![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।
অধ্যায়-৩
চার প্রধান ফেরেশতার অবস্থান ও প্রতীকী ব্যাখ্যা
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী চার প্রধান ফেরেশতা— জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল ও আজরাইল— আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ আদেশ বাস্তবায়ন করেন। তারা কেবল দুনিয়ার কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক পরিচালনা করেন না, বরং প্রতীকী অর্থেও মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামী আধ্যাত্মিক চিন্তাধারায় এই ফেরেশতাদের ভূমিকা মানুষের দেহের চারটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, যা আমাদের চেতনা, উপলব্ধি, চিন্তা ও আচরণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
১. জিবরাইল (জবানে) – সত্যের বার্তাবাহক, জ্ঞানের প্রতীক
ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) আল্লাহর ওহির বাহক, যিনি নবীদের কাছে জ্ঞান ও নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি মূলত সত্য, জ্ঞান ও আত্মার পরিশুদ্ধতার প্রতীক। প্রতীকী অর্থে, তার অবস্থান মানুষের জবানে (জিহ্বায়), যা ভাষা, জ্ঞান ও সত্য প্রকাশের কেন্দ্র।
কেন জিবরাইল জবানের সঙ্গে সম্পর্কিত?
সত্য ও জ্ঞানের বাহক: জিবরাইল (আ.) নবীদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতেন, যা মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছে। একইভাবে, মানুষের জিহ্বা সত্য প্রচার ও জ্ঞানের আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ভাষার শক্তি: মানুষের বলা কথা তার চিন্তা, মনন ও বিশ্বাসের প্রতিফলন। ভালো কথা, সত্যবাদিতা ও জ্ঞানচর্চা একজন ব্যক্তির আত্মিক উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে।
মিথ্যা ও কুটিল বাক্যের ক্ষতি: অন্যদিকে, যদি কেউ মিথ্যা বলে, অপবাদ দেয় বা কুটিল ভাষা ব্যবহার করে, তবে তা আত্মার পবিত্রতা নষ্ট করে এবং ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
আধ্যাত্মিক শিক্ষা:
ইসলামে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি তার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারে।" তাই জিবরাইলের অবস্থান জবানে প্রতীকীভাবে ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের কথা হতে হবে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের বাহক।
২. মিকাইল (চোখে) – দৃষ্টিশক্তি ও উপলব্ধির রক্ষক
ফেরেশতা মিকাইল (আ.) প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ, খাদ্য সরবরাহ ও জীবজগতের জীবিকা নিশ্চিত করেন। প্রতীকীভাবে, তিনি চোখের সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ চোখ সত্য উপলব্ধি ও জ্ঞান আহরণের মাধ্যম।
কেন মিকাইল চোখের সঙ্গে সম্পর্কিত?
জ্ঞান ও উপলব্ধির মাধ্যম: চোখের মাধ্যমে মানুষ জগতের বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করে, নতুন কিছু শেখে এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণ করে।
সুন্দর ও কদর্য বিচারের ক্ষমতা: যদি কেউ চোখের সঠিক ব্যবহার করে, তবে সে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু যদি কেউ চোখকে নৈতিকহীন দর্শনের জন্য ব্যবহার করে (যেমন অশ্লীলতা দেখা, ঈর্ষাপূর্ণ দৃষ্টি দেওয়া), তাহলে তা আত্মার দূষণের কারণ হয়।
ভুল দৃষ্টি ও বিভ্রান্তি: অপ্রয়োজনীয় বা খারাপ কিছু দেখার ফলে মানুষের মন দূষিত হয় এবং সে বিভ্রান্তির শিকার হতে পারে।
আধ্যাত্মিক শিক্ষা:
ইসলামে বলা হয়েছে, "চোখের হেফাজত করো, কারণ চোখ যা দেখে, মন তা ধারণ করে।" মিকাইলের অবস্থান চোখে প্রতীকীভাবে ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের দৃষ্টি হতে হবে শুদ্ধ, সংযমী এবং কল্যাণকর জ্ঞানের প্রতি নিবিষ্ট।
৩. ইসরাফিল (নাসিকায়) – শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রক
ফেরেশতা ইসরাফিল (আ.) কিয়ামতের দিন সিংগায় ফুঁৎকার দেবেন, যার মাধ্যমে সমস্ত জীবের মৃত্যু হবে এবং পুনরুত্থান ঘটবে। প্রতীকীভাবে, তার অবস্থান নাসিকায় (নাকে), কারণ শ্বাস-প্রশ্বাসই মানুষের জীবনীশক্তি।
কেন ইসরাফিল নাসিকায় অবস্থান করেন?
জীবনের মূল চালিকা শক্তি: মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসই তার জীবনের অস্তিত্ব বহন করে। শুদ্ধ বায়ু গ্রহণ শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে, আর দূষিত বায়ু গ্রহণ অসুস্থতা সৃষ্টি করে।
আধ্যাত্মিক চর্চা ও শ্বাস-নিয়ন্ত্রণ: বিভিন্ন আধ্যাত্মিক সাধনা ও সুফি ধ্যানপদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে, কারণ এটি মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
জীবন ও মৃত্যুর সীমানা: কিয়ামতের দিন ইসরাফিলের সিংগার ফুঁৎকারের মতো, মানুষের জীবনে শ্বাস-প্রশ্বাসের ধারা বন্ধ হলেই তার ইহজীবনের সমাপ্তি ঘটে।
আধ্যাত্মিক শিক্ষা:
ইসলামিক ধ্যান-ধারণায় বলা হয়, "শুদ্ধ নিঃশ্বাস আত্মাকে শুদ্ধ করে, আর কলুষিত পরিবেশ আত্মাকে দূষিত করে।" ইসরাফিলের অবস্থান নাসিকায় প্রতীকীভাবে ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ও পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
৪. আজরাইল (মগজে) – জীবন ও মৃত্যুর নির্ধারক
ফেরেশতা আজরাইল (আ.) মৃত্যুর ফেরেশতা, যার দায়িত্ব হলো মানুষের আত্মা কবজ করা। প্রতীকীভাবে, তার অবস্থান মগজে (মস্তিষ্কে), কারণ মস্তিষ্কই চিন্তা, বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র।
কেন আজরাইল মগজে অবস্থান করেন?
চিন্তার শক্তি: মানুষের চিন্তাই তার কর্মের দিকনির্দেশনা দেয়। একজন ব্যক্তি যদি ভালো চিন্তা করে, তবে সে ভালো কাজ করবে; আর যদি চিন্তায় পাপ বাসা বাঁধে, তবে সে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠবে।
জীবন ও মৃত্যুর সংযোগ: চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বন্ধ হলে মানুষকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাই এটি জীবন ও মৃত্যুর নির্ধারক কেন্দ্র।
মানসিক বিশুদ্ধতা ও আত্মিক মুক্তি: মগজের চিন্তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারে, অন্যথায় সে বিভ্রান্তির শিকার হয়।
আধ্যাত্মিক শিক্ষা:
ইসলামে বলা হয়েছে, "একটি বিশুদ্ধ মনই আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছাতে পারে।" আজরাইলের অবস্থান মগজে প্রতীকীভাবে ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের চিন্তা ও বিচারশক্তি শুদ্ধ হতে হবে এবং সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে।
চার প্রধান ফেরেশতার প্রতীকী অবস্থান আমাদের শেখায় যে মানুষের জবান, চোখ, নাসিকা ও মগজ শুধু শারীরিক অঙ্গ নয়, বরং আত্মিক ও নৈতিক গুণাবলিরও প্রতিফলন।
◑সত্য ভাষণের জন্য জিবরাইল (জবান)
◑সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মিকাইল (চোখ)
◑শুদ্ধ প্রাণশক্তির জন্য ইসরাফিল (নাসিকা)
◑পরিশুদ্ধ চিন্তার জন্য আজরাইল (মগজ)
এই প্রতীকী ব্যাখ্যা আত্মশুদ্ধির পথনির্দেশনা দেয়, যাতে আমরা আমাদের দেহ, মন ও আত্মাকে উন্নত করতে পারি এবং সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারি।
২| ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৩১
Sulaiman hossain বলেছেন: এগুলো আধ্যাতিক দর্শন, যা মুকাশিফা র সাথে সম্পৃক্ত। মুকাশিফা ভুল হওয়ার সম্ভাবণা রয়েছে, এজন্য মুকাশিফাকে কুরআন হাদিসের সাথে মিলাতে হবে।ধন্যবাদ অনেক কিছু শেখার আছে।চালিয়ে যান
৩| ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৩:১৪
যামিনী সুধা বলেছেন:
বাংলাদেশেও কি বেদুইন আছে?
৪| ০৫ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩১
কামাল১৮ বলেছেন: মানুষ জ্ঞান অর্জন করে পঞ্চইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বস্তু থেকে।
০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৫৫
মুনতাসির রাসেল বলেছেন: পরের অধ্যায়গুলোতে আলোচনা করব।
৫| ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:১৬
যামিনী সুধা বলেছেন:
এসব গরুর রচনার বাজার এখনো আছে?