নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দৃষ্টির সীমানায় (মুস্তাফিজুর রহমান)

দৃষ্টির সীমানায়

দৃষ্টির সীমানায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুন্যের গল্প

১৪ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

১....
শুন্য মানে যার অস্তিত্ব নেই।
অথচ এই অস্তিত্বহীন একটা ব্যাপার কত রকম স্পর্শ পেয়ে মনে অথবা জীবনে স্থান করেই নিয়েছে।
ন্যাকাবোকা প্রেমিক, ভদ্র সুশীল একেকভাবে শুন্যের উপর রাগ ঝাড়লেও শেষ শুন্যকেই আপন ভেবে নেয়।
আমিও নিয়েছি।
শুন্য ভালবাসা আমার অস্তিত্বে গেঁথে আছে।

২....
দুই ক্লাসে পড়ি,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ডুবলুম মার্কা চোখ নিয়ে ক্লাসে ঝিমুতাম।
কত্তদিন বেঞ্জের উপর দাঁড়িয়ে কাটিয়েছি।
দিনগুলো খুবই কঠিন নীয়মে বা
বাধাঁ ছিল।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নামতা মুখাস্ত করানোর কাজে লেগে যেতেন মা।
একে একে এক,দুই একে দুই।
মনে আছে সেই তিন ঘরের নামতা মুখাস্ত করতে করতেই পরিক্ষার সময় চলে এসেছিল।

৩....
দু সপ্তাহ পর.....
রেজাল্ট দিবে,রেজাল্টের পর দু ক্লাস থেকে তিন ক্লাসে উঠবো।
আনন্দ লাগছিল,
বাসায় গিয়ে বললাম শুন্য পেয়েছি সব কিছুতে দুটো করে।
সেদিন ছোট খাট একটা ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
একশতে দুটো শুন্যই থাকে,
সেটা মহা এমন কি অন্যায় শুধু শুন্য বলায় বুঝে উঠতে পারি নি।
গালের উপর সেদিন ভালই ঝড় গিয়েছিল।
রাতে অনেক কষ্ট নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম,
কার্ড দেখানোর প্রয়োজন মনে করি নি।

৪....
পরদিন...
ক্লাসে রেজাল্ট কার্ড জমা,
অভিভাবক সাক্ষর স্থান খালি।
বাবা কে ডাকানো হল।
সেখানেই শুনলেন প্রতি বিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার একশ পেয়েছিলাম আমি।
পথে একটা কথাও বলেন নাই সেদিন আব্বু,
রিক্সায় ছোট মানুষ ছোট ভাবেই এক কোনায় বসে ছিলাম।
বাসায় যাবার পর আব্বু সেদিন এমন ভাবেই জড়িয়ে ধরে কাদঁছিল এখনো মনে পড়ে।
এভাবেই শুন্য প্রেম শুরু।

৫.....
অনেক বছর পর...
ইন্টার এ পড়ি।
তখনই বুঝলাম শুন্য প্রেম কি জিনিস।
প্রেমের অপর পাশ ব্যাথা বুঝিয়ে দিতেই শুধু আমাকে না আমার পুরো পরিবারকে শুন্য করে দিলেন বাবা।
বাস্তবিক শুন্যর আসল রূপ তখনই চোখে এসেছিল।
ফ্রিজ খুলে দেখতাম শুন্য,
খাবার খেতে গিয়ে দেখতাম পাতিল শুন্য।
শুন্য তখন সবচেয়ে বড় বোঝা মনে হচ্ছিল,
কাছের মানুষ যারা বাবা থাকতে সব সময় খবর নিত,তারাও ভয় পেতে শুরু করল খবর নিতে না জানি অবস্থার কথা শুনে তাদের সাহায্য করতে হয়।
তখনই প্রথম উপলব্ধি হয়েছিল পৃথিবী আসলেই মানুষ শুন্য,
যাদের মানুষ বলে চিনি এরা সবই একটা খোলসে আবৃত।
এভাবেই চলছিল,
অনেকদিন পাওরুটি অনেকদিন শুধুই ভাত।
হ্যাঁ,এতো মানুষের মাঝেও তখন মানুষ পেয়েছিলাম আমার মা আর বড় আপাকে।
বাধ্য হয়ে আপা টিউশন শুরু করলেন।
চিটাগাং ভার্সিটিতে নিজের পড়া আর ফ্যামিলি ধরলেন।
তখন মাঝেমাঝে আপাকে দেখতাম যে মেয়ে আব্বু থাকতে দু মিনিট হাটতো না,
রিক্সায় উঠে যেত।
সে মেয়ে শুধু টিউশন করতে যেতে ত্রিশ মিনিট হেটে কিভাবে যেত।

৬...
বছর পর,
এতো ভর্তি পরিক্ষা দেয়ার জন্য ফর্ম কিনার টাকা কোথায়,
কোথাও পরিক্ষা দিবই ভাবছিলাম।
শেষ আপুর জোরাজুরি তে ফর্ম তুললাম নোবিপ্রবির।
চান্সও হল,মা আপুর দোয়া আমাকে হারতে দেয়নি।
সমস্যা দাঁড়ালো ভর্তি নিয়ে,
প্রায় ২০০০০ হাজার টাকা।
কোথায় পাব,
সেটাও আল্লাহ ব্যাবস্থা করলেন।
কোন এক মানুষরূপী ফেরেশতা,
আমার শিক্ষক।
এখানেই ভেবেছিলাম সংগ্রাম শেষ এবার একটু শান্তির পালা,
নিজের পড়া আর ফ্যামিলির তে কিছু ব্যায় বহন করা নিজে টিউশন করেই হয়তো হয়ে যাবে।

৭...
কথায় থাকে তুমি জীবনকে যতই সহজ ভাব,ঠিক ততই কঠিন।
এখানে আসার পর মনে হল আমি খুবই বেশীই মলিন আমার জামা আমার চলা, পায়ে সেন্ডেল সবই
বেশ বেমানান।
তার উপর টিউশন নেই,পড়া ছেড়ে চলে যাব ভাবছিলাম।
এক ভাই পাশে দাঁড়ালেন,
ক্যাম্পাসে যাকে সবাই পলিটিকাল বড় নেতা মনে করে ভয় অথবা সন্মান করে চলেন।
অন্যরা যে তাকেই যাই মনে করুক তার মাঝে আমি একজন মানুষ পেয়েছিলাম,
সব জানলেন তার সাধ্য মতন তার রুমে রাখলেন।
একজন ছাত্র হয়ে এরচেয়ে বেশী কি করার ছিল তার।
তার নাম বলে কৃতজ্ঞতা শোধ হবে তো নাই উল্টো ছোট করা হবে।
তাই নাম সযত্নে এড়িয়ে গেলাম।

৮.....
ক্যাম্পাসের প্রথম তিন মাস,
আপু টাকা দিতে চাইতেন আমি মিথ্যে বলতাম একটা টিউশন পেয়েছি।
তাতেই খাওয়া দাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
বড় আপার উপর আর কতই বোঝা চাপাই,
নিজের তো কিছু করা উচিৎ।
সেই সিনিয়র ভাই,
নিজের খরচেরখাতা থেকে যা দিতেন,
তা দিয়ে দিনে একবেলা সেলিম টং এ পরটা আর চা চলে যেত দিন।
ক্ষুদার কষ্ট কি সেটা আমার চেয়ে ভাল কেউ হয়তো জানে না।
আমি শিখেছি ক্ষুদা নিয়েও কিভাবে হাসি মুখ রেখে বন্ধুদের থেকে নামিদামি রেস্টুরেন্ট এ খাওয়ার গল্প শুনতে হয়।

৯....
একটা সত্যি কথা আমার কোন বন্ধু হয়নি।
কারণ বন্ধু হবার জন্য যা দরকার তাদের সাথে আড্ডা দেয়া, টং এ বসে ট্রিট নেয়া বা দেয়া,তার কোনটারই যোগ্যতা আমার ছিল না।
বেশী হেটে পেটের ক্ষুদা বাড়ানোর সাহসও ছিল না।
ক্লাস শেষ নিজের মতন চলে আসতাম রুমে।

১০....
তিনমাস পর.
সেই ভাই,
টিউশন নিজে ছেড়ে আমাকে দিলেন।
বললেন সিনিয়র হয়ে গেছি পড়ার সময় দিতে হবে তুই তো ফ্রি থাকিস পড়ানোর কাজ শুরু করে দে।
সেইভাবেই আমার ক্ষুদার কষ্ট কিছুটা লাঘব হল।
সুদিন আসলে একা আসে না,অনেক গুলো সুখ এক সাথে নিয়ে আসে।
আরও একজন ছাত্র পেলাম।
ফোন কিনলাম।
না ভাই আপনাদের মতন এতো দামী টাচ ফোন কেনার ভাগ্য তখন হয়নি।
এভাবেই কাটল দুটি বছর।
ক্লাসের মানুষ কারো ফোনে এই হতভাগা ছেলের কোন ছবির জায়গা হয়নি জীবন তো দূরের কথা।
এই জন্যই তাদের কখনো বন্ধু বলব না।

১১.....
আজ তিন বছর পর.
২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তে এসে মনে হচ্ছে এখন আমার পায়ের নিচে মাটি হয়েছে।
বড় আপার চাকরী হয়েছে,
আমারও প্রায় শেষের হয়ে আসছে।
সুদিন বেশী দূর নেই হয়তো।
ভাল আছি, ভালই থাকবো বিশ্বাস।

##একটা কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,ভাগ্য বলে কিছু নেই।
নিজেকে সমাজে ধরে রাখতে কষ্টই একমাত্র পথ।
হয় সেটা নিজের অথবা পরিবারের।

পুনশ্চ :কাছ থেকে দেখা সত্য ঘটনা অবলম্বনে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:০৬

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ভাল লিখেছেন

১৫ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৪৩

দৃষ্টির সীমানায় বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.