![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শীতের মাঝে একটা পাতলা টি শার্ট পরে বসে আছি । গায়ে ঠান্ডা লাগছে । গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে কিছুক্ষণ পরপর । ইচ্ছে করে লাগাচ্ছি । বড় কোন লেখক হলে সুন্দর কোন উপমা দিতেন এই ব্যাপারটাতে । আমি সোজাসুজিই বলি- কিছু কষ্ট থাকে তাদের এড়াতে অন্যকোন কষ্টকে আকড়ে ধরতে হয় আমিও তাই করছি , ঠান্ডা লাগাচ্ছি । ফলাফল হাতে হাতে, মাথাটা অনেকদিন পর হালকা হালকা লাগছে । কাজ নেই , কোন তাড়া নেই । সব ব্যস্ততাকে বাইবাই বলেছি অনেকদিন হল । না , কথাটা ভুল বললাম । কোন দিন আমি ব্যস্ত কেউ ছিলাম না । মানুষ কত ব্যস্ত । আমি মানুষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি । না অমানুষ হচ্ছি তা না , "মানুষের মত মানুষ" বলে একটা কথা আছে সেই কথার "মানুষ" টাকে বুঝাচ্ছি । আমার চারপাশে সব "মানুষ" এর ছড়াছড়ি , সবাই কত ব্যস্ত , কত টেনশন তাদের ! সবাই ভবিষ্যৎ বুনতে ব্যস্ত । একটা বিষয় আমি সবসময় এমন মানুষগুলোর কাছে পাই । সেটা আর কিছুই না "স্বার্থপরতা" র কথা বলছি । আমিও হতে চাই কিন্তু তাদের মত স্বার্থপরতাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি না । আমার জীবনের ব্যর্থতা গুলোর মাঝে এইটা একটা । মনোবিজ্ঞানের বিষয়ের মাঝে এই স্বার্থপরতাও পড়ে । SSC পরীক্ষার পর যখন আমার বিভাগের সবাই ম্যাথ প্রাইভেট , ক্যামিস্ট্রি প্রাইভেটে দৌড়তে ব্যস্ত তখন আমি নাকের উপর চশমা বসিয়ে শুয়ে শুয়ে মনোবিজ্ঞান বই পড়ছি । জীবন বাঁচাতে পড়ছিলাম , মানুষ হতে পড়ছিলাম । কোন মানুষ? ব্যস্ত মানুষ গুলোর দলে যেতে । কারণ আমার বয়সী সবাই জীবনকে ভালই চিনেছে , জেনেছে সমাজ কেমন , সবাই তখন জানে রিকশাঅলাকে লাই দিতে নাই , বন্ধুদের কারণে অকারণে ঠকালে কিছু হয় না , কথা না রাখা তেমন কোন বড় ব্যাপার না , ধনী বলে একটা আলাদা সমাজের একদল মানুষ আছে , আবার গরীব বলেও একটা আলাদা সমাজের একদল মানুষ আছে , প্রতিপদে নিজের স্বার্থকে জয়ী রাখতে হয় , কিভাবে টিকে থাকতে , কাকে কতটুকু ভালবাসতে হয় , কতটুকু দূরে ঠেলতে হয় , কার সাথে কথা বলতে গেলে গলায় মধু ঢালতে হয় , কার সাথে উঁচু ভাষায় কথা বলতে হয় এরকম আরও অনেক কিছু । তখন আমি সবার সাথে মিশতে গিয়ে দেখি কিছুই জানি না ! এমনকি কথা বলতে পর্যন্ত জানিনা ! তাই সমাধান হিসেবে কিনলাম মনোবিজ্ঞানের বই । পড়লাম । কিছু জ্ঞান বাড়ল ঠিকি কিন্তু কই স্বার্থপর হওয়া তো হল না , কথা বলা তো শিখলাম না, "ওদের" মত তো হলাম না ! আমার একটা "সময়"এর "গল্প" বলি তাহলে। গল্পের সেই সময়টায় ছিল খুব গরম । দিনের বেলায় কড়া রোদ । রাতের বেলায় ভ্যাপসা গরম । কিন্তু বায়ু স্থির । গরম থেকে বাঁচতে খালি গা হয়ে থাকি সবসময় তখন । বাতাস দরকার আমার । ঠান্ডা বাতাস । প্রাণ জুড়ানো ঠান্ডা বাতাস চাই । এদিকে খুজি নাই , ওদিকে খুজি নাই । একদিন এক দমকা বাতাস হঠাৎ ছুঁয়ে যায় । সবাই বলে এটা নদীর বাতাস , সেখান থেকে আসছে তাই ঠান্ডা কিন্তু সেখানে যেতে নেই , নদীর কথা বিশ্বাস করতে নেই , বাতাস খেতে যারাই গিয়েছে সবাই চরে ডুবেছে না হয় পথ হারিয়ে আর ফিরে আসতে পারেনি , আবার কেউ কেউ নদী ভাঙনে ডুবে মরেছে । আমি তখন পাগল । এত বড় সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে ! আমি নদীর কাছে চলে যাই । আজলা ভরে পানি নিয়ে গায়ে দেই । শরীর শীতল হয় । নদীকে বলি হে তরঙ্গিণী তুমি কি আমায় ডোবাবে ? নদী বলে তোমার মত পাগলকে ডোবালে আমার বাতাস কার গায়ে বয়ে যাবে ? আমার জল কার গা শীতল করবে ? তুমি নিশ্চিন্ত থাকো ডোবাবো না । আমি নিশ্চিন্ত হই , আমার মনোবিজ্ঞান বইটাকে আকড়ে ধরি । নদী বলে কিন্তু তুমিতো বাতাস খেয়েই "স্বার্থপর" এর মত তোমার অট্টালিকায় চলে যাবে আমার কি হবে তখন ? আমি আমার সুন্দর ছিমছাম অট্টালিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদীর পাড়ে আমার বাড়ি বানিয়ে প্রমাণ করি যে সেখান ছেড়ে আর কোথাও যাবো না । এইটাই তো জীবন চেয়েছিলাম , কত বাতাস আমার , কত জল আমার ! আমার সকল জ্ঞান আজ সিদ্ধ । এই বহমান নদী আমার ধ্যান জ্ঞান হয়ে যায় । একসময় এই নদী তার কথা রাখে না , তার পথ বদলানোর দরকার হয় , পথ বদলায় সে । আমি ডুবে গেলাম কি ভেসে গেলাম সেদিকে তার খেয়াল নেই । আমি কখন বাড়িঘর সহ নদীর ভাঙনে ডুবি মনে নাই । হয়ত ঘুমা্চ্ছিলাম সেই সময় । জ্ঞান হবার পর বুঝি পৃথিবীর "স্বার্থপরতা" নামক শব্দটি আমার সব সর্বনাশ করে দিয়ে চলে গেছে । আমার সব ভেঙে চুরে সর্বস্ব নিয়ে চলে গেছে । বুঝি "স্বার্থপর" না হাওয়া কত বড় বোকামী । বুঝি ভাল হবার কত যন্ত্রণা । সব গেল আমার । যন্ত্রণা কাটাতে নিজেকে গালি দেই । যন্ত্রণা কাটে না । এখন "আপন" করার ব্যাথা কমাতে কখনও কাঁটার ঝোপে ঝাপ দেই , কখনও চুলোর আগুনে শরীর পোড়াই , কখনও এই এখনকার মত একটা পাতলা টি শার্ট পরে বসে থাকি । গায়ে ঠান্ডা লাগাই । ঠান্ডায় গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে কিছুক্ষণ পরপর । হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা কিছু কমে, গল্প কিছুক্ষণের জন্য শেষ হয় ।
©somewhere in net ltd.