![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুকেঃfacebook.com/robin013 Mail:[email protected]
ঈদের সময় সারা বাড়ি ভরা লোকজন গিজগিজ করছে , dinner এর পর সবাই একে একে ঘুমাতে চলে গেল । আমার যায়গা হল বাবার পুরাতন চেম্বারের ফ্লোরে । বালিশ বানানোর জন্য ভাবলাম পুরানোকিছু ফাইলের উপর চেয়ারে দেরায় তোয়ালেটা বিছিয়ে একটা বালিশ বানাই । কয়েক যুগ আগের একটা শতছিন্ন কটা পুরাতন গন্ধওয়ালা একটা ঝাপ্সা আর লালচে হয়ে আসা ফাইলের পাতায় চোখটা আটকে গেল , অবচেতন মনেই একটা সুরাহা না হওয়া কয়েক যুগ আগের মামলার ইতিহাস পড়তে শুরু করলাম ...
মঙ্গা কবলিত এলাকার তিস্তা পাড়ের এক দিনমজুরের বউ কুসুম - বাচ্চাটার বয়স যখন মাত্র ৩ দিন তখন কুসুমের স্বামী রিক্সা চালাবার জন্য ঢাকায় চলেগেছে ; দেশে কোন কাজ নাই তাইতো পেটেও ভাত নাই , কিছু করা দরকার । পরপর দুটা ঈদ পার হয়ে গেল - বাচ্চাটার বয়স প্রায় ২ বছর হতে চলল তবে কুসুমের স্বামীর কোন খোজ নাই । হয়তবা সে শহরে গিয়ে নতুন একটা বিয়ে করেছে- জীবণতো আর বেধে থাকে না । মন্টু মেম্বারের বাড়িতে কাজ করে - মাঝে মাঝে শাপলা বা কলমি শাক টাইপের কিছু জিনিস বিক্রি করে নিজের পেট চলে যায় কুসুমের ।
মন্টু মেম্বারের হাত অনেক লম্বা , একদিন কুসুমকে বলল তাকে শহরে নিয়ে নাকি তার ছোট ভাইয়ের Garments -এ একটা চাকুরি দিবে । কুসুম ভাবল ভালই হবে, বাচ্চাটার একটা গতি হবে শহরে গেলে - বড় হলে ভাল একটা স্কুলে দিতে পারবে । কুয়াশামোড়া এক শীতের সকালে মন্টু মেম্বারের সাথে কুসুম ঢাকার চলে গেল । গ্রামের আশেপাশের লোকজন ভাবল - কুসুমের কষ্টের দিনের এই বুঝি ইতি হল । নিরবে আর নিঃশব্দে চামেলিকে কোলে নিয়ে আর একটা ময়লা শতছিন্ন কাপড়ের টোপলা নিয়ে শুরু হল কুসুমের শহর রুপি মহাকালের দিকে চির ছূটেচলা ।
ঘাটে একটা ট্রলার রাখা ছিল , লঞ্চ থেকে নামার পর তারা উঠল সেই ট্রলারে । এলোমেলো বাতাসের ভেতর দিয়ে নদীর বুক চিরে ছুটতে ছুটতে কিছু সময়ের ভেতর তারা চলে এল তাদের গন্তব্যে - লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে ছোট্ট একটা গ্রাম - ফালিফালি করে কতগুলা চেরা বাশ জোড়া লাগিয়ে লম্বালম্বা পাটাতন বানানো একটা বাধানো ঘাট - ভাটির টানে নদীর পানি অনেক নেমে গেছে - চামেলিকে কোলে নিয়ে অনেক কষ্টে ঘাট বেয়ে উপরে উঠল কুকুম - সামনে এগিয়ে যাচ্ছে মন্টুমেম্বার । শীতকালের দিনের সময় অনেক কম , আসরের ওয়াক্তের পরের গোধুলী লগ্নের দিগন্তে সূর্যটা যেন গোল আর লাল হয়ে নেমে আসতে চাচ্ছে ...
সারাদিন কিছুই পেটে পড়েনাই , কুসুমকে কন্ডেন্সড মিল্কের বানানো এককাপ দুধ চায়ের ভেতর একটা গোল পাউরুটি ভিজিয়ে ভিজিয়ে খেতে বসিয়ে দিয়ে মন্টু মেম্বার একটু সামনের দিকে গেল ।দোকানের ভেতর ২/১ টা মেয়ে বিশ্রি ভাবে কাত হয়ে বসে বসে চায়ের দোকানের শাদাকালো টিভিতে ভিসিয়ারে চলা বাংলা সিনেমা দেখছে আর কিছু সময় পরপর খিস্তি করছে ।২টা মেয়ের একজনের গায়ে অসম্ভব টাইট ফিটিঙ্গের একটা খয়েরি রঙ্গের জামা- এতটাই টাইট যে তার শরীরের পুরা অবকাঠামোই স্পস্ট দেখা যাচ্ছে আর অন্যজন একটা বাশের খুটিতে হেলান দিয়ে বাকা হয়ে পা নাচাচ্ছে যার গায়ে ওড়না টাইপের কোন জিনিসই নাই - সম্ভবত এই গ্রামের মানুষরা undergarments এর ব্যবহার জানেই না অথবা জানলেও ব্যবহারের দরকার মনে করেনা ...কুসুমের এই সব দৃশ্য খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে দেখতে এক সময় মন্টু মেম্বার ফিরে এল তার তথাকথিত বোনকে নিয়ে ।
কুসুমকে আদর আপ্যায়ন করে একটা ঘরে নেয়া হল , কিছু সময় পরে মাগরিবের আযান ভেসে এল দুরের কোন মজসিদ থেকে । অবশেষে কুসুম এই সহজ জিনিসটা বুঝল যে তার আর কোন যাবার যায়গা নাই আর ইচ্ছে করলেও সে আর বের হতে পারবেনা এই ছোট্ট ঘর থেকে - হয়তবা কুসুম কেদেছিল অনেক তবে সম্ভবত রাতের ঝি ঝি পোকার ডাক আর নদীর স্রোতের শব্দে কুসুমের কান্নার সামান্য আওয়াজ সহযেই মিলিয়ে গেল ফিরোজা আকাশ আর ফাল্গুনী বাতাসের ভেতর ।প্রত্যেকটা ঘরের আলো একে একে নিভে গেল ...
ছোট্ট একটা সেমিডাবল চৌকি যেটাতে দু’জন মানুষ ঠিক মত শোয়া যায় না , মুলি বাশের বেড়ার খুটির সাথে নীল রঙ্গের ফ্রেমে বাধানো একটা আয়না বাকা করে ঝুলানো - ইঞ্চিখানেক কাঠ ঝুলানো রয়েছে দড়ি দিয়ে যেটার উপর একটা টিনের কৌটায় হয়তবা কিছু নারকেল তেল যার পাশে একটা লাল রঙ্গের চিরুনী - ১০/১২ টাকা দামের একটা শেষ হয়ে আসা লিপস্টিক আর একটা নিন্ম মুল্যের নেলপালিশ । বেড়ার উপর একটা পোস্টার লাগানো রিয়াজ আর শাবণূরের যেটা এমন ভাবে লাগানো যাতে বোঝা যাচ্ছে যে জানালা টাইপের জিনিসটাকে আড়াল করার জন্য সেখানে কাগজ লাগানো হয়েছে । মাটির ঘর - চৌকির চারটা পায়ের নিচে ২ টা করে ইট দিয়ে উচু করা হয়েছে আর সেই চৌকির মাথার কাছের ঘরের খুটিতে পাইপ দিয়ে বেড়ার সাথে আটকে বানানো আলনায় ঝুলানো একটা হলুদ শাড়ি - কালো ব্লাউজ, যেটার পাশ দিয়ে একটা পেটি কোটের ফিতে বের হয়ে আছে । বেড়ার ফাক দিয়ে যেমন রোদ আসছে তেমনি বাইরে থেকে কিছু হাল্কা হাল্কা মিশ্র কন্ঠের শোরগোল টাইপের শব্দ আসছে ।
৫/৭ বছরের একটা বাচ্চা ছোট্ট একটা হাড়ির ঢাকুন উচু করল , সারা হাড়িতে লেগে আছে সব মিলে ২০/১৫ টা ভাত ;যা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আগের দিন হাড়ি থেকে সব ভাতই শেষ করা হয়েছে -এরপর আর রান্নাই হয় নাই ... এমন সময় বাইরে থেকে ঘরের দরজা খুলে গেল । দরজা দিয়ে বেলা হয়ে আসা সকালের রোদ আসছে আর দরজার সামনে দাড়ানো মানুষের ছায়া তৈরি হয়ে ময়লা বিছানার চাঁদরের উপর পড়েছে ... দৌড় দিয়ে চামেলি দরজার ফাক দিয়ে বাইরে চলে গেল । নদীর চরের বালির ভেতর চামেলির মত আরো কয়েকটা বাচ্চা ছোটাছুটি করছে । দূর থেকে দেখা যাচ্ছে একটা ফেরি চলে যাচ্ছে নদীর ভেতর দিয়ে ...আর বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে নদীর তীরে ।
কিছু সময় পরে আবার ঘরের দরজা খুলে গেল , বিছানার চাঁদরটা এলোমেলো অবস্থা থেকে ঠিক করতে করতে বিছানার উপর থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা ময়লা নোট হাতে নিয়ে উচ্চ কন্ঠে কুসুম চামেলিকে ডাকল , চামেলি দৌড়ে এল , সে জানে এখন মা তাকে টাকা দিয়ে ১ কেজি মোটা চাল আর ৮ টাকার আধাকেজি আলু আনতে বলবে । প্রায় দুপুর পার হতে চলল । চামেলি মায়ের মাত্র ইনকাম হওয়া ৫০ টাকা নিয়ে চাল কিনতে গেল আর কুসুম কলস নিয়ে নদীর ঘাটে গেল পানি আনতে - আগেরদিন দুপুরের পর আর পেটে ভাত পড়ে নাই , শুধু মেয়েটাকে রাতে ৩ টাকার মুড়ি এনে খাইয়েছে ।নদীর ঘাটে তার মত ২/৩ টা মেয়ে গোসল করছে - কুসুম তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে কি যেন ভাবতে শুরু করল ...
কুসুমের বয়স যখন চামেলির মত তখন কুসুমের মা একদিন কুসুমকে বেদম মার মেরেছিল - তার অপরাধ ছিল সে মিয়াবাড়ির পুকুরে গোসল করতে গিয়েছিল । সেই কথা ভাবতে ভাবতে অবচেতন মনে মায়ের সেই মুখটা মনে পড়ে গেল কুসুমের । একটা মেয়ে কুসুমকে ডাকল তাদের সাথে নদীতে নামার জন্য - কুসুম বলল তার এখন ভাত রান্না করা লাগবে বাচ্চাটা সারাদিন কিছু খায় নাই । ঘরে এসে সে দেখল তত সময় চামেলি চলে এসেছে আলু আর চাল নিয়ে । ঠোঙ্গা খুলে ২ টা মিডিয়াম সাইজের আলু চামেলিকে দিয়ে পাশের ঘরের মিতা খালার কাছে পাঠিয়ে দিল সে , দিন ১৫ আগে এই আলু দুইটা ধার করেছিল কুসুম । কোন খদ্দের ছিল না বৃষ্টির সময় ।
বিশাল একটা শাদা রঙ্গের টিনের প্লেটের মাঝখানে লাল একটা ফুল আকানো আর যার চারিপাশে কালো উচু boarder তাতে চামেলি ছোট্ট কচি হাত দিয়ে আলু ভর্তা আর ভাত চটকাচ্ছে আর খাটের নিচের একটা বড় প্লাস্টিকের গামলা ভরা পানি সেটার পাশের ছাই রঙ্গের বাক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে , এটাকে নাকি ট্রাংক বলে তবে মা কোন দিন তাকে ওটা ছুয়েও দেখতে দেয় না । নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের টান একটু বেশি থাকে তাই সে একদৃষ্টিতে বাক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে আর আঙ্গুলের মাথায় অল্প অল্প করে ভাত নিয়ে মুখে দিচ্ছে , বেশি করে ভাত মুখে দিলে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে তাই যতই অল্প করে মুখে দেয়া যায় ততই মংগল । চরম ক্ষুধা লেগেছে কুসুমের , গোসলের পর মাথায় গামছাটা জড়ানো রয়েছে কুসুমের চুলে আর সেই অবস্থায়ই সে খেতে বসল । একটা সবুজ রঙ্গের প্লাস্টিকের থালা যেটার ভেতর আলু ভর্তা করেছিল সেটার ভেতরই পাতিলের সবটুকু ভাত ঢেলে নিয়ে খাওয়া শুরু করতে গিয়েও কুসুম থেমে গেল । ঢকঢক করে ১ গ্লাস পানি খেয়ে নিল সে , তারপর খাওয়া শুরু করল । এমনভাবে সে ভাতের লোকমা গুলো মুখে নিয়ে খাচ্ছে মনে হচ্ছে যেন ভাতের প্রতিটা দানার স্বাদ সে উপভোগ করছে । চামেলির খাওয়া শেষ এত সময় । সে তার প্লেট থেকে বেচে যাওয়া ছোট্ট এক টুকরা আলু ভর্তা মায়ের প্লেটে চালান করে দিয়ে প্লেট নিয়ে এক দৌড়ে চাপকলে চলে গেল ...
রাতে ডিউটি করা লাগবে তাই বিকেলে কিছু সময় ঘুমিয়ে পুষিয়ে নিতে হবে বলে খাওয়া শেষ করেই কুসুম আধা ঘন্টার একটা ঘুমের জন্য শুয়ে পড়ল ।যখন চামেলির বাবার সাথে কুসুমের বিয়ে হয় তখন কুসুমের বয়স ১৫ বা ১৬ ।
মানুষটা তাকে বিয়েতে একটা জরি বসানো পাড়ওয়ালা একটা শাড়ি দিয়েছিল । সাথে দিয়েছিল একটা লাল ফিতেওয়ালা স্যন্ডেল ; তবে স্যন্ডেলটার সাইজ ছোট হয়ে গিয়েছিল । বিয়ের ২ দিন পরে কুসুম স্বামীর সাথে গেল সিনেমা দেখতে ;শাবানার সেই আমলের বিখ্যাত বাংলা সিনেমা “ভাত দে...”।
শাবানার কষ্ট দেখে কুসুম সেদিন স্বামীর হাত চেপেধরে অন্ধকার সিনেয়া হলের ভেতরই কান্নাকাটী শুরু করেছিল । তারপর সিনেমা দেখা শেষ হলে নতুন বউ জামাই মিলে সিনেমা হলের সামনের চটপটির দোকানে চটপটি খেয়েছিল - অবশেষে কুসুমের স্বামী ২ টাকা দামের একটা কুলপি মালাই কিনে দিয়েছিল তাকে । বিয়ের স্যন্ডেলটা ছোট হয়ে গিয়েছিল বলে সেদিন কুসুমের পায়ে ফোস্কা পড়েগিয়েছিল - তবুও সে সেই স্যন্ডেলই পরবে ! বিয়ের স্যন্ডেল আর বিয়ের লাল শাড়ির মর্যাদা বাঙ্গালী নারীদের কাছে সব সময়ই আলাদা ...যেদিন তারা সিনেমা দেখতে বের হয়েছিল সেদিন কাল বৈশাখী ঝড়ের ভেতর পড়েছিল তারা ।
বিশাল বজ্রপাতের শব্দে শাদাকালো স্বপ্নের ঘুমটা ভেঙ্গেগেল কুসুমের - ঝমঝম করে টিনের চালে শিলা বৃষ্টির শব্দ হচ্ছে । কুসুমের মনটা যেন কেমন কেমন লাগছে - খাটের নিচ থেকে ছাই রঙ্গের বাক্সটার থেকে তার বিয়ের লাল শাড়ি আর ছিড়ে যাওয়া স্যন্ডেলটা বের করে বুকে জড়িয়ে ধরে কিছু সময় কাদঁল । কিছু সময়ের ভেতর বৃষ্টি থেমে গেল - ঘরের চাল দিয়ে তখোনও ফোটাফোটা পানি পড়ছে , ছাই রঙ্গের বাক্সটা নিয়ে বসে খাকলে পেটে ভাত জুটবে না ; শাড়ি আর স্যন্ডেলটা আবার ভেতরে রেখে দিয়ে সন্ধ্যার দিকে নেলপালিশ - নারকেল তেলের কৌটা আর লাল চিরুনীটা নিয়ে নিজেকে গোছাতে বসল কুসুম ।
সন্ধ্যার পরথেকে কুসুমদের পল্লীটা একটা নদীর পাড়ের সাপ্তাহিক হাটের মত মনে হয় । দুপাশের সারি সারি ঘর আর মাঝখান দিয়ে চিপা রাস্তা - প্রত্যেকটা ঘরে ভেতর থেকেই আলো এসে রাস্তাটা ঝলমল করে - দুপাশের সারি সারি ছোট কামরার সামনের রাস্তায় সবাই বিভিন্নভাবে সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে থেকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে - আর হৈ-চৈ শোরগোল শোনা যাচ্ছে । রাস্তার শেষমাথায় নদীর পাড়ে একটা বিশাল শতবছরের পুরানো বটগাছ যেটার নিচে কাদেরের চায়ের দোকান - সারাদিন সেখানে একটা টিভিতে ভিসিয়ারে সিনেমা চলছে আর সারাদিনই কেউ না কেউ তার দোকানে আসছে - হোক দালাল- খদ্দের -ব্যবসায়ী বা ললনা । কাদেরের দোকানের পাশে নতুন একটা দোকান হয়েছে সেখানে সন্ধ্যার পরে পুরি - পেয়াজু- চপ বা মোগলাই পরাটার মত জিনিসও বিক্রি হয়। মোটামুটি দুটা দোকানের গমগমে আর ঝলমলে পরিবেশের আলো নদীর ঘাটে প্রতিফলিত হয় তখন একেবারে একটা আলাদা রুপ পায় । ঘাটের থেকে নদীর দিকে তাকালে আলাদা একটা দৃশ্য চোখে পড়ে - প্রত্যেকটা ঘরের আলো জানালার ভেতর দিয়ে বা ঘরের চালের উপর দিয়ে এক সারিতে সাজানো হয়ে নদীর স্রোতের সাথে যেন খেলা করে ... সেই সময় নদীর স্রোতের দিকে তাকালে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করে ! যেন একটা নেশা ধরে যায় । রাস্তার শেষ প্রান্তে বড় খালার ঘরের পাশে বাংলা(দেশী মদ) খাবার ঘর , বোধ করি সেই বাংলার ঘরেও এত নেশা পাওয়া যায় না ।
সবার ভেতর একটা আনন্দ আনন্দ ভাব - আলো ঝলমলে দোকানের ভেতর ঢূকে মানুষ প্রথমে মোগলাই বা চপ টাইপের জিনিস খাচ্ছে তার পর আয়েশ করে কাদেরের দোকানে এসে একটা সিগারেট নিয়ে চা খাচ্ছে ... ।
নতুন দোকানের বড় স্টোভের উপর কড়াইতে বিভিন্ন জিনিস ভাজা হচ্ছে এর কাদের একটার পর একটা চা বানাচ্ছে ... দু’জনই চরম ব্যস্ত । কপালের ঘামটাও মোছার ফুসরত নেই তাদের । একটা বাচ্চা দূরে দাঁড়িয়ে সবার খাওয়া দেখছে - তবে ধারেকাছে আসছে না । তাদের দিকে তাকিয়ে দেখার কারো কোন সময় নাই - সবাই ব্যস্ত ...
কুসুমের ঘরে একজন খদ্দের এসেছে , হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে মালদারপার্টি - এদের সাথে একটু ভাল ব্যবহার করলেই এরা খুশি হয়ে বেশি টাকা দিয়ে দেয় । ঘরের দরজা আটকানো - ভেতরে একটা ৬০ ওয়াটের টিমটিমে আলো জ্বলছে । কুসুমের গায়ে শাড়ি নাই - শুধু পেটি কোট আর ব্লাউজ তবে ব্লাউজটা অর্ধেক খোলা ; সে উঠে গিয়ে মশারির পেছনের তাক থেকে একটা কাচের কৌটা বের করে আনল - সেটার ভেতর থেকে একটা ব্যনসন বের করে দিল । কৌটায় ভরে রাখলে সিগারেট ড্যম হয় না । এই জিনিসটা সে শিখেছিল চামেলির বাবার কাছ থেকে । অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে ঘরে জমিয়ে রাখা স্টার সিরারেট খেত । যাহোক পতিতার কাছ থেকে এমন আপ্যায়ন বোধ হয় আশা করেনাই এই নতুন খদ্দেরটা । যাহোক খাটে হেলান দিয়ে আয়েশ করে সে বাংলা মদ আর সিগারেটটা শেষ করল ... তারপর আবার কাজ শুরু করল ...।
কেউ যদি সিগারেটের আপ্যায়নের জন্য কোন বখশিশ দেয় তবে সে ওটা সিগারেটের কৌটার ভেতরই ভরে রাখে । মেয়েটা বড়হচ্ছে ... তার অনিশ্চিত জীবণের ও একটা নিশ্চয়তার ব্যপার আছে ...।
২/১ টা করে আস্তে আস্তে সব ঘরের বাতি নিভে গেল - রাতের শুনশান নিরবতায় ফোটা ফোটা পানির শব্দ আসছে , বৃষ্টিতে ভিজে চামেলি আবার জ্বর বাধিয়েছে , কুসুম তার মাথায় পানিদিচ্ছে - কাপুনি দিয়ে যেইভাবে জ্বর বাড়ছে বোধহয় ডাক্তার লাগবে । তবে বিধাতার আশীর্বাদ সম্ভবত নদীর ওপারের মানুষদের জন্য - চামেলি আর কুসুমদের জন্য নয় । আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে আর কিছু সময় পরপর বাজ পড়ছে ; এমন সময় শো শো শব্দ শুরু হল । পৃথিবীটা এলোমেলো হয়ে গেল । সিডরের কবলে পড়ে গোটা বানিশান্তা পতিতা পল্লীর ৪ ভাগের ৩ ভাগই পানিতে ভেসে গেল চোখের নিমিশে , শিক্ষিত মানুষের ভাষায় ১৫ থেকে ২০ ফুট জ্বলোচ্ছাস হয়েছিল সিডরে । কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব কিছু রাতের অন্ধকারে বিলিন হয়ে গেল । ঝড়ের পর সবকিছু আস্তে আস্তে ঠিক হল তবে কুসুমকে আর পাওয়া গেল না । হয়ত মরে গিয়ে ভেসে গেল অথবা ভেসে গিয়ে মরে গেছে ।
১৪/১৫ বছরের এক উচ্ছল কিশোরী যে পতিতা পল্লীর বাইরের দুনিয়াটা কোন দিন দেখে নাই - দেখার সুযোগ পায় নাই - সেও তার মায়ের মতই একই জীবণটাই মেনে নিল । কিছুই করার নাই তার । একটা NGO আর কিছু সাংবাদিক সিডরের পর কিছু বাঙ্গালী ললনার পুনর্বাসন করার জন্য ছোটাছুটি করেছিল । একটা মানবাধিকার সংগঠনের কিছুলোক মন্টু মেম্বারের মত লোকেদের জন্য মামলা করে চামেলির মত কিছু মানুষের জন্য better কিছু দেখাতে চেয়েছিল । Fund শেষ - project শেষ তাই তো NGO , সাংবাদিক আর মানবাধিকার নিয়ে লাফালাফি করা লোকগুলোর কাজও শেষ - সবাই সব কিছু ভুলেগেল । ভুল বললাম ! যাবার আগে চামেলির ঘরে এসে দরজা বন্ধ করার আর মজা পাবার কথা কিন্তু তারা ভুলে নাই । এই সব কথাই চামেলির মত কারো কাছ থেকে উদ্ধার করা গল্প -মামলার ড্রাফটসের ভেতর আরো সুন্দর করে ধারা- অনুচ্ছেদ - সংবিধানের বিভিন্ন হাবিজাবি টার্ম দিয়ে ভালএকটা উপন্যাসের মত লাগছিল ।
বহু বছর আগের ধামাচাপা পড়া এরটা মামলার ফাইল পড়তে পড়তে ভোর হয়ে আসল , প্যকেটের সিগারেট গুলা প্রায় শেষ হয়ে এল -২/১ টা মশা কামড়াচ্ছে - এরোসলটা স্প্রে করা দরকার ।আমি নাকি অনেক social -আমরা নাকি সভ্য তাইতো সেই পল্লী গুলোকে সভ্যতার বাইরের জিনিস মনে করি । আমিতো অনেক সভ্য তাই পুরানো ফাইলটা আবার ছুড়ে ফেললাল পুরানো কাগজের ভিড়ে - বেশ্যার মামলা নিয়ে Study করলে লোকে যদি কিছু বলে !
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫
স্বপ্নিল ভাবুক বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ...
২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫০
মদন বলেছেন:
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮
স্বপ্নিল ভাবুক বলেছেন:
৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৭
দাদুভাই বলেছেন: ভালো লিখেছেন
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯
স্বপ্নিল ভাবুক বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩৬
জহুরুল০০৭ বলেছেন: টাইপ - শব্দটা বেশী ব্যবহার করে ফেলেছেন।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩
স্বপ্নিল ভাবুক বলেছেন: প্রথম প্রথম তো এ জন্য শব্দ চয়নে একটু প্রবলেম হচেছ।
লেখাটি ধয্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ....
৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮
কর্পোরেট ভালোবাসা বলেছেন: হৃদয় ছুয়ে গেলো ..
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩
স্বপ্নিল ভাবুক বলেছেন: লেখাটি ধয্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ....
৬| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮
কর্পোরেট ভালোবাসা বলেছেন: হৃদয় ছুয়ে গেলো ..
৭| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:০৪
তাসজিদ বলেছেন: খুব ভাল লাগল। জীবন যে কত নিষ্ঠুর তা কি আমরা জানি?
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৫
স্বপ্নিল ভাবুক বলেছেন: জীবন আসলেই অনেক নিষ্ঠুর। নিয়তির কাছে আমরা অসহায়
৮| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৮
সোহানী বলেছেন: এটা যে হাজার হাজার মেয়ের গল্প..................
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮
স্বপ্নিল ভাবুক বলেছেন: এমন অনেক গল্প আমাদের চারপাশেই ঘটছে, কিন্তু কয়টার কাহিনী আমরা জানি?
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৫
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: লেখা প্রথম দিকে ভালভাবে শুরু করেছেন ।