![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আকাশের অসীম প্রান্তরে তাকিয়ে থাকো। কখনো নিরাশ হয়ে যেও না। হয়তো একটা বাজপাখিও উড়ে আসতে পারে......
সে এক রাজপুত্র ছিল। ছিল বাউন্ডুলে একটা ছেলে। ছবির মাঝের ঐ ছেলেটিই সেই রাজপুত্র।
পূর্ব পাকিস্তানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইউনুস আহমেদ চৌধুরী। স্ত্রী সফিয়া বেগম। এই দম্পতির একটা মেয়ে হয়েছিল। বিন্দু ছিল মেয়েটির নাম। কিন্তু পৃথিবীতে বেশিদিন থাকে নি।
মেয়ের শোকে সাফিয়া বেগম একপ্রকার দিশেহারা হয়ে যায়। সেই সময় পৃথিবীতে আগমন ঘটে এক রাজপুত্রের। সময় ১৯৪৬সালের ১১জুলাই। পৃথিবীতে পদার্পন করে মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ।
বড়লোক বাবার আহ্লাহী মায়ের পুত্র ছিল আজাদ। শৈশব কেটেছিল তাদের নিউ ইস্কাটনের বাসা।
সে সময় নিউ ইস্কাটনের মত বাসা ছিল না। একপ্রকারর রাজপ্রাসাদেই থাকতো আজাদ। বাড়িটার রেকর্ড ৩৫মিলিমিটার সেলুলয়েডেে আজো আছে। "ডাকে পাখি খোলো আঁখি, দেখো সোনালী আকাশ, বহে ভোরের বাতাস" গানটার শুটির হয়েছিল আজাদের বাসায়।
আজাদ ছোট থেকেই সিনেমা পাগল ছিল। ইংরেজি সিনেমার পোকা। নাজ সিনেমা হলে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতো। নিজের টাকায় টিকিট কেটে দিতো সহপাঠীদের। কমিকস, সাহিত্যের পোকা ছিল। মিলস এন্ড বুন থেকে পেঙ্গুইন ক্লাসিকস, লরেন্স থেকে ডস্টয়ভস্কি, বঙ্কিম থেকেে শরৎচন্দ্র সবই পড়তো আজাদ। এমনকি বাউন্ডুলেটার ড্রয়ারে লুকানো থাকতো প্লেবয়। এলভিস প্রেসলির পোকা ছিল আজাদ। সেই সময় একবারে দেড়হাজার টাকারও রেকর্ড কিনতো।
ছোটবেলা থেকেই দূরন্ত ছিল ছেলেটা। মা কখনো গায়ে হাত তুলতো না। ছোট থেকেই শেখে সিগারেট ফোকা।
আজাদের বাবা ছিল বহুগামী। সাফিয়া বেগম রাগ করে আজাদকে নিয়ে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে আসে ফরাশগঞ্জের বাসায়। আজাদ সেদিন দেখেছিলো কিভাবে তার আহ্লাদী মায়ের ভিতর লুকিয়ে আছে কঠোর মানবী।
ফরাশগঞ্জের বাসায় এসে পাঁচদিন রুম থেকে বের হয়নি সাফিয়া বেগম। ইউনুস আহমেদ এসেছিলো দেখা করতে। কিন্তু আজাদ দরজায় পাহারা দিয়েছিলো রিভালবার হাতে। বাবাকে মায়ের কাছে আসতে দেয় নি। ঐটুকু বয়সেই বাবার দোকান থেকে আগেই রিভালবার নিয়েছিল পাগলটা। ডেয়ারিং না অনেক?
নতুন বাসায় এসে পড়ালেখা একপ্রকার ছেড়েই দেয় আজাদ। সারাদিন আড্ডা, সিনেমা আর সিগারেট ফোকা। যেই সেই সিগারেট ফুকতো না আজাদ। বিদেশী ব্রান্ড। সিগারেট কিনতে যেত স্টেডিয়ামের পাশে মোহামেডান ক্লাবের উল্টোদিকে রহিম মিয়ার দোকানে। আড়াই টাকার সিগারেটের জন্য আড়াই টাকার ট্যাক্সি ভাড়া। হেহ ডুডস, এটাকে বলে রাজকীয় স্টাইল!
এস.এস.সিতে সেকেন্ড ডিভিশনে পাস করে আজাদ। পড়তে যায় করাচি ইউনিভার্সিটিতে। প্রেমে পড়ে এক মেয়ের। নাম তার মিলি। আজো হয়তো কোন বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছে মিলির হৃদয়।
আজাদ মায়ের কাছে চিঠি পাঠাতো। এমনও দিন গেছে ধনী বাবার এই ছেলেটা চিঠি লেখার তের পয়সা জোগাড় করতে পারি নি।
মা,
কেমন আছ?আমি ভালো ভাবেই পৌছিয়াছি। এবং এখন ভালোই আছি।হরতাল বন্ধ হয়ে গেছে।রীতিমত ক্লাস হচ্ছে। পরীক্ষা শীঘ্রই হইবে। দোয়া করো। তোমার দোয়া ছাড়া কোন উপায় নাই। আমি নিজে বা কি ধরণের মানুষ আমি নিজেই বুঝতে পারি না। আচ্ছা মা তুমি বল তো আমি সব দিক থেকে কি ধরণের মানুষ। আমি তোমাক আঘাত না দেয়ার চেষ্টা করি। তুমি আমার মা দেখে বলছি এবং তোমার মত মা পাওয়া দুর্লভ। এই বিংশ শতাব্দিতে তোমার মত মা যে আছে কেহ বিশ্বাস করবেনা। আমি এগুলি নিজ হৃদয় থেকে বলছি। তোমার কাছে ভালো ছেলে সাজার জন্য নয়। যদি কোনদিন পৃথিবীতে তোমার দোয়ায় বড় নাম করবো। যদি হতে পারি পৃথিবীর সবাইকে জানাবো তোমার জীবনি, তোমার কথা। আমি ভালো পড়াশুনা করার চেষ্টা করছি।
ইতি
তোমার ছেলে আজাদ
এই ধনী বাবার ছেলেটায় যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধে। এক মাকে রেখে আরেক মাকে বাঁচাতে। সিদ্ধিরগঞ্জ অপারেশনের মত অভিযানে অংশ নেয়।
হয়তো ভাগ্য লিখতে লিখতে বিধাতার কলমের কালি শেষ হয়ে যায়! সমাপ্ত করে দেয় আজাদের অবাধ্যতা।
ধরা পড়ে সহযোদ্ধাদের সাথে। প্রচুর নির্যাতনের স্বীকার হয় আজাদ। কিন্তু মুখ খোলে নি।
মা সাফিয়া বেগম দেখতে যায় ছেলেকে। মারের চোটে বীভৎস ছেলেকে দেখে আঁতকে ওঠে মা।
আজাদ বলে, "আজ দুদিন ভাত খায় নি মা।"
আহ্লাদী সফিয়া বেগম সেদিনও কঠোর হয়ে ওঠে। ছেলেকে মুখ খুলতে নিষেধ করে।
আজাদ মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারতো না। মা খাওয়ায় দিতো। ছেলের জন্য মন কেঁদে ওঠে মায়ের। রান্না করে পরেরদিন নিয়ে যায় আজাদের জন্য।
কিন্তু বিধাতার যে কলমের কালি শেষ হয়ে গিছিলো। আর দেখা হয় নি আজাদের সাথে। ভাত খেতে পারে নি আজাদ। কোথায় গোপনে সহযোদ্ধাদের সাথে শেষ হয়ে গিছিলো আজাদ!
নাহ, আজাদকে ওরা শেষ করতে পারে নি। আজ আমরা আজাদ হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আজাদ বেঁচে আছে লাখো ব্যাকডেটেড তরুণের মাঝে। আজাদ আইডল হয়ে গেছে কিছু ছেলের কাছে।
ছেলেটার একটুপরেই জন্মবার্ষিকী । হয়তো স্বর্গের ওপারে বসেই দেখছে আমাদের। হয়তো আজো তার মন টানে মিলির জন্যে। আজো হয়তো মায়ের হাতে ভাত খাওয়ার জন্য কেঁদে ওঠে... হয়তো কোন মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার খবর পেয়ে বিষণ্ণ হয়ে যায়। অভিমান জমা হয় যখন স্বর্গে বসে দেখে রাজাকারের জন্য শোক প্রকাশ হয়েছে... কিন্তু আজাদ এখনো স্বপ্ন দেখে যায় ওখানেই বসে!
আমাদের আজাদ। বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে। বাঁচিয়ে রাখবো আমরা..
২| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
চোখের পানি ঝরালেন
৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৭
প্রামানিক বলেছেন: আজাদের কষ্টের কাহিনী পড়ে গা শিউরে উঠল।
৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৩৯
নেফার সেটি বলেছেন: আজাদের মা সারাজীবনে আর কখনো ভাত মুখে তুলেন নি।
৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪৬
সুমন কর বলেছেন: আমাদের আজাদ। বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে। বাঁচিয়ে রাখবো আমরা......
চমৎকার একটি পোস্টের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্লাস।
১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
নেফার সেটি বলেছেন: আপনাকে স্বাগতম।
৬| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৫১
সাদী ফেরদৌস বলেছেন: আসুন না আমরা সবাই আবার পাকিস্তানি ও এদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে তিব্র ঘৃণা আবার জাগ্রত করি , আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে যেভাবেই হোক জানাতে হবে আজাদ দের কাহিনি । তাদের জানাতে হবে কেন আমরা গোলাম আজম দের প্রচণ্ড ঘৃণা করবো , কেন আমরা ঘৃণা করবো তাদেরকে যারা তাদের কে পাকিস্তান থেকে এদেশে ফিরিয়ে এনে আবার নাগরিকত্ব দিয়েছিলো ।
৭| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২৪
আব্দুল্যাহ বলেছেন: আনিসুল হকের লেখা "মা" পড়েছিলাম, আজ আজাদকে দেখলাম।
ধন্যবাদ
৮| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
উর্বি বলেছেন: ভালো লাগল
৯| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬
জুলফিকারজিসান বলেছেন: ইনি আমাদের কলেজের বড় ভাই ছিল, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ।
প্রাউড টু বি অ্যা রেমিয়ান।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
দেশ মাতৃকার জন্য নিজের মায়ের বুক খালি করলো।