নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমাদের এ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। দূরে! বহু দূরে! ঈগল চোখের আড়াল খুঁজে নিচ্ছি- যেখানে সমস্ত পাপী স্বীকারোক্তি দেয় তাদের আকন্ঠ পাপের। অন্তত তারা সত্যের আড়ালে পাপ করে না; পাপ নিয়ে করে না কোন মিথ্যাচার!

নয়ন বিন বাহার

আমাদের একেক জনের জীবনের এক একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে আমাদের আশপাশে যা হচ্ছে তার উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি। তখন জীবনের নিয়ন্ত্রন নেয় ভাগ্য। এটাই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যা।

নয়ন বিন বাহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ ফুরফুরে এক রোদের জন্মদিন

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:১০

এটা একটা উপন্যাস। এখানে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করব। লেখা চলছে...


এক।

এত উজ্জ্বল, ঝকঝকে রোদের মাঠ আমি কি আর দেখেছি?

সবুজ ঘাস আর হলুদ বনফুলে আচ্ছাদিত সরু আলপথে হাঁটছিল নিধি। খালি পায়ে হাঁটছিল সে। এই নরম ঘাসের গালিচায় জুতা পায়ে হাঁটলে মনে হয় যেন একান্ত ভাললাগাকে দুঃখ দেয়া হচ্ছে। তাই খালি পায়ে হাঁটা। চমচমে, শিরশিরে এক আপ্লুত অনুভূতি।

মাঘ মাসের শেষে, ফাগুনের আসি আসি আমেজে, এই দিগন্ত বিস্তৃত খালি মাঠে দাঁড়িয়ে, প্রকৃতির আবাল্য সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে নিধি আবারও নিজেকে প্রশ্ন করল-
এত উজ্জ্বল রোদের মাঠ, ঝকঝকে, আহা প্রকৃতি! নির্ভেজাল, স্বপ্নের মত চকচকে রোদ, বসন্তের প্রশান্ত বাতাস, মাথার উপর মস্ত সুনীল আকাশ, এর আগে কোথাও দেখেছে সে?

এই গ্রামে প্রথম এসেছে নিধি। এখানে তার খালার বাড়ী। খালু দীর্ঘদিন শহরে চাকুরী করেছে। চাকুরী ছেড়ে দিয়ে গ্রামে এসে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। এতে যেমন উনার ভাল আয় হচ্ছে তেমনি প্রচুর কর্মসংস্থানও হচ্ছে। বেকার মানুষগুলো ভাল কাজ পাচ্ছে।

নিধি এবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। দীর্ঘ দিনের টানা পড়ালেখার চাপ ছিল তার উপর। তাই এডমিশন শেষে মনটাকে হালকা করার জন্য তার মা তাকে এই গ্রামে তার খালার বাড়ীতে বেড়াতে পাঠিয়েছে। তার খালাতো বোন রাখিকে নিয়ে আজ বেড়াতে বেরিয়েছে।

রাখি বলতো তোদের গ্রামে স্পেশাল কি আছে? নিধি প্রশ্ন করল রাখিকে।
রাখি দার্শনিকের মত একটু ভাব নিয়ে বলল, রোদ!
অভাক হয়ে চমকে উঠল নিধি। কি যেন ভাবল। বলল, দুর!

রাখি বলল, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে স্পেশাল যেটা সেটা হল আমাদের পাঠাগার। পাঠাগার শব্দটা উচ্চারনের সময় রাখির চোখে একটা আবেগ লক্ষ্য করল নিধি।
আরে! পাঠাগার আবার স্পেশাল কিছু হল না কি? এটাতো সব জায়গায় আছে। কমন ব্যপার।
না আপু। আমাদের গ্রামে কোন পাঠাগার ছিল না। রবি ভাইয়া গ্রামের সকলকে নিয়ে এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছে। দিন রাত পরিশ্রম করেছেন তিনি। প্রথমে তো তিনি অনেককে বোঝাতেই পারেন নি। তারা বলল, পাঠাগার দিয়ে কী হবে? বরং পোলাপান আউট বইয়ের পাল্লায় পড়ে পরীক্ষায় ফেল করবে।

একটু দম নিয়ে বলল রাখি, রবি ভাইয়া এই আউট বইয়ের সংজ্ঞা এবং গুরুত্ব ইত্যাদি বুঝাতেই উনার জান বেরিয়ে গেছে।
কি বলিস রাখি! আবিশ্বাসের সুরে বলল নিধি, তোদের গ্রামের মানুষগুলো তো আস্ত হাদারাম রে...!
রবি ভাইয়া ছাড়া। হাসতে হাসতে বলল রাখি।

রাখি...
দূর থেকে এই শব্দটা এসে নিধি আর রাখির আলাপচারিতায় বিঘœ ঘটাল। তারা শব্দের উৎস লক্ষ্য করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল অদূরে মাঠের অন্যপাশ থেকে একটা ছেলে তাদেরকে থামতে ইশারা করছে।
কে ডাকে রে রাখি? চকিত প্রশ্ন করল নিধি।
ও অর্ণব। আমার বন্ধু। আমরা একসাথে পড়ি। মনে হয় পাঠাগারে যাবে। আমাদেরকে দেখে থামতে বলছে।

কথা শেষ হতে না হতেই হাঁফাতে হাঁফাতে কাছে এসে দাঁড়াল অর্ণব। ওদের দিকে কুশলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাখির দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে রইল। কারণ নিধিকে অর্ণব এর আগে দেখেনি কখনো।

রাখি বুঝতে পেরে বলল, আমার নিধি আপু। বেড়াতে এসেছে।
অর্ণব সালাম দিল নিধিকে। বলল, কেমন আছেন আপু?
নিধি পর্যবেক্ষকের মত বলল, ভাল। তুমি কেমন আছ?
অর্ণব সুখী গলায় বলল, আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।
রাখি বলল, অর্ণব জান, আপু আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে স্পেশাল কি।
অর্ণব বলল, তুই কি বললি?
নিধি রাখিকে ইশারায় থামতে বলে বলল, অর্ণব তুমি বল। তোমাদের গ্রামের স্পেশাল কি?

অর্ণব একটু ভাবল। বলল, আপু গোটা প্রকৃতিটাই একটা স্পেশাল। তবে প্রকৃতি বাদ দিলে যেটা থাকে সেটা হল আমাদের পাঠাগার।

বুঝলাম না কিছুই। তোমরা সবাই দেখি এই পাঠাগার নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত। চল দেখি তোমাদের স্পেশাল পাঠাগার।

মাঠ ছেড়ে তারা তিনজনে তালপথ ধরে হাঁটতে লাগল। সরু আলপথ। তার দু’পাশে তালগাছ। খুব বেশি ঘন নয়। তবে পরিবেশটা মনোরম। তুলতুলে ঘাসের পাটি বিছানো। এরকম পথে হাঁটতে হাঁটতে শুয়ে যেতে মন চায়। শুয়ে গড়াগড়ি দিতে পারলে যেন প্রশান্তির পরিমান কয়েকগুণ বেড়ে যেত। এরকম জায়গায় সময়কে স্থির করে দিতে মন চায়।
পথের পাশে নাম না জানা ফুলের ঝাঁক মৃদু বাতাসে মাথা দুলিয়ে এক অদৃশ্য সঙ্গীতের তালে ছন্দ মিলাচ্ছে। তাদের সাথে ভাব করছে কিছু প্রজাপতি, ফড়িং আর সোনা রঙ রোদ। এই সুন্দর বর্ণালী ফুলের ঝাঁক থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে হাতে নিল নিধি। অমনি যেন গোটা পরিবেশটা থমকে গেল। প্রজাপতি, ফড়িং আর রোদেরা মিলে মুহুর্তে বিমর্ষ স্লোগানে মিছিল করতে লাগল। ফুলেদের বাগানে নেমে এল বিচ্ছেদ বেদনা। একটি প্রাণবন্ত ফুলের অকাল বিচ্ছেদ তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।

প্রকৃতির এই সব খেয়ালীপনার মধ্য দিয়ে তারা যেখানে এসে দাঁড়াল তার সামনে একটা সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘প্রশান্তি পাঠাগার’

আপু এই আমাদের পাঠাগার। বলল অর্ণব।

চারপাশটা দেখল নিধি। কাঁচা রাস্তার পাশে নির্জনতার কোলে দাঁড়িয়ে আছে একটা টিনের ঘর। ঘরের চারপাশটা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। পাশে একটা জারুল গাছ। জারুল ফুলে গাছটা অপূর্ব হয়ে আছে। গাছের ডালে বসে ছিল একটি দোয়েল পাখি। নিধিকে একনজর দেখে শীস দিয়ে উড়ে চলে গেল।

আপু ভেতরে এস, ডাকল রাখি।
নিধি ভেতরে গিয়ে দেখল দুজন ছেলে পাঠাগারটাকে সাজাচ্ছে। বিভিন্ন ফুল, কাগজের নকশা, ফিতা ইত্যাদি দিয়ে।

কৌতুহলের সুরে নিধি জানতে চাইল এই সাজগোজের কারণ কী?
আগামী পরশু আমাদের পাঠাগারের জন্মদিন। রবি ভাইয়া আসবে। আমরা ছোটখাট একটা অনুষ্ঠান করব। শিল্পমনা কয়েকজনকে দাওয়াত করা হয়েছে। তাই এই আয়োজন। বলল অর্ণব।

ও তাই। আশ্বস্ত হল নিধি।


দুরন্ত দুপুরেই টুপ করে প্রকান্ড দিনটা শেষ হয়ে যায়।
শীতের এই শুরুর সময়টা বড্ড টানাটানির সময়। দুপুর পর্যন্ত দিনটাকে মোটামুটি উপলব্দি করা যায়। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরে কখন যে বেলা গড়িয়ে ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসে তা টেরই পাওয়া যায় না।

আজ রাখিদের প্রশান্তি পাঠাগারের জন্মদিন। রাখি টানাটানি করেছে তার সাথে নেওয়ার জন্য। ও দুপুরের আগেই চলে গেছে। তবে কথা দিয়েছে বিকালে যাবে নিধি। তাই দুপুরের খাওয়ার পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিন্নপত্র বইটা নিয়ে বিছানায় কাত হল। কয়েক পাতা পড়ার পরে একটু তন্দ্রা এসে গেল। খালা রোদ থেকে একটা নকশী কাঁথা এনে গায়ের উপর মেলে দিয়েছিল। কাঁথাটি ভরপুর রোদে স্নান সেরে মায়াময় উষ্ণতায় ভালবেসে জড়িয়ে নিয়েছে নিধিকে। রোদের কড়কড়ে গন্ধে নাক ডুবিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আবেশে চোখ বুঁজেছিল সে। কখন যে ঘুমঘোরে তলিয়ে গেছে তা টের পায়নি সে। চকিতে ঘুম ভেঙ্গে ঘড়ি দেখল। চারটা বেজে সাতাশ মিনিট। আর কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা নামবে।

চলবে...

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: বাহ রোদকে নিয়ে বেশ লিখেছেন।
ভাল লেগেছে।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩১

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: সাথে আছি
লিখতে থাকুন।
চলুক---

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৩

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: রাজীব ভাই, অনুপ্রেরণা পেলাম।
আগামী শুক্রবারে আসবেন? এলে দেখা হবে।

৩| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। সাবলীল প্রকাশ। পড়তে মন চাই। লিখতে থাকুন , অপেক্ষায় রইবো।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৫

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: সৌরভ ভাই। কেন লিখব তার খোরাক দিয়েছেন। অসাধারণ ভাই। খুবই প্রেরণা পেলাম।
ভালবাসা নিরন্তর!

৪| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: লিখুন

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: আপু, ভরসা পেলুম...

৫| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: ভালো শুরু, চালিয়ে যান।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১৪

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: অনুপ্রাণিত রকি ভাই। ভালবাসা।

৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: রাজীব ভাই, অনুপ্রেরণা পেলাম।
আগামী শুক্রবারে আসবেন? এলে দেখা হবে।

আমি কোথাও যাই না। কারো সাথে মিশি না। অসামাজিক বলতে পারেন। আসলে কারো সাথে আমার বনিবনা হয় না। তাই দূরে দূরে থাকি।

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:০৫

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: একেকজন একেক রকম। হতেই পারে। তাই বলে অসামাজিক নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.