নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মানব

যা দেখি যেভাবে দেখি (কহিলো সে ফিরে দেখো, দেখিলাম থামি , সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি...) [email protected]

মুক্ত মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুবের মন, পুবের ক্ষণ: অপুর চরিত্র বিশ্লেষন তথা অদেখা হৈমন্তীর জন্য লেখা এলিজির স্মৃতিচারণ........

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৩:৩৫




পুবের মন, পুবের ক্ষণ: অপুর চরিত্র বিশ্লেষন তথা হৈমন্তীর জন্য লেখা এলিজি স্মৃতিচারণ
---------------------------------------------------------------------.--------------------------
কবি সুকান্ত লিখেছেন আঠারো বছর বয়সের আবেগের তীব্রতা নিয়ে তীব্র এক কবিতা। সেটা পড়লে কিছুটা আঁচ করা যাবে আমাদের সময়ে ষোলো-সতেরোর প্যারা কেমন ছিলো। তখন মনে হতো তারুণ্যের উচ্ছাসে সবকিছুই পাল্টে দেয়া সম্ভব। তখন সবকিছুতেই আবেগের বাড়াবাড়ি। ১৯৮৩ সালে কলেজ ফার্স্ট ইয়ারের নবীন বরণে বগুড়া আযিযুল হক কলেজের মন্চে ছেলেটা যখন মাইক্রোফোন হাতে আবেগ মথিত, থর থর কন্ঠে পড়ছে সুনীলের কবিতা 'তেত্রিশ বছর তো কাটলো কেউ কথা রাখেনি..' তখন দর্শক সারির পেছন থেকে তো হাওয়ায় ভাসবেই আন্চলিক ভাষায় ফোঁড়ন কাটা মন্তব্য: "তেত্রিশের অর্ধেক বয়সও তো হয়নি, এখনি এতো পাকনামি ভালো লয়..!"
যা হো'ক, সেবারের মতো সুনীলের বরুণার খপ্পর থেকে বেরুতে পারলেও সতেরো তে দাঁড়িঅলা ঠাকুরের সৃষ্ট গল্প- চরিত্র হৈমন্তীর চক্করে, আবেগের আতিশয্যে বেশ ভালোরকম গেরোতে পড়েছিলো ছেলেটি। এ স্মৃতিচারণ সে ঘটনালোকেই। কলেজ ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালে বাংলা পরীক্ষার দিনে প্রশ্নপত্রের প্রথম প্রশ্ন: "রবি ঠাকুরের 'হৈমন্তী' ছোটগল্পে অপুর চরিত্র বিশ্লেষন কর। " (১৫ নম্বর)। মেজাজটা সামলে রাখা দায় হয়ে পড়লো। 'হৈমন্তী' গল্পের নববধু হৈমন্তী'র অকাল মৃত্যুর জন্য যে হৈমন্তীর স্বামী অপু'র ক্লীবত্বই একমাত্র দায়ী সেটা নানান উদাহরন এবং উদ্ধৃতি সহযোগে অনেক কিছু মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখলো সেদিন ছেলেটি। কি কি যুক্তি প্রমাণ দিয়েছিলো সে বিস্তারিত মনে নেই, তবে অপুর চরিত্রটি যে সেদিন পরীক্ষার খাতায় ক্লীব, নপুংসক ইত্যাদি নানাবিধ মূদ্রণযোগ্য অথচ বিতর্কিত বিশেষন সহযোগে বিস্তারিতভাবে ধৌত হয়ে গিয়েছিলো সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে ফলশ্রুতিতে কিছুদিন পরে ডাকযোগে ছেলেটি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে পারলো যে তার এ হেন ধৌতকর্মের জন্য তাকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দেবার সকল আয়োজন চুড়ান্ত, বাস্তবায়ন কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ছেলেটির মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়লো। হায় হায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র মতো উদারমনা মহীরুহের নেতৃত্বে একদা পরিচালিত তপোবনসম এ বিদ্যাপিঠ যে আজ কালের আবর্তনে একজন তরুণের স্বাধীনচেতা সাহিত্য সমালোচনার কারনে তাকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দেবার মতো কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে সেটা সে ঘুনাক্ষরেও আঁচ করতে পারে নি। পারলে হয়তো সেদিন পরীক্ষার খাতায় সেদিন গল্পের অদেখা হৈমন্তীর অকাল মৃত্যুর জন্য অপুকে দায়ী করত: অভিযুক্তের চরিত্র অমন নির্জলা (raw) ভাবে বিশ্লেষন করতো না, একটু রয়ে সয়ে লিখতো। যা হো'ক। কয়েক দিন অনেক অনুরোধ-উপরোধ, দেন দরবার, এর পরে শিক্ষক সমিতির এক সভায় এক শিক্ষক মন্তব্য করেন 'আমরা শিক্ষক, কসাই নই' ( "we are teachers, not butcher" )। সেই শিক্ষকের মানবতাবাদী এই মন্তব্যের সূত্রধরে আলোচনার মোড় ঘুরে যায় এবং ধীরে ধীরে অধিকাংশ শিক্ষক ছেলেটির বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট প্রদান করেছিলেন। আজ কালের আবর্তে সেদিনের ছাত্রটিও একজন শিক্ষক। ছাত্রদের আচরন এবং শৃংখলা নীতিমালা এবং লেখাপড়া সংক্রান্ত নীতিমালা কমিটির বৈঠকে প্রায়শ:ই অন্য কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগ শুনতে হয়, এবং অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা ক'রে প্রচলিত একাডেমিক আইন-কানুনের আওতায় পদক্ষেপ গ্রহনের সুপারিশ করতে হয়। এ ধরনের অভিযোগের নিস্পত্তি করার বৈঠকে সেও প্রায়শ: সহকর্মীদেরকে বলে: আরেক বার সুযোগ দিয়ে দেখলে হয় না? আফটার অল, আমরা শিক্ষক, কসাই নই!'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.