![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জলের কুমির কেউ যদি গহিন অরণ্যময় পাহাড়চূড়ায় দেখতে পান, একটু অবাক তো হবেনই। একটি-দুটি নয়, ৪৯টি কুমির একসঙ্গে বিচরণ করছে পাহাড়চূড়ার এক বিশাল আস্তানায়। এখানেও তারা দিব্যি সামুদ্রিক মাছ, হাঁস, মুরগি ও গরুর মাংসে উদর পূর্তি করে চলেছে। মানুষ দেখলে কুমিরগুলো হাঁ করে থাকে। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মানুষকে আক্রমণ করার উপায় নেই এদের। অরণ্যবাসী এই কুমির দেখতে হলে যেতে হবে পার্বত্য বান্দরবানে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে, ঘুমধুম ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তুমব্রু গ্রামে রয়েছে এরা।
গ্রামটি মিয়ানমার সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি। যেখানে কুমির দেখার পাশাপাশি পাহাড়চূড়া থেকে মিয়ানমারও দেখা যায়। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্রের সামনে দিয়ে গহিন অরণ্যের দিকে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা পথে গেলে কুমিরের এই বিচরণক্ষেত্র পরিদর্শন করা যায়।
৩০ একরের বেশি পাহাড় ঘিরে কুমিরের এই প্রজননকেন্দ্রটি স্থাপন করেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড। ২০০৯ সালের মার্চে কুমির চাষের জন্য পাহাড়ের বিশাল অংশজুড়ে নির্মাণ করা হয় অবকাঠামো। এ বছর গত আগস্ট মাসে আট থেকে ১০ বছর বয়সী ৫০টি কুমির মালয়েশিয়া থেকে কিনে এনে এখানে ছাড়া হয়। প্রতিটির দাম তিন লাখ টাকা। একটি কুমির অসুস্থ হয়ে মারা গেলেও বাকিগুলো ভালো আছে। কিছু দিনের মধ্যে এখানে আরও ৩০০ পূর্ণ বয়সী কুমির ছাড়বে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক হাসান জাহিদ চৌধুরী জানান, এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় কুমির চাষ প্রকল্প। প্রথম কুমির চাষ প্রকল্পটি ময়মনসিংহে। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। খামারে অবমুক্ত করা ৪৯টি কুমিরের মধ্যে ৩১টি স্ত্রী কুমির। আগামী বছরের মে, জুন ও জুলাইয়ে মা কুমিরগুলো ডিম ছাড়বে। একটি কুমির ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দেয়। চলতি ডিসেম্বরের শেষের দিকে পূর্ণ বয়সী আরও ৩০০ কুমির এই খামারে অবমুক্ত করার পাশাপাশি কয়েক মাসের মধ্যে আরও দুই হাজার ৩০০টি বাচ্চা কুমির ছাড়া হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে খামারটিকে কুমির চাষের জন্য এশিয়ার বৃহত্তম খামার হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি কুমিরের খামার এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে প্রজাপতি চাষকেন্দ্র, বার্ডপার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, প্রাণী জাদুঘর ও পর্যটকদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা।
প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, আট থেকে ১০ বছর বয়সী সাত-আট ফুট লম্বা কুমিরগুলো কয়েক মাসের মধ্যে ডিম ছাড়বে। এ জন্য মা কুমিরগুলোকে বিশেষ যত্ন নিতে হচ্ছে। কুমিরের ডিম পাড়া নির্ভর করে এদের আকারের ওপর। সাত ফুটের বেশি লম্বা হলে মা কুমির ডিম দেয়। এ জন্য আলোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রকল্পে বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় এতে কিছুটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কুমিরগুলোকে সপ্তাহে একবার সামুদ্রিক মাছ, মুরগি ও গরুর মাংস খাওয়ানো হয়। এতে মাসে খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কুমিরগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন।
কুমির প্রজননকেন্দ্র পরিদর্শনে আসা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কলেজছাত্র নওরোজ শামসের জানান, বাংলাদেশে একসঙ্গে এতগুলো কুমির দেখার সুযোগ নেই। যাতায়াতের ব্যবস্থা একটু ভালো হলে এখানে আরও বেশিসংখ্যক পর্যটক আসতে আগ্রহী হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ বলেন, পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে এই কুমির প্রজননকেন্দ্রটি বড় ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে উৎপাদিত কুমির বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব হবে।
©somewhere in net ltd.