নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাইয়াদ

দুঃখ বিলাস ভালো লাগে না আর, সুখে না শান্তিতে থাকতে চাই।

এ্যাপোলো৯০

নিজেকে পাগলী ভাবতে ভালো লাগে।নিজেকে পাগলী প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই বোধহয় সহজে মানুষ কে বিশ্বাস করি।সবাইকে কাছে টানি।সবার কাছ থেকে বাঁশও খাই।তবুও আমি পাগলী ছিলাম,আছি ইনশআল্লাহ থাকবো

এ্যাপোলো৯০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদায় বেলার ভাবনা গুলো

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৬

একটু আগেই শেষ হলো আমার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষ করে খুব টায়ার্ড ছিলাম, সারারাত ঘুমানো তো দুরের কথা, একটু শোবার চান্স ও পাইনি।

এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করাটা আমার খুব একটা ভালো লাগছিলো না। যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে একেবারেই অচেনা একজন মানুষ। তাকে ভালো করে চেনা তো দুরের কথা ঠিক করে কিছুক্ষন কথা বলবার মত সময় ও আমাকে দেওয়া হয়নি।

রাত টা চেষ্টা করেছি হইহুল্লুড় করে পরিবার ও বন্ধুদের সবার সাথে কাটাতে, কেননা নতুন জীবনে প্রবেশের আগে এটাই আমার শেষ রাত। চেয়েছিলাম নিজের জন্য খানিকটা সময়, কিন্তু এত মানুষের ভীড়ে সে সময় টুকু সেভাবে পাইনি। পুরোনো বান্ধবীদের সাথে অনেকটা সময় কাটালাম, স্মৃতিচারন করলাম, তারপরেও মনের মধ্যে এক অজানা আশংকা। নতুন একটা পরিবার পেতে যাচ্ছি, নতুন মানুষ নতুন আচরন। জানিনা আমি খাপ খাওয়াতে পারবো কিনা। সবার সাথে মানিয়ে চলতে পারবো কিনা। ওরা কি আমাকে আমার মত থাকতে দেবে নাকি আমাকে পরিবর্তিত করে ফেলবে?







আজকে আমার বিয়ে ! সকাল সকাল পার্লারে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে। সেখান কার কাজ শেষ করে ভেন্যুতে নিয়ে গেলো। গেইট দিয়ে ঢোকার মুহুর্তেই চোখ ধাঁধানো আলো পড়লো আমার মুখে সেই সাথে গরম ও অনুভুত হলো। দেখলাম ক্যামেরা ম্যান দাঁড়িয়ে আছে। বউ স্টেজে প্রবেশ কবে তার ফুটেজ নিতে হবে তো। বুঝতে পারলাম উপস্থিত সবার চোখ আমার দিকে। চাইলেও মুখ গোমড়া রাখতে পারবো না। মনের অনুভুতি মনেই রেখে দিয়ে মুখে একটা কপট হাসি ফুটিয়ে তুল্লাম। সবাই তো খুশি হয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বসে ছবি তুলতে লাগ্লো, আর আমি বুকের ভিতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাকে শান্ত করার আপ্রান প্রচেষ্টার সাথে সাথে হাসি হাসি মুখে বসে রইলাম। হাজার হোক বউ বলে কথা, তাকে তো আর গোমড়া মুখে মানায় না।

কিছুক্ষন পরেই হবু বর এসে হাজির। তাকে সাদরে আপ্যায়ন করে আমার পাশে এনে বসানো হলো। অতঃপর আবারো সেই চোখ ধাঁধানো আলো। একটু পরেই খাবারের টেবিলে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে, আশে পাশে সবাই অপরিচিত মানুষ। নিজের কাউকে খুজে পেলাম না। হঠাত করেই আমার এক বান্ধবী কে দেখলাম টেবিলের পাশ দিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে, ওর দিকে তাকালাম আমি। আর মনে মনে বলছিলাম, প্লিজ দোস্ত, চলে যাইস না।

খাবার টেবিলে বসে কিছুই খেতে পারি নি আমি। এত লাইট, ক্যেমেরা, এত এটেনশনের মাঝে খাওয়া যায় !!!





এক বান্ধবী চলে যাবে, আমার কাছে বিদায় নিতে আসলো, এতক্ষন যা মনের মাঝে চাপা দিয়ে রেখেছিলাম ওকে দেখে তা এক ঝটকায় বেরিয়ে আসলো। জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিলাম আমি। আর বললাম, চিন্তা কইরো না, আমি আবারো আসবো তোমাদের সাথে দেখা হবে।





আমার এক বান্ধবী পাশে বসে কথা বলছিলো, হঠাত করেই ওকে উঠিয়ে দেওয়া হলো, কেননা কাজি এখন বিয়ে পড়াবে। কাজি এসে কি কি বলল কিছুই আমার কান দিয়ে ঢুকছিলো না। কবুল বলতে বলল আমাকে। কবুল বল্বো !!! বললেই তো বিয়েটা হয়ে যাবে ! কিভাবে আমি আমার বা মা ভাই দুটাকে ছেড়ে থাকবো ! আমি পারবো না, কিছুতেই পারবো না কবুল বলতে। বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিলো, কিন্তু পানি টা শুধু চোখ বেয়েই পড়েছে। মন চাচ্ছিলো উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে বেড়িয়ে যাই। এত মানুষের সামনে চিৎকার করে কাঁদতেও পারছিলাম না। এ কেমন অনুভুতি। কিন্তু কবুল তো বলতেই হবে। অনেক কষ্টে দম আটকে রেখে বললাম কবুল। কি জ্বালা, আবারো কবুল বলতে হবে !! একবার বলেছি সেটা কি যথেষ্ট নয় ? আবারো দম আটকানো অনুভুতি !! কেনো ? বললাম আবারো। সাইন করে করে দিলাম। এই মুহুর্ত থেকে আমি অন্যের ! এতটা বছর ধরে যেই বাবা মা ভাই রা আমাকে আগলে রেখেছে, ভালোবেছে, আদর করেছে শাসন করেছে, এখন থেকে তাদের অধিকারে ভাটা পড়েছে। এও কি সম্ভব ? কোথায় লেখা আছে বিয়ের পরে বাবা মার অধিকার কমে যায় ?? কিভাবে হতে পারে এটা ?

যে বান্ধবীকে আমার পাশ থেকে উঠিয়ে দিয়েছিলো সে এসে আমার কাছে বসলো। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ওর বুকে মাথা রেখে কাদতে শুরু করলাম। কান্নার দমকে হেচকি উঠে যাচ্ছিলো। আশে পাশে মানুষ এসে বলছিলো কান্না না করার জন্য, কারন কান্না করলে মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে !!! হায়রে দুনিয়া, হায়রে মানুষ ! আমি কি ভাবছি , কি ফীল করছি সেটা কেউ বুঝার চেষ্টাই করলো না। পরে রইলো আমার মেকাপ নিয়ে !! বান্ধবীকে সরিয়ে নিতে চাইলো আমার কাছ থেকে, কেননা ও থাকলে আমি আরো কাদবো। ওদের কিভাবে বুঝাই যে আমি তো অনেক আগে থেকেই কাদছি, মনে মনে কাদছি। ওকে সরিয়ে নিলে হয়তো অদম্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়বো না কিন্তু কান্না তো বন্ধ হবে না। বরং ওর কাধে মাথা রেখে কাদতে পারলে আমি কিছুটা শান্তি পাবো। কিন্তু লোকসমাজ তো এত কিছু বুঝে না।







বিদায়ের সময় চলে এসেছে। ওরা আমাকে নিয়ে বের হলো, গাড়িতে উঠবো এখুনি। দুইভাই দুই পাশে। হায়রে, কতই না খুনসুটি ছিলো ভাইদের সাথে। ওদের কত আবদার। কত মারামারি। সব কিছু আজকে অগোছালো লাগছে। ভাইদের জড়িয়ে কেদে দিলাম আবারো। ওরা আমার সামনে নিজেকে অনেকটাই সামলে রাখছিলো। আব্বুকে ধরে কাদলাম, আম্মু কে ধরেও। বিয়ের কিছুদিন আগেও কত চিল্লা পাল্লা করেছি তাদের সাথে। কত আবদার করেছি, হাসিমুখে সব কিছু মেনে নিয়েছেন তারা। আজকে একমাত্র মেয়েটিকে বিদায় দিতে হচ্ছে। অদ্ভুত এই সমাজ। অদ্ভুত এই সমাজ ব্যাবস্থা।



চলে যাচ্ছি আমি। পিছনে ফিরে দেখলাম অশ্রুসজল চোখে আমার চলে যাওয়া দেখছে আব্বু আম্মু। যতক্ষন চোখে পড়লো তাকিয়েই রইলেন। আমি চলে এলাম এক নতুন অধ্যায় শুরু করবার জন্য।









গতকাল আমার সবচেয়ে বেষ্টেষ্ট ফ্রেন্ড এর বিয়েতে গিয়ে অকে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছিলাম। তার মনের ভাবনা গুলোকেই নিজের ভাষায় প্রকাশ করলাম।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

শিশির খান ১৪ বলেছেন: মেয়েরা যে কেন বিয়ার সময় কান্না কাটি করে তা আমি আসলে কখনই বুঝি না তাই আপনার লেখা পইরা বুঝার চেষ্টা করতাসিলাম আসলে মেয়েরা তো কানতে পারে কিন্তু একটা ছেলে তো তা পারে না..........

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: হুম, ছেলেদের অনুভুতি কিরকম হতে পারে আমার অবশ্য আইডিয়া ও নেই।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

সোহানী বলেছেন: সত্যিই অনুভূতিই তুলে ধরেছেন...........

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: কে দেখে যা মনে হয়েছে তাই লিখেছি।

ধন্যবাদ :)

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৪

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: অন্তত বিদায়ের সময় একটু হলেও কাাঁদতে হয়। তাহলে সব দিকে একটু ব্যালান্স করা হয়।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: তাই বুঝি ? অন্তত আমার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারবেন একটা মেয়ে সত্যিকার অর্থে কেনো কাঁদে।

ধন্যবাদ।

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মনটা বিষণ্ণ ছিল এই মেঘলা দিনে,
এই লেখা পড়ে আরো বিষণ্ণ হয়ে গেল…

++++

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: বিষন্ন দিনে আপনার মন টা আরো বিষন্ন করে দেবার জন্য আমি দুঃখিত :(

৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: না ভাই, দুঃখিত হবার কিছু নেই আপনার। লেখাটা আসলেই খুব টাচি… :)

শুভকামনা এবং শুভেচ্ছা জানবেন।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২৮

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: আপ্নাকেও ধন্যবাদ। আসলে আমার এই বান্ধবীটি আমার সবচেয়ে কাছের একজন। তাই তার মনের সব ভাবনা গুলো সহজেই ধরতে পেরেছিলাম। এর আগে কখনো বিয়ের দিনে ব্রাইডালের অনুভুতি বুঝতে পারি নি :(

৬| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৪৩

তাসজিদ বলেছেন: মেয়েদের জীবন টা আসলেই অদ্ভুত। জীবনের দুই অর্ধ দুই স্থানে কাটাতে হয়। মা বাবা ভাই বোন সবাই কে ছেড়ে একেবারে আরেকটি ভিন্ন পরিবেশে চলে যেতে হয়।


অদ্ভুত!!!!!!!!!!!!!!!

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২৯

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: আসলেই অদ্ভুত !
কে জানে আমার কপালে কি আছে :'(

৭| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

এম ই জাভেদ বলেছেন: আমি আরও এপোলোর বিয়ের দাওয়াত পাইনি বলে আচ্ছা মত বকে দেবার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম, শেষে এসে ফিউজ হয়ে গেলাম :P

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:৪৬

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: হাহহাহাহাহহাহাহা,
কি করি বলুন তো, আমার যে মানুষ কে ফিউজ না করতে পারলে ভালোই লাগে না :P

৮| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৫১

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: সোহানী বলেছেন: সত্যিই অনুভূতিই তুলে ধরেছেন........

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১৪

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: লেখক বলেছেন: দেখে যা মনে হয়েছে তাই লিখেছি।

ধন্যবাদ :)

৯| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৪২

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
পুরোটা পড়ার পর বান্ধবীর কথা হইলে কেমনে? ভাবলাম পাত্রী নিজেই বর্ণনা করছে। এনিওয়ে, শুভকামনা।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৬

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: নিজের টা যখন হবে তখন বর্ননা করবো নে।


ধন্যবাদ :)

১০| ১১ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:১৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শুভ বিবাহ । :)

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮

এ্যাপোলো৯০ বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.