নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানব

যা দেখি যেভাবে দেখি (কহিলো সে ফিরে দেখো, দেখিলাম থামি , সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি...) [email protected]

মুক্ত মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

"দোনাদাগোহভি": আবার হবে দেখা কান্নার পথ পেরিয়ে চেরোকী বন্ধুদের মুখ..

০৮ ই জুলাই, ২০২১ রাত ২:৫৬

"আমাদের চেরোকি অভিধানে বিদায় বলে কিছু নেই, তাই আমরা কখনো বিদায় (Good Bye) বলিনা। আমরা বলি: Donadagohvi ("Until We Meet Again")"-চেরোকী ট্যুর গাইড তরুণীর কণ্ঠে ছিলো আশাবাদ। এ যেন রূপংকরের গানে সেই চিরায়ত সংক্রামক আশাবাদ-"বন্ধু, দেখা হবে", যা চেরোকী ভাষায় "দোনাদাগোহভি"। আর চেরিকী গ্রামে দিনমান কাটিয়ে ফেরার পথে গোধুলীর সেই আপার্থিব আলোয় জাতিস্মরের মতো ফিরে ফিরে মনে পড়ছিলো আমার কিশোর বয়সে লেখা সেই অসমাপ্ত উপন্যাসের প্রথম লাইনটা: "সূর্যটা পাহাড়ের ওপাশে ঢলে পড়েছে কিছুক্ষণ আগে...।" তবে কি আমি সেই কিশোর বয়সে কান্নার পথ পেরিয়ে একজন চেরোকী নায়ক চার্লি'র (Tsali)'র গল্পই লিখতে চেয়েছিলাম?! নাকি শৈশব স্মৃতি বিজড়িত গারো পাহাড়ের আদিবাসীদের কথা, অথবা রাংগামাটি পাহাড়ের, কিম্বা বরেন্দ্রভুমির নাম না জানা সাঁওতাল, হাজং, মুন্ডা, চলেশ রিসিলদের মতো নিজভুমে পরবাসী কোন বীরগাঁথা?
*******************************
সেবারে নর্থ ক্যারোলিনার এ্যাশভিল (Ashville) শহরে আমেরিকার গ্রেট স্মোকি মাউন্টেন দেখতে গেলে সেই অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতির মাঝে যখন মার্কিন ট্যুর গাইড প্রৌঢ় যখন বলছিলেন কিভাবে রাতারাতি পাহাড়ে বসত করা হাজার হাজার আদিবাসীদেরকে সরকারী হুকুমে নর্থ ক্যারোলিনার পাহাড় ছেড়ে স্রেফ পায়ে হেঁটে ওকলাহোমায় গিয়ে বসতি করতে হয়েছিলো। সেই মৃত্যুময় চলার পথ, যা এখন কান্নার পথ (Trail of Tears) নামে ইতিহাসের পাতায় কুখ্যাতি নিয়ে টিকে আছে, সে পথে নারী, শিশু এবং অসুস্থ্য আদিবাসীদের সে সময়ের দুর্দশার কথা স্মরণে আমার নিসর্গ উপভোগের আনন্দ সেদিন ম্লান হয়ে গিয়েছিলো বৈকি! তখন মনে মনে ভেবেছিলাম, আদিবাসীদের নিজের কন্ঠে নিজেদের গল্প শুনতে যাবো একদিন চেরোকী শহরে।

আমেরিকার অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত, নীলচে সবুজ পাহাড় ঘেরা সড়কপথের নাম ব্লু রিজ পার্কওয়ে (Blue Ridge Parkway)। নর্থ ক্যারোলিনা থেকে ভার্জিনিয়া পর্যন্ত Blue Ridge পর্বতমালা ঘিরে বিস্তৃত এ সড়কপথ। এ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালার (Appalachian mountain range) একটা বিস্তার (Physiographic Province) এই ব্লু রিজ পর্বতমালা, অপর একটি বিস্তার হলো 'গ্রেট স্মোকি পর্বতমালা (Great Smokey Mountains)। সারাদিন পাহাড়ের গায়ে ধোঁয়ার মতো মেঘদল জড়াজড়ি করে থাকে বলে এই পর্বতমালার নাম বিশাল ধোঁয়াটে পাহাড় (Great Smokey Mountains)। সরকারী শুমারী অনুযায়ী ৫৭৩ টি আদিবাসী গোষ্ঠী (বা উপজাতি) রয়েছে। (আদিবাসীদেরকে তাদের নিজ নিজ গোষ্টির নামে সনাক্ত করাটাই সৌজন্য। 'রেড ইন্ডিয়ান' বা 'রেড স্কিন' শব্দগুলোর যারা জনক তারা এই শব্দগুলো তাচ্ছিল্য অর্থেই ব্যবহার করেছেন )। এই আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর অন্যতম হলো চেরোকী। এঁরা ছিলেন যুগের বিচারে বেশএকটা অগ্রসর সভ্যতার ধারক এক একটা স্বাধীন শান্তিপ্রিয় অগ্রসর আদিবাসী গোষ্ঠি এই চেরোকীরা। নিজেদের বর্ণমালা ছিলো, ছিলো নিজেদের সমাজ, অর্থনীতি, মৃৎশিল্প, কুটির শিল্প, সংগীত, ক্রীড়া, বিচার ব্যবস্থা। ঘণ কালো চুল, সুঠাম, তামাটে ফর্সা মানুষগুলো পাহাড়কে বড়ো আপন ভাবতো, ভাবতো প্রকৃতিকে। আজও এরা প্রকৃতিকে মায়ের মমতায় আগলে রেখেছে। এদের ঢোলের তালও সেই মায়ের গর্ভে ভ্রুনের কানে প্রথম শোনা প্রথম তাল- মায়ের হৃৎকম্পের তাল। এই আদিবাসী গোষ্ঠিসহ প্রায় সব আদিবাসী গোষ্ঠিকে দেশের দক্ষিন পুর্বান্চল থেকে সরকারীভাবে "খেদিয়ে" দেয়া হয় থেকে ১৮৩০ সালের কুখ্যাত "The Indian Removal Act" এর মতো গণবিরোধী আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। এই আইনটি আমেরিকার সাংবিধানিক ইতিয়াসের অন্যতম কালাকানুন বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেও। যারা বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং আইন বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগের আপেক্ষিক স্বাধীনতা নিয়ে বড়াই করেন তারা জেনে অবাক হবেন যে আদিবাসীদেরকে বাস্তচ্যুত করার এই গণবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে চেরোকীরা মার্কিন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলো এবং মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি এই মর্মে রায় দিয়েছিলেন পাহাড় থেকে আদিবাসীদেরকে জোর পূর্বক বাস্তহারা করা অন্যায়। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের রায়কে উপেক্ষা ক'রে তদানীন্তন মার্কিন সরকার সেনা পাঠিয়ে পাঁচটি আদিবাসী গোষ্ঠির (Cherokee, Creek Seminole, Choctaw, and Ponca) অর্ধ লক্ষাধিক আদিবাসীকে পাঁচ হাজারেরও বেশী মাইল দীর্ঘ পথ বৈরি আবহাওয়ায় পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে দেশের পশ্চিমাংশে তাদের জন্য নব নির্ধারিত এলাকায় চলে যেতে বাধ্য করে। সেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হাজার হাজার নারী, শিশু, পুরুষ পথেই প্রান হারায়। তাই সেই পথের নামে ইতিহাসে "কান্নার পথ" নামে পরিচিত।

এবার সেদিন ঘুরে এলাম চেরোকী কাউন্টি, নর্থ ক্যারোলিনা থেকে। কিছু চেরোকী যারা ১৮৩০ সালের সেই উৎখাতের সময়ে পাহাড়ের ঘন জংগলে লুকিয়ে ছিলো যেন ফেডারেল সরকারের সেনারা তাদেরকে ধরে বেঁধে কান্নার পথ পাড়ি দিতে বাধ্য করতে না পারে, তারা পরবর্তীকালে সংগঠিত হয়ে মার্কিন সরকারের কাছ থেকে নিজেদের হারানো পাহাড়ী জমি থেকে কিছু জমি কিনে নিয়ে নিজেদের জন্য এই 'স্বাধীন' শহরের গোড়াপত্তন করে। (কি অদ্ভুত মানব সভ্যতা, নিজেদের হাজার হাজার বছরের ভিটার অংশবিশেষ আবার পয়সা দিয়ে দখলদারদের কাছে থেকেই কিনে নিতে হয়!) এই স্বাধীন শহরে এদের রয়েছে নিজস্ব স্কুল, নিজস্ব বিচার বিভাগ, নির্বাহী (শাসন) বিভাগ, ও নিজস্ব আইন বিভাগ। এদের শহরে পর্যটকরা স্বাগত। প্রথমে দেখতে গেলাম উন্মুক্ত থিয়েটারে নাটক দেখতে। পাহাড়ী বনের মাঝে গ্যালারীর মতো দর্শকদের বসার ব্যবস্থা, খোলা মন্চে নাটক। প্রবেশ পথে দেখলাম শিখা অনির্বাণ। কোন দিন নেভেনি সে আগুন। সেই কান্নার পথেও হাজার হাজার মাইল তীব্র শীত এবং ঝড়-বৃষ্টির মাঝেও সেই শিখা আগলে রেখেছিলো আদিবাসী সদস্যরা। সেই আদি হোমশিখা থেকেই অগ্নি প্রজ্জ্বলন করে নতুন এই শিখাটি নিয়ে এসে আবার চেরোকি গ্রামে নর্থ ক্যারোলিনা তে স্থাপন করা হয়েছে। দু'জন করে চেরোকী সার্বক্ষনিক প্রহরায় থাকতো এ শিখার। এখনো থাকে। যেন কখনোই না নেভে সেটা নিশ্চিত করতে। অতীতে এ শিখা নিভলে ভয়ানক সাজার ব্যবস্থা ছিলো দায়িত্বে অবহেলার জন্য। খোলা আকাশেের নীচে নাটক শুরু হলো। চোখের সামনে একের পর এক জীবন্ত হয়ে উঠছে সব ঘটনা, ছায়া সুনিবিড় আরণ্যের হাসিখুশি পাহাড়ী আদিবাসী জীবনে প্রথম ছন্দপতন স্পেন থেকে আগত ইউরোপীয় দখলদার বাহিনী, যার ছিলো টুজি (2G)-God আর Gun। ক্রুশ আর বন্দুক উঁচিয়ে স্প্যানিশ দখলদার সেনারা পাহাড়ে এসে ওদেরকে বশ্যতা মানতে বললো, ঔপনিবেশিক শক্তির প্রাধান্য দেখাতে কয়েকজন আদবাসীকে তাৎক্ষনিক পাখীর মতো গুলি করে মারলো। তারপর স্প্যানিশদেরকে হটিয়ে এলো বৃটিশ দখলদার বাহিনী। তারপর পাহাড়ে এলো আমেরিকার স্বাধীনতাকামী পক্ষের সেনারা যারা চেরোকীদের সহায়তা চাইলো বৃটিশকে খেদিয়ে দিতে। লোভ দেখানো হলো আদিবাসীরা যদি বৃটিশ খেদাতে স্থানীয় শ্বেতাংগদেরকে সহায়তা করে, তবে দেশ স্বাধীন হলে তাদেরকে পূর্ণ নাগরিক সুবিধা দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নিজ জাতিস্বত্বা সমুন্নত রেখে বসবাসের ক্ষেত্রে স্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে। কিন্তু, বাস্তবে বৃটিশদেরকে পরাজিত করে আমেরিকা স্বাধীন হবার পরে ফেডারেল সরকার সেই পূর্ব-প্রদত্ব প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গিয়ে পাহাড়ী আদিবাসিদেরকে ভিটেছাড়া করলো 'কান্নার পথ' দিয়ে পাঁচ হাজার মাইলের বেশী পথ হাঁটিয়ে দেশান্তরী করতে গিয়ে হাজার হাজার আদিবাসীকে পথেই দেহান্তরী হতে বাধ্য করলো। (নাটক দেখার এই পর্যায়ে এসে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, সেদিন জার্মানী এবং জাপানের সহায়তায় যারা বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন নেতাজি সুভাষের নেতৃত্বে, সেই আজাদ হিন্দ ফৌজ সে সময়ে বৃটিশকে খেদাতে সমর্থ হবার পরে সত্যিই কি ভারতবর্ষ কাংখিত স্বাধীনতা পেতো নাকি জাপান-জার্মানী পূর্বে প্রদত্ব প্রতিশ্রুতিভুলে উপমহাদেশে নিজেদের নতুন উপনিবেশিক শাসন গড়ে তুলতো, বৃটিশের বদলে আমরা হতাম জাপানী-জার্মানদের পদানত?!)। যা হো'ক, নাটকে চেরোকী যুবক চার্লির আত্মদানের পর্বটি সত্যিই হৃদয় বিদারক। মার্কিন সেনারা প্রায়ই চেরোকি গ্রামগুলোতে এসে লুটতরাজ করতো, নির্যাতন করতো, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে চার্লি সেনাদের বিরাগভাজন হয়। সেনারা চার্লির স্ত্রীকে হত্যা করে। চার্লি নিজ সন্তানদেরকে নিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রাম ছেড়ে গভীর অরণ্যে আশ্রয় নেয়। তখন সেনারা চার্লি স্বেচ্ছায় আত্নসমর্পন না করলে তার সতীর্থ আদিবাসীদেরকে নির্বিচারে হত্যার হুমকি দিলে তখন গ্রামবাসী সতীর্থদের জীবন বাঁচাতে সে এসে ধরা দেয়। দখলদার বাহিনীর কমান্ডার তাকে গুলী করে হত্যা করার পূর্ব মুহুর্তে সে অনুরোধ করে যে তাকে যেন নিজ সম্প্রদায়ের কারো হাতে 'নিহত' হবার সুযোগ দেয়া হয়, বিশ্বাসঘাতক দখলদার বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুর চেয়ে সে মৃত্যু হবে তার জন্য কাংখিত। নাটক শেষ হবার পরে আশে পাশে তাকাই। বেশীরভাগ দর্শকই মার্কিন শ্বেতাংগ পর্যটক। অনেকের চোখেই অশ্রুসজল, সাথে হয়তো কিছুটা, শ্বেত অপরাধবোধ বা অনুশোচনা, যাকে ইংরেজীতে বলে white guilt। তারপরে যাই চেরোকী গ্রামে, ট্যুর গাইড তরুনী শান্তভাবে অনেক কিছু ব্যাখা করছিলো, তাদের জীবন ধারা, সমাজ-সংস্কৃতি, তাদের বিচার ব্যবস্থা। মাতৃতান্ত্রিক চেরোকী সমাজে ছেলেদেরকে আকর্ষনীয়ভাবে সাজতে হয়, সম্ভাব্য জীবন সংগিনীর নজর কাড়তে। ওদের মধ্যে সাতটি গোত্র আছে, কিন্তু মর্যাদার বিচারে সব গোত্রই সমান। তারপর গেলাম চেরোকি যাদুঘরে। সব শেষে গেলাম চেরোকীদের বাৎসরিক নাচ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে যেটা "পাও ওয়াও" (Pow Wow) উৎসব নামে পরিচিত। ঢোলের তালে তালে এং বাঁশির সুরে সুরে আদিবাসী প্রতিযোগীরা নাচতে থাকেন এবং নাচ শেষে বিচারকদের বিচার অনুযায়ী পুরষ্কার দেয়া হয়।

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই চেরোকী গ্রামে প্রবেশের সময় থেকে আমার মনে একটা অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করেছিলো। সে অনুভুতিই হয়তো একজন জাতিস্মরের অনুভুতি। মনে হচ্ছিলো আমার কৈশোরের কল্পনার পাহাড়ী গ্রামের সাথে এই চেরোকী গ্রামের হুবহু মিল। ঘর বাড়ীর নকশা, গাছ-পালা, এমনকি মানুষের চেহারাও সেই কল্পনায় দেখা চরিত্রগুলোর মতো। বলা বাহুল্য কিশোর বেলার সেই উপন্যাসটি এক লাইনের বেশী এগো্য় নি: "সূর্যটা পাহাড়ের ওপাশে ঢলে পড়েছে কিছুক্ষণ আগে...।" কিম্বা হয়তো এ অনুভুতি আসলে একধরনের সমানানুভুতি, ইংরেজীতে যাকে বলে এমপ্যাথী। সাজেক উপত্যকায় গিয়েও মনে হয়েছিলো এলাকাটি যেন আমার অনেক দিনের চেনা। সে রকম অনুভুতি হয়তো গীনসবার্গের 'সেপ্টেম্বর ইন যশোর রোড' কবিতাটি পড়েও হয়েছিলো। যে বোধের কারনে নিজকে মনে হচ্ছিলো একাত্তরের সেপ্টেম্বরে যশোর রোডের পথ-ক্লান্তিতে ন্যুব্জ শরণার্থীদের একজন, কিম্বা সাঁওতাল বা হাজং বিদ্রোহের একজন। কিম্বা 'ইনতিফাদা'র একজন উদ্বাস্ত ফিলিস্তিনি, বা একজন বাস্তচ্যুত রোহিংগা শরণার্থী, কিম্বা যে কোন উৎপীড়িত, প্রান্তিক সংখ্যালঘু বিশ্বের যে কোন প্রাণ্তে। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি অপূর্ব নিসর্গের মাঝে আদিবাসীদেরকে রেখেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা উচিত, ওদেরকে খেদিয়ে নয়। আসুন নিজেরা বাঁচি এবং আদিবাসীরা যেন নিজস্ব জাতিস্বত্ত্বা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে সেক্ষেত্রে সহযোগী না হতে পারলেও অন্তত: অন্তরায় যেন না হই সে ব্যাপারে সচেতন থাকি, নতুন প্রজন্মকে সচেতন করি।

****************************************************
আমি কি তবে সেই কিশোর বয়সে কান্নার পথ পেরিয়ে একজন চার্লি'র (Tsali) গল্পই লিখতে চেয়েছিলাম।নাকি শৈশব স্মৃতি বিজড়িত গারো পাহাড়ের আদিবাসীদের কথা, কিম্বা রাংগামাটি পাহাড়ের, কিম্বা বরেন্দ্রভুমির নাম না জানা সাঁওতাল, হাজং, মুন্ডা, চলেশ রিসিলদের নিজভুমে পরবাসী কোন বীরগাঁথা? সেদিন থেকে থেকে মনে বাজছিলো কবির সুমনের লেখা রুপংকরের গাওয়া "জাতিস্মর" সিনেমার সেই জনপ্রিয় গানের পংক্তিমালা

"..জন্মের আগেও জন্ম পরেও জন্ম তুমিই এমন
সুরেরও গভীর সুরে পদাবলীর ধরন যেমন।
কথা নয় নিরবতায় সজলতার আঁকর ভরো...
এসেছি আগেও আমি যখন তুমি পদ্মাবতী,
কবেকার পুঁথির শোলক তোমার মতোই অশ্রুমতী।"

আর সেদিন সেই গোধুলী বেলায় কেবলই মনে পড়ছিলো কিশোর বয়সে লেখা সেই অসমাপ্ত উপন্যাসের প্রথম (এবং একমাত্র) লাইনটা: "সূর্যটা পাহাড়ের ওপাশে ঢলে পড়েছে কিছুক্ষণ আগে...।" চেরোকী গ্রাম ঘুরে আসার পর থেকে কিশোর বেলার সেই খেরো খাতার অসমাপ্ত উপন্যাসটা নিয়ে আর কোন খেদ নেই মনে। কিছু গল্প লেখক নয়, বরং লিখুক জীবন স্বয়ং, মহাকালের খেরো খাতায়! সেই ভালো! দোনাদাগোহভি! আবার দেখা হবে, বন্ধুরা!!





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.