নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মায়াঘাসি

নাম শুনেই যার প্রেমে পড়ি

জুয়েল বিন জহির

বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্যের হাসি ফুটবেই

জুয়েল বিন জহির › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার সর্বশেষ রাঙামাটি ভ্রমনের কিছু অভিজ্ঞতা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা (দ্বিতীয় কিস্তি)

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:২৬

বরাবরের ন্যায় রিজার্ভ বাজারের এক কমদামী লেকভিউ (!) হোটেলে একটা রুম নিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে সকাল ৯ টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় চলে এলাম। আমার পরীক্ষা ছিল সকাল ১০টা থেকে, জেলা পরিষদ হল রুমে। বৈসাবি রেস্তোরার উল্টোদিকের এক রেস্টোরেন্টে বসে নাস্তা সেরে সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছি। রাস্তায় চোখ পড়তেই আমি চেচিয়ে উঠলাম- মনি! এই মনি! বলে। মনি মানে হলো আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু মনি চাকমা। এমন দিল খোলা মানুষ আমি আজ পর্যন্ত খুব বেশী দেখিনি। প্রথম পরিচয় হয়েছিল ১৯৯৮ সালের দিকে (বন্ধু ভদ্রা কাপিলানী তঞ্চ্যঙ্গার মাধ্যমে), যখন আমি ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। দীর্ঘ কয়েক বছরে মুক্তমঞ্চ, প্রান্তিক, ফয়জুন্নেসা হলের সামনের বেদিতে কত সন্ধ্যা আড্ডায় পার করেছি! যাক, মনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমি বের হয়ে তার সামনে গেলাম। সদা প্রাণচঞ্চল মনি অবাক বিষ্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে। কি রে বন্ধু সোনা, তুই এখানে কেন? কবে এলি? কেমন আছিস? ভদ্রার বাড়িতে যাবি নাকি?...একসাথে এরকম প্রশ্ন করে যেতে লাগল। আমি হাসতে লাগলাম আর মনে মনে বললাম-মনি তুই একটুও বদলাসনি। আমাদের দুই বন্ধুর অনেকদিন পর দেখা আর কথার বেড়াজালে খেয়াল করিনি মনির সাথে আরেকজন লোক দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছেন, শুনছেন আর মিটিমিটি হাসছেন। খেয়াল হতেই মনি পরিচয় করিয়ে দিল লোকটির সাথে। ওর স্বামী। সৈকত চাকমা। মনির কাছেই জানলাম ওদের বিয়ে হয়েছে মাস ২ বা ৩ একরকম কিছু একটা। মনি গতকাল রাতে রাঙামাটি এসেছে খাগড়াছড়ির শ্বশুরবাড়ি থেকে। জেলা পরিষদ ভবনে যাচ্ছে চাকরির পরীক্ষা দিতে। বুঝলাম দু'জন একই পথের পথিক। জেলা পরিষদ ভবনে আমরা একসাথে প্রায় তিনটা পর্যন্ত ছিলাম। পরস্পরের কাছ থেকে বন্ধু-বান্ধবদের খোঁজখবর নেয়া, ক্যাম্পাস জীবনের কত স্মৃতিচারণা! পরে মনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম বনরূপাতে। মনি তার শ্বশুড়বাড়ি খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করেছিল। এবার নয় পরের বার এদিকে আসলে অবশ্যই যাব এরকম কথা দিয়ে ওর কাছ থেকে রেহাই পেলাম। যাই হোক, বনরূপাতে এসে খুঁজে খুঁজে রিপনদের বাড়ি পৌছে গেলাম। পাহাড়ের খাড়া ঢালে সামান্য মাটি সমান করে তৈরী করা বাড়ি। নাস্তা সেরে রিপনকে নিয়ে বের বলাম জাক (রাঙামাটির এক পুরনো সাংস্কৃতিক সংগঠন) অফিসের উদ্দেশ্যে। সেখানে কিছুসময় কাটিয়ে তরুন কবি রনেল চাকমাকে সাথে নিয়ে বনরূপা বাজারে একচায়ের দোকানে (আসলে একটা সুপার মাকের্টের মতো) চা খেতে বসলাম। রিপন জানালো এটা ওদের আজিজ সুপার মার্কেট। সন্ধার পরে এখানে স্থানীয় কবি,সাহিতি্যক, নাট্যকার, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নাকি ভিড় জমায়। চা পান শেষে আমরা চলে এলাম বনরূপার ত্রিদিবনগর সড়ক ধরে একেবারে ঘাটের পাড়ে। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর সন্ধার দিকে আবার সেই আজিজ মার্কেটে। চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর নানান বিষয়ের আলোচনা করছি। মৃত্তিকার কাজ কর্ম আরো কিভাবে গোছানো যায়, পরবর্তী সংখ্যায় কাদের কাদের কাছ থেকে লেখাপত্র নেয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। একময় জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ-র রাজনৈতিক প্রসঙ্গও চলে এলো। পার্বত্যবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকারের আন্দোলন যে সুবিধাভোগীদের ভোগবাদী প্রতিযোগিতায় অনেকটাই ফিঁকে হয়ে পড়ছে-এটা যেমন ঠিক; তেমনি এটাও সত্য যে, ভ্রাতৃঘাতি ব্যাপারগুলোও পাহাড়ীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের আন্দোলনকে পেছনের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। আলোচনা কিছুদূর আগানোর পর একসময় রিপন আমার হাতে চাপ দিল। আমি পাত্তা না দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে লাগলাম। রিপন এবার আমার দিকে ঝুকে আস্তে আস্তে বলল, এই আলোচনা বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গ তুলতে। রিপনের চোখ ইশারায় তাকিয়ে দেখি আমাদের পাশে একটেবিলে কিছু যুবক বসে আছে এবং আমাদের কথাবার্তায় কানখাড়া করে আছে। কিছুক্ষণ পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। বের হয়ে রিপন জানালো এখানে এইসব বিষয় আলাপ করা সুবিধাজনক না। কারো মধে্যই কোন সহনশীলতা নেই। নিজেদের সমালোচনা জেএসএস বা ইউপিডিএফ কেউই হজম করতে পারে না, তাত্ত্বিক বাহাসতো অনেকদূরের বিষয়। যাই হোক এ নিয়ে অবশ্য কোন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। একটু সামনে এগিয়ে একটা হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের চেম্বারের সামনে আসতেই রিপনের আরো দু'জন বন্ধু এসে যোগ দিল। চেম্বারের ঠিক ডানপাশ দিয়ে একটি গলি চলে গেছে সোজা পূর্বদিকে। সেই গলি পেরিয়ে একটু পূর্বদিকে আগাতেই একেবারে লেকের পারে পাহাড়ের খাঁজ কেটে তিন স্তরের একটা রেস্টোরেন্টের ভেতের ঢুকে কাঠের সিঁড়ি ভেঙে সবচেয়ে নিচের স্তরে পরিপাটি করে সাজানো চেয়ারে গিয়ে বসলাম সবাই মিলে। রিপন এখানে চাকমাদের তৈরি ক্লান্তিনাশক পানীয় দোচুয়ানির ব্যবস্থা করল। আড্ডা এখানে বেশ জমে গেল। রিপনের বন্ধুরা জানাল এই । ঐতিহ্যবাহী ক্লান্তিনাশক পানীয় একসময় বাড়ি বাড়ি তৈরি হলেও এখন পার্বত্য এলাকার শহুরে-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজে এটাকে কিছুটা অবজ্ঞার চোখেই দেখে। তবে গ্রাম পর্যায়ে প্রথাগত এই রীতিটি এখনও বেশ প্রচলিত রয়ে গেছে। সবেচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটি হলো, আগে রাঙামাটির কোন রেস্টুরেন্টই নাকি এগুলো বিক্রি প্রচলন ছিল না। আদিবাসীদের সমাজ ব্যবস্থা কোনভাবেই একে প্রশ্রয় দিতো না। তবে বর্তমানে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদেই শহরের বেশ কিছু স্থানে এগুলো বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। বনরূপা ঘাটের উত্তর-পশ্চিম দিকের একটা পাহাড়েতো দোচুয়ানির বারই বসানো হয়েছে প্রশাসনিক সবুজ সংকেতে। যাতে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে এমন একটা যুব সমাজ গড়ে উঠুক যারা আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয়ে চরম অনাগ্রহী হবে। এতে করে নাকি প্রশাসনের পক্ষে অনেক কিছুই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে ধারণা প্রশাসনের। কিন্তু আমার কাছে মনে হলো প্রশাসনের এই কৌশল খুব একটা কাজে লাগবে না। ক্লান্তিনাশক পানীয় পান আদিবাসী জাতির আপন আপন সংস্কৃতিরই একটা অংশ। কাজেই এটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার খুব লাগসই হবে বলে মনে হয় না। যাই হোক পানপর্ব শেষে রিপন আবার তাদের বাড়ি নিয়ে গেল। রিপনদের বাড়ি ঢোকার আগে রাস্তায় পাশে দেখা হয়ে গেল সবুজের সাথে। সবুজকে চিনি আমাদের জাবি-র ২৮ ব্যাচের খুব কাছের একজন মানুষ ম্যাকচিং রাখাইনের মাধ্যমে। ক্যাম্পাসে-রাঙামাটিতে অনেকবার কথাবার্তা হয়েছে, রাঙাটিতে গিয়ে অনেকবার আতিথেয়তাও গ্রহণ করেছি সবুজের। সবুজের সাথে আরেকজন ছিলেন, রিপন পরিচয় করিয়ে দিল পার্বত্য পুরাণ এর সম্পাদক ফজলে এলাহীর সাথে। ফজলে এলাহী, সবুজরা গ্লোবাল ভিলেজ নামে একটা এনজিও নিয়ে কাজ করছেন। ফজলে এলাহীর দেয়া স্কুলবেলা পত্রিকা নিয়ে চলে গেলাম রিপনদের বাড়ি। গিয়ে দেখি বিশাল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। আমি একটু অস্বস্তিতেই পড়ে গেলাম। রিপনের মা সেদিন অনেক পদই রান্না করেছিলেন, কোনটার নামই মনে নেই। তবে নাপ্পি দিয়ে বরবটির একটা পদ বেশ ভালো লেগেছিল। কচি বাঁশের মোচার আইটেমটা ছিল বেশ সুস্বাদু । শূকরের মাংসও ছিল তবে তা তেল দিয়ে ভুনা করা হয়েছিল। খাওয়া-দাওয়া শেষে রিপনের দুইদাদা, দিদি, বাবা-মা'র সাথে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে আমি রিজার্ভ বাজার আমার হোটেলে চলে এলাম ।



শেষ কিস্তি আসছে শীঘ্রই...

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৩৫

ঠোটকাটা ব্লগার বলেছেন: আসুক।আপনার লেখা ভালো লাগছে।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৫৪

প্রাগৈতিহাসিক বলেছেন: অপেক্ষায় থাকলাম।

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:৩২

জুয়েল বিন জহির বলেছেন: ঠোটকাটা ব্লগার : সাহস পাচ্ছি।
প্রাগৈতিহাসিক: আসছি, ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:৫৫

অনিশ্চিত বলেছেন: ভালো লাগছে।

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:০৩

জুয়েল বিন জহির বলেছেন: অনিশ্চিত: আপনাকে নিশ্চিত (!) ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.