নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানব

যা দেখি যেভাবে দেখি (কহিলো সে ফিরে দেখো, দেখিলাম থামি , সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি...) [email protected]

মুক্ত মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি: পরানের গহীন ছায়াপথ

১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:১১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি: পরানের গহীন ছায়াপথ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে কেটেছে তারুণ্যের এক অস্থির ঘোরলাগা সময়। ঘোরলাগা সময় এ জন্যে বললাম, যে আজ মাঝ বয়সেরও ঢের পেরিয়ে এসে পেছন ফিরে যখন তাকাই, তখন মনে হয় এই ছাপোষা-আটপৌরে আমিই কি তুমুল সময় অতিবাহিত করেছি একদা। ১৯৮৫ সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসি। বলাযায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরোটাই কেটেছে সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-গণআন্দোলনের আমলে। সময়টা ছিলো মিছিল, বুলেট, অশ্রু আর রক্তমাখা। সে সময়ের এবং পরবর্তী এক বছরের দু'টি দিনের দুটি ঘটনা স্মৃতি থেকে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

এক: ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে: অম্ল-মধুর দুই অভিগ্গতা

প্রথমে অম্ল অভিগ্গতাটা বলে নেই। মধুরটা একটু পরে বলি। উঠেছিলাম এক বন্ধুর প্রতিবেশী বড়ভাইয়ের আনুকুল্যে, মোহসীন হল এক্সটেনশনে, সেখানে পরে কুয়েত মৈত্রী নামে ছাত্রী হল হয়েছে বলে শুনেছি। ভর্তি পরীক্ষা পরের দিন, আগের দিন গেছি ক্যাম্পাস 'রেকি' করতে, মানে কোথায় সীট পড়বে, কোথায় কোন হল অবস্থিত এসব দেখতে আর কি। একাই। প্রথমে ঢুকলাম গিয়ে এফ. রহমান হলে। হলের ভেতরে রিসেপশনিষ্ট এর টেবিলের সামনে দেখি অনেক গুলো মাস্তান বসা, সামনে অনেকগুলো আগ্নেয়াস্ত্র টেবিলের ওপরে রাখা। আমি ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে গেলেও, ছয়ফুটি, সতেরো বছরের টীনএজ চেহারায় যথা সম্ভব "নির্বিকারত্ব" এবং "বড়ত্ব" ফুটিয়ে তুলে লম্বা পদক্ষেপে হলের ভেতরে প্রবেশ করলাম (ভাবখানা যেন এসব আমার অনেক দিনের চেনা.. ভাবখানা, এমন অস্ত্রতো কতোই দেখেছি, যদিও ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে গেছি "প্রাচ্যের অক্সফোর্ড"-এ এসব ওয়েষ্টার্ণ কারবার দেখে!..)। ঢোকার সময়ে কোন বাধা এলোনা, গোল বাধলো হল থেকে বেরোতে গিয়ে। অস্ত্রধারী এক নীল ব্জিন্সপড়া মাস্তাণ (পরে জেনেছি এরা ছিলো জেনারেল এরশাদের ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনী নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ দলের ছাত্রনামধারী বহিরাগত পান্ডা যারা তখন এফ. রহমান হল দখল ক'রে অবস্থান করছিলো।

: এই যে শোনেন, হলে কার কাছে এসেছিলেন? (পান্ডা মহাশয় আমাকে আপনি করে বলছেন কারন তিনি নিশ্চিত নন কে এই আত্ববিশ্বাসী তরুণ, যে কিনা হন হন করে হলের ভেতরে ঢুকলো, এখন ঠিক তেমনি ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে)।

: না মানে বিশেষ কারো কাছে আসিনি, একটু হলটা ঘুরে দেখলাম

: (এবারে পান্ডার স্বর একটু চড়া হলো): আপার নাম কি, কোথায় থাকেন, এখানে কেন এসেছেন?

: (আমি এবারে সত্য প্রকাশে বাধ্য হয়ে): জ্বী, ভর্তি পরীক্ষা দিতে আজই বগুড়া থেকে এসেছি, আগামী কাল পরীক্ষা, তাই আজ একটু ক্যাম্পাসে এসেছি সীট প্ল্যান দেখতে, কলাভবনের পাশেই এই হলটা দেখে একটু ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো, তাই এসেছিলাম।

:(এবারে আমার বয়স এবং ক্যাম্পাসে নতুন আগমনের সংবাদ শুনে পান্ডা মহাশয় স্বমুর্তিতে আবির্ভুত, আপনি থেকে ডাইরেক্ট এ্যাকশন তুই তোকারী): শালা দুই দিন বয়সী পোলা হয়ে তুই এমন ভাবে হলে চলাফেরা করিস যে মনে হয় তুই আমাদের চেয়েও বড় রংবাজ। আর কোনদিন হলের গেটে আমাদের পোলাপানকে যদি সালাম-আদাব না দিয়ে ঢুকিস তবে...।
: বাকীটুকু আর শোনার ইচ্ছা ছিলোনা, তাই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের এক হলের ওয়েষ্টার্ণ সন্ত্রাসীদের হুমকীর কথা শুনতে শুনতে হল ছেড়ে বেরিয়ে এলাম।

হল থেকে বেরিয়ে কলা ভবনের দিকে আসতে আসতে শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল হিমশীতল এক অনুভুতি, এই বুঝি কাটা রাইফেলের বুলেট ছুটে এলো আমার পিঠে। আরো ভাবছিলাম, পিঠে বুলেট বিদ্ধ আমাকে পেলে পরদিন বন্ধু পরিজন কি আমাকে ভীরু ভাববে, আমি তো বিশ্বাস করি গড়-পড়তা মানুষের চেয়ে আমি ভীরু নই। তবে....। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে এলো।

কলা ভবনের সামনে এসে আমি অপলক চোখে চেয়ে আছি এই ভাস্কর্যের দিকে। এক জন প্যান্ট পরা তরুণ ছাত্র, একজন শাড়ী পরা তরুণী, নার্সিং এর বাক্স কাঁধে, একজন লুন্গী মালকোচা পরা গ্রামীন তারুণ্য, ভুমিপুত্র। প্রথমেই নজর কাড়লো দুটো বিষয়: এক, পোশাকে বাংলাদেশীয় হলেই এই তিন জনের চেহারায়, বিশেষ ক'রে তরুণ দু'জনের শক্ত চোয়ালের দীর্ঘদেহী অবয়বে গ্রীক ছাপই বেশী, দুই, সমাজে প্যাণ্ট-শার্ট-স্যুট পরিহিত দের আধিপত্য থাকলেও, এই ভাস্কর্যে যেন লুংগি পরা ভূমিপুত্রকে প্রাধান্য দিতেই কেন্দ্রে স্থান দেয়া হয়েছে। এই ভাষ্কর্য যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেবল নিছক ক্ষমতার বদল নয় , বরং দেশ পরিচালনায় তৃণমুলের মানুষদের প্রতিনিধিত্ব রাখার আবাহন। এমন সময়ে লক্ষ্য করলাম বেদীতে চার মাঝবয়সী বন্ধু পাশে প্রাইভেট কার পার্ক ক'রে রেখে যেন অফিস শেষের কফি হাউসের আড্ডা দিচ্ছেন। আমার পরিচয় জানতে চেয়ে তাঁদের একজন আমাকে অবাক ক'রে দিয়ে বললেন: আমরা এই ভাষ্কর্যটি নির্মান করেছি, আমরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। আমি জানতে চাইলাম আপনাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ খালিদ কে? চার মাঝ বয়েসী মানুষ মিটি মিটি হাসলেন, কোন উত্তর দিলেন না। আমি রোমান্চিত মনে হলে ফিরলাম, এক দিনে দু'টো ঘটনা, একটি অম্ল, অন্যটি মধুর!

দুই: বাবা বিয়া করছো?

ছাত্র রাজনীতির নামে দূর্বৃত্তদের অত্যাচার এবং সংশ্লিষ্ট প্রাধ্যক্ষদের ক্ষমাহীন নীরবতার সেই পুরনো গল্প। আজ থেকে অনেক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হ'লের বৈধ ছাত্র হিসবে হ'লে থাকতে গিয়ে দেখি, ঠাঁই নেই। অছাত্র, অস্ত্রধারী মাস্তানরা রয়েছে হলে হলে, কোন রুমে তাদের অস্ত্রাগার, কোন রুম তাদের কিচেন ইত্যাদি (অবিশ্বাস্য শোনালেও, এটাই ছিলো বাস্তবতা)। বড় আশা ক'রে গেলাম প্রাধ্যক্ষের ঘরে। পরবর্তী কথোপকথন ছিলো অবিকল নিম্নরূপ:

- আস্সালামুআলাইকুম স্যার
: ওআলাইকুম সালাম, কে তুমি, কি চাই?

-স্যার, আমি সূর্যসেন হলের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আজই এসেছি মফস্বল থেকে। কিন্তু স্যার, থাকার কোনো সিট পাচ্ছি না। মেধা ভিত্তিক সিট বন্টনের ব্যবস্থায় আমার অবশ্যই একটা সিট পাওয়া উচিত।
স্যার মাস্তানদের দখলে হল। প্লিজ আপনি একটু বিষয়টা দেখুন স্যার, আমরা যারা নবাগত ছাত্র, তারা যেন মেধাভিত্তিতে সিট বরাদ্দ পায়।

: বাবা তুমি বিয়া করেছো? (কৌতুকমাখা কন্ঠে)

- না স্যার। এখন কিভাবে বিয়ে করবো। সবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ ক'রে ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তি হ'য়েছি।

: বাবা, বিয়া-শাদী কর, বাল-বাচ্চা হো'ক। তখন রক্ত অনেক ঠান্ডা হয়ে যাবে, তখন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আমাদের অসহায়ত্ব বুঝতে পারবে, তখন আর মেধাভিত্তিক সিট বন্টন হ'লোনা ব'লে চেচামেচি করবে না।

এরপরে অনেক বছর পেরিয়ে গেছে, আমি বিবাহিত এবং অনাগত সন্তানের পিতা । আজও বুঝতে পারিনা, বিয়ে এবং পিতৃত্ব কেন একজন প্রাধ্যক্ষের কর্তব্য পালনের প্রেরণা না হয়ে অন্তরায় হবে? হয়তো এই ধাঁধাঁটির উত্তর না জেনেই আমায় কবরে যেতে হবে। কি ক'রে ভুলি:
" অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃনা যেন তারে তৃণসম দহে!"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: আপনার পোস্টে কেউ মন্তব্য করেনি ব্যাপারখানা কি?

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: আহা! সেইসব স্মৃতি!

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:০৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: আমিও দেখেছি মুহসীন হলের ৩০৯ এর সামনের ওয়ালে দুটো স্টেনগানটাইপ অস্ত্র হেলিয়ে দিয়ে দাড়িয়ে আছে ডগ শিশির ভাই। তবে, ইনি কোনদিনই কোন সাধারণ ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে শুনিনি, দেখিনি।

আপনার সময়ে ক্যাম্পাসে বীরপুঁজার একটা ব্যাপার ছিল। এইসব অস্ত্রধারীরা ভয়ের সাথে সাথে খানিকটা শ্রদ্ধা ভালবাসাও পেত ছাত্রসমাজে, কিন্তু এখনকার মাস্তানগুলো পায় শুধুই ঘৃণা।

সিনিয়র, ভালো থাকবেন।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:২৪

ঢাবিয়ান বলেছেন: প্রাধ্যাক্ষ ঠিকই বলেছে। আসলেই তাদের হাতে ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.