![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।
অধ্যায়-২
চার মোকাম: দেহের আধ্যাত্মিক স্তর
মানবদেহ কেবল শারীরিক গঠন নয়; বরং এটি আধ্যাত্মিক স্তরগুলোর ধারক ও বাহক। আধ্যাত্মিক সাধনার বিভিন্ন স্তরে চারটি প্রধান মোকাম (স্তর) বিদ্যমান, যা মানুষের আত্মিক বিকাশ, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
এই চার মোকাম হলো—
১. নাসুত মোকাম (চক্ষু) – পার্থিব স্তর
২. মালাকুত মোকাম (কান) – আত্মিক স্তর
৩. লাহুত মোকাম (নাসিকা) – ঈশ্বরীয় স্তর
৪. জাবারুত মোকাম (জিহ্বা) – শক্তির স্তর
প্রতিটি মোকাম দেহের একটি নির্দিষ্ট অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আত্মিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১. নাসুত মোকাম (চক্ষু) – পার্থিব স্তর
নাসুত মোকাম হলো মানুষের পার্থিব স্তর, যা চক্ষুর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। চক্ষু শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তির বাহন নয়; এটি মানুষের লোভ, মোহ, কামনা ও প্রবৃত্তির উৎস।
নাসুত মোকামের বৈশিষ্ট্য:
পার্থিব আকর্ষণের কেন্দ্র: চোখ মানুষের ইন্দ্রিয়গত জ্ঞানের প্রবেশদ্বার, যা তাকে পার্থিব জগতের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে।
লোভ ও মোহের উৎস: অধিকাংশ মোহ, লালসা ও আকাঙ্ক্ষা চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে।
চোখের নিয়ন্ত্রণ: কুরআনে বলা হয়েছে, "তোমরা তোমাদের দৃষ্টি অবনত রাখো, তাহলে তোমাদের আত্মা শুদ্ধ হবে।" (সূরা আন-নূর: ৩০)
আত্মার বিশুদ্ধতা: চোখের সংযম ছাড়া আত্মিক উন্নতি সম্ভব নয়।
সুফি দর্শন অনুযায়ী:
"যার দৃষ্টি সংযত, তার হৃদয় আলোকিত।"
সুফিরা বলেন, "অবৈধ দৃষ্টি আত্মার কলুষতা বাড়ায়, আর পবিত্র দৃষ্টি আত্মাকে মুক্তির পথে এগিয়ে নেয়।"
২. মালাকুত মোকাম (কান) – আত্মিক স্তর
মালাকুত মোকাম হলো আত্মিক স্তর, যা কানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শ্রবণশক্তি মানুষের জ্ঞানের অন্যতম প্রধান উৎস এবং সত্য-মিথ্যার প্রাথমিক বিচারক।
মালাকুত মোকামের বৈশিষ্ট্য:
সত্য-মিথ্যার বিভাজন: কান এমন একটি দরজা, যা দিয়ে জ্ঞান ও তথ্য প্রবেশ করে।
আধ্যাত্মিক শিক্ষা: ভালো কথা শোনা হৃদয় ও আত্মার বিশুদ্ধতা আনে।
শব্দের প্রভাব: ভালো শব্দ আত্মাকে প্রশান্ত করে, মন্দ শব্দ কলুষিত করে।
কুরআনের দৃষ্টিতে শ্রবণ:
"যারা আল্লাহর বাণী শোনে এবং সেটার অনুসরণ করে, তারাই সফল।" (সূরা যুমার: ১৮)
"কিছু কান সত্য শুনলেও, সেগুলো বন্ধ থাকে কারণ তাদের অন্তর অন্ধ।"
সুফি দর্শন অনুযায়ী:
"যে সত্য কথা শুনতে চায়, সে সত্যের পথে চলতে বাধ্য।"
সুফিদের মতে, "আত্মার জন্য সঠিক শব্দ হলো পথনির্দেশক আলো।"
৩. লাহুত মোকাম (নাসিকা)– ঈশ্বরীয় স্তর
লাহুত মোকাম হলো ঈশ্বরীয় স্তর, যা নাসিকার (নাক) মাধ্যমে প্রকাশ পায়। নাক কেবল শ্বাসের জন্য নয়; বরং এটি জীবনীশক্তির বাহক, যা আমাদের রূহের শক্তিকে প্রতিফলিত করে।
লাহুত মোকামের বৈশিষ্ট্য:
শ্বাসপ্রশ্বাস ও জীবনীশক্তি: শ্বাস হলো আত্মার শক্তি, যা আমাদের শরীরকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।
শ্বাসের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব:
সুফিরা শ্বাসনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আত্মার বিশুদ্ধতা অর্জন করেন।
ধ্যান ও জিকিরের সময় সঠিক শ্বাসপ্রশ্বাস আত্মাকে প্রশান্ত করে।
নাক ও সিজদাহ: মুসলমানদের সিজদাহ করার সময় নাক মাটিতে রাখার অর্থ হলো আত্মার গভীরতম বিনম্রতা প্রকাশ করা।
সুফি দর্শন অনুযায়ী:
"শুদ্ধ শ্বাস আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, যেমন বিশুদ্ধ পানি শরীরকে শুদ্ধ করে।"
ধ্যান ও তাসাউফে শ্বাসনিয়ন্ত্রণ চর্চার মাধ্যমে ঈশ্বরীয় শক্তি অর্জন করা যায়।
৪. জাবারুত মোকাম (জিহ্বা) – শক্তির স্তর
জাবারুত মোকাম হলো শক্তির স্তর, যা জিহ্বার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। জিহ্বা মানুষের বাকশক্তির প্রতীক, যা সৃষ্টির ক্ষমতা এবং ধ্বংসের ক্ষমতা উভয়ই ধারণ করে।
জাবারুত মোকামের বৈশিষ্ট্য:
বাকশক্তির শক্তি:
ভালো কথা মানুষকে শান্তি দেয়, খারাপ কথা মানুষকে বিষিয়ে তোলে।
কুরআনে বলা হয়েছে, "তোমার জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করো, কারণ এটি তোমার জন্য কল্যাণ বা ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।" (হাদিস)
সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্ব:
সত্য কথা বলা আত্মার জন্য পবিত্রতা আনে।
মিথ্যা, গীবত, পরনিন্দা মানুষের আত্মাকে কলুষিত করে।
কথার প্রভাব:
"যার বাক্য শুদ্ধ, তার আত্মাও শুদ্ধ।" – সুফিদের শিক্ষা
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার জিহ্বাকে সংযত রাখে, সে জান্নাতের পথে চলতে সক্ষম হয়।"
সুফি দর্শন অনুযায়ী:
"শুদ্ধ বাক্য আত্মাকে আলোকিত করে, আর মিথ্যা আত্মাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে।"
সুফিদের মতে, জিহ্বা সংযত রাখা আধ্যাত্মিক উন্নতির অন্যতম শর্ত।
এই চার মোকাম আমাদের আত্মিক বিকাশের চারটি স্তর প্রতিফলিত করে। যদি আমরা এই চারটি স্তরকে সংযত ও শুদ্ধ রাখতে পারি, তবে আত্মিক উন্নতি সম্ভব হবে।
✅ চক্ষু সংযম: নাসুত মোকাম – পার্থিব আকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রণ
✅ শ্রবণ সংযম: মালাকুত মোকাম – সত্য ও জ্ঞানের গ্রহণ
✅ শ্বাসনিয়ন্ত্রণ: লাহুত মোকাম – আত্মার শুদ্ধতা
✅ বাকসংযম: জাবারুত মোকাম – আধ্যাত্মিক শক্তি
আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য এই চার মোকামের নিয়ন্ত্রণ ও শুদ্ধতা অপরিহার্য। এগুলো সংযত করতে পারলেই আত্মা প্রকৃত মুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
২| ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ১১:০৯
Sulaiman hossain বলেছেন: মাশাআল্লাহ। অনেক কিছু শিখলাম। আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন
৩| ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ১১:১৩
Sulaiman hossain বলেছেন: শ্রবণ সংযম করা কি খুব সহজ কাজ,কিভাবে আমি শ্রবণ সংযম করব লোকালয়ে থেকে।এবং স্বাস কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব
৪| ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ১১:২২
যামিনী সুধা বলেছেন:
মানুষকে ইডিয়ট বানানোর তত্ব?
৫| ০২ রা মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: বুঝি না এইসব।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মে, ২০২৫ রাত ১১:০৪
কামাল১৮ বলেছেন: শরিরতত্ত্ব সম্পর্কে ভালো জানে ডাক্তার।যারা অ্যানাটমি ভালো পড়েছে।