নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন খান

নাসরীন খান

প্রত্যেক সৃষ্টিরই আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।প্রয়োজন সৃজনশীল মন।

নাসরীন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের সওয়ার[তৃতীয় পর্ব]

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৯

মার শরীরটা খুব ভাল যাচ্ছেনা।ঠাণ্ডা লেগে গলা বসে গেছে।ভাবছি অফিস থেকে দুদিনের ছুটি নিয়ে মাকে ডাক্তার দেখিয়ে আসব।কিন্তু তরিকুল সাহেবের মেয়ের বিয়ে হওয়ায় ছুটিতে আছেন বিধায় আমার ছুটিতে যাওয়া যাবে না।মাকে ফোন দিলাম কিন্তু তার কথা স্পষ্ট হচ্ছে না বলে শায়লার সাথে কথা বললাম।বি,সি ,এস এর ফরম ফিলাপ করেছি জানালাম
-ভাইয়া মা খুব খুশি হইছে,বলছে সে নফল নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করব।
-আগে তো পরীক্ষা দিয়ে এলাও হই তারপর মাকে খুশি হতে বল।
-তুমি এলাও হবে নিশ্চয়ই ইনশাল্লাহ।
-সেই ভাবেতো প্রস্তুতি নিচ্ছি।দেখি সামনে কি হয়।
-ছোট কাক্কু মাকে বলছে,তোমার যদি টাকা লাগে তাইলে তিনি দিবো।দরকার অইলে দু এক মাস চাকরী করতে মানা করছে।
-আরে পাগলি চাকরী কি ইচ্ছা হলেই ছেড়ে দেয়া যায়? পরে পাব কোথায়?ওর মধ্যেই পড়তে হবে।কাক্কু চিন্তা করতে মানা করিস।
-মাকে কাল হাসপাতালে নিয়া গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে দিস।
-ঠিক আছে ভাইজান
অফিসে গিয়ে বসলাম এর মধ্যেই বড় স্যারের পি এস এসে বললেন স্যার দেখা করতে বলেছেন।ধীর গতিতে হেটে যাচ্ছি আর চিন্তা করছি কেন ডেকেছেন।দরজায় দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম স্যারের কক্ষে একজন অল্প বয়স্কা মেয়ে বসে আছেন । একবার ভাবলাম এখন ঢোকা উচিৎ হবে কিনা?আবার ভাবলাম নিশ্চয়ই মেয়েটার কোন প্রয়োজনে আমায় ডেকেছেন।
-স্যার ,আসব?
-নিশ্চয়ই,বস
-[মেয়েটার দিকে তাকিয়ে] আমার মেয়ে মৃদোলা।ওর প্রয়োজনেই তোমাকে ডাকা।কাল থেকে ও এই অফিসে তোমার পদেই জয়েন্ট করছে ।তুমি ওকে কাজ বুঝিয়ে দেবে যখন প্রয়োজন হবে।
-মৃদোলা ,ও খুব ভাল এবং নির্ভর করার মতো ছেলে।আশা করি তুমি ভাল শিখতে পারবে।
আমি ভাবছি উনিতো সরাসরি বস হিসাবেই জয়েন্ট করতে পারে ,চাইলে উপরে যে কোন পদে।
-ওকে আগে কাজ শিখতে হবে তারপর এগুতে হবে।জানার কোন বিকল্প নেই ,বুঝলে।আস্তে আস্তে এগুনো ভাল নইলে হোঁচট খেতে হয়।ওর জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা ওকে এমনিতেই কাবু করে ফেলেছে।আমি আর কখনও চাইনা কোনও কিছুতে আমার মেয়েটা আহত হোক।
স্যারের চোখ ছলছল করছে কথাটা বলার পর।মৃদোলার চোখেও পানি।নিশ্চয়ই এমন কোন ঘটনা যা তাদেরকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।আমিতো আর জিজ্ঞেস করতে পারি না তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
স্যার স্বাভাবিক হওয়ার জন্য আমাকে উদ্দেশকরে প্রসঙ্গ পালটালেন
-তোমার পরীক্ষা কবে?প্রস্তুতি কেমন নিয়েছ।
-শ্বার প্রস্তুতি ভাল।আর পরীক্ষা সামনের মাসের ২০ তারিখে।
-তুমি পরিশ্রমী ছেলে ,ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে ।
-আমি চাই তুমি ভাল কর, যেখানেই থাক আমার দোয়া তোমার সাথে থাকবে।
-ধন্যবাদ আপনাকে
স্যার ভীষণ ভালো মানুষ।এত উৎসাহ দেন সবাইকে যে ইচ্ছে থাকলেও কেউ কাজে ফাঁকি দিতে পারবে না।এত ভাল মানুষটাকে ঠকানো উচিৎ নয় কারোই।তারপরওতো খারাপ লোকগুলি কখনো কখনো ঠকাচ্ছে তাকে।
মৃদোলার কথা ভাবছি দেখতে নিষ্পাপ একটা চাহনি মুখের অবয়বে।কে তাকে কষ্ট দিলো ?যা মনে হলেই ওরা কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটার জীবনটায় খারাপ অভিজ্ঞতা যোগ হল।এই নশ্বর পৃথিবীতে কেন এত খারাপ কাজ করে মানুষ?অল্প কয় বছরের জীবন সেখানে প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে কত হাঙ্গামা। স্বস্তি দিচ্ছে না কাউকে খারাপ মানুষগুলি।সুন্দর একটা পৃথিবীর স্বপ্ন মানুষকে বিচলিত রাখে সারাক্ষন।কিন্তু আসলেই তা কখনো সম্ভব নয়।এই অসুন্দর কিছু মানুষ নামক হিংস্র হায়েনাদের জন্য।
মৃদোলা বেশ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন এবং স্থির। অল্পতেই কাজ বুঝে ফেলার ক্ষমতা আছে ওর । মেয়েটার অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব আছে।আমি কেন যে কোন ছেলেই ওকে দেখে মুগ্ধ হবে ।বসের মেয়ে বলে কথা !ওসব ভেবে নিজের মনকে-পাত্তা দেয়া যাবে না ।চাকরী তাহলে নট।আমার উপর পড়েছে আবার তার কাজের ভার। অতএব সজল আপনি এ ভাবনা পর্যন্তই ক্ষান্ত থাকুন।মনকে এই প্রবোধই দিচ্ছি।নইলে-তো বেড়ায় ক্ষেত খেয়েছে দোষে দোষী হতে হবে।
আমাকে পরীক্ষা দেয়ার বেশ কদিন ছুটি নিতে হয়েছে।পরীক্ষা বেশ ভাল হয়েছে ।যাক রেজাল্ট হলেই বুঝা যাবে।একদিনের জন্য বাড়ি গেলাম।মা ,শায়লা আর বাবাকে এবার অনেক দিন পর দেখলাম। মা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরল।খুব ভাল লাগছে চাকরী পাওয়ার পর প্রথম আসা।সবার জন্য জামা কাপড় কিনে আনলাম।একত্রে সবাই নতুন কাপড় পেয়েছে এটা প্রথম ঘটল আজ এ বাড়ীতে।কারণ বাবা কিংবা আমার দুজনারই সাধ্যের বাইরে ছিল। এমনকি কোন ঈদেও না। সবার জন্য আনা এতগুলি জামা কাপড় মার হাতে তুলে দিতেই মা খুশীতে কেঁদে ফেললেন।
-বাজান ,আইজ আমরার ঈদ মন অইতাছে।
-হ্যাঁ আম্মা এহন থাইকা ঈদেও পাইবা।
-বাজান ,আল্লা তোমারে আরও বড় করুক।
আমার আসা উপলক্ষে মা চাচাদেরও দাওয়াত করেছে।সবাই রাতে হৈ চৈ করে একত্রে খেলাম।শায়লাটাকেও বেশ বড় বড় মনে হচ্ছে।এ কদিনে ও দেখতে মাশআল্লাহ আরও সুন্দর হয়েছে। আব্বা দু একটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে তা এক ফাঁকে বললেন।আমি আব্বাকে বারণ করে দিলাম।জানালাম যে ওকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে অনার্সে ভর্তি করে দিব।
আমি পুকুর ঘাটায় বসে আছি এমন সময় একটা ফোন আসল।তাকিয়ে দেখি মৃদোলার নাম ভাসছে।
-হ্যালো ,আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম। এমনভাবে সালাম দিয়েছেন মনে হচ্ছে আমি বড় কেউ ফোন দিয়েছি।
-আপনিতো বড়ই বয়সে না হলেও।তাছাড়া ছোটদেরও সালাম দেয়ার নিয়ম আছে ইসলামে।আমরা মানি না বা জানি না।
-জ্ঞান দান হচ্ছে ,খুব ভাল ।বাবা জানতে চাচ্ছিলেন কাল অফিসে আসছেন কিনা।
-না ,পরশু জয়েন্ট করব।কাল পর্যন্ত ছুটি।কোন বিশেষ কাজ আছে কি?
-হ্যাঁ ,ইংল্যান্ড থেকে একটা টিম আসছে পরশু দিন।আপনাকে ওদের সাথে থেকে অফিসগুলি ভিজিট করাতে হবে।
-ওকে আই উইল ডু।
-ঠিক আছে তাহলে,খোদা হাফেজ।
কাজের বাইরে এমনিতেই বেশী কথা বলে না মৃদোলা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

আরজু পনি বলেছেন:

-------
নতুন বইয়ের অভিনন্দন রইল ।
সেই সাথে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা রইল ।। !:#P

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

নাসরীন খান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.