![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আকাশের অসীম প্রান্তরে তাকিয়ে থাকো। কখনো নিরাশ হয়ে যেও না। হয়তো একটা বাজপাখিও উড়ে আসতে পারে......
"স্যার, এভাবে উচ্চতা মেপে ভর্তি করা যাবে না। এটা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই। আমাদের হাতে একটা করে গ্রেনেড দেন, শত্রুর বাঙ্কার দেখিয়ে দেন, যে একাকী শত্রুর বাঙ্কারের ওপর গ্রেনেড ছুঁড়ে আসতে পারবে তাকেই ভর্তি করুন। সাহসের পরীক্ষা নিন।"
১৯৭১ সালের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ....
১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে পূর্ণাঙ্গ পদাতিক ডিভিশনে পরিণত করতে হবে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে ৬০০ তরুণ কে ভর্তি করার নির্দেশ এলো।
এতো তরুনদের যোগাড় করার জন্য ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরতে হবে। ক্যাপ্টেন হাফিজ এই উদ্দেশ্যেই ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরছে।
সত্তর সালে যশোরকুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তারা মিয়া এমনই একটা ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ক্যাম্পটিতে প্রায় চারশ তরুন। একবেলা করে গন্ধযুক্ত মোটাচালের ভাত আর কুমড়োর তরকারি খেয়ে ক্যাম্পে পড়ে থাকে। শুধু একটাই আশা, কবে তাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে বলা হবে যাও শত্রুর সাথে জীবন নিয়ে জুয়া খেলে আসো। এ খেলায় রানার্সআপ বলে কিছুই নেই। হয় জয়ী হতে হবে না হলে নির্মম মৃত্যু!!!
ক্যাপ্টেন হাফিজের পা পড়লো এই ক্যাম্পেই। তার আসার খবর শুনেই ক্যাম্পে আনন্দের স্রোত বইলো। এবারই তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। অস্ত্রটা যেন এদের কাছে ঈদের পোশাকের মত।
তারা মিয়া হুইসেল বাজাতেই পনেরো থেকে পয়তাল্লিশ বছরের ছেলেরা লাইনে দাড়িয়ে গেল।
এবার শুরু বাছাই। সশস্ত্রবাহিনীর জন্য বাছাই। সবাইকে তো আর নেওয়া যাবে না। উচ্চতা নির্ধারণ করা হলো পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি।
নব্বই শতাংশ ছেলে বাদ পড়লো। ক্যাপ্টেন হাফিজকে ঘিরে বাদ পড়া ছেলেরা কাকুতি মিনতি শুরু করলো। কেউ কেউ কেঁদে দিলো!!!
যশোরের পোলা মহিউদ্দিন। যশোর শহরে তার বাবার একটি বন্দুুকের দোকান রয়েছে। ছোটখাট হালকা গড়নের পোলাটা। উচ্চতার জন্য সেও বাদ পড়লো। কিন্তু সে দমবার পাত্র নয়...
শুয়ে পড়লো ক্যাপ্টেন হাফিজের গাড়ির সামনে!!! তাকে ভর্তি করা না হলে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হোক তার উপর দিয়ে। চার পাঁচজন মিলে জোর করে টেনে তুললো তাকে।
"স্যার, এভাবে উচ্চতা মেপে ভর্তি করা যাবে না। এটা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই। আমাদের হাতে একটা করে গ্রেনেড দেন, শত্রুর বাঙ্কার দেখিয়ে দেন, যে একাকী শত্রুর বাঙ্কারের ওপর গ্রেনেড ছুঁড়ে আসতে পারবে তাকেই ভর্তি করুন। সাহসের পরীক্ষা নিন।"
- গর্জে ওঠে সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো আমাদের যশোরের পোলা মহিউদ্দিন।
ক্যাপ্টেন হাফিজ তার সাহস, তেজ আর জেদের কাছে নত হলেন। বাধ্য হলেন তাকে ভর্তি করতে।
এভাবেই এমন সব জেদী আর তেজী বাঘেদের নিয়ে গঠিত হলো ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টগুলো। ১ম, ৩য় ও ৮ম রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত হলো আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ১ম পদাতিক বিগ্রেড জেড ফোর্স।
এই জেড ফোর্সের মহিউদ্দিনের মত খর্বাকৃতির বাঘেরা সেদিন নিরাশ করে নি। এই পাগলাগুলোর তেজে ১৪ই ডিসেম্বর সিলেটের এমসি কলেজে ছাই হয়ে যায় পাকিদের প্রতিরক্ষা।
হ্যা বিশ্বের নামকরা!!! পাকি সেনাদের সেদিন হারায়ছিলো এই ছোটখাটো পোলা গুলো।
১৯৭১ এর এই মুক্তিকামী পোলা গুলো উচ্চতায় ছোট হতে পারে কিন্তু তেজের দিক থেকে ছিলো শিকারী রয়েল বেঙ্গলের মত। তারা অগ্নি থাবা বসিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছিল, রক্ষা করেছিলো প্রতি বিন্দু মাটি।
এই ২০১৫সালেও আমাদের কিছু মহিউদ্দিনের দরকার...
কিন্তু সেটা সম্ভব না!!!!
কারণ আজ এদেশে পাকিস্তানের সাপোর্টে ব্যানার বানানো হয়। পারলে তরুনীরা নিজের ভার্জিনিটা! আফ্রিদিকে দিয়ে দেয়। আজ এদেশে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে নাস্তিক হতে হয়।
আজ এদেশের অনেক পোলায় একাত্তরকে গন্ডগোল বলতে ভালবাসে। তারা ইভটিজিংকে হ্যাডম বলে আর দেশপ্রেমের কথা বললে বত্রিশটা দাঁত বাইর কইরা পেপসোডেন্ট হাসি দেয়।
তারা কখনোই মহিউদ্দিনের কথা জানতে চাই না। তারা বুঝতে পারে না যে তারা একেকটা কাপুরুষ আর একাত্তরের মহিউদ্দিনরা ছিল হ্যাডমধারী...
কি দরকার এত কিছু বলার!!!!
তথ্য কৃতজ্ঞতা: [ জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা- মেজর কামরুল হাসান ভূইয়া]
©somewhere in net ltd.