নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসরীন খান

নাসরীন খান

প্রত্যেক সৃষ্টিরই আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।প্রয়োজন সৃজনশীল মন।

নাসরীন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুমহীন রাতগুলো( গল্প)

০৩ রা মে, ২০২০ সকাল ৯:৪০



নাসরীন খান

ইদানীং সকালেই কেমন যেন ঘুম ভেঙে যাচ্ছে শ্রাবণের।ঘুমের ওষুধ খেয়েও রাতে ঘুমাতে দেরি হয়। এটা ওর অনেক দিন ধরে হচ্ছে।শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তার। কখনো গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা, কখনো মাথা ব্যাথা,কখনো মাথা ঘুরানো, কখনো প্রেশারটা বেশি হয়ে অস্থির অস্থির লাগা।এর মধ্যে আবার দুশ্চিন্তা বেড়েছে দেশটায় বিদেশ থেকে আসা করোনা আক্রান্ত মানুষের আগমনে।

বিমানবন্দরে তাদেরকে পরীক্ষা ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হয়ছে।কাউকে কাউকে হজ্জক্যাম্পে কোয়ারান্টাইন এ পাঠাচ্ছে। কিন্তু নেই কোন রকম থাকার সুযোগে সুবিধা। কষ্টের কারণে কেউ কেউ কান্নাকাটি করছে। খাবার ও পাচ্ছে না।নাই টয়লেট সুবিধা।
কোয়ারান্টাইন ছেড়ে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছে তাদেরকে সরকার।চেষ্টা করেছিল রাখতে কিন্তু মানবেতর জীবন প্রনালী , জনরোষের মুখে পরে তা শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে।ফলে করোনা ঘরে আমন্ত্রিত অতিথি , ঘরে ফেরা মানুষটির মতন।ফলে বেড়েই চলছ আক্রান্তের সংখ্যা।

কেমন হলো দেশের অবস্থা? টিভি নিউজ দেখে দমটা ভারি হয়ে যায়। শ্রাবণ অনেক হতাশায় নিমজ্জিত হয়।আহারে ! কত মানুষ না খেয়ে আছে।অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটছে না জানি কতজনের? নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খায়।লকডাউন হয়েছে প্রায় একমাস।তার ঘরের সাহায্যকারি দুজনকে ছুটি দিয়েছে। মাঝে মধ্যে ওরা কিছু কাজ নিজেদের বাসা থেকে গুছিয়ে এনে গেইটের সামনে দিয়ে যায় দারোয়ানকে। যেমন কিছু রুটি অর্ধ ছেঁকা করে,কেজি খানেক পেঁয়াজ কুচি করে,কিছু মাছ কেটে এনে। ওরা বাসার কাছাকাছাি থাকায় এমনটি করা হচ্ছে।যানে সে, করোনা এখন সামাজ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেছে। তবু্ও নিজের শারীরিক সমস্যার জন্যই কিছু কিছু কাজ করিয়ে নিচ্ছে। দুজনকেই পুরো মাসের বেতন দিচ্ছে যাতে ওদের চলতে কোন অসুবিধা না হয়।

আশেপাশের পরিচিত কয়েকজন মহিলা যারা ছোট খাটো ব্যাবসা করতো তাদের কয়েকজনকে সাহায্য করছে।শ্রাবণ তবুও একটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। তেমন কিছুই করতে পারছে না বলে।এটুকুতে তার মন শান্ত,তৃপ্ত কোনটিই নয়।
রাতে থেকে থেকে রাস্তার কুকুরগুলো অস্বাভাবিক চিল্লাতে থাকছে।শুনলেই মনের ভেতরটা কেঁপে উঠে।ওরা কি না খেতে পেয়ে কাঁদছে? নাকি অন্য কোন কারনে। ভোর না-হতেই আশেপাশের গাছ
থকে পাখিদের কিচির মিচির শুনা যায়।কত বছর এত পাখিদের একসাথে এমন আনন্দ ধ্বনি শুনেনি সে।

মনের অস্থিরতা কাটাতে মাঝে মাঝে বিদ্যানন্দ কে টাকা বিকাশ করছে শ্রাবন। সে অনেক দিন ধরে আপন নিবাস নামের একটি বৃদ্ধাশ্রমে প্রতিমাসে কিছু কেনাকাটা করে নিজে দিয়ে আসত।এখন পারছে না লকডাউনের জন্য। তবুও বিকাশে টাকা পাঠিয়েছে।আত্মীয় স্বজনদের ফোনে খুঁজ নিয়ে অল্পস্বল্প পাঠাচ্ছে।তবু ঘুমুতে গেলে তার মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খায়।
মানুষের সমস্যা নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত। তার যদিও খুব বেশি দেয়ার সামর্থ্য নাই।

লোকজন রাস্তায় নামছে, কারনে, অকারণে। মানছে না সেনাবাহিনীর কথা,পুলিশের কথা।গার্মেন্টস গুলি খুলেছে। কি হবে দেশের অবস্থা? কত প্রাণ হারাবে নিজেদের এমনতর স্বেচ্ছাচারীতায়।হাসপাতালে প্রতিদিন ডাক্তার, নার্স, সেবা কর্মীরা করোনা আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে।ভবিষ্যতে অসুস্থ মানুষের পাশে কারা থাকবে তাহলে? এদিকে আবার গরীব মানুষের জন্য দেয়া ত্রাণ চুরি হয়ে যাচ্ছে।ওর কি মানুষ !গরীবদের ত্রাণ চুরি না করে রাস্তায় দাড়িয়ে ভিক্ষা করুক, তাতে তো কোন দোষ নেই।সেটা করলেই পারে।গরীবতো ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভিক্ষা করে,ওরা চোর না।ত্রাণ চোর গরীবের খাবার চুরি করছে।এর চেয়ে জঘন্য আর কি হতে পারে?
এদিকে রাস্তায় তাকালে দেখা যায় অনেকে বাইরে বেরিয়ে হাঁটছে,গল্প করছে।কারণে অকারণে বের হচ্ছে।পেটের তাগিদে যারা বেরুচ্ছে তাদের ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু যারা অকারণে বের হচ্ছে। মুখের মাক্সটিও অনুপস্থিত কারো কারোর।
এটা কেমন কথা? ঘরে থেকেও কেউ কেউ কিভাবে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে জানতে পারছে না।আর যারা বেরুচ্ছে তাদের? ও আর ভাবতে পারছে না সে।

শ্রাবণ দুশ্চিন্তায় ক্লান্ত। চোখটা একটু বন্ধ হয়ে আসছে,সে দেখতে পাচ্ছে যেন চিৎকার করে বলছে,
-ও মানুষরা! আমরাতো আরও সচেতন হতে পারি।দেশটাকে ভালবাসতে পারি।মানুষের বিপদে সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দিতে পারি। রোগ ছড়িয়ে দেশটাকে পঙ্গু করে দিয়ো না।তোমরা ঘরে থাকো। এই অসেচতন মানুষ!ঘরে থেকে দেশটাকে বাঁচাও,আমাদেরকে বাঁচাও।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.