নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হোসেন মৌলুদ তেজো

লিখতে ভালোবাসি

হোসেন মৌলুদ তেজো › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থা, করোনা এবং বাস্তবের অ্যাভেঞ্জার্স

২৬ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৫৯

গত বছর (২০১৯) মুক্তি পাওয়া মার্ভেল কমিকসের সুপারহিরো দল অ্যাভেঞ্জার্সের উপর ভিত্তি করে তৈরি নির্মিত সিনেমা “অ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেম” এর কথা সবার মনে আছে নিশ্চয়ই! অ্যাভেঞ্জার্স সিরিজের কথা আসলে অবধারিতভাবে চলে আসে সুপারহিরোদের কোলাহলে স্রোতের বিপরীতে চলা একমাত্র সুপার ভিলেন থানোসের নাম, মহাবিশ্বকে নিয়ে যার ‘ভারসাম্য তথ্য’তাকে বানিয়েছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় খলনায়ক! তার আগে ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিরিজের আগের পর্বে দেখা গিয়েছিলো টাইটান থানোস ছয়টি ইনফিনিটি স্টোনের সাহায্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অর্ধেক জনপ্রাণী নিশ্চিহ্ন করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে নতুন করে সাজানোর সেই ইচ্ছাপূরণ করে। যাইহোক, আমার আজকের এই লেখা অ্যাভেঞ্জার্স সিনেমা সিরিজ নিয়ে নয়। এই লেখার তিনটি মুখ্য উপাদান নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা, টাইটান থানোস এবং অ্যাভেঞ্জার্স এই লেখায় বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রেক্ষিতের জন্য একটা প্রেক্ষাপটের ভূমিকা পালন করবে।

১৯৯১ সালের সোভিয়েত উনিয়নের পতন এবং বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আমেরিকার উত্থান দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জন্ম দিয়েছিলো আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার। এই সময় থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বে যেসব দেশের অর্থনৈতিক উত্থান আমেরিকার জন্য মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তার মধ্যে চীন অন্যতম। চীনের অর্থনৈতিক উত্থান এবং ভারতের সাথে আমেরিকার রাজনৈতিক সখ্যতা অবধারিতভাবেই আমাদের সামনে নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার ধারণা নিয়ে চিন্তার খোঁড়াক যোগায়। তাছাড়া, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে কয়েকটি “ষড়যন্ত্র তথ্য” বড় বড় দেশগুলোর মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধের রসদ জুগিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা। এই নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার চিন্তার যৌক্তিকতা, সম্ভাব্য নেতৃত্ব, প্রেক্ষাপট, মাধ্যম ইত্যাদি নিয়ে চূড়ান্ত কোন মন্তব্যের সময় এখনও হয়তো আসেনি। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত – কাজে বা কাগজে, সিনেমায় বা বাস্তবে নতুন এই বিশ্ব ব্যবস্থার ধারনা উঠে আসছে বারবার।

এবার আসি বর্তমানের সবচেয়ে বড় বাস্তবতায় – করোনা! চীনের উহান শহর থেকে যাত্রা (!) শুরু করা এই মারাত্নক ভাইরাসটি ইতিমধ্যে আক্রান্ত করেছে বিশ্বের ২১৫টি দেশের ৫৫ লাখের বেশী মানুষকে। ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে সাড়ে তিন লাখের মত মানুষ। আর এই চায়না ভাইরাসে (ট্রাম্প করোনাকে এই নামেই ডাকেন) সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ দেশ আমেরিকা। যেখানে ২৫শে মে পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৭ লাখের কাছাকাছি আর মোট মৃত্যুবরণ করেছে ১ লাখ মানুষ। করোনা পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে মুখোমুখি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার দুই প্রধান কুশীলব চীন এবং আমেরিকা। শুধু তাই নয়, করোনা ভাইরাস নিয়ে আলোচিত ষড়যন্ত্র তথ্যগুলোর অন্যতম প্রধান উপাদান ছিলো এই “নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা”। উহানের ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া, ট্রাম্পের মন্তব্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তিক পক্ষপাত মূলক আচরণ – সবকিছুতে সামনে আসে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়ে চীনের নীল নকশা।

করোনার উৎপত্তি ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্কের অনেক জায়গা থাকলেও বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনযাত্রার পাশাপাশি অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। করোনা কান্ডে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিধ্বস্ত, নতজানু। যেখানে স্বাভাবিক রোগব্যাধির চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতার সাথে লড়াই প্রতিনিয়ত সেখানে এই রকম একটি মহামারী সামাল দিতে পারার চিন্তাটাও একটা বিলাসিতা। সাথে আমাদের মত একটি উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতিতে স্তবিরতার প্রভাব কি রকম হতে পারে ভেবে দেখুন। যাইহোক করোনা প্রভাবিত অর্থনীতির কথা অন্য কোনদিন। ফিরে আসি মূল লেখায়।

এবার যদি আমরা, অ্যাভেঞ্জার্স সিনেমার গল্পের প্রেক্ষাপটের সাথে করোনা কাহিনীর সামঞ্জস্য নিয়ে কথা বলি তাহলে চরিত্রগুলোর বিন্যাসে চীনকে আমরা দেখতে পাই টাইটান থানোস হিসেবে আর করোনা বা কোভিড -১৯ হচ্ছে থানোসের সেই ছয়টি ইনফিনিটি স্টোন! তাহলে সুপার হিরোদের দল “অ্যাভেঞ্জার্স” কারা। আমি আগে যেমন বলেছি, আমাদের দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতার পাশাপাশি এই দেশের মানুষের কিছু অন্ধ বিশ্বাস আর সচেতনতার অপ্রতুলতা (অসচেতনটা একটু অন্যভাবে বললাম)। তবে, এই করোনা পরিস্থিতিতে সিনেমার মতোই আমাদের পাশে আছেন বেশ কিছু সুপার হিরো – যাদেরকে আমি বলছি আমাদের “বাস্তবের অ্যাভেঞ্জার্স”। নীচে উল্লেখিত বাস্তবের এইসব সুপারহিরোদের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকেই তাদের নিয়ে কয়েকটা কথা বলার প্রয়াস আমার এই লেখা। চলুন তাহলে পরিচিত হই – বাস্তবের অ্যাভেঞ্জার্সদের সাথে।

১। স্বাস্থ্যকর্মীঃ অ্যাভেঞ্জার্সদের মধ্যকার অগ্রনায়ক আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীবৃন্ধ। নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে, নিজের দায়িত্ববোধ এবং দায়বদ্ধতা থেকে কোভিড-১৯ নামক এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ যোদ্ধা। নিজেদের সুরক্ষ্যা সামগ্রীর অপ্রতুলতার বাস্তবতা মেনে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মীবৃন্ধ। তথ্য গোপন রেখে চিকিৎসা নেয়ার কারনে অনেক স্বাস্থ্যকর্মীকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরও আমারা দেখেছি। শুধু তাই নয়, মানুষকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে মানুষের হাতেই লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা আছে অনেক। সহযোদ্ধাদের ইতিমধ্যে মরতেও দেখেছেন অনেকে, তবুও তারা একাগ্র – এখনও ব্রত নিজেদের দায়িত্বে।

২। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীঃ করোনা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে আমরা দেখতে পাই পুলিশ, সেনাবিহীনিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। মাঠপর্যায়ে লকডাউনকে সফল করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, করোনায় মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনরা যেখানে তার লাশ গ্রহণ করতে চাচ্ছেনা, সেখানে এইসব বাহিনীর সদস্যরা সসম্মানে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মত এইসব বাহিনীর অনেক সদস্যেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশপাশি মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।

৩। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাঃ করোনার বিস্তার রোধে এবং সরকার ঘোষিত লকডাউনকে সফল করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে থাকছেন বাংলাদেশ সরকারের মাঠ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা। করোনা রোগী শনাক্ত থেকে শুরু করে, সেই রোগীকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে করোনা বিস্তার প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে এইসব কর্মকর্তাদের ছুটে যেতে হয়েছে এলাকা থেকে এলাকা, বাড়ি থেকে বাড়ি।

৪। ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্ধঃ অর্থনীতিকে সীমিত পরিসরে হলেও সচল রাখার জন্য এবং মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তব্যরত ছিলেন অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা। বেশ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার করোনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতিমধ্যে। তবুও এই অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট সজাগ তারা।

৫। ত্রাণ বিতরণের স্বেচ্ছাসেবক দলঃ করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের আয় রোজগারে আঘাত এই শ্রেণীর মানুষকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। এই সময়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এইসব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। আমাদের করোনা যুদ্ধের অন্যতম সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।

এছাড়া আরো কিছু শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম উঠে সাতে পারে আমাদের অ্যাভেঞ্জার্স তালিকায়। যেমন করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় নিয়োজিত সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীবৃন্ধ, ফার্মেসী ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীবৃন্ধ ইত্যাদি।

করোনা সংকটে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যাদের সামনে থেকে অ্যাভেঞ্জার্সদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিলো, তাদের নীরব ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায় হিসেবে থাকবে। শুধু তাই নয়, অ্যাভেঞ্জার্স সিরিজের সিনেমাগুলো সম্রপতি আমি আবারও দেখেছি, অনেক চেষ্টা করেছি সিনেমার এমন কিছু চরিত্র খোঁজে বের করতে যারা থানোস-অ্যাভেঞ্জার্স লড়াইয়ে সুযোগ নিতে চেয়েছে – আমি পাইনি! কিন্তু আমাদের জাতিগতভাবে করোনা বিপদকে কাজে লাগিয়ে নিজেরদের ঘরের মেঝে, বিছানাকে চাল/তেলের গুদাম বানানোর নগ্ন নমুনার সাথে আমাদের অনেকেই নতুন করে পরিচিত হয়েছি। এইসব লোকদের নিয়ে শব্দ নষ্ট করে এই লেখার আবেদনটাকে ছোট করতে চাইনা।

পরিশেষে শুধু এইটুকু বলবো, আমার চিন্তার সীমাবদ্ধতার কারনে আরো অনেকের কথাই হয়তো এই লেখায় উঠে আসেনি, তার মানে এই না যা তাদের অবদান অন্যদের তুলনায় নগণ্য। আমার এই সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে করোনা বিধ্বস্ত সময়ের সকল সম্মুখ যোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় চিৎকার করে বলতে চাই – Avengers Assemble!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: সবচেয়ে বড়ো আনন্দ সংবাদ-
'এখনো বেঁচে আছি'।
বেঁচে থাকুন সকলে
ঈদ মোবারক!

২| ২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪০

কল্পদ্রুম বলেছেন: এভেঞ্জার্সদের ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.