![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধারণত গল্প লেখি, কবিতা আর তেমন মনে আসে না। এক কথায় গল্প নিয়ে আমার বসবাস। নিজের মত জোরালোভাবে প্রকাশের চেষ্টা করি। দেশকে ভালোবাসি, প্রেমকে শ্রদ্ধা করি।
আগের পর্ব--->>
যে প্রেমের জন্য রসায়নবিদ বিসর্জন দিল নিজের সুশ্রী বর্ণ, সেই প্রেমই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। এতে তার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হল। প্রেমের প্রতি তার বিশ্বাস কমে গেল। তার বিশ্বাস ছিল সেই বিশিষ্ট সাহিত্যিকের মত। যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় প্রেমের সংজ্ঞা উদঘাটন করতে ব্যর্থ হয়ে বলে বসলেন , ‘প্রেম স্বর্গীয় এবং এটিই প্রেমের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা।’
রসায়নবিদের সেই বিশ্বাসেও ছেদ পড়ল। সে তার মনকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে গবেষণায় মনোযোগ দেয়। তবে কথায় আছে, যা ঠিক মত শেষ হয় না তার কিছু না কিছু বাকী থাকে।
একদিন বিকালে রসায়নবিদ উদাসীন মনে বসে ছিল নদীর পাড়ে। নদীর পানির সাথে আলোর খেলা দেখতে দেখতে তার মন হারিয়ে গিয়েছিল কোন অজানা জগতে। বার বার সেই জগতের আবয়ব আবিষ্কারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছিল রসায়নবিদ। তার মনে হয়, হয়তো রসায়নের ছকে মেলে না এই জগত। তাই সেই জগত আবিষ্কারের নেশায় আজকাল বিরহ সাহিত্য চলে আসে তার মনে।
উদাসীন ভাবেই বসে ছিল রসায়নবিদ, কিন্তু হঠাৎ একসময় আবির্ভাব ঘটে রাজকুমারীর। রসায়নবিদ চমকে উঠে তাকায়। দম বন্ধ হয়ে আসে তার। এই কৃষ্ণবর্ণ পেল কোথায় সে? রাজকুমারীর এই বিরাট ক্ষতি কি তার কারণেই? এরূপ নানা প্রশ্নের ঝড় তার মনে।
আড়ালের ঘটনা এই ছিল যে, রাজকুমারী রসায়নবিদকে দিনের পর দিন রাতের পর রাত ভালোবেসেছে। তার ভালোবাসায় কোন শর্ত ছিল না। তাই এই কৃষ্ণবর্ণ রসায়নবিদের প্রতিও তার ভালোবাসার তিল পরিমাণ কমতি ছিল না। রসায়নবিদের প্রেম বিচ্ছেদের পর, রাজকুমারী খুশি হয়। রাজকুমারী বিপুল পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে এক রাজকর্মচারী নিযুক্ত করে রসায়নবিদের কৃষ্ণবর্ণ হবার রহস্য উদঘাটনের জন্য। কয়েক মাসের মধ্যেই রাজকর্মচারীটি তার কাজে সফল হয়। রাজকর্মচারী রসায়নবিদের গবেষণাগার থেকে কৃষ্ণবর্ণ হবার রাসায়নিক তরলের সূত্র চুরি করে। সূত্র অনুযায়ী তরল বানাতে এক প্রবীণ রসায়নবিদকে ব্যবহার করে রাজকুমারীকে। সেই রসায়নবিদও জানত না রাজকুমারীর এই পরিকল্পনার কথা। অথবা রাসায়নিক পদার্থটির কার্যক্ষমতার কথাও জানত না। কারণ সূত্রটি একদমই ব্যতিক্রমী ছিল। তাই সে বেশ আনন্দেই রাজকুমারীর কাজ করে দিল। রাজকুমারীও তাকে উপযুক্ত স্বর্ণমুদ্রা দিল।
রাজকুমারী সেদিন সকালেই হাতে পেয়েছিল রাসায়নিক তরলটি। দুপুরে তা দিয়ে স্নান করে, নিজের পোশাক পরিবর্তন করে ছদ্মবেশে সঙ্গোপনে রাজ প্রাসাদ থেকে বের হয় রাজকুমারী। তারপর রসায়নবিদের গবেষণাগারে খোঁজ করে, না পেয়েই সে খুঁজতে এসেছিল নদীর ধারে। কেননা সে জানত ইদানিং রসায়নবিদ নদীর ধারে একা একা বসে থাকে।
যাই হোক, রাজকুমারীর আবির্ভাবে রসায়নবিদের দৃষ্টি, মুখ কিছুই সরে না। কিভাবে কি হল, তা জিজ্ঞাসার ইচ্ছাও জাগে না তার হৃদয়ে। এভাবেই কিছু নীরব মুহূর্ত চলে যায়।
তারপর রাজকুমারী চোখে জল এনে রসায়নবিদকে প্রেম নিবেদন করে। আজ সাধ্য কার রাজকুমারীর এ প্রেম নিবেদন প্রত্যাখ্যান করে। রসায়নবিদও চোখে জল এনে তাকে আলিঙ্গন করে। রসায়নবিদ যেন তার কাঙ্ক্ষিত জগত আবিষ্কার করে ফেলে এ মুহূর্তে।
পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার আগেই রাজার কানে কথাটা পৌঁছে যায়। এ সংবাদে রাজা ভীষণ রেগে গেলেন। সভাষদেরা রসায়নবিদের আবিষ্কারকে জঘন্য উল্লেখ করে, আর রাজকুমারীর স্পর্ধা সব কিছু ছাড়িয়ে গেছে বলে উল্লেখ করে। রাজ পেয়াদারা ছোটে রসায়নবিদ আর রাজকুমারীকে আটক করতে। রসায়নবিদ ও রাজকুমারী তখন নদী পার হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে। কয়েকমাস পালিয়ে বেড়াল তারা। তবে শেষ রক্ষা হল না, বন্দী করা হল রসায়নবিদ ও রাজকুমারীকে।
তারপর দণ্ড ঠিক করতে আইনবিদদের নিয়ে বিশেষ সভা ডাকলেন রাজা। আইনবিদেরা আইনের পূজারী, মানবতার নয় এবং আইন কখনো কখনো নিষ্ঠুর। রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরাও থাকলেন সে সভায়।
কেউ বলে, ‘রাজার নাক কেটেছে রাজকুমারী, মৃত্যুদণ্ড! মৃত্যুদণ্ড! মৃত্যুদণ্ড! আর কোন পথ নাই। দু’জনারই মৃত্যুদণ্ড।’
‘কলঙ্ক যদি মুছতে চান, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া উপায় নাই।’
‘কুৎসিত হবে রাজকুমারী, এটা কি করে মানি?’
‘মাফ করবেন হুজুর, রাজ্য জুড়ে একি কথা, মৃত্যুদণ্ডই সঠিক রফা।’
এছাড়াও নানান কথা ওঠে সভায়। কেউ আবার বলেন, বনবাসের কথা।
অনেক চিন্তা-ভাবনার পর পরদিন মধ্যাহ্নে প্রজাদের সম্মুখে ঘোষণা করা হয় রসায়নবিদ ও রাজকুমারীর রাজদণ্ড- মৃত্যুদণ্ড। রাজ্যের অভিশাপ মোচনই রাজার কর্ম, তাই রাজা আজ নিষ্ঠুর। ওদিকে রাণী কেঁদে কেঁদে হয়রান। রাণী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকেন বিছানায়।
এরপর একদিন দিনের প্রথম প্রহরে সবার সম্মুখে রসায়নবিদ ও রাজকুমারীর গর্দান কেটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল। যার পাশেই ছিল একটি বড় পুরনো দিনের পাথর।
এই অবিচারে প্রেমিক-প্রেমিকেরা অঝোরে কাঁদল। আবার কেউ কেউ খুশীও হল। তবে প্রকৃতি থেমে থাকল না। মুহূর্তেই আকাশ কালো হয়ে উঠলো। শুরু হল প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি। সতের দিন টানা তুফান চলল রাজ্যে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল এতে। অনেক ঘর গেল চুরমার হয়ে, ক্ষেত-খামার গেল মাটির সাথে মিশে।
যখন তুফান শেষ হল, তখন দেখা গেল দু’টি রক্তবিন্দু সেই পাথর খণ্ডের গাঁয়ে, যেখান থেকে অঝোরে পড়ছে নোনা জল। এ জলের যেন শেষ নেই। রাজ্য জুড়ে রটে গেল এই আজব ঘটনা।
এখনও বিভিন্ন রাজ্য থেকে লোকজন পাথরটিকে দেখতে আসে। পাথরটিতে দু’টি রক্ত বিন্দু যেন কাঁদছে, আর বলছে, একই তো দেখতে ছিলাম আমরা। যখন শ্বেতবর্ণ ছিলাম তখনও, যখন কৃষ্ণবর্ণ হলাম তখনও। এই রক্তবিন্দু দু’টি যেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নীরবে বিদ্রোহ করে চলছে বছরের পর বছর।
এভাবেই শেষ হল রসায়নবিদের প্রেমের গল্প।
***সমাপ্ত***
১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪২
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী বলেছেন: ওকে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৩২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনি তো বেশ ভালো লিখেন, কিন্তু আপনার পাঠক বেশ কম। জানি না আপনি ব্লগে নতুন কি না, যদি নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন, ব্লগে অন্য ব্লগারদের সাথে ইন্টারেকশন এবং মতামত বিনিময় একটি গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। শুধু মাত্র লিখেই ব্লগ প্লাটফর্মের পরিপূর্ন মজা পাওয়া যায় না।
হ্যাপি ব্লগিং!