নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন রহমান

নাসরীন রহমান

নাসরীন রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেলায় একদিন

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১০


তিনশত পঞ্চাশ টাকা। ভাবতে গেলেই মনে প্রচন্ড ধাক্কা লাগে।কেন এমন হয়? ঠিক নিজেকে বোঝাতে পারি না। ভাবনার রাজ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। তবে কী যেন ঘিরে রয়েছে ঐ টাকার অঙ্কটিকে কেন্দ্র করে।না, না, ঐ টাকা আমি হারিয়ে ফেলিনি। ইষৎ গোলাপী বর্ণের ছোট্ট একটি চেনওয়ালা ব্যাগের ভেতরে খুব যত্ন সহকারে টাকাগুলো সামলে রেখেছি।
সেদিন বেশ ঠান্ডা পড়েছিল। সকালে কুয়াশাছন্ন প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।মনে হচ্ছিল, দুধ সাদা কোমল তুলার মত ভাসমান মেঘগুচ্ছ বাড়ির জানালার কাছে ভেসে বেড়াচ্ছে। হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। কৌটোভরা সকালের সুখে গুনগুন করে গান ধরলাম। ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন লাগল নাচন … আম্‌লকির এই ডালে ডালে…পাতাগুলি…’।
তখন বিকেল চারটা। ‘অপূর্ব মার্কেট’ এ গিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফার জন্যে কয়েকটা কুশন কিনবো ঠিক করেছি।সেটা আর হল না। শিল্প মেলায় যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। মেলার উদ্দ্যেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম।ভাবলাম মেলা থেকে আরও কত্ত কী কেনা যাবে।
মেলার বিশাল সুউচ্চ গেট দেখে মন ভরে গেল।মেলার বিশাল পরিসর দেখে চমকে গেলাম।বিশাল ভাবনায়ও পড়ে গেলাম। পসরা সাজানো রংবেরঙ্গের সারি সারি স্টল।একবার এই স্টলে, আরেকবার ঐ স্টলে প্রজাপতির মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোন কিছু না কিনলেও, ঘোরাঘুরি করতে বেশ মজা লাগছিল।চমৎকার আলোকসজ্জা। দারুণ লাগছে। মেলা চত্বরে নেমেছে মানুষের ঢল।আর ঢল নামবেই না বা কেন। এই যান্ত্রিক সমাজে কিছুটা আনন্দের নিশ্বাস ফেলার ফুরসত পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।
হাটতে হাটতে চোখে পড়ল একটা দান বাক্স। স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি বাক্সের ওপর চার কি পাঁচ বছরের এক শিশুর ছবি সেঁটে দেয়া হয়েছে। একটু কাছে গিয়ে দেখলাম ছবির নীচে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘শিশুটির ব্লাড ক্যান্সার, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন’।মনটা ভার হয়ে আসে।সামান্য টাকা বাক্সে ফেললাম।আবার পথ চলতে শুরু করি আর ভাবি ক্যান্সারের কথা।
এরপর কোত্থেকে যেন মেশিনের ঘরঘর শব্দ শুনতে পেলাম। বিরক্ত হলাম। পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলাম চারজন চীন তরুনী আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।আমিও মিষ্টি করে মুচকি হাসলাম। ব্লেন্ডিং মেশিনে হরেক রকম ফলের জুস বানাচ্ছিল ওরা।বলতে চাইল, ‘আপনি কিছু খাবেন?’ আমারও তেষ্টা পেয়ে গেল তাই এক গ্লাস ম্যাংগো জুস কিনে স্ট্রতে টান দিতে দিতে আবার ঘুরতে লাগলাম।আমার মন বেশ ফুরফুরে এখন। আচমকা থেমে বাঁ পাশে তাকালাম।ঠন ঠন করে রেলগাড়ি বড্ড জোরে আওয়াজ করছে। খালি মুড়ির টিনের মত ঝনঝন শব্দ করে নদীর মত এঁকেবেঁকে চলছে।
হঠাৎ কানে ভেসে আসল মানুষ হারানোর সংবাদ। ‘গায়ের রং কাল, মাথায় হ্যাট, পায়ে একজোড়া হলুদ ক্যাড্‌স, আনুমানিক চার বছর, কিছুই বলতে পারেনা। অনুরোধ জানাচ্ছি আপনার শিশুকে আমাদের প্যাভিলিয়ন থেকে নিয়ে যান।’

সন্ধ্যা হয়ে এল। এবার বাড়ি ফেরার পালা।তখনও মেলার মাঠ রমরমা। একটা সবুজ রঙ্গের সি এন জিতে চড়ে বাড়ি ফিরলাম।
বাড়ি ফিরে তিরিশ টাকার টিকিটটা বের করলাম, মেলায় প্রবেশের টিকিট। সেই টিকিটের গায়ে পুরস্কার লেখা ছিল। ভেবে পুলকিত হলাম।লেখা ছিল ‘টিকিটের এক অংশ নির্ধারিত বাক্সে ফেলবেন ও আরেক অংশ সঙ্গে রাখবেন। আজ রাত আটটায় পুরষ্কার ঘোষিত হবে’।মাথাটা হঠাৎ লাটিমের মত ঘুরতে লাগল। টিকিটের এক অংশ বাক্সে ফেলেতে ভুলে গেছি। পুরস্কারতো ফসকে গেল।কুশন কেনার কথাটিও খেয়াল ছিলনা।আর এই খেয়ালিপনা স্বভাবটা আজও গেলনা।
সে মুহূর্তে মনে পড়ে গেল সেই সি এন জি ড্রাইভারের কথা। লম্বা সাদা দাড়ি, ষাটোর্ধ ব্যক্তি, অবিকল রবি ঠাকুরের মত দেখতে।আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল।ভাংতি টাকা আনার জন্যে বাড়িতে প্রবেশ করি।ওমা একী? মিনিট পরে বাইরে গিয়ে দেখি সি এন জিওয়ালা নেই। ভাড়া না নিয়ে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল।তিনশত পঞ্চাশ টাকা।আজও সবুজ সি এন জি দেখলে ছুটে যাই, সে নয়তো? কেমন জানি অস্থির লাগে। টাকা পরিশোধ না করার একরাশ বেদনা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮

সোহানী বলেছেন: হুম.,... ভালো লাগা........

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: ২য় ভাল লাগা।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২

ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: কেমন জানি অস্থির লাগে। টাকা পরিশোধ না করার একরাশ বেদনা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬

আশালিনা আকীফাহ্‌ বলেছেন: আপনার বেদনার অনুভুতি আমাকেও ছুঁয়ে গেলো আপু। দোয়া রইলো।।

৫| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬

নিলু বলেছেন: ভালো , লিখে যান

৬| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৩২

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: এরকম হলে,আসলেই খারাপ লাগে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.