![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ থেকে আড়াইহাজার বছর আগে বসন্ত শরৎ যুগে জিলু নামের এক লোক ছিল। সে ছিল কুনফুসিয়াসের সবচেয়ে বয়স্ক ছাত্র । বর্তমানে প্রচলিত "শত মাইল খাদ্য বহন" গল্পটি তারই মা-বাবার প্রতি সন্তানোচিত সম্মান প্রদর্শন স্বরূপ আলোচিত গল্প।
জিলুর মা-বাবা দুজনেই কৃষক ছিলেন। টানা কয়েক বছরের যুদ্ধে জীবনযাপন করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন জিলু বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরে মা বাবার আলোচনা শুনতে পেল, "মাছ মাংস তো দূরের কথা, সামান্য কয়টা ভাত খেয়ে কোনো মতে পেট ভরানোতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।" জিলু একথা শুনে লজ্জিত হলো এবং সংকল্প করল যে, "আমি অবশ্যই মা বাবাকে পেট ভরে খাওয়াবো, কখনোই দুঃখ কষ্ট অনুভব করতে দেব না।"
জিলু শুনেছিল যে শত মাইল দূরে একজন ধনী লোক আছে। তার বাড়িতে কাজের লোকের অভাব। সে সেখানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিল। বাড়ির মালিক লক্ষ করল যে জিলু অত্যন্ত শক্তিশালী। এটা মালিককে খুবই প্রভাবিত করেছে। সে অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে সব কাজ সম্পাদন করতে লাগলো। বাড়ির মালিক এই জোয়ান ছেলেটিকে অনেক পছন্দ করলো। ছয় মাস পর জিলু বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় মালিক তাকে তার মজুরির চেয়ে অনেক অনেক বেশি রৌপ্যমুদ্রা দিল। কিন্তু, জিলু সততার সাথে মালিককে এ কথাটি জানালো। মালিক হেসে উত্তর দিলেন যে, "বৎস, মজুরি ভুল দিইনি। তুমি অত্যন্ত পরিশ্রমের সাথে কাজ সম্পন্ন করেছ। এগুলো হচ্ছে তোমাকে দেয়া আমার পুরষ্কার।"
মালিককে ধন্যবাদ দিয়ে খুশি মনে সে বাড়ির পথে রওনা দিল। পথিমধ্যে শহর থেকে এক বস্তা চাউল, কিছু মাংস এবং দুইটি মাছ কিনে নিজের পিঠে তুলে নিলো। আবহাওয়া ছিল খুবই ঠান্ডা, তুষারে ঢাকা রাস্তা খুবই পিচ্ছিল । জিলু অসতর্কতা বশত পিছলে যাচ্ছিল। পিঠে বহন করা খাবার ও প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। ঠান্ডায় হাত জমে যাওয়ায় দুই হাত দিয়ে বস্তা আগলে রাখতে পারছিল না। এজন্য একটু বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে উষ্ণ করে আবারো পথ চলা শুরু করলো। অবশেষে সে বাড়ি পৌঁছে মা-বাবার সাথে দেখা করলো। তার বহন করে নিয়ে আসা খাবার এবং কাজের মাধ্যমে আয় করার সমস্ত টাকা-পয়সা মা-বাবাকে দিয়ে দিল। পরিবারের সব সদস্য একসাথে খুশিমনে খাবার রান্না করে পেট ভরে খাবার খেলো।
পরবর্তীতে জিলুর মা-বাবা মৃত্যু বরণ করলো। জিলুও দক্ষিণের চু রাজ্যে চলে গেল। চু রাজ্যের রাজার কাছে জিলুকে অনেক সামর্থ্যবান এবং জ্ঞানী লোক মনে হলো। রাজা তাকে উচ্চ বেতন সহ 'সরকারি অফিসার' পদে নিযুক্ত করলেন। কিন্তু সে জাঁকজমকপূর্ণ জীবন পেয়েও খুশি হয়নি। বরং, আফসোসের সাথে বলেছে যে, "অনেক আশা করেছিলাম মা বাবার সাথে দিনগুলো অতিক্রম করবো। এখন আমার অনেকগুলো অর্জন, অনেক অনেক সম্পদ। কিন্তু, তারা ইতোমধ্যে মারা গেছে। এখন তাদের জন্য পিঠে খাদ্য বহন করে নিয়ে যেতে চাইলেও এটা অসম্ভব।"
প্রাচীন চীনে একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিল, "百善孝为先” মানে, জগতে যত সৎকাজ আছে তার মধ্যে পিতা-মাতার সেবা সর্বোত্তম।
জিলু তার মা-বাবাকে ভালো খাবার খাওয়ানোর জন্য জগতের কোনো দুঃখ কষ্টকে ভয় করেনি।
©somewhere in net ltd.