নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অসমাপ্ত ছোটগল্প

তরুণদের ভাল কিছু করার আকাঙ্খা যখন তারনা দেয়, একটা দেশ তখনই অগ্রসর হয়।

অসমাপ্ত ছোটগল্প

আমি অসঙ্গায়িত। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আমি জোঁক। শেষ করে/ না দেখে ছাড়ি না। আমি ডিপেন্দেদ হতে ভয় পাই, ডিপেন্দেদ মানুষ আর কম্পিউটারের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। পছন্দ করি সব। অপছন্দ করি, কোনো কিছু অপছন্দ করা। আমার আখাঙ্খার কোনো সমাপ্তি নাই, তাই আমি অসমাপ্ত আমার মৃত্যুই সমাপ্তি না, তাই ছোটগল্প। অসমাপ্ত ছোটগল্প ।।

অসমাপ্ত ছোটগল্প › বিস্তারিত পোস্টঃ

In between 2 Compartment

১২ ই মে, ২০১৪ রাত ২:২৫

C-Let থেকে ফেরার পথে একটা স্ট্যাটাস দিছিলাম,

"In between 2 Compartment..... "

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ষ্টেশনে এক মহিলা উঠেন, তিনি আমাদের ৬সিটের একটাতে বসে পরেন, তাই আমাকে প্রায় দেড় ঘন্টা দাড়িয়েই আসতে হয়।



আমি যখনই কোন আনেক্সপেক্টেড সিচুয়েশনে পরি, তখনই সিচুয়েশন এনালাইসিস করা শুরু করি, কেনই বাই এমন হলো, আর আমার কিই বা শিখা উচিৎ এখান থেকে।



প্রথমে যেটা করছিলাম, ইঞ্জিন থেকে দ্বিতীয় বগি থেকে একদম শেষেরটা পর্যন্ত হেঁটে যাই। ভালই লাগলো, কারন হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম, সংগ্রামী মানুষ গুলো কোন আক্ষেপ না করেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে

জীবনের তাগিদে ছুটছে।



এক ষ্টেশনে থামার পর, প্লাটফর্ম দিয়ে হেঁটে হেঁটে আমার বগিতে এলাম, ভেতর দিয়ে আসি নাই, কারন মানুষ একবার হাঁসি মুখে জায়গা করে দিলেও, দ্বিতীয় বার বিরক্ত হবে, আমি কারও বিরক্তের কারন হয়ে চাই নি কক্ষনই।



আমার বগিতে এসেই, ওই দুই বগির মাঝে যে দুইটা ষ্টীলের প্লেইট আছে, ওখানে দাঁড়ালাম। প্রচণ্ড ঝাঁকি আর আওয়াজ, এক্সট্রিম জিনিষ আমি বেশি পছন্দ করি। ভালই লাগছিল।



একটা ছেলে ছিল পাশেই। ওর নাম কাশেম।

গ্রামের বাড়ি টাঙাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে হকারি করে, ওর মামা ওকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসছে, কিছু করে খাওয়ার জন্য, এলাকাতে থাকলে নাকি ভাদাইম্মা হয়ে যাবে, তাই মাও চাইছিল ও চলে যাক রুটি রুযীর খুঁজতে।



ও মাঝে মাঝেই আসে ঢাকায়, ট্রেনে ফার্স্ট ক্লাসে চড়ে।

ওর জন্য ওই "In between 2 Compartment" ই ফার্স্ট ক্লাস।

উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কারন, ওর ব্যাখ্যা ছিল অসাধারন।

বাতাস আছে, কেও কিছুই বলে না, আর যারা বিড়ি খাইতে আসে, তাদের মুখের দিকে তাকাইলে তারা খুশি হয়ে বিড়ির শেষের অংশটা দিয়ে যায় (লিখার স্বার্থে উল্লেখ করলাম না বিড়ির শেষের অংশ কে কি বলে, ও আসলে সেইটাই বলছিল)।



কাশেমের হাঁসি বলে দিচ্ছিল ও অনেক সুখী মানুষ, আমি সুখী মানুষ পেলে আড্ডা মিস করি না। তাই আড্ডা বাড়ালাম।

ও মাল নিতে আসে, আর নিয়ে যাওয়ার সময়, ট্রেনের ছাঁদে করে যায়। "ভঁয় লাগে না?" র উত্তরে বলল, ভঁয় খাওন দেয় না।

খুবই অবাক হইলাম কথাটা শুইনা। ভরা পেটে থ্রিডিতে হরর মুভি দেখলে ভঁয়তো লাগবেই, খুদা পেট মানুষকে বাস্তববাদী করে তুলে।

কোনটা মুভি আর কোনটা বাস্তবতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।



কথা বলতে বলতে একলোক এলো, সে সিগারেট খেয়ে, শেষে ওকে দিলো একটু। আমি খুব ভাল করে খেয়াল করলাম, কেনই বা ওই লোক কাশেমকে সিগারেট দিলো? কিছু বুঝে না পেয়ে ওকেই জিজ্ঞেস করলাম, এর আগেও কয়েক জন আসছিল, তারা কেও দেয় নাই।

এইলোক কেনও দিল? ওর উত্তরটা ছিল অসাধারন। মার্কেটিং এর পিলিপ কটলার ফেইল। আমি তার দিকে কয়েকবার তাকাইছি, এমন কইরা তাকাইছি যাতে সে বুঝে আমি কিছু চাই।

ওর কথার সারসংক্ষেপ হচ্ছে, "you have to make them realise you need their support"

এক জনের কানে একটা কথা দেয়া আর তাকে উপলব্ধি করানো এক না।

তাকে উপলব্ধি করাতে হবে।



ওই বেন্সন সিগারেট শেষ হইতেই, কাশেম আমারে বলল, আপনি খান?

হ্যা সূচক উত্তর দিতেই, ওর লুঙ্গির ভেতর থেকে একটা সিগারেট বের করে আমাকে দিল। এতো বাতাসে ধরাতে পারবো না বলে, ওকেই বললাম, তুমি ধরাও। ও ধরালো, কিছু টেনে আমাকে দিল। আমি এতো বিশ্রী স্বাদের তবে এতো তৃপ্তি কোন সিগারেটে পাই নাই।

কারনটা সিম্পল, ওর আথিতেয়তা।



এর মাঝে আরেকটা সিগারেটের শেষ অংশ পেল ও, ও টেনে আমাকেও দিল। খাইলাম আমিও। ও কি কি বিক্রি করে সেই বিষয়েও আলাপ হলো অনেক্ষন।

বাচ্চাদের খেলনা, মেয়েদের চুলের ফিতা এই সব যে সময় যা যা পায়।

মাঝে মাঝে রিক্সা/ভ্যানও চালায়। যা পায় টুকটাক করে। রাতে একটা বস্তিতে থাকে। ৪০০টাকা ভাড়া। চা খাওয়ার দোকানে টিভি দেখে।

খাবারের কোন নির্দিষ্ট জায়গা নাই। যখন যেখানে যা পায় তাই খায়।

মজার বিষয় সে সপ্তাহে একবার গাঁজা খায়, মন নাকি ভাল লাগে।

আর ওদের ছেড়ে যাওয়া বাপটারে মন মতো গালি দেয়। আমরা এতো কিছু পেয়েও সুখী না, আর ওর কাঁদতে গাঁজা লাগে, কারন ওর পেট ভরাতে গেলে, মা কে কিছু টাকা পাঠাতে গেলে মন খারাপ করে থাকলে চলে না। হাঁসি পাইলো নিজের কথা ভেবে, এতো কিছু পেয়েও আমারও মন খারাপ হয়।

আমি মন খারাপ করে মূল্যবান সময় নষ্ট করি, আর কাশেম জানে সময় কতো দামী।





এমন সময় রেলের ইউনিফর্ম পরা, একলোক চকলেট, সিগারেটের সমাহার নিয়ে আসলো। ২টা বেন্সন কিনলাম। দুইটাই ওকে দিয়ে দড়িয়ে একটা আমি নিলাম, একটা ও। ওকে বললাম, দেখো, জিবন থেকে কিছুই নাই নেয়ার মতো, শুধু এক সম্মান ছাড়া। তুমি আর কক্ষনো এই সিগারেটের **কি খাইয়ো না। কেও সম্মান না দেক, নিজেকে নিজে সম্মান দাও। কম খাও, তবুও নিজের খাও।



ও হাসলো, আমি আবার খুশি হয়ে হাঁসা আর তাচ্ছিল্যের হাঁসি সহজেই ধরতে পারি। খুদা বা প্রয়োজনের রাজ্যে সম্মান ব্যবহৃত টয়লেট পেপারের মতো।



খানিকক্ষণ চুপ ছিলাম,

ভাবতেছিলাম, আমি যদি সাহাব উদ্দিনের ঘরে না জন্মে, ওই পরিবারে জন্মাতাম। একটা বার চিন্তা করলেই লোম দারায়া যায়।

কি পরিমাণ সৌভাগ্যবান আমরা। বা আপনি যে লিখাটা পরতেছেন।



"আমারে চিন? আমি কে জানো??"



মানুষ মাঝে মাঝেই এই ধরনের কথা বলে, এর পর থেকে উত্তর দিবো,



তুমি নিতান্তই সৃষ্টিকর্তার দয়ায় তোমার ক্ষমতাধর পিতার সন্তান।



কাশেমের বয়েস আমার সমান, জানার পরে আরও লজ্জিত হলাম, কতো কিছু পেলাম এই জিবনে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানআল্লাহ তায়লার দয়ায়। তবুও একবার শোকর করি না।



রাস্তায় হাটার সময় যখন দেখি, একটা মানুষের দুইটা হাতই নাই,

তখন নখ কাটতে যেয়ে আমার আঙ্গুলের কোনার ব্যাথাটা জানি কই হারিয়ে যায়।



পা মচকানয় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটার সময়, ওভার-ব্রিজের গোঁড়ায় পা ফুলে হাতি হয়ে যাওয়া মানুষটাকে দেখলে

আমার পা ব্যথা জানি কোথায় হারিয়ে যায়।



চোখে বালু ধুঁকে জ্বালাপোড়া করে, আর ডোলতে ডোলতে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, আর আমার বাসার পাসের, অন্ধ ভিক্কুক ছেলেটা যখন বলে, স্যার আমি দেখি, কিছু দিয়ে জান।



রাস্তার পাশে ছোট বাচ্চাটা যখন আইস্ক্রিম খাচ্ছি দেখে, হাত বাড়িয়ে দেয়।

ভাবি আমিতো এই বয়েসে বাসা থেকে রোজ বস্তা আইসক্রিম খাবো দেখে মা ২,৪,৫টাকা দিয়ে দিতেন গুঁজে।



ওর কি মা নেই? অবশ্যই আছে।



নিজেকে আসলেই মাঝে মাঝে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষই মনে হয়।



আপনি যখন উপরে উঠতে থাকবেন, তখন যদি উপরেই দেখেন তবে আশাহত হবেন, কারন মনে হবে, আরও অনেক দূর যেতে হবে।

প্লিজ একবার নিচের দিকেও তাকাবেন, দেখবেন আপনি কতো দূর উঠে এসেছেন, সত্যি বলছি, আপনি আনন্দিত হবেন।





লিখাটা ভেবেছিলাম এখানেই শেষ করবো, কিন্তু একটা লেজ রয়েই গেছে।

আমি কেনও ওই মহিলার জন্য সিট ছেড়ে ছিলাম। আমার বন্ধুরা স্পেস্যাল্লি সায়েম অনেক রাগ করতেছিল, কেনও এই সেক্রিফাইস।

আমি ওদের কিচ্চুই বলি নাই, জাস্ট হাসছিলাম।



মহিলাটা পর্দা করেন। পর্দা করেন বলে আসলে যে আমি সিটটা ছেড়ে ছিলাম তা মটেও না। বা ইসলামে পর্দা কে প্রাধান্য দেয় বলে তাও না, এইটা ঠিক একটা হাদিছ ও আছে এমন। বেশি সংখ্যক পুরুষ জাহান্নামে যাবে, কুলুফের জন্য, আর বেশি সংখ্যক নারী জাহান্নামে যাবে, পর্দার জন্য।



আমি দাড়িয়ে ছিলাম, উনি পর্দা করেন দেখে এট লিস্ট কিছু ছেলে তাকে দেখে কিছু খারাপ ভাববে না। দরজা খোলা থাকলেই ভেতরে উকি দিতে ইচ্ছা হয়, তালা দিয়ে লাগানো দরজায় কেও উকি দেয় না।



সে যে নিজেকে নিজে সম্মান দিচ্ছে তাই তাকে সম্মান জানাতে আমি দাড়িয়ে ছিলাম। ওই যায়গায় অন্য কেও হলে তাকে তার জন্য প্রযোজ্য সম্মান প্রদর্শন করে উঠে যেতে বলতাম।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২২

আহসানের ব্লগ বলেছেন: পড়লাম । ভাল লাগলো । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.