নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন খান

নাসরীন খান

প্রত্যেক সৃষ্টিরই আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।প্রয়োজন সৃজনশীল মন।

নাসরীন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুকোচুরি [ছোট গল্প]

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১১

দাদুর বয়স একশ হলো প্রায়। তবুও পইপই করে বাড়ীময় ঘুরে বেড়ান।বাগানের খুঁজ নেন ,পুকুর ঘাটলার খবর নেন।একটু কুঁজো হয়ে গেছে বয়সের ভাড়ে তবে লাঠি ছাড়াই হাটেন দিব্যি।বছর দুই আগে ছানির অপারশন করিয়েছেন বলে রাতেও চোখে দেখতে পান।

বুড়ি এখনও ভালই টনটনা-মিরাজের মার ভাষ্য।তার মতে বিষয় আশয় এখনও সে বগলদাবা করে রেখেছে।কারো সাধ্যি নেই তার কোন কিছুতে কেউ হাত দেয়।এখনো কোন ছেলের কাছ থেকে কি নিয়ে ,কোন মেয়ের নাতি-নাতনিকে দেবে,তা নিয়েই যত চিন্তা ।কোন সিদ্ধান্তে কাউকে জিজ্ঞেস করেনা।শুধু যখন ছোট ছেলের বউয়ের সাথে খুঁনসূটি বাঁধে তখনই বড় ছেলে আর তার

বউকে নালিশ করে।যেন ছোট আর তার বউয়ের বিচার করা হয়।কথায় তাকে হারানো চাট্টিখানি কথা নয়।এখন তার কোন কিছুর প্রয়োজন নাই।তবুও সারাদিন হিসেব কষেন ,কে তাকে কত টাকা দিয়েছে কার্তিক মাসে,কে রোজার ঈদে শাড়ী -টাকা কিছুই দেয়নি।

বউরাও কম যায় না ।সেও আবোল তাবোল প্যাচাল পেরে যায়।তারাও এটা ওটার জবাব দিয়ে যায়।এই নিয়ে মাঝে মধ্যেই লাগালাগি,মন কষাকষি,রাগ ,ক্ষোভ।আর এমনটি যখনই ঘটবে তখনই বড় ছেলেকে বাড়ীতে জরুরী তলব।তারপর সব শোনে সে সবার উদ্দেশ্যে বকাবকি করলে তবেই বুড়ী ক্ষেন্ত[চুপ]।

যখন তার মুড ভাল থাকে তখন রাজ্যের কথা বলে নাতিদের সাথে---

অনেক ছোট বয়সে আমার বিয়ে হয়।তখন বয়স হবে নয় কি দশ। তোদের দাদার বয়স আঠার ঊনিশ।প্রথম যেদিন আমারে দেখতে গেছিল সেই দিন ফেরিওয়ালা সাইজ্যা গেছিল।বাড়ীর বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল আমার।তবু দাদুর সাথে গেছিলাম চুলের ফিতা কিনতে।বিয়ার কথাবার্তা চলতাছিল ।তিনার বন্ধু বুদ্ধি দিছিল আমারে দেখনের জন্য।আগের দিনে মুরুব্বীরার কথাতই বিয়া হইত।বড় বাড়ীর মেয়েরারে দেখাদেখি কইরা বিয়া নেওনের রীতি ছিল না।বড়দের মুখের কথাতই বিয়া।

মানুষটার শরীরের রং আছিল দুদের মত,লম্বা চওড়াও ।খুব সরম পাইত।কারো সামনে পড়লে আমারে যেন চিনেই না এমন ভান করত।নাম ধইরা ডাক দিত না।বড় ছেলের নাম ধইরা সবসময় বলত-জিলুর মা।

বিয়ার দিন সরমে আমার কাছেই আসেন নাই।আমিওতো কিছু বুঝতাম না ।দুইজন অনেক দূরে বিছানার দুই পাশে ঘুমাইয়া ছিলাম।

একবার তিনি আমারে নিয়া আমাদের বাড়ীতে গেলাইন।আসনের দিন আমি ধানের মাচায় লুকাইয়া ছিলাম।সবাই আমারে খুঁজ।উনি ব্যাগ কান্দে নিয়া দাঁড়াইয়া আছেন মাথা নিচু কইরা।আমার তার জন্য মায়াও লাগতাছে আবার যাইতে মন চাইতাছে না।একটু পরে মাচান থাইক্যা নাইমা আইলাম।মানুষটা একেবারে মাটির মত আছিল।আমারে একটা ধমক দেয়াত দূরে থাকুক,একবার তাকাইলও না ।শুধু আমার দাদুরে কইল,তার মনে হয় যাইতে মন চাইতাছে না।যখন যাইতে মন চায় আমারে খবর পাঠাইলে আইসা লইয়া যাব।দশদিন পর গেছিলাম ।তিনি কিছুই বলেন নাই সেজন্য আমারে।



হঠাৎ কইরা মানুষটার কপালে দুঃখ নামল।জিলু মেট্টিক পরীক্ষা দিব তখন।কামলা ছেরা[ছেলে] ধানের মাচানে উইঠ্যা ধানের বস্তাডা নামানোর জন্য তারে ধরতে কইল।উনি ধইরা নামাইতে গিয়া পইরা গেলাইন।বুকে চোট পাইল।সেই থেইক্যা কয়দিন পরপর বুকে ব্যাথা আসত।বছর খানেক পরে ব্যাথা আরো বাড়ল।জিলু ডাক্তার দেখানোর জন্য সদরে নিয়া গেল।তখন প্রথম এক্সরা [এক্সরে] করল।এর আগে কোন দিন এইতা চিনতাম না।বুকের চোটের মধ্যে বোলে[সম্ভবত] ঘা হইছে।প্রায় ছয়মাস ওষুধ খাইলাইন তিনি।কোন উন্নতি হইল না।মরনের কয়দিন আগে জ্বর হইছিল।একটু -আধটু না সাংঘাতিক জ্বর।আর ভালা হইলনা।



চোখ দিয়া এখনো ঝরঝর করে পানি ঝরে তার কথা মনে হলে।অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে।একাএকাই যুদ্ধ করেছে সারাটা জীবণ।এখন যুদ্ধ করা লাগছে না।সব ছেলেমেয়েরা সুখে আছে।তবুও একা সবসময়।জিলুর বাবার ছায়া দেখে ,কল্পনায় যতটুকুন পায় ততটুকুই ভাবে আর দিন গুণে।

'' মিলন হবে কত দিনে তার মনের মানুষের সনে''।।

















































মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২০

খেয়া ঘাট বলেছেন: ভালো লেগেছে, দুঃখের গল্প।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৮

নাসরীন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।আমার ব্লগে প্রথম পেলাম।স্বাগতম।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২১

হাসান মাহবুব বলেছেন: পারিবারিক আবহে সুন্দর একটা গল্প।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

নাসরীন খান বলেছেন: mahbub vai ,apnar kach teke lekhar talim nibo vavchi. .jokon likhi tokon mone hoy valoy hoeche kintu apnar guly porlay mone hoy ami kichui pari na.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.