নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন খান

নাসরীন খান

প্রত্যেক সৃষ্টিরই আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।প্রয়োজন সৃজনশীল মন।

নাসরীন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘের[অণুগল্প]

০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

মর্জিনা সারাটা দিন কষ্ট করে যে কয় টাকা লাভ পায় তা দিয়ে মেয়ের পড়ার খরচ চালায় আর কোন রকমে আধপেটা খেয়ে দিন পার করে।ব্যবসা মাঝেমাঝে ভালই চলে।মাঝে মাঝে এত মন্দ যায় যে বাজারের টাকাও হয় না।হরতাল আর অবরোধ চললে বেশী ক্ষতি হয় তখন। সারাটা দিন চিন্তা হয় বাচ্চা দুইটার জন্য ।কলেজে ঠিকমতো পৌছাইয়ে কিনা ,ঠিক সময় বাসায় ফিরল কিনা।ছেলেটা মর্জিনার সাথে সাথেই থাকে।বয়স ৮বছর।আগে মর্জিনা গার্মেন্টে চাকুরী করত ।বেতনও ভালই পেত।স্বামী স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল।জামাই হঠাৎ করে একটা বাজে মেয়ের পাল্লায় পড়ে সংসার ছেড়েছে।সেই মেয়েকে বিয়ে করে অন্যত্র ভাড়া থাকছে।আগে বাচ্চার বাপ এসে প্রতিদিন দুই তিনবার করে দেখে গেছে ছেলেটা কি খাচ্ছে কি করছে।রাজমিস্ত্রির সাথে যোগালির কাজ করে বলে কাজের ফাঁকে এসে সংসারের খোঁজ নিতে পারত।মর্জিনার তাই গার্মেন্টে কাজ করা সম্ভব ছিল। ছেলেটা ছোট বলে তাকে খেয়াল রাখতে হয়।বাজে ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করে সিগারেট ,গাজার নেশায় পড়ে যেতে পারে।অথবা ছেলেধরায় নিয়ে যেতে পারে।বাচ্চা দুইটার দিকে তাকিয়ে মর্জিনা ভেবে পায়না এ রকম দুইটা বাচ্চা রেখে পুরুষ মানুষটা কেমনে পারল আর একটা ঘর পাততে।ওদের চেহারাটা চোখের সামনে কেন ভেসে উঠল না?নিজের সন্তানদের জন্য কোনও মানুষের টান না থাকে?তার কাছে অবাক লাগে তখন তারে আর মানুষ মনে হয়না জানোয়ার মনে হয়।

একটা ভ্যান জোগাড় করে বাজার থেকে কম দামে কাপড় এনে একটু লাভে বিক্রি করে সংসারের আর বাচ্চাদের হাল ধরেছে।বাচ্চা দুইটা একদিন বড় হবে ,চাকরী করবে।বড় চাকরী না হোক ছোট চাকরী করুক তবু তো চাকরী।সে ভাবে তার মত ভ্যানে করে কাপড় যেন না বেচতে হয়।আর বদমাশ বাপটার মত যোগালি যেন না হয়।

ভাবতে ভাবতে কত কথা যে মনে হয় মর্জিনার-

ভ্যানে কইরা কাপড় বেচি ,চুরি বাটপারীতো করি না।তবু ব্যাটারা মেয়ে মানুষ দেইখা টিটকারি দেয়।

মাঝে মাঝে পাওথনে জুতা খুইলা মুখে মারতে মন চায়।মেয়ের বয়সী ছ্যামরায় কয়

-কাপড় ব্যাচ্চা কত পাও ?আমার সাথে থাকলে এর চেয়ে বেশী পাইবা।

-নিজের কানরে বিশ্বাস করতে পারি নাই প্রথমে।নিজের রাগটারে সংযত কইরা বললাম

-বাবা ,আপনে কিছু নিবেন কি?আমার মেয়ে আপনার বয়সী।

-হ বুজছি তুমি বেশী চালাক।তয় কয়দিন এমনে চলবা?

-হাত-রথ যে কয়দিন ভাল থাকে সেই কয়দিন চলুম নাইলে ভিক্ষা করুম। তাউ বেইজ্জত যেন না বানায় আল্লায়।

প্রায়ই ছেলেটা ঘুরতে ঘুরতে ভ্যানডার সামনে আইসা আকারে ইঙ্গিতে আজে বাজে কথা কয় ।মাঝে মধ্যে মন চায় জুতাটা দিয়া গালটায় একটা দেই কিন্তু দিলে তো আমার ব্যবসা পাতি গুটাইয়া না খাইয়া মরতে হইব।মেয়েটা দুইটা টিউশনি করে আর আমি যা কামাই তা দিয়া সংসার চালাই।

আমাগো লাইগ্যা আইন কানুন কিছুই নাই।কার কাছে বিচার দিমু।যখন দেখব আমার স্বামী থাইকাও নাই তখন সেও মন্দ কথা কইতে ছাড়ব না।পুলিশ হোক আর কমিশনার হউক হগলতেই আমার জন্য সমান।মাইয়া মানুষরে একলা দেখলে অমানুষগুলার জিহ্বা দিয়া লালা পড়ে ।তেঁতুলের টক দেখার মতন।

মানুষ হউক আর অমানুষ হোক সমাজে চলতে ফিরতে স্বামী সাইনবো্ট্টা যেন থাকনই লাগব।পুরুষের পরিচয়খান কেন এত জরুরী?বিয়া করুক আরও তিনখান অথবা বউরে প্রত্যেক দিন অত্যাচার করুক,পিটাক তবু একা থাকা যায় না কোন মেয়ে মাইনষের।কেন শকুনের মত খাবলাইয়া ধরতে আসে সুযোগ পাইলেই।

ধর্মের ভয় নাই,আল্লার বিচারের ভয় নাই।মনুষ্যত্বের বোধটা নাই।তাইলে বউয়ের কথা ছাড়া দ্বিতীয়বার বিবাহ ও করত না।এক বউ,বাচ্চা গো যে ঠিকমতন ভরন পোষণ দিতে পারে না, সে আবার বিয়া করে কেমনে। খোঁজ খবর নিলে দেখন যাইব যেই বেটা আমারে বিরক্ত করতাছে সেই বেটাও নিজের বউরে ঠিকমতন দেখাশুনা করে না।সমাজটা যে কবে ঠিক হইব।সব পুরূষগুলাইন মানুষ হইব,নারীরে সম্মান দিব।এই দুনিয়াটা একটা ঘের বানাইয়া রাখছে পুরুষ মানুষগুলা।মেয়ে মানুষ সেখানে বন্ধী।ঘরে যন্ত্রনাতো আছেই বাইরেও তাগো অত্যাচার।শান্তিতে কামাই রোজগারও করন যায়না।

গারমেন্টে যখন ছিলাম তখনও দেখছি শকুনের চোখ যেমন মরা জন্তু খোঁজে তেমনি পুরুষ মানুষগুলা সুযোগ পাইলেই মেয়ে মানুষ খুঁইজ্জা বেড়ায়।যারা সত্যিকারের ভালা তাগো চোখ দেখলেই বোঝা যায়।হেই পুরুষের সংখ্যা খুবই কম।তারা ঘরের মানুষটারে ভালাওবাসে আবার সম্মানও করে।মাঝে মাঝে এই খারাপ গুলার অত্যাচারে খুব মন খারাপ হয়,মেজাজও খারাপ কিন্তুক করনের কিছুই নাই।যতদিন না হেগো মনটা ভালা মানুষ অইবার চাইব ততদিন আমাগো কষ্টও দূর হইব না।সেই দিন আদৌ কি আইব?









মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:০৫

আমিনুর রহমান বলেছেন:



যেদিন থেকে ভয়কে জয় করে জুতা-পেটা শুরু করতে পারবে সেদিনের পর থেকে কেউ আর চোখ তুলে তাকানোর সাহস করবে বলাতো দুরের কথা।

০৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩৫

নাসরীন খান বলেছেন: পাছে খারাপ কিছু ঘটবে তাই মুখ বুজে সব সহ্য করে।পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থায় একজন নারী কতদূর কি করবেশুধু অন্তরের ঘৃনাটুকুন ছাড়া।সেটারও বহিঃপ্রকাশ করতে পারে না।

২| ০৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৮:৩৫

Silent Heart বলেছেন: Islam a narir somman odikar on1 beshi.. R ei jnno proyojon islami onushason gulo follow kora..

০৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩০

নাসরীন খান বলেছেন: ঠিক বলেছেন।সবার আগে দরকার সঠিক জ্ঞানার্জন।তাহলেই অন্তরচক্ষু খুলে যাবে।মানুষ হিসাবে সঠিক মর্যাদা পাবে নারী।

৩| ০৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৮

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: আমাদের দেশে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে থাকাটা নিরাপদ নয়, তেমনি কর্মক্ষেত্রে যাওয়াটাও নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাট সব জায়গায় মেয়ারা যৈন হয়রানীর শিকার।

গল্পে ভাল লাগা রইল।

০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

নাসরীন খান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৪| ০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালোই।

০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৫১

নাসরীন খান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৫| ০৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৫২

নাসরীন খান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৬| ০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:০০

এস আলভী বলেছেন: অনেক প্রতিক্ষার পর ফ্রন্টপেইজ একসেস দেওয়ায় ব্লগ কর্তৃপক্ষকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আপনার লেখায় আমি আজ প্রথম মন্তব্য করার সুযোগ পেয়ে গর্ব বোধ করছি।
নতুন ব্লগার হিসাবে আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। ধন্যবাদ।

০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৫৩

নাসরীন খান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৭| ০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৩৫

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
অনেক ভালো লিখেছেন।

পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েদের একা একা চলা অনেক কস্টের।

০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৫৫

নাসরীন খান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.