নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লাল রং এর চিন্তা ভাবনা

ছেলে ভাল ..

পলাশের লাল রঙ

ছেলে ভাল ....

পলাশের লাল রঙ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসের শেষ যাত্রা (গল্প)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:৪৫

বাসে ওঠার সময় বাসের হেল্পার হেলালকে সিট আছে বলেই উঠিয়েছিল। মোটামুটি আধা ঘন্টার বাস জার্নি। টিকিট কাটলে অবশ্য এমনিতেই সিট পেত। বাসের টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকলেও টিকিটে খরচ বেশি হয়, হেলাল তাই টিকিট কাটে না। বাসের হেল্পারের কাছে কিছু টাকা গছিয়ে দেয়। লোকাল সার্ভিস তাই সিট নিয়ে তেমন ঝামেলা লাগে না। বেশির ভাগ সময় ঝুলে ঝুলে যেতে হয়। কেউ নেমে গেলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মাঝে বেশি দূরত্বে যাওয়া লোকটিকে হেল্পার সেই সিটে বসিয়ে দেন। আজ বাসের কোন সিট খালি নেই। কিছু লোক দাঁড়িয়েও যাচ্ছে। হেলালকেও এখন দাঁড়িয়ে যেতে হবে।



হেলাল বাসে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর সবার পেছনে যাবার চেষ্টা করে। যারা দাঁড়িয়ে যায় তাদের বেশির ভাগেরই চেষ্টা থাকে বাসের সামনের দিকটায় দাঁড়ানোর। তাই সামনের দিকে সব সময় লেগে থাকে চাপাচাপি। হেলাল পেছনের দিকে এসে দাঁড়ায়। তার ছোট্ট হাত-ব্যাগটা এক হাতে ধরে আরেক হাতে বাসের ছাদে লাগানো রড গুলো ধরে।



বাসের পেছনের গ্লাসটার দিকে তাকায়। উল্টো ভাবে বাসের নাম দেয়া। কি লেখা আছে পড়ার চেষ্টা করে। হুমম, বের হয়েছে। "পি আর পরিবহন" লেখা।



কন্ট্রাক্টর এসে টাকা চায় হেলালের সামনে দাঁড়ানো লোকটার কাছে। বাসের গুম গুম শব্দের মাঝে তাদের কথা ঠিক স্পষ্ট ভাবে কানে আসে না। তবে এটুকু বোঝা যায় তাদের মাঝে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। লোকটা টাকা দিতে চাচ্ছে কিন্তু কন্ট্রাক্টর সে পরিমাণ টাকা নিতে নারাজ। শেষে লোকটি কন্ট্রাক্টরের পকেটে গুজে দেয় টাকাটা। কন্ট্রাক্টর পকেট থেকে বের করে আবার লোকটির হাতে দিয়ে দেয়। হেলাল তাদের সার্কাস দেখতে থাকে।



কন্ট্রাক্টর তার টাকা না নিয়ে হেলালের কাছে আসে। সে যেহেতু নিয়মিত যায় তাই নির্দিষ্ট একটা পরিমাণ টাকা বের করেছে যেটায় তারও লাভ হয়, কন্ট্রাক্টরও কিছু বলতে পারে না। কন্ট্রাক্টরের কাছে টাকাটা দিয়ে দেয়। কন্ট্রাক্টর টাকা নিয়ে কিছু বলে না। হেলালের পেছনের লোক গুলোর কাছে টাকা নিতে থাকে।

কন্ট্রাক্টর হেলালকে সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। সেখানে এক লোক সামনেই নামবে তাই নেমে গেলে যেন সে বসতে পারে। এই বারই হেলালের শেষ যাওয়া। এ পাশে আর আসার দরকার নেই। এ পাশে যযে টিউশনিটা ছিল তা আজ ছেড়ে দিল। কথায় আছে শেষ ভাল যার সব ভাল তার। শেষতম যাত্রাতে যদি বসে না যাওয়া যায় তাহলে কেমন যেন হয়!



হেলালের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এগিয়ে কন্ট্রাক্টর আবার ওই লোকটির কাছে যায়। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। লোকটির কাছে টাকা চাইলে আবার ঝগড়া বাঁধে। এমনকি কথাবার্তা অশ্লিল পর্যায়ের গালিগালাজে চলে যায়।কন্ট্রাক্টর লোকটাকে নেমে যেতে বলে। লোকটি অশ্লীল ভাবে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সে নামবে না আর বেশি তেড়িবেড়ি করলে পুরো বাসটাই কন্ট্রাক্টরের দেহের বিশেষ একঅঙ্গের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেবে (যদিও তা বৈজ্ঞানিক ভাবে অসম্ভব)।



ঠিক তখনই পাশের সিটে লাল রঙের কামিজ পড়া একটা মেয়ে উঠে "কি শুরু করেছেন, আপনাদের ভদ্রতা বলে কিছু নাই, এমন অসভ্যের মত কথা বলতেছেন কেন " বলে দুজনের উপর রাগারাগি শুরু করে। মেয়েটার সাথে বাসের অনেকেই যোগ দেয়। কন্ট্রাক্টর এবার বিপদে পড়ে যায়। হেলালের কেমন যেন লাগে, এই মাত্র কটা টাকার জন্য এত কিছু। হেলাল এগিয়ে এসে কন্ট্রাক্টর কে লোকটার বাকি টাকাটা দিতে চায়। কন্ট্রাক্টর হেলালের উদ্দেশ্যে বলে "ধুর, আপনি বেশি বুঝেন ক্যা। টাকা রাখেন, টাকা রাখেন।" কন্ট্রাক্টর শেষ পর্যন্ত হেলালের টাকা না নিয়ে বিড়বিড় করে লোকটাকে কিছু বলে সামনে চলে যায়।



হেলাল আবার পিছিয়ে দাঁড়ায়। বাসের প্রায় সবাই একে অপরের সেথে আগে ঘটা এমন ঘটনা গুলো নিয়ে গল্প করতে থাকে । ওই লোকটা হেলালের কাছাকাছি এসে বলে "আপনি আমার টাকা দিতে চাচ্ছিলেন কেন,মনে হয় অনেক টাকা আপনার, টাকার গরমে বাঁচেন না।"



হেলাল এমন কথা শোনার জন্য অপ্রস্তুত ছিল। কি উত্তর দেবে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে না। অন্য কারণে তার মাথাও ঠিক নেই । শেষ পর্যন্ত বলে " ভাই আসলে অাপনাদের ক্যাচাল বন্ধ করার জন্য...। "



কথা শেষ হবার আগেই লোকটা বলে "এই ছেলে তুমিতো বাচ্চা পুলা, তুমি আমার ক্যাচাল বন্ধ করবা ! ওই মা...রী তো একটা কুত্তার বাচ্চা,যদি নামায় দিত পরের ট্রিপে বাস এই এলাকা দিয়ে গেলে বাসের একটা গেলাসও ঠিক থাকতো না। তুমি মাঝখানে আইস্যা.......,ধুর বা.....। "



হেলাল কি বলবে বুঝতে পারে না। আমতা আমতা করতে থাকে।



এ সময় কন্ট্রাক্টর পেছন থেকে এসে হেলালকে নিয়ে সামনে একটা ফাঁকা হয়ে যাওয়া সিটে বসিয়ে দেয়। সিটটা জানালার পাশে । হেলালের দেখা সব মানুষকেই দেখেছে জানালার পাশের সিটটা তার হোক তারা সবাই চায়। হেলাল জানালার পাশের সিটে বসে না সাধারণত।



হেলাল বসার সাথেই জানালা দিয়ে আসা জোর বাতাসের কবলে পড়ে। জানালার কাচটা খানিক এগিয়ে বাতাস টা কমায়। এখন সন্ধ্যার দিক। রাস্তার পাশের লাগানো গাছ গুলো একটার পর একটি দ্রুত পেছোতে থাকে। তার পাশে এক স্যুট টাই জুতা পড়া লোককে বসায় কন্ট্রাক্টর। কোলে একটা অফিসিয়াল ব্যাগ। ক্লিন শেভ আর চুল ভদ্র করে কাটা। এই লোকটাকে কেমন যেন বাসে মানাচ্ছে না।

হেলালের মনে হচ্ছে লোকটার কারে করে বেড়ালেই মনে হয় ভাল হত। লোকটা খুব অপ্রস্তুত ভাবে বসে আছে। একটা পা সামনে,আরেকটা পা বাঁকা করে বাসের মানুষ যাবার ফাঁকা যায়গাটাতে। মনে হয় না নিয়মিত যান তিনি। একটু পর তার ফোন আসে। ফোন সম্ভবত তার বউ করেছে। তার খোজ খবর নিচ্ছে। এতক্ষণ ফোন বন্ধ ছিল কেন, দুপুরে কি খেয়েছে,বিকেলে নাস্তা করেছে কিনা এই সব। কিছুক্ষণ যাবার পর আবার ফোন আসে। অন্য কোন লোক এবার বোঝা গেল না । বাসটা স্টেজে স্টেজে থামছে। লোক নামছে উঠছে। বিভিন্ন প্রকারের লোক।



যেতে যেতে রাস্তা প্রায় ফুরিয়ে এল। আর কিছু দূর পর হেলালকে নামতে হবে। হেলালের কেন জানি আরও বেশি মন খারাপ হয়ে যায় এবার। ওই দাঁড়িয়ে যাওয়া মেয়েটার লাল জামাটি বা পাশে বসা লোকটি এ সব কিছুই তার মন খারাপ করিয়েছিল।



তার মনের কোণে যেই মেয়েটা বাসা বেঁধে বসবাস করছিল তারও এমন লাল রঙা জামা আছে। বাসের মেয়েটাকে দাঁড়াতে দেখে যতটা না অবাক হয়েছিল তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিল মেয়েটার জামার লাল রংটা দেখে।



এই লাল রঙা জামা পড়ে কতবার তার মনের মাঝের মেয়েটা এসেছিল হেলালের সামনে। যতবার এসেছিল ততবার সে অবাক হয়েছিল মেয়েটার সৌন্দর্য দেখে। অবাক ভাব রেখেই সে বলত "পরী, তোমাকে কেন জানি অনেক সুন্দর লাগছে আজ!"

পরী যতবার এই কথাটা শুনেছে ততবার মুখে গম্ভীর গম্ভীর ভাব এনে বলেছে "সুন্দর না পঁচা"।



হেলাল অনেক যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করত যে না আসলেই সুন্দর

লাগছে কিন্তু পরী কখনই মানত না যে সে সুন্দর। কিন্তু হেলাল জানত পরী আসলে পরীর মতই সুন্দরী।তার মত ছেলের সাথে যে সম্পর্ক আছে এটাই বড়। সে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, তার চেহারা এমন আহামরি না উল্টো সে বেকার হয়ে বসে আছে। তাই পরীর মত সুন্দরী মেয়ের সাথে সম্পর্ক হওয়াটা বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার ছিল বলা যায়। এখন অবশ্য সব দূর্ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। পাশে বসা সুট ট্যাই পড়া লোকটার মত একলোক আসতো পরীর বাসায়। পরীর কেমন যেন মামা হয়।এখন হেলাল জানে, না, সে পরীর কোন মামা নয়, সে লোকটার সাথে পরীর পরিচয় অনেক দিনের। পরী তাকে বাসায় আনার পর পরীর ফ্যামিলীরও ছেলেটাকে পছন্দ হয়ে যায়। দুই ফ্যামিলী রাজি হলে হয়ত বিয়ে হতেও বেশি দেরি নেই। তাই পাশে বসা স্যুট টাই পড়া লোকটাকে দেখে হেলালের খারাপ লাগাই স্বাভাবিক।

স্যুট টাই পরা পরীর সেই হবু জামাইটির সাথে একবার কথা হয়েছিল হেলালের । তার নাম রফিক। ব্যাংকে চাকরি করে । কিছু দিনের মাঝে ঢাকায় শিফট হবার কথা। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে হেলালের একটু গলা কেঁপে ওঠে। সে পরীর ছোট বোন পারুলকে প্রাইভেট পড়ায়।এটুকুই আর কোন পরিচয় নেই তার দেয়ার মত। আগে একটা ছিল, বাবা প্রাইমারী স্কুলের টিচার। রিটায়ার করার পর সেটা বলা যায় না।



সেদিনের পর পরীর সাথে দেখা হলে পরী সেই কথাটা বলে যা হেলাল কোন দিনও ভুলতে পারবে না হয়ত। পরী বলে "দেখ আমাদের মাঝে সবই ঠিক ছিল, আমি তোমাকে ভালবাসতাম, এখনও বাসি কিন্তু তুমি আমার জায়গায় এসে বলত তুমি কি করতে,ফ্যামিলীকে ফেলে দিতে, কষ্ট দিতে, তাদের মরা মুখ দেখতে নাকি নিজের সুখের জন্য তাদের ছেড়ে পালিয়ে যেতে?"



হেলালের সেখানে কিছু বলার মত মুখ ছিল না। শুধু পরীর মুখের দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা ছিল। পরীর একটু দয়ার জন্য তার বুক খা খা করছিল। যদি সে সব ছেড়ে হেলালের হাত ধরে।



সেদিন পরীর ছোট বোনকে পড়িয়ে আর বাসায় যায় নি হেলাল। নির্জন এক পার্কে বসে অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। সারারাত ঘুমায় নি।

সেদিনের পর থেকে পরী আর ফোন ধরেনি হেলালের।

তারপর কেটে গেছে কয়েক মাস। যতদিন গেছে পরীর কথা মনে পড়লেই কয়েকটন ওজনের পাথরের চাই যেন চাপ দিত তার বুকে। এখন অবশ্য অনেকটা স্বাভাবিক আগের থেকে। তবে চুপচাপ হয়ে গেছে খুব। কারও সাথে তেমন কথা বলে না। নিজের মনে থাকে সব সময়।



বাসের কন্ট্রাক্টর এসে হেলালের গায়ে ধাক্কা দেয়,হেলালের নামার জায়গা এসে গেছে। হেলালের কেমন তন্দ্রা ভাব এসে গিয়েছিল। সে বাস থেকে নামে। রাস্তায় নামিয়েই বাস ছেড়ে দেয়। বাসের পেছন দিক টা দেখা যাচ্ছে। পেছনের কাচে লেখা "পি আর পরিবহন"। P তে পরী, R তে রফিক, কি সুন্দর মিল । জীবনটা হয়ত এমনই কারও জন্য মিলে যায় কারও মেলেনা তাদের বাস নামিয়ে দেয় অজানার উদ্দেশ্যে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ভাল লাগল।

তবে আরেকটু গুছিয়ে লেখা যেত ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.