতে। মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হলে ভাল ইন্সটিটিউশন থেকে শিক্ষা পাওয়া লাগে না, বোধগম্যে আনতে হয়। আমরা প্রত্যেকে নিজের পরিবারেই এই চর্চাটা যদি করি, তাহলে এ সকল দুঃসহ

ব্যবহার এবং খারাপ কাজ থেকে দুরে থাকতে পারি।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৮

বড় বিলাই বলেছেন: +

দুইবার এসে গেছে, এডিট করে নিবেন।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৬

মর্জি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আমাকে ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪১

kisuna বলেছেন: অনেক সুন্দর! আসলেই আমরা নিজেরাই ভাল ব্যাবহার শিখতে পারি।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৮

মর্জি বলেছেন: হ্যা তা সহজেই পারা যায় কিন্তু আমরা করার চেষ্টা করি না আসলে। আমি তাকে অনেক শক্ত কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলিনাই। আপু অনেক ধন্যবাদ তোমাকে পড়ার জন্য।

৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪২

মাহামুদ রাহি বলেছেন:
প্রতিবাদের ভাষা আরো কঠোর হওয়া দরকার ছিল...
এর জন্য আপনার মন খারাপ....
কস্ট দায়ক...
কিন্তু কিছু কি করবার আছে আমাদের? যার বাবা-মা তাদেরকে ভাল শিক্ষা দেয়নি তারা এর চাইতে ভাল কি দিতে পারে?
মন খারাপ করবেন না....
আমার এক বয়স্ক বন্ধু বলত 'খ্যাতের চাক্কা খ্যাতে রাইখ্যাই ভাংগে, লাইলে তুলে না'---আমি বিশ্বাষ করি...কৃতকর্মের ফল অনেকখানি এই দুনিয়াতে ভোগ করে যেতে হবে...বিষেশ করে 'হক' এর দায়...
ভাল থাকুন....

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৬

মর্জি বলেছেন: তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। আমি মানুষকে কঠিনভাবে বলতে পারি না। ভবিষ্যতে শক্তভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যদি পিছিয়ে পড়ি তাহলে জাতি অন্ধকারে.....। অতএব আপনার, আমার সোচ্চার হতে হবে। আপনিও ভাল ভাল থাকেন, এ প্রত্যাশা সকল সময় ।

৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ভালো লাগলো । কিছু নির্মম মানুষ এর সাথে আপনার মত কিছু ভালো মানুষ জগতে আছে এই জন্যই জগত টা টিকে আছে । আপনারাই সাম্যতা রাখছেন ।

খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা ।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৩

মর্জি বলেছেন: দেখার জন্য ও ভাল লাগার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিছু মানুষ জন্মগতভাবে এমন, আবার কিছু মানুষ আশেপাশের পরিবেশ থেকে শিখে। আমি বলবো একটু সহনশীল, নমনীয়তা দেখাতে নিজের তো কোন ক্ষতি হয় না। সকলের কাছে আমার এটাই প্রত্যাশা থাকবে, আমরা যেন ভাল চর্চা করি।

৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৮

সায়েম মুন বলেছেন:
আমরা প্রত্যেকে নিজের পরিবারেই এই চর্চাটা যদি করি, তাহলে এ সকল দুঃসহ ব্যবহার এবং খারাপ কাজ থেকে দুরে থাকতে পারি।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৬

মর্জি বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন। সত্যিই আমরা নিজের পরিবার থেকে চর্চা করি তাহলে অনেক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫১

মুজিব রহমান বলেছেন: সরকারের দরিদ্র বয়স্কদের জন্য আরো কিছু করা দরকার। অধিকাংশ বয়ষ্কদের কোন অর্থ থাকে না। বয়ষ্কভাতা অনেকক্ষেত্রেই দরিদ্ররা পায় না। এখানে রাজনীতি কাজ করে। বাংলাদেশে অনেক বৃদ্ধাশ্রম প্রয়োজন।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২২

মর্জি বলেছেন: হ্যা আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা থাকায় উচিত। বৃদ্ধশ্রম একটা আছে কিন্তু সেখানকার অবস্থা সমন্ধে আমার ধারনা নেই।গাজীপুরের একটা বৃদ্ধাশ্রম সমন্ধে আমার একটা ধারনা আছে। আপনি যে চিন্তাটা করেছেন, সেটা সকলের মাথায় আসা উচিত। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

রাজসোহান বলেছেন: আমাদের শুরু করা দরকার কিন্ত করা হয়ে ওঠে না

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৪

মর্জি বলেছেন: একদিন শুরু করেন, দেখবেন কত সহজ হয়ে গিয়েছ। আপনার যে বোধগম্যে এসেছে এটাও কম কি!!!

৮| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হলে ভাল ইন্সটিটিউশন থেকে শিক্ষা পাওয়া লাগে না, বোধগম্যে আনতে হয়। আমরা প্রত্যেকে নিজের পরিবারেই এই চর্চাটা যদি করি, তাহলে এ সকল দুঃসহ ব্যবহার এবং খারাপ কাজ থেকে দুরে থাকতে পারি।

++

১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৫

মর্জি বলেছেন: হ্যা ঠিক এই কথাটাই আমার লেখাটিতে এনেছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৯| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৬

আমি উঠে এসেছি সৎকারবিহীন বলেছেন: শ্রদ্ধা জিনিশটা দিতে আমাদের এত কার্পণ্য কেন জানা নেই, উল্টোটার ব্যাপারে বাংলাদেশীদের বরং অনেক উৎসাহ দেখা যায়। কয়েক প্রজন্ম ধরে আমাদের উপলব্ধিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। হতাশাব্যঞ্জক হলেও সত্য, পরবর্তী প্রজন্মগুলো পরিবার বা সমাজ থেকে শিক্ষা না পেলে তাদের কাছ থেকেও কোন পরিবর্তন আশা করা ঠিক হবে না।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৪

মর্জি বলেছেন: আপনার কথার সাথে আমি একমত। সকলের বোধগম্যে আসুক এটায় আমার প্রত্যাশা। ধন্যবাদ আপনাকে।

১০| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:১৫

~স্বপ্নজয়~ বলেছেন: :D :D :D

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৬

মর্জি বলেছেন: ভাইয়া শুধু হাসি দিলে চলবে!!

১১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৩৩

বাবুনি সুপ্তি বলেছেন: কি বলব! নিজেকে সেই বুড়ি মা এর জায়গায় বসিয়ে ভাবি কেমন লাগে।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৮

মর্জি বলেছেন: নিজেকে উপলোব্ধি করলে বোঝা যায়, যেটা অন্যের ঘটেছে আমার হলে কেমন হতো। ধন্যবাদ আপনাকে।

১২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৩২

সুরঞ্জনা বলেছেন: Paribarik shikkha proyojona. +.

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১০

মর্জি বলেছেন: ভাল বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.