নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইরাভান

ইরাভান › বিস্তারিত পোস্টঃ

'গজল সম্রাট' ওস্তাদ মেহেদি হাসান

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:২০

১৯২৭ সালে পেশাদার শিল্পী পরিবারে জন্ম হয় মেহেদি হাসানের। তার জন্মস্থান ছিলো ভারতের রাজস্থান রাজ্যের লুনা গ্রাম। বাবা ওস্তাদ আজিম খান ও চাচা ইসমাইল খানের কাছ থেকে শিশুকালেই তালিম নেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রাচীন ও অনাড়ম্বর ধারা ধ্রুপদ-এর। কিশোর বয়স থেকেই তিনি উদীয়মান প্রতিভা হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেন। গান গাওয়ার জন্য সেই সময়েই তিনি জয়পুর ও বারোদার মহারাজাদের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।



১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়। সে সময় সপরিবারে তিনি স্থানান্তরিত হন পাকিস্তানে।



সে সময়টা এতোই কঠিন ছিলো, সঙ্গীতনির্ভর হয়ে জীবন ধারণের কোনো সুযোগ ছিলো না মেহেদির মতো একজন তরুণের। জীবিকার তাগিদে তিনি সাইকেল মেরামতের দোকানে কাজ জোটালেন। পাশাপাশি শিখলেন ট্রাক্টর চালানো ও মেকানিকের কাজ। তবে দিনে কাজ করে রাতের সময়টা ঠিকই বরাদ্দ রেখেছিলেন কণ্ঠচর্চার জন্য।



এক সময় মেহেদি লক্ষ্য করলেন, পাকিস্তানিদের মধ্যে গজলপ্রীতি আছে। তাই জোরদমে উর্দু শেখা শুরু করে দিলেন। বিশেষ করে উর্দু কবিতা। একসময় আবিষ্কার করেন, সঙ্গীতের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান থাকায় বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। রাগ সঙ্গীত সম্বন্ধে জ্ঞান ও শিক্ষা এক করে তিনি বিভিন্ন সুরের খেলা খেলতে পারেন।



১৯৫৭ সালে রেডিও পাকিস্তান-এ প্রথম কণ্ঠ দেন মেহেদি। এরপর তার জীবন ইতিহাসে শুরু হয় সাফল্যের গল্প। যদিও ওস্তাদ বারকাত আলী, বেগম আখতার ও মুখতার বেগমের মতো শিল্পীরা তখনো বর্তমান। ফাইজ আহমাদ ফাইজ, আহমাদ ফারাজ এবং কাতিল শিফাইয়ের মতো সেসময়ের শীর্ষস্থানীয় কবিরা মুগ্ধ হতেন তাদের কাব্যে মেহেদি সুর ও কণ্ঠ দিলে।



ওস্তাদ মেহেদি হাসান এবং তার সঙ্গীত এখন উপমহাদেশের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়। পাকিস্তানি সিনেমার জন্য তিনি অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। একটা সময় ছিলো যখন গান না গাইলে অসমাপ্ত থাকতো পাকিস্তানি সিনেমা। ১৯৬০-৭০ দশকে দাপটের সঙ্গে আহমেদ রুশদীর সঙ্গে পাকিস্তানি সিনেমার দুনিয়া শাসন করতেন তিনি। সে সময় সিনেমায় প্লেব্যাক করার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন তিনি। এ ছাড়াও পাকিস্তানের লোকসঙ্গীত, আধুনিক এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারায় গেয়েছেন অসংখ্য গান।



ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গীত পিয়াসী মানুষের মনে গজলের এই সম্রাট একটি বিশেষ সমীহের স্থান দখল করে আছেন অনেক আগ থেকেই। সেই পথ ধরে ভারত ও পাকিস্তান তাদের সংস্কৃতিক সেতু হিসেবে মেনে চলে মেহেদিকে। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ভারতেও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। জন্মস্থান লুনা গ্রামে তিনি প্রায়ই গিয়েছেন পাকিস্তান থেকে। গান গাইবার জন্য তিনি ভারতের যেখানেই গেছেন সেখানেই তাকে ফুলেল সম্ভাষণসহ দেওয়া হয়েছে অজস্র উপহার। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে গান গাওয়া ভারতীয় শিল্পী লতা মুঙ্গেশকার, ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’ নামে অভিহিত করেছেন তাকে।



বিশ্বের বিভিন্ন মিলনায়তনে গান গেয়েছেন মেহেদি। এর মধ্যে তার নেপাল ভ্রমণটি ছিলো সবচেয়ে স্মরণীয়। নেপালে তিনি গিয়েছিলেন সেই সময়ের রাজা বীরেন্দ্রের আমন্ত্রণে। সেখানে রাজার প্রাসাদে এক রাতে গান গাইতে গাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। ব্যস্ত কর্র্র্মতালিকার জন্য যখন তার এক মুহুর্ত সময় ছিলো না বিশ্রাম নেওয়ার। কিন্তু রাজা ছিলেন এই শিল্পীর অতুৎসাহী ভক্ত এবং কিছুটা গজল জ্ঞানও ছিলো তার। তাই মেহেদি থেমে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে পড়লেন রাজা বীরেন্দ্র এবং গানের পরবর্তী লাইনগুলি গেয়ে শোনালেন। এমন কয়েকবার হওয়ার পর মেহেদি নিজেই হাত তুলে ইশারা করতেন বীরেন্দ্রকে সহযোগিতার জন্য। বীরেন্দ্রও গাইতেন তার পক্ষে যতোটা সম্ভব সুরে গাওয়ার। আর ভুল হলে সেই অংশটুকু আবার গেয়ে শোনাতেন মেহেদি।



জীবনের শেষ ক’টা বছর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে মেহেদির। তার ফুসফুস ও মুত্রথলীতে সংক্রমণ প্রথম ধরা পরে ১৯৮০ সালের শেষ দিকে। ব্যক্তিগত জীবনে দু’বার বিয়ে করেছিলেন তিনি এবং দুই স্ত্রীই মারা গেছেন তার আগে। নয় ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জন্মদাতা তিনি।



শিল্পী হিসেবে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতী। পাকিস্তান সরকারে কাছ থেকে পেয়েছেন তমঘা-ই-ইমতিয়াজ, প্রাইড অফ পারফরমেন্স এবং হিলাল-ই-ইমতিয়াজ। আরো পেয়েছেন নিগার ফিল্ম অ্যান্ড গ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস এবং ভারত থেকে ১৯৭৯ সালে পেয়েছেন সাইগল অ্যাওয়ার্ড। ১৯৮৩ সালে নেপালের রাজা তাকে ভূষিত করেছেন গোর্খা দাক্ষিণ বাহু খেতাবে।



৮০ দশক থেকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি নিয়মিত গান গাওয়া ছেড়ে দেন। তবে তার শেষ গান রেকর্ড হয়েছে ২০০৯ সালে। গানটির সুর ও সঙ্গীত করেছিলেন তিনি নিজেই এবং এই গানে তার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন লতা মুঙ্গেশকর।



এক নজরে ওস্তাদ মেহেদি হাসান:

জন্ম ১৯২৭ সালের ১৮ জুলাই, ভারতের রাজস্থানে

সঙ্গীত শিক্ষা বাবা ওস্তাদ আজিম খান ও চাচা ইসমাইল খানের কাছ থেকে

১৯৪৭ সালে দেশান্তরী হয়ে বসবাস শুরু পাকিস্তানের করাচিতে

১৯৫৭ সালে ঠুমরি গান দিয়ে রেডিও পাকিস্তানে শুরু

১৯৮০ সাল পর্যন্ত একটানা ৫০ হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দেন

২০০০ সালে ভারতের কেরালায় পারফর্ম করেন জীবনের শেষ কনসার্টে

২০০৯ সালে রেকর্ড হয় তার কণ্ঠের শেষ গান, লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে

মৃত্যু ৮৪ বছর বয়সে ২০১২ সালের ১৩ জুন, পাকিস্তানের করাচিতে



View this link

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:২৫

অদম্য১২৩৪ বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৩০

ইরাভান বলেছেন: আপনাকে ও ধন্যবাদ।

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৪০

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ লেখক এই বরেন্য শিল্পীকে তুলে ধরার জন্য।

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৪৬

ইরাভান বলেছেন: ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা .....।

৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৪৮

েরজা , বলেছেন:


ধন্যবাদ ।
আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লাগে জাগজিৎ শিং ।

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৫৮

ইরাভান বলেছেন: ভাই আপনি যে " শিং" বানান লিখছেন.......।
যাইহোক পরে অন্য সময় উনাকে নিয়ে তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো।
আপনাকে ও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.