নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী

সাধারণত গল্প লেখি, কবিতা আর তেমন মনে আসে না। এক কথায় গল্প নিয়ে আমার বসবাস। নিজের মত জোরালোভাবে প্রকাশের চেষ্টা করি। দেশকে ভালোবাসি, প্রেমকে শ্রদ্ধা করি।

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ বাঘ মামার চন্দ্রাভিজান

২৭ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫





হুট করে একদিন বাঘ মামার মনে হল, যাই ভাগ্নেকে দেখে আসি। অনেক দিন শিয়াল পণ্ডিত নাকি তার বাড়ি থেকে বের হয় না। ঘরের ভিতরেই কি সব করে। তাই বাঘ মামা শিয়াল পণ্ডিতের বাড়ি গিয়ে হাক-ডাক শুরু করল। শিয়াল পণ্ডিতের তবু খোঁজ নেই। শেষে বাঘ মামা গর্জন করতে করতে বলতে লাগল, ‘ভাগ্নে তাড়াতাড়ি বের হ, তা না হলে তোর ঘাড় মটকাবো।’



অমনি শিয়াল পণ্ডিত দরজা খুলে বাইরে এসে বলে, ‘মামা কি হয়েছে? আমাকে ডাকছ বুঝি?’



বাঘ মামা রাগে গর গর করতে করতে বলে, ‘তবে রে! আমাকে বোকা পেয়েছিস! কতক্ষণ ধরে হাক-ডাক করছি, বলি তোর কান কি চুলোয় গেছে?’



শিয়াল পণ্ডিত কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, ‘মামা তা হবে কেন? আমি তো কয়েকমাস ধরে বিরাট এক গবেষণা নিয়া ব্যস্ত।’



বাঘ মামা বলে, ‘গবেষণা! সে আবার কি জিনিস রে বাবা?’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘ও তুমি বুঝবে না মামা। যুগ পাল্টে গেছে। মানুষেরা এখন গবেষণা করে কত নিত্য নতুন জিনিস আবিষ্কার করছে। আর আমরা জঙ্গলের প্রাণীরাই শুধু পিছিয়ে আছি।’



বাঘ মামা বলে, ‘ধুর ছাই! এসব গবেষণা দিয়ে কি হবে? তুই বরং মুরগী ধর, পেট ঠিক তো সব ঠিক।’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘না মামা, ভাবছি চাঁদে যাব। এই বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে আর ভালো লাগে না। শুনলাম চাঁদে নাকি বড় বড় মোরগরা ঘুরে বেড়ায়। বেচারাদের থাকার ঘরও নেই।’



বাঘ মামা অবাক হয়ে বলে, ‘কি বলিস এসব! চাঁদে যাবি কিভাবে তুই?’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘গবেষণা মামা গবেষণা! এমন যন্ত্র আবিষ্কার করছি, যা দিয়ে চাঁদে কেন, তারাতেও যাওয়া যাবে। আজকালতো মানুষেরা প্রতিদিন হরিণের মাংস দিয়ে পিকনিক করতে চাঁদে যায়।’



বাঘ মামা উৎসুক হয়ে বলে, ‘চাঁদে হরিণও আছে নাকি রে ভাগ্নে!’



শিয়াল বলে, ‘তা আবার বলছ, শুনেছি লাখ লাখ হরিণ দল বেধে ঘুরে বেড়ায় চাঁদে। ওখানে তো ওদের ঘাড় মটকানোর মত কেউ নেই মামা।’



বাঘ মামা বলে, ‘কি যে বলিস! ঘাড় আর মটকায় কই? ইদানিং জঙ্গলে হরিণ কই। মাসে একটাকেও কবজায় আনতে পারি না। তবে আমার মনে খটকা লাগছে, চাঁদে তো ঘাস নেই, ওখানকার হরিণরা খায় কি?’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘চাঁদের হরিণ মামা, শুনেছি ওরা বালু খায়। চাঁদের হরিণের মাংস নাকি বেজায় মিষ্টি মামা।’



এ কথা শুনে বোকা বাঘ মামার জিভে জল চলে আসে। বাঘ মামা বলে, ‘ভাগ্নে চাঁদে যদি যাবি, আমাকে নিয়ে যা। দু’জন একসাথে মজা করে থাকা যাবে চাঁদে।’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘না মামা, তা হবে না। আমার যন্ত্রে একজনের বেশী যাওয়া যাবে না।’



বাঘ মামা বলে, ‘তাহলে তুই থেকে যা। আমি যাই।’



শিয়াল পণ্ডিত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, ‘ঠিক আছে মামা। তুমি বরং কালকে আসো, কালকেই কথা হবে।’



বাঘ মামা ভাগ্নের সম্মতি পেয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরল।



এদিকে শিয়াল পণ্ডিত পড়ল বিপাকে। বাঘকে কিভাবে বোকা বানাবে এটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগল। আবার শিয়াল পণ্ডিতের পেটটাও ক্ষুধায় চু চু করছে। অনেক দিন পেটে কিছু পড়ে নি।



পরদিন বাঘ মামা আসতেই শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা গবেষণা তো শেষের দিকে। মাস খানেক লাগবে যন্ত্রটা পুরোপুরি তৈরী করতে। তুমি এক কাজ করো মামা, আমার জন্য প্রতিদিন একটা করে মুরগী পাঠিয়ে দাও। বুঝছোই তো গবেষণা নিয়ে এত ব্যস্ত যে বাইরে বের হবারই সময় পায় না।’



বাঘ মামা রাজী হয়ে চলে গেল আর প্রতিদিন শিয়াল পণ্ডিতের জন্য একটা করে মুরগী পাঠাতে লাগল।



শিয়াল পণ্ডিত প্রতিদিন পেট পুরে খায় আর মনে মনে ফন্দি ফিকির করে কিভাবে বাঘকে বোকা বানানো যায়। আরাম আয়াসে এভাবেই একটি মাস চলে গেল।



এক মাস পরে বাঘ মামা এসে হাজির। বলে, ‘কি ভাগ্নে, তোর গবেষণা কি শেষ হল?’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘এইতো মামা, আর একটু বাকী আছে। আর সপ্তাহ খানেক লাগবে। তুমি এক সপ্তাহ পরে এসো।’



বাঘ মামা বলে, ‘ঠিক আছে। আমার কিন্তু আর তর সচ্ছে না, যেভাবেই হোক এক সপ্তাহেই কাজ শেষ কর।’



এক সপ্তাহ পর আবার একদিন বাঘ মামা হাজির। শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা চাঁদ তো রাতে থাকে, দিনে কি আর চাঁদ আছে। তুমি রাতে এসো, আমি সব ব্যবস্থা করে রাখছি।’



বাঘ মামা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ঠিকই বলেছিস ভাগ্নে। দেখ তো আমি কত বেকুব, কিছু না বুঝেই দিনের বেলায় চলে আসলাম। ঠিক আছে, আমি রাতেই আসছি।’



শিয়াল পণ্ডিত ভাবে, ‘দাঁড়াও মামা দেখাচ্ছি মজা।’



রাতে বাঘ মামা আসলে শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা চাঁদে তো যাবে, তবে চাঁদে তো চোখ খুলে যাওয়া যাবে না। কত পথ পাড়ি দিয়ে যাবে। তুমি তো ভয় পেয়ে যাবে মাঝ পথের রাক্ষস-খোক্ষস দেখে। আর তোমায় দেখতে পেলেতো রাক্ষস-খোক্ষসরা তোমায় চিবিয়ে খাবে।’



বোকা বাঘ বলে, ‘মাঝ পথে বুঝি রাক্ষস খোক্ষসদের রাজ্য। নে, আমার চোখ বেঁধে দে।’



শিয়াল পণ্ডিত বাঘের চোখ বেধে বাঘকে একটা বস্তার ভিতর পুরতে পুরতে বলে, ‘মামা যন্ত্রের ভিতর ঢুকালাম।’



বোকা বাঘ বলে, ‘ঢুকা ভাগ্নে। আমার কি যে আনন্দ লাগছে!’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘সাবধান মামা, চাঁদে এখন দিন। যেতে যেতে কিন্তু রাত হয়ে যাবে চাঁদে। যতক্ষণ দিন না হয় তুমি ততক্ষণ বের হবে না, এমনকি নড়াচড়াও করবে না।’



বোকা বাঘ বলে, ‘ঠিক আছে ভাগ্নে।’



শিয়াল পণ্ডিত এবার বোকা বাঘকে ভালো করে বস্তা বন্দী করে। তারপর বড় একটা দড়ি বস্তার সাথে বেঁধে টানতে টানতে বাঘকে নিয়ে চলল। বাঘতো নানা জিনিসের আঘাতে কাতরাতে কাতরাতে বলে, ‘কি করছিস ভাগ্নে? আমার তো বড্ড ব্যাথা লাগছে।’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘একটু সহ্য করো মামা। চাঁদে যাওয়া তো সহজ কাজ নয়। তুমি হরিণের কথা ভাবো, দেখবে একটুও কষ্ট লাগছে না।’



বেচারা বাঘ, বস্তার ভিতর গুঁতো খেতে খেতে এগুতে লাগল।



শিয়াল পণ্ডিত সেই বস্তা নিয়ে একটা বড় গাছের কাছে থামল। তারপর দড়ির মাথা একটা ডালের উপর দিয়ে পার করে বলে, ‘মামা, এখন তোমাকে চাঁদে পাঠাবো।’



বোকা বাঘ বলে, ‘তাড়াতাড়ি কর ভাগ্নে, আমারতো বেজায় গরম লাগছে।’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘সব কথা মনে আছে তো মামা?’



বোকা বাঘ বলে, ‘আছে, সব মনে আছে।’



শিয়াল পণ্ডিত গাছের ডালটার দিকে তাকিয়ে দেখে ডালটা খুব একটা শক্ত পোক্ত না। তারপর বলে, ‘আরেকটা কথা, যখন চাঁদে পৌঁছাবে তখন কিন্তু মড় মড় করে শব্দ হবে, তুমি আবার ওদিকে কান দিও না।’



বোকা বাঘ বলে, ‘ঠিক আছে।’



এবার দড়ির মাথা ধরে শিয়াল দিল হ্যাঁচকা টান। বাঘ মামাতো বস্তা বন্দী অবস্থায় ডালের সাথে ঝুলতে লাগল। শিয়াল পণ্ডিত চুপিচুপি দড়িটা ভালো করে বেঁধেই পগার পার।

আর বোকা বাঘ মামা ভাবল, সে বুঝি চাঁদে যাচ্ছে।



বাঘতো দু’ঘন্টার মধ্যেই ঘেমে-টেমে অস্থির। শেষমেশ আর থাকতে না পেরে বস্তার ভিতর নড়াচড়া শুরু করল। আর অমনি ডালটা মড় মড় করে ভেঙে গেল। বাঘতো সজোরে মাটিতে পড়লই তার উপর ডালটা পড়ল ঘাড়ে।



আর বোকা বাঘ মনে করল, এই বুঝি সে চাঁদে এসে নামল। শিয়ালের কথা মত অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকল বাঘ। এভাবে যখন রাত গড়িয়ে সকাল হল, তখনও বাঘ নড়াচড়া না করে কাঠের মত পড়ে রইল। যখন ভর দুপুর হল, বাঘ আর সহ্য করতে না পেরে চোখের বাঁধন খুলে, বস্তা ছিঁড়ে বের হয়ে আসল। বের হয়েই বাঘের বুঝতে বাকী থাকল না কিছু।



ঘাড়ে ব্যথা নিয়েই গর গর করতে করতে শিয়ালের বাড়িতে হানা দিল বাঘ মামা। শিয়ালকে না পেয়ে তছনছ করে দিল শিয়ালের ঘর। তন্নতন্ন করে খুঁজেও শিয়ালকে পেল না কোথাও। শেষে বাঘ মামা ভাবল, শিয়াল পণ্ডিত তাকে ফাঁকি দিয়ে একাই চাঁদে চলে গেছে।



---সমাপ্ত---

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪১

ফা হিম বলেছেন: ভালোই তো!!

ছোট্টবেলার স্বাদ পেলাম।

২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫০

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই!

২| ২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:৩৪

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: বাহ! বাহ! ভালো উপস্থাপনা ...
ভালোলাগা রইলো ...
সেই সঙ্গে রইলো শুভকামনা ...

২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০৬

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৩| ২৮ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৬:০১

জাফরুল মবীন বলেছেন: ছোট বাচ্চাদের শোনানোর মত দারুণ একটা গল্প।লেখককে ধন্যবাদ।

২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০৭

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী বলেছেন: ছোটদের নিয়ে আমি কাজ করে চলবো।

৪| ২৮ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩

মামুন রশিদ বলেছেন: বাহ, বেশ মজার ।

২৮ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৫

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.