নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

মুনতাসির রাসেল

আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের বাম রাজনীতি: আদর্শ নাকি সুবিধাবাদ?

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:২৫


বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বামপন্থী রাজনীতি একসময় সমাজ পরিবর্তনের এক প্রতিশ্রুতিশীল আন্দোলন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সাম্য ও মুক্তির স্লোগান দিয়ে তারা গণমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সময়ের পরিক্রমায় এই আদর্শিক রাজনীতি বহুমাত্রিক সুবিধাবাদের ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে পড়েছে।
বামপন্থার উত্থান ও আদর্শিক বিভক্তি
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভারতীয় উপমহাদেশে বাম রাজনীতির উত্থান ঘটে। ১৯৪৭-পরবর্তী সময়ে পূর্ব বাংলায় এই ধারার রাজনৈতিক শক্তি সংগঠিত হতে থাকে। কিন্তু তাদের আদর্শিক ও কৌশলগত বিভক্তি তাদের প্রকৃত শক্তি বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
প্রাক-মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি: পাকিস্তান শাসনামলে বামপন্থীরা শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখলেও নিজেদের মধ্যে বিভক্ত থাকায় একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান: কিছু বাম সংগঠন মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, আবার কিছু দল সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতা করে। এই দ্বৈত অবস্থান তাদের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাকে সংকটে ফেলে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভক্তি: ১৯৭১-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। চীনপন্থী, সোভিয়েতপন্থী, মাওপন্থী, ট্রটস্কিপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মতাদর্শগত সংঘাতের ফলে বাম রাজনীতি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ে।
সুবিধাবাদী রাজনীতি ও পরোক্ষ প্রভাব
একটি আদর্শিক আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশের বাম দলগুলোর বড় অংশই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুবিধাবাদী রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
বিদেশি অনুদান ও রাজনৈতিক প্রভাব: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থ পূরণ করতে গিয়ে বামপন্থীরা নিজেদের নীতিগত অবস্থান হারিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও রাশিয়ার নানা সংস্থা বিভিন্ন সময় বাম দলগুলোর মাধ্যমে তাদের কৌশল বাস্তবায়ন করেছে।
গণআন্দোলনের নামে রাজনৈতিক ফায়দা: গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করলেও, প্রকৃতপক্ষে এসব আন্দোলনের বেশিরভাগই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পরিচালিত হয়েছে।
সুবিধাবাদী রাজনৈতিক মিত্রতা: প্রয়োজনে বামপন্থীরা ডানপন্থী ও মধ্যপন্থীদের সঙ্গেও রাজনৈতিক সমঝোতায় গেছে, যা তাদের আদর্শিক অবস্থানের বিপরীত।
তরুণদের বিপ্লবী রাজনীতির ফাঁদে ফেলা
বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতিতে বামপন্থীরা বরাবরই একটি বিশিষ্ট অবস্থান ধরে রেখেছে। কিন্তু তারা তরুণদের বিপ্লবের নামে এক ধরনের রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলে।
ছাত্র রাজনীতিতে বিভ্রান্তিকর প্রতিশ্রুতি: বাম ছাত্র সংগঠনগুলো তরুণদের আশ্বস্ত করে যে, বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে তারা এই বিপ্লবের কৌশল বা ফলাফল সম্পর্কে বাস্তবসম্মত কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি।
কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা: বাম ছাত্র সংগঠনে যুক্ত অনেক তরুণ পরবর্তীতে মূলধারার পেশায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয় এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কৌশল: তরুণদের বিপ্লবী চেতনার সুযোগ নিয়ে তাদের আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
বাম নেতাদের আর্থিক অবস্থান ও সুবিধাবাদী রূপ
বাম নেতারা নিজেদের শ্রমিক, কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করলেও, বাস্তবে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবনযাপন করে।
বিলাসবহুল জীবনযাত্রা: উচ্চপদস্থ বাম নেতাদের অনেকেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গাড়ি ও ব্যবসার মালিক।
সরকারি ও এনজিও খাতে প্রভাব: অনেক বাম নেতা এনজিও, উন্নয়ন সংস্থা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়ে নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করেছেন।
সুবিধাবাদী নীতি: তারা আন্দোলনের নামে নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে, যেখানে সাধারণ কর্মীরা কেবল আন্দোলনের অংশ হয়ে থেকে যায়।
জনগণের বিশ্বাস ও অনুভূতির সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা
বাংলাদেশের বাম দলগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, তারা জনগণের বিশ্বাস ও অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি।
ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অসংবেদনশীলতা: বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধ ধারণ করে, কিন্তু বামপন্থীরা ধর্মকে বরাবরই অগ্রাহ্য করেছে, ফলে তারা জনসাধারণের সমর্থন হারিয়েছে।
জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিরোধিতা: বামপন্থীরা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা সংকুচিত করেছে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি উদাসীনতা: আন্তর্জাতিক বামপন্থী মতাদর্শ অনুসরণ করতে গিয়ে তারা দেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বাস্তবতা উপেক্ষা করেছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও সংকট
বর্তমানে বাংলাদেশে বাম দলগুলোর প্রাসঙ্গিকতা ক্রমশ কমছে এবং তারা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
অভ্যন্তরীণ বিভক্তি: আদর্শিক ও রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে বাম দলগুলো একাধিক উপদলে বিভক্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
জনসমর্থন সংকট: জনগণের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ায় তারা মূলধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
নতুন প্রজন্মের অনীহা: তরুণরা এখন কর্মসংস্থান ও উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতির দিকে বেশি ঝুঁকছে, যা বাম দলগুলোর জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের বাম রাজনীতি একসময় আদর্শভিত্তিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, বর্তমানে এটি সুবিধাবাদী, বিভক্ত ও বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আদর্শের নামে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করলেও, প্রকৃত অর্থে তারা সাধারণ জনগণের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
বামপন্থাকে টিকে থাকতে হলে তাদের অবশ্যই:
১.জনগণের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে
২.বাস্তবমুখী ও বাস্তবায়নযোগ্য নীতি গ্রহণ করতে হবে
৩.বিদেশি অনুদাননির্ভরতা কমিয়ে জনভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে
৪.তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান ও বাস্তবমুখী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে

অন্যথায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা কেবলই একটি অতীত অধ্যায় হয়ে থাকবে।




মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৩০

চেংগিস খান বলেছেন:



কাহারা বাম? বিশ্বে বামপন্হা এখনো চালু আছে কিনা?

২| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৩৬

কামাল১৮ বলেছেন: তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য ছিলো ভুল।যখন জাতিয়তা বাদের কথা বলা দরকার তখন বলেছে শ্রেনী সংগ্রামের কথা।এটা বলেই মাঠ দিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাতে।ফিরে আসা আর সম্ভব হয় নাই।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৪৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: চেংগিস খান@বামপন্থীরা বরাবর উপেক্ষিত পুজিবাদি সমাজে। সবাই যখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত, ইদের শপিঙে ব্যস্ত তখন বামপন্থীরা তিন হাজার শ্রমিকের বকেয়ার জন্য লড়াই করছে। তিনমাসের বেতন ভাতা নব্বই হাজার টাকা কিন্তু ইদের আগে দেয়া হয়েছে মাত্র ১২ হাজার জনপ্রতি। বামপন্থীরা তাদের সাথে আন্দোলন করছে। তাদের রাজনীতি ভুল হতে পারে কিন্তু এই মুহূর্তে এরাই আসল রাজনীতি করছে। বামেরা জীবনে বাংলাদেশে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এদের আরেক দোষ সিরাজ শিকদার কে এরা লিডার ভাবে।

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৫৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কামাল১৮@মিডিয়া পুরোপুরি পুজিবাদি দের নিয়ন্ত্রণে। এনসিপির নেতা সারজিস আলম যত ফুটেজ পায় বামপন্থী নেতা দিলীপ রায় শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে মাইর খেয়ে হাসপাতালে যায় তখনো ফুটেজ পায় না। জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের পচে যাওয়া বাম ছিলো। কায়দা করে এদের শাহবাগী উপাধি দিয়ে দৃশ্যপট থেকে মাইনাস করে দিয়েছে যেমন টা দিয়েছে মেয়েদের। আজ যখন সবাই ব্যস্ত ছিলো ইদ শপিং এ বামেরা তখন শ্রমিক দের বেতন ভাতার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয় ঘেরাও দিয়ে তিনকোটি টাকা বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য অধিকার আদায় করেছে। এরা উজবুক হতে পারে কিন্তু আজকের দিনের রাজনীতি তাদের সঠিক।

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:১২

নিমো বলেছেন: আহারে ভাই! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে জিবলি নিয়েই ব্যস্ত রাখুন না। কী দরকার রাজনীতি তাও আবার বাম নিয়ে পড়াশোনার কষ্ট দেয়ার।

৬| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:১২

চেংগিস খান বলেছেন:



@সৈয়দ কুতুব,

আপনি যা বলছেন, সেটা হচ্ছে বাম রাজনীতির ১টি শাখা: ট্রেইড ইউনিয়ন। আমি আমার কলেজ জীবনে ইহার সাথে সামান্যভাবে যুক্ত হয়েছিলাম ( চট্রগ্রাম পোর্ট শ্রমিক ইউনিয়নের অধীনে ); ইহা মুল বামপন্হী রাজনীতি নয়; বামপন্হী রাজনৈতিক দল হলে "সোস্যালিষ্ট দলগুলো"।

৭| ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: বাম ডান আসলে এগুলো কোনো রাজনীতি নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.