নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শখের বশেই লেখা আর লেখার ইচ্ছেটাই শখ

আমি আহাদ ১

বেকার মানুষ

আমি আহাদ ১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বহুদিন পরে তোমায়

০২ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৫২

হটাৎ পরিচয় দু’জনের, হিমেল আর তন্বী। প্রথম যোগাযোগ মোবাইলে, দু’জনেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাহিদ এর মাধ্যমে।
পাত্র হাজির, আর কেউ না হিমেল নিজেই সেই পাত্র, এই বলে ফোনালাপ শুরু হয় হিমেল আর তন্বীর। দু’জনের জগত আলাদা, চিন্তা আলাদা, বংশ, মান-সন্মান, চাওয়া-পাওয়া এমনকি তাদের শরীরের রং টাও আলাদা, তবুও তাদের মাঝে একটা মিল অন্তত আছে আর সেটা হচ্ছে, নিখাদ শিশুর সরলতা আর মুখরতা।
আর হয়ত এই কারনেই তন্বীকে ভালো লেগে যায় হিমেলের। কিন্তু বিষয়টা এমন যে, তন্বীরও ত ভালো লাগতে হবে হিমেল্কে...তাই হিমেল নিজের আমাবস্যার মুখ নিয়ে যায় তন্বীর সাথে দেখা করতে।
দু’জন সেদিন দেখা করে, কথা বলে, সে অনেক কথা……ফলাফল টা এমন দাড়ায় যে, কারোরই আরেক জনকে অপছন্দ হয়নি আবার পুরোপুরি পছন্দও হয়নি……কিছু পেতে হলে যেমন কিছু ছাড়তে হয়, অনেকটা তেমনই পরিস্থিতিতে পড়ে দুইজন……সময় নেয় দুইজন দুইজনের কাছেই…… একটা নির্দিষ্ট সময় পরে দেখা করার প্রত্যয়ে।
সময় যেতে থাকে, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যেতে থাকলেও হিমেল এর কোন খোঁজ পায় না তন্বী… সে অনেক চেষ্টা করে যোগাযোগ করার, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। তন্বী তার সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে হিমেলের শহরে তার বাড়ি পর্যন্ত চলে যায়… তবুও হিমেলকে খুঁজে পায় না…শুধু এতটুকুই জানতে পারে যে, হিমেলের বিয়ে হয়ে গেছে তবে কোথায় সেটা জানা যায়নি।
ব্যর্থতা নয়, ঠিক কি যেন এক অভিমান নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে তন্বী… তার সেই অভিমান ক্রমেই বাড়তে থাকে, আর একটা সময় পর সে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আর বিয়েই করবে না কখনও……… ক্ষণিকের ভালোলাগাটাকে সে এতটাই ভালোবেসে ফেলেছে যে, এই অভিমান অন্য কেউ আর ভাঙাতে পারবে না।
সাল ২০২২, ঢাকা থেকে দূরে কক্সবাজার, আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা নামক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে আসে তন্বী। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ আর চির পরিচিত শিশুদের হাঁসি মুখ, সব মিলিয়ে এটাই তন্বীর জীবন। ছোট্ট বাচ্চাদের সাথে থাকতে পারলে সব দুঃখ কষ্ট ভুলে সে নিজেই কখন বাচ্চা হয়ে উঠে তা বুঝতেও পারে না, তাইত জিবনে মূল লক্ষ্য এই বাচ্চাদের সংস্পর্শ।
সময় যেতে থাকে, এর মাঝেই একদিন ক্লাশ শেষে বাসায় ফেরার সময় একজন মানুষকে দেখতে পায়, যে কিনা কয়েকটা বাচ্চার সাথে কানামাছি খেলতেছে। মানুষটার চোখে গামছা বাঁধা আছে আর বাচ্চারা বিভিন্ন দিক থেকে তাকে ছুঁয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষটা বার বার চেষ্টা করেও কাউকে ধরতে পারছে না, আর এই ঘটনাটা দেখে হটাত করে তন্বী হেঁসে উঠে বেশ জোরে করেই। হাঁসির শব্দে সেই মানুষটি গামছা সরিয়ে হাঁসির উৎস তন্বীর দিকে তাকায়.........
হাঁসির মাঝেই হটাত করে কে যেন তন্বীর হৃদপিণ্ড টাকে চেপে ধরে...... শত জমানো অভিমান গুলো মনে পড়ে যেতে থাকে আর সেগুলোই অশ্রু হয়ে চোখ ছল ছল হয়ে উঠে, সামনে দাঁড়ান মানুষটির মুখ দেখে। এ যে, হিমেল !!!
কত প্রশ্ন কত না পাওয়া উত্তর, কত রাগ, কত ঘৃণা, কত অভিমান, কত ভালোবাসা সব সব কিছুই একের পর এক মনের পর্দায় ভাসতে থাকে.........
দু’জনের মাঝে প্রথম কথাটি হিমেল এ বলে............ খুব কষ্ট দিয়েছি তোমায়, তাই না? নিশ্চুপ থেকে, নির্বাক থেকে তোমায় অনেক কাঁদিয়েছি, তাই না? কথা না বলে, দেখা না করে, যোগাযোগ না করে তোমায় খুব জ্বালিয়েছি, কেন তোমায় কোন উত্তর না দিয়ে চোরের মত পালিয়ে গেছি, এটাই ত জানতে চাও তাই না?
তন্বী কত ভেবেছিল যে, যদি কখনও সেই মানুষটার সাথে কোথাও দেখা হয়ে যায় তবে সে রাগ করবে, রেগে রেগে কথা বলবে, রাগত স্বরের আড়ালে তার অভিমান টাকে লুকিয়ে রাখবে, কিন্তু হিমেলের কণ্ঠস্বর শুনে শত ইচ্ছা থাকলেও রাগ আর আসছে না কোনভাবেই, জমানো অভিমানগুলোই মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে......কেন...কেন...কেন এমন করেছিলে, উত্তর দাও?
হিমেল বলে, উত্তরটা পেতে হলে আমার বাসায় যেতে হবে আর এখন এমনিতেই দুপুর হতে যাচ্ছে, আমার বউ এর হাতের রান্নাটা খেয়ে দেখলে আর উত্তরটাও না হয় শুসুনলে............
এমন উত্তরে তন্বীর অভিমান হটাত জেদ এ পরিনত হয়ে যায়, সে আজকেই এর শেষ দেখে ছাড়তে চাই তাই সম্মত হয় হিমেলের বাসায় যেতে।।
হিমেলের বাসায় এসে তন্বী কাউকেই দেখতে পায় না, তাই জিজ্ঞাসা করে, তোমার বউ কোথায়? উত্তরে হিমেল বলে, ওহ মনেই ছিল না, তোমায় বলতে ভুলে গেছি, আমার বউ আর বাচ্চারা তাদের দেশের বাড়ি বেড়াতে গেছে (############)... তন্বী একটু বিস্মিত হয়, তোমার বাচ্চাও আছে!!! হিমেল বলে, হা, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, তরু আর তন্বী.........
বাচ্চার নাম শুনে, তন্বী হিমেলকে জিজ্ঞাস করতে চেয়েও করে না, আমার নামে নিজের মেয়ের নাম রেখেছ কেন? অপরাধবোধ থেকে??? এর পরিবর্তে জিজ্ঞাস করে, সেই কেন এর উত্তর দাও?
হিমেল বলে, রান্নাটা চড়িয়ে দেই আর উত্তরটাও বলি, অতঃপর হিমেল তার গল্প বলতে থাকে, কিভাবে সে তার বংশের মান সন্মান বাঁচাতে গিয়ে তার এক আত্মীয়কে বিয়ে করতে বাধ্য হয়... কিন্তু সে ত ভালোবাসে তন্বীকে ...... তাই তন্বীকে কাঁদিয়ে, অসহায় অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়, কেননা পিছন থেকে একবার তন্বীর ডাক শুনলে, হিমেল কোনভাবেই পারতো না, নিজের মনের বিরুদ্ধে যেয়ে বংশের মান সন্মান বাঁচাতে।
তন্বী বলে উঠে, এই তোমার কারন? আমি ত অবুঝ ছিলাম না, আমায় ত একটি বারের জন্য হলেও বলতে পারতে, বলতে পারতে যে, হ্যাঁ আমিও তোমায় ভালোবাসি কিন্তু ভাগ্য আমাদের বিরুদ্ধে...... আমি ত তোমায় আটকিয়ে রাখতাম না, তোমায় মুক্ত করে দিতাম হিমেল, কেননা আমিও যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
কোন মুখ নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াতাম বল? এতটুকু সাহস করতে পারি নাই.........কিছু সময় পরে, আমার উত্তর ত শুনলে... তোমার কথা বল, কেমন আছ তুমি, তন্বী?
হ্যাঁ, আমিও ভাল আছি। তুমি ত আর আসলে না, আমি অপেক্ষা করেছিলাম তোমার জন্য হিমেল, ৩ টা বছর ধরে, তবুও তুমি আসলে না, কি আর করতে পারতাম তাই, বিয়ে করে ফেললাম (##########)
এটা শুনে হিমেল বলে উঠে, ওহ, ভালো করেছ……স্বামী কি করে? দেখতে কেমন? আমার চাইতে নিশ্চয় সুন্দর তাই না?
তন্বী বলে, তিনি যেমনই হোন না কেন দেখতে ( আয়নায় হিমেলকে দেখে) আমি তাকে খুব ভালোবাসি আর এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।
খাওয়া দাওয়া শেষে বিদায় বেলায়, তন্বী বলে, রান্না ত বেশ ভালোই পারো, ভাবিকে ত তাহলে রান্নাই করতে হয় না।
হিমেল বলে, হুম…… আর মনে মনে বলে (কোন দিন রান্নাই করে নাই আমার জন্য) আর মুখে বলে, ভালোভাবে বাসায় যাও, দেরি হলে তোমায় স্বামী চিন্তা করবে তোমায় জন্য।
তন্বী বলে, তুমিও ভালো থেক……মনে মনে বলে (বাসায় ত কেউ নাই আমার অপেক্ষায়) ।

(############) হিমেল আর তন্বী, দুই জনেই শেষ পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
( হিমেল বিয়ে করতে বাধ্য হলেও ভালোবাসতো তন্বীকে, তাই শত ছল-চাতুরি করে হিমেলকে পেলেও, হিমেলের মনকে, ভালবাসাকে কোনদিনও পাবে না এটা বুঝতে পেরে বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় আত্মহত্যা করে হিমেলের সেই আত্মীয়। আর এই আত্মহত্যার জন্য হিমেল নিজেকেই দায়ী করে, আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে আর অন্য দিকে সে তন্বীর কাছেও ফিরে যেতে পারেনি তার নিজের কারনে পাওয়া তন্বীর কষ্টের কথা চিন্তা করে। আর তন্বী ত কোনদিন বিয়েই করেনি, হিমেলকে ভালবেসেছিল, বাসে, বাসবে বলে )
ভালোবাসা যখন কষ্টের কারন হয়ে দাড়ায় তখনি মানুষ ভালবাসতেই ভয় পায়, শত কষ্ট হলেও মিথ্যার হাঁসি মুখে হাঁসিয়ে বলে, আমি ভালো আছি, তুমিও ভালো থেক। আসলে সে ভালো থাকে না, থাকতে পারে না, পারে শুধুই ভালবাসতে…………….।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৩৪

ম্যাড ফর সামু বলেছেন: আহা ভালোবাসা!

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: পড়েই বুঝতে পেরেছি কাল্পনিক নয় বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন।

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:১৪

আমি আহাদ ১ বলেছেন: না ভাই, গল্পটা পুরোটাই কাল্পনিক। তবে কল্পনার সময়টা মাত্র একট রাত আর শুধু গল্পের চরিত্র দুটিই বাস্তব

৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: পড়েই বুঝতে পেরেছি কাল্পনিক নয় বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন।

৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বিপদের সময় মিথ্যা হয়ে যায় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়।

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:১৫

আমি আহাদ ১ বলেছেন: হুম। এটা প্রমাণিত সত্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.