নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেরপা

দেখতে চাই ধরনী

মুনতাসির

আমি পাহাড়ে চড়ি,সাগরে ডুবি, পৃথিবী আমার প্রেম

মুনতাসির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইনানী থেকে এভারেস্ট– অভিনন্দন, হাঁটামানব

২১ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:২০

কল্পনা করুন, কক্সবাজারের ইনানীর সৈকত, যেখানে সমুদ্রের নীল ঢেউ আছড়ে পড়ে, সেখান থেকে একজন মানুষ পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন। তার গন্তব্য? পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর— মাউন্ট এভারেস্ট। এই যাত্রা কেবল একটি পদচারণা নয়, এটি এক অসম্ভব স্বপ্নের জয়, এক দুর্লভ সাহসের প্রকাশ, এক ইতিহাস রচনার গল্প। এই অভূতপূর্ব কাহিনির নায়ক ইকরামুল হাসান শাকিল— পেশায় একজন শিক্ষক, আর নেশায় একজন পথিক, যেন তার সঙ্গে ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’। তিনি সমুদ্র পৃষ্ঠের প্রায় শূন্য উচ্চতা থেকে হেঁটে পৌঁছে গেছেন ৮,৮৪৯ মিটার উচ্চতায়, বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায়। এই অভিযানকে বলা হয় ‘সি টু সামিট’—অর্থাৎ, সমুদ্রের তীর থেকে পৃথিবীর শীর্ষে পৌঁছানোর এক অতুলনীয় চ্যালেঞ্জ।

এই গল্প শুধু একটি পর্বত জয়ের নয়, এটি একটি অভ্যন্তরীণ বিপ্লবের গল্প। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে, নানা দেশ, ভূপ্রকৃতি, আবহাওয়া আর প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ইকরামুলের এই যাত্রা— মানুষের ইচ্ছাশক্তি যে কতটা অপ্রতিরোধ্য হতে পারে, তার প্রকাশ। এটি কেবল শরীরের শক্তির পরীক্ষা নয়, বরং মনের দৃঢ়তা, হৃদয়ের অধ্যবসায় আর আত্মার অদম্য স্পৃহার এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে এমন কীর্তি একেবারেই নজিরবিহীন। আমরা প্রায়ই ইন্টারনেটে, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে, এমন খবর দেখি— কেউ হিমালয়ে উঠছেন, কেউ সাইকেল চালিয়ে মহাদেশ পার হচ্ছেন, কেউবা মেরু অভিযানে যাচ্ছেন। কিন্তু এই গল্পগুলোর নায়কদের বেশিরভাগই পশ্চিমা, যারা সহজেই মিডিয়ার আলো পান এবং তাদের গল্প বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তাই যখন একজন বাঙালি, যার মুখে আমাদের চেনা ভাষা, আমাদের মতোই ঘামে ভেজা গায়ের রং, তিনি এমন একটি অসাধারণ কাজ করে ফেলেন, তখন আমরা থমকে দাঁড়াই। অবাক হই। ভাবি—এত বড় একটি অর্জন, তবু এত কম আলোচনা কেন? কেন এই গল্প আমাদের দৈনন্দিন আলাপে, আমাদের সংবাদে, আমাদের গর্বের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে না

ইকরামুল হাসান শাকিলের এই যাত্রা কেবল একটি শারীরিক সাফল্য নয়, এটি আমাদের সবার জন্য একটি প্রতীক। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের মতো একজন সাধারণ মানুষ, আমাদেরই মাটির, আমাদেরই ভাষার, তিনি নিজের সীমার বাইরে গিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। তার এই অভিযান একটি ঘোষণা— যে স্বপ্নের কোনো সীমানা নেই, ইচ্ছাশক্তির কাছে পাহাড়ও নতি স্বীকার করে। এটি একটি শিক্ষা— যে নিজের ওপর ভরসা আর নিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের এভারেস্ট জয় করতে পারি।

ইকরামুলের এই গল্পে একটি নির্ভেজাল সৌন্দর্য আছে। এখানে কোনো কৃত্রিমতা নেই, কোনো বাহুল্য নেই। শুধু আছে একজন মানুষের দুর্ভেদ্য ইচ্ছা, ধৈর্য আর লক্ষ্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা। এটি আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়— আমরা কতদূর যেতে পারি, যদি আমরা নিজেদের ওপর ভরসা করি?

এভারেস্ট আরোহনের অঘোষিত একটি নিয়ম হলো—বেলা ১২টার আগে সামিট সম্পন্ন না করলে ফিরে আসাই শ্রেয়। কারণ দুপুরের পর আবহাওয়া হঠাৎ খারাপ হয়ে পড়তে পারে, শারীরিক শক্তি ক্ষয় হয়, মানসিক ফোকাস দুর্বল হয়, আর এসবের সমন্বয়ে ঘটে যেতে পারে প্রাণঘাতী বিপর্যয়। তাই অধিকাংশ আরোহী রাত ১টা-২টার দিকেই সামিট ক্যাম্প থেকে রওনা হন যাতে সূর্য ওঠার আগেই চূড়ায় পৌঁছাতে পারেন।

ভোর ৬টায় সামিট করা মানে হলো— তিনি ছিলেন দারুণ ছন্দে, সুসংগঠিত এবং ব্যতিক্রমীভাবে ফিট। এটি কেবল একটি সামিট নয়, একটি সময় মতো, পরিকল্পিত এবং দক্ষতার প্রতীক।

এছাড়াও, এভারেস্ট সামিটের শেষ ধাপে রয়েছে এক দুঃসাহসিক বাঁধা— ‘হিলারি স্টেপ’। নামটি এসেছে কিংবদন্তী পর্বতারোহী স্যার এডমন্ড হিলারির নামে। এটি একটি সঙ্কীর্ণ, প্রায় উঁচু ধারালো অংশ— যাকে কাব্যিকভাবে বলা হয় ‘নাইফ এজ রিজ’। যেহেতু এই অংশটি একমুখী, অর্থাৎ ওঠা-নামার জন্য একই পথ, তাই এই অংশে যদি কেউ নামছেন, উঠতে থাকা আরোহীকে অপেক্ষা করতে হয়। এই পথে সময়ের সঠিক হিসাব না রাখলে জ্যাম তৈরি হয়, বাড়ে শারীরিক ঝুঁকি।

তাই ভোর ৬টায় সামিট করার অর্থ দাঁড়ায়— শাকিল কেবল আমাদের মতন আম-আদমি নন, তিনি এক অসাধারণ কৌশলী, সময়জ্ঞানসম্পন্ন এবং সহনশীল অভিযাত্রী। তার অর্জন শুধু চূড়ায় ওঠা নয়, চূড়া অতিক্রম করে পরদিনই ক্যাম্প ২ পর্যন্ত নেমে আসা। যেখানে অধিকাংশ আরোহী ক্যাম্প ৪-এ রাত কাটিয়ে ধীরে নামেন, সেখানে শাকিল তার সহনশীলতা ও ধৈর্যের এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

এখানেই শেষ নয়। দিনটি ছিল ১৯ মে— একটি তারিখ যা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পর্বতারোহনের ইতিহাসে স্মরণীয়। এই একই দিনে, আমাদের দেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার এবং সাহসী অভিযাত্রী বাবর আলীও তাদের বিজয় অর্জন করেছিলেন।

১৯ একটি মৌলিক সংখ্যা। এটি অন্য কোনো সংখ্যার দ্বারা বিভাজ্য নয়, শুধুমাত্র ১ এবং ১৯ দ্বারা। এই মৌলিকতা যেমন গণিতে একান্ত নিজস্ব, তেমনি শাকিলের এই অর্জনও তার একান্ত নিজস্ব, অননুকরণীয় এবং বিশুদ্ধ।

প্রতিটি সংখ্যার যেমন নিজস্ব ভাষা আছে, তেমনি প্রতিটি সামিটেরও থাকে নিজস্ব গল্প। ১৯ মে, সংখ্যাটির মৌলিকতা যেন মিলে গেছে এই অভূতপূর্ব অর্জনের অনন্যতার সঙ্গে। একদিকে দেশের গৌরবময় পর্বতারোহণের ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে এক নতুন পথিকের আত্মপ্রত্যয়ী পদচারণা— সব মিলিয়ে এই দিনটিকে পরিণত করেছে এক ‘মৌলিক বিজয়ের দিন’ হিসেবে।

শাকিল, আপনি ফিরে আসুন সুস্থভাবে। আপনার পরিবারের মানুষগুলো, আপনার মা, আর আমরা— এই দেশের হাজারো নাম না-জানা আম-আদমি— আপনার অপেক্ষায় আছি। আপনার সাহস আমাদের গর্ব, আপনার ফিরে আসা হবে আমাদের স্বস্তি।

Published : 20 May 2025 | বিডিনিউজ২৪.কম view this link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৭

অল্প বিদ্যা ভয়ংকর বলেছেন: ইচ্ছা আর লক্ষ্যে স্থির থাকলে সফলতা একদিন ধরা দিবেই।

২| ২২ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট।

৩| ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮

খখখ বলেছেন: Reading about Ikramul Hasan Shakil’s journey from the beach at Cox’s Bazar to the summit of Everest truly inspired me. It reminds me of a personal trek I undertook in the hills near my home—challenging but rewarding. His dedication and discipline, especially summiting at 6 am to avoid risk, show incredible planning and determination. Stories like his prove that ordinary people can accomplish extraordinary feats with willpower. For a fun way to relax after such intense inspiration, I’d suggest trying Block Blast as an entertaining way to unwind. https://block-blast.online/

৪| ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:০৯

জনারণ্যে একজন বলেছেন: হাঁটামানব নাকি অতিমানব!!

শাকিলের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা। ঠিক জানিনা উনি ফিরে এসেছেন কিনা, শুভকামনা রইলো ওনার জন্য।

তবে আপনার লেখা, মুনতাসির!! আমি পড়ি এবং জাস্ট ভিজুয়ালাইজ করি। এবং যথারীতি ঈর্ষান্বিত হই এই ভেবে যে - কেন আমার এমন লেখার হাত নেই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.