নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন খান

নাসরীন খান

প্রত্যেক সৃষ্টিরই আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।প্রয়োজন সৃজনশীল মন।

নাসরীন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যন্ত্রমানবী [শেষ পর্ব]

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:০২

একদিন কাজের ফাঁকে আনিস ডাকল।আনিস মধ্যবয়সী এই গার্মেন্সের পুরানো এক হেল্পার ।কিছুদিন হইল তার বউটা মইরা গেছে ।এমনিতে তারে ভালা মানুষই মনে হয়।সে আমারে বিবাহ করতে চায় ।আমার সব কিছু খুইল্যা কইলাম।সে বলল ,আমি সব জানি ।তুমি রাজী থাকলে সামনে শুক্রবারেই বিয়ার কাজটা সাইরা ফালামু।তয় একখান কথা ,কাউরে এহন কইওনা।

আমার না করার ইচ্ছা করলনা।মনে হইল আমি এতদিন পর একটা সংসার পামু,একজনরে নিজের বইলা পামু,যার লগে সুখের স্বপন দেহুম,আমার মাথার উপর একটা ছাদ পামু।আমি সংসার বান্ধনের লোভটা সামলাইতে পারলাম না।

কাজে মন বইতাছে না ঠিকমতন।সুখের স্বপনে ভাইসা বেড়াইতাছি যেন।জীবনে সব অনাদর আর না পাওয়ার কষ্টের যে ঘা টা বুকের ভিতরে যন্ত্রনা দিতাছিল তা মনে হইল নিমেষেই ভালা হইয়া গেল।আমি খুশীর জোয়ারে সাঁতরাইতে লাগলাম।আমি সত্যই কাউরে কইলাম না কিচ্ছু।

শুক্রবার দিন বেলা দশটার সময় কথা দুজনই ফার্মগেইট বিরিজের কাছে থাকুম।সময় জানি তাড়াতড়ি শেষ হইতাছে না । পারুল অনেকবার জিগাইল কই যাইতাছ ?আমি কইলাম পরে আইসা কমুনে।সাজতে সরম লাগতাছে তবু সাজলাম।জীবনে কোনদিন সাজিনাই তাই বইল্যা বিয়ার দিনও সাজুমনা !ঘর থাইক্যা বাইর হইলাম দুইঘন্টা আগে।আমি হাটতে হাটতে বাসে উঠছি আর পারুল ফোন করল,-তোমার বাপে আইছে ,

-পারুল তুই তারে খাওন দে আর কইয়াদে সন্ধায় আমি আমু ।

-যদি জিগায় তুমি কই গেছ ?

-ক অফিসে অভারটাইম আছে।

মরার বাপটায় আর সময় পাইলনা ,আইজই আইয়া উপস্থিত।ট্যাকা পাটাইতে দুইদিন দেরী হইলেই আইয়া হাজির হয়।আল্লা এত মাইনষের মরণ দেয় ,হের মরণ দিতে পারেনা ?

আইজ একটা খুশির দিনেও শয়তান বেটা আমারে একটু আনন্দে থাকতে দিবনা।

ফার্মগেইটে গিয়া দেহি আনিস মিয়া দাঁড়াইয়া আছে।আমারে দেইখ্যা আগাইয়া আসল।একগাল হাসি দিয়া কইল,

-টেনশন করতাছ মনে হয়।আমারে দেইখ্যা হাসলানা যেন,কোন সমস্যা হইছে ?

-না,কিছু হয়নাই।

বাবার কথাটা কইতে মন চাইলনা।খানেক পরে একটা ফোন আইল আনিস মিয়ার কাছে।ফোনটা ধইরা কইল,

-আমরা আইসা পড়ছি।তাড়াতাড়ি আসেন।

-আফনে না কইলেন, কাউরে কওয়া যাইবনা!তইলেতো পারুলরে নিয়া আইতাম।

-ভালা করছ আন নাই।আমগো বিয়াতে সাক্ষী লাগবো দেইহা একজনরে কইছি হেয় আইলেই রওনা দিমু।



একটু বাদেই একটা গাড়ী আইল ।আমরা উঠলাম সেই গাড়ীতে।উঠে দেখি সুবারভাইজার স্যার।দেইখা আমার কইলজাটার মধ্যে কামড় দিল।না জানি কোন অশুভ জিনিস আমার কপালে আছে আইজ।আনিস মিয়ারে স্যার কিছু ট্যাকা দিল ।আমারে কইল বিয়ার খরচ লাগব তাই স্যারের থাইক্যা ধার লইলাম ।স্যারের সাথে যাইতাছি কই?

-স্যারেইতো কাজী অফিসে লইয়া যাইব।হেয় আমাগো বিয়ার সাক্ষীও অইব।





যাইতে যাইতে যাত্রাবাড়ী লেখা সাইনবোর্ড চোখে পড়ল।এতদূরে কেন ?কাজী অফিসতো কত আছিল কাছাকাছি।কত কথা মনে জানান দিতাছে ।ভয়ে কিছু কইতাছিও না।আনিসরে অবিশ্বাসওবা

করি কেমনে!মানুষটা আমার সাথে বেঈমানী করব?



একটা বাসায় নিয়া গেল।গুছানো,সাজানো । লোকজনের সাড়াশব্দ নাই।একটু পর আনিস কইল,

-তুমি বহ।আমি কাজী অফিসে গিয়া কাজীরে লইয়া আসি।

আমি বুঝতে পারলাম কোন অঘটন ঘটব আইজ আমার কপালে।তার হাতটা চাইপা ধইরা কইলাম ,-আমি যামু আফনের সাথে।

-চুপ কইরা বইসা থাক।একদম নড়ানড়ি করবা না।

আমি চাইরদিক আন্ধার দেখতে লাগলাম ।কখন জানি মাথা ঘুরাইয়া পইড়া গেলাম।তারপর সুবার ভাইজারের অন্দর ঘরে তার বিছানায় নিজেরে দেখলাম বিবস্ত্ররূপে।সেই কদাকার দৃশ্য জীবনে ভূলার নয়।বিকালে একটা নতুন কাপড় দিয়া কইল

-পইড়া নে।বাসায় দিয়া আসব।

আমি কানতে লাগলাম।দয়া করেন স্যার, আমারে বিয়া করেন ।এহন আমি কেমন করে মাইনষেরে মুখ দেখাব ।আপনেরে আমি কোন অসুবিধায় ফেলুম না।সংসার করতেও কমুনা।শুধু একটু স্বীকৃতি চাই।দয়া করেন আমারে আফনে।

-টালবাহানা রাইখ্যা তাড়াতাড়ি কর।কোন ঝামেলা করলে চাকরীটা খোয়ানো লাগব।তারপর না খাইয়া মরবি।

সত্যিইতো একদিনও খাওয়ার যায়গা নাই।বাবারে ট্যাকা না দিলে আমারে খুন করব।

আমি কার কাছে নালিশ করব?পুলিশের কাছে যামু ?নাকি এম ডি স্যাররে কমু।কিছুই ঠিক করতে পারতাছি না।যারেই কই আমার সম্মানওতো খুয়াইব।আমি ইচ্ছা কইরা,আনিসরে বিশ্বাস কইরা যদি না বাইর হইতাম তাহলেতো এমন সর্বনাশ হইতনা।চোখ দিয়া ধরধর কইরা অঝোরে পানি বাইরইতাছে ।সংসার বান্ধার কথাত আমি ভাববারই পারি!তাই বইলা আমিত খারাপ মাইয়া নই।আমারে কেন সরম পাওন লাগব বিচার চাইতে গিয়া।মাথাটা ভনভন কইরা ঘুরতাছে ,কান দুইটা যেন গরম বাতাস ছাড়তাছে।

আহনের সময় চাইরখান ঘুমের অষুধ আমারে দিয়া কইল

-খাইয়া ঘুম দিলে সব যন্ত্রনা চইলা যাইব।

সত্যই বাসায় ঢুইক্যা পানির গেলাসটা টান দিয়া নিলাম। সব গুলান ওষুধ ছিড়্যা হাতে নিয়াগিল্যা ফেললাম।

তারপর দুই দিন পার হইল ।চোখ মেইল্যা দেখলাম পারুল বইস্যা আছে ।আমারে বুকের মধ্যে জরাইয়্যা ধইরা হাউমাউ কইরা কাইন্দা উঠল।এই প্রথম কাউরে জানলাম ,যার চোখে আমার জন্য পানি পড়ল।



আর আমার বাপ?পারুল সবার কাছে আমার শরীর খারাপের কথা কইয়া ,ডাক্তার দেহানের লাইগ্যা কিছু টাকা উঠাইছিল।হেই টাকা সব হাতে লইয়্যা গাড়ী আনবার গিয়া আর আইলনা।কোন খানে পইরা রইছে মনে কয় মদ গিল্যা।এই আমি কেমন কইরা চাকরী খুয়াই বিচার চাইতে গিয়া?

































মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৪২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অধরা স্বপ্ন তবু দেখতে পাগল হয় মন!!!!!!

জীবনের এমন ক্রুড়তা গুলো আমাদের এমনি করেই ঘিরে থাকে।
আমারও মূখোশের আড়ালে হাসিখূশী চলি-য়েন কিছূই হয়নি!!!!

++

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৪৫

নাসরীন খান বলেছেন: স্বাগতম,অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৫০

ফারজানা শিরিন বলেছেন: এত কষ্ট বাস্তবের আমার(মেয়েদের) জন্য তো আছেই । মাঝে মাঝে লেখনীতে এক বিন্দু সুখ না হয় দিয়ে দিয়েন ।

প্লাস ।

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:০২

নাসরীন খান বলেছেন: প্রথমবার আমার ব্লগে,সুস্বাগতম।অনেক ধন্যবাদ সুখের ছুঁয়া দিতে পেরেছি জেনে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.