![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'আগুনের ছবি দেখতে আগুনের মতো দেখালেও পোড়াবার ক্ষমতা থাকে না' _ আহমদ ছফা
মেঘনাদ সাহা : জগৎ সভায় বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন যে বাঙালি বিজ্ঞানী - ২
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু বোমার ব্যবহার সারা দুনিয়াকে চমকে দিল। দেখা গেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি দেশও পরমাণু গবেষণায় এগিয়ে গেছে। সাহা বিষয়টি নিয়ে উঠেপড়ে লাগলেন। তিনি পরমাণুর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বোমা বানানোর পরিবর্তে জ্বালানি চাহিদা মেটানোর দিকে মনোযোগ দিলেন। অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে তিনি একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুললেন ‘ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ যার বর্তমান নাম ‘সাহা ইনস্টিটিউশন অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’।
তাঁর এই উদ্যোগে তৎকালীন বাংলা সরকার সহযোগিতার পরিবর্তে বাধাই সৃষ্টি করতে লাগল। কিন্তু তিনি দমবার পাত্র ছিলেন না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রণদা প্রসাদ সাহা, ডা. বি সি লাহা প্রমুখদের আর্থিক সহযোগিতায় কেনা হল কানাডা থেকে রেডিয়াম, ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ ইত্যাদি যন্ত্রপাতি। ১৯৫০ সালের ১১ জানুয়ারি ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন রেডিয়াম আবিষ্কারক মাদাম কুরীর কন্যা নোবেল বিজয়ী আইরিন জোলিও কুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ফ্রেডারিক জোলিও, রবার্ট রবিনসন, জে. ডি. বার্নাল প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী।
বিজ্ঞান তাঁর কতটা সাধনার বিষয় ছিল সেটা বোঝা যায় তাঁর ছেলে-মেয়েদের দেখেও। তাঁর তিন পুত্র ও চার কন্যার মধ্যে পাঁচজনই বিশুদ্ধ বা ফলিত বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছে। বড় পুত্র অজিত পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাহা ইনস্টিটিউটেই কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন। পিতা মেঘনাদ (১৯৩৪ সালে) এবং পুত্র অজিত (১৯৮০ সালে) উভয়েই ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছেন যা একটি অনন্য ঘটনা।
মেঘনাদ সাহার একটি উলেস্নখযোগ্য কাজ হল পঞ্জিকা সংস্কার। সে সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির পার্থক্যের কারণে প্রায় ৫০টি পঞ্জিকা প্রচলিত ছিল। হিসাবের নানা ভুলভ্রান্তিসহ পঞ্জিকাগুলোতে সময়ের হিসাবে ছিল যথেষ্ঠ ফারাক। এ পঞ্জিকা সংস্কারের লড়্গ্যে গঠিত কমিটির (Calendar Reform Committee) চেয়ারম্যান ছিলেন মেঘনাদ। সূর্যের অয়নগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে একেবারে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্মত একটি পঞ্জিকা বানানো হয় যা আজ ভারতে প্রচলিত। তিনি ১৯৫৪ সালে জেনিভায় অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অষ্টাদশ অধিবেশনে ‘বিশ্ব পঞ্জিকা সংস্কার’-এর লড়্গ্যেও একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছিলেন।
মেঘনাদ সাহা ছিলেন কাজ পাগল মানুষ। এক মুহূর্ত নিষ্ক্রিয় বসে থাকা তাঁর সইত না। তিনি মনে করতে, বিজ্ঞানের সাধনা যদি মানবজাতির এবং বিশেষত দেশবাসীর কাজে না লাগে তবে তা অর্থহীন হয়ে পড়ে। এজন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় বিজ্ঞানীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করতেন। যে কারণে ১৯৫২ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হলেন।
স্বাধীন ভারতের শাসকগোষ্ঠী বিজ্ঞান চর্চা এবং শিল্প স্থাপনের বিষয়ে উদাসীনতা অবলম্বন করলে সাহা সোচ্চার হয়ে উঠেন। নদী প্রকল্পগুলোও ঠিকভাবে রূপায়িত হচ্ছে না। তিনি প্রথমে ‘সায়েন্স এন্ড কালচার’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় লিখে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করলেন। তিনি তাঁর প্রতিবাদকে আরো জোরালো করতে চাইলেন। সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎচন্দ্র বসু তাঁকে লোকসভার (ভারতের সংসদ) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরামর্শ দিলেন।
বিজ্ঞান সম্পর্কে কংগ্রেসের সেকেলে মনোভাব, খাদি-চরকা নীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন সাহা। ফলে কংগ্রেসের কাছে মনোনয়ন চাইলে তাঁকে বলা হল, এতদিন তিনি যা বলেছেন তা প্রত্যাহার করে নিলে তবে কংগ্রেস তাঁর মনোনয়নের বিষয়ে ভেবে দেখবে। স্বভাবতই সাহা কংগ্রেসের এ প্রস্তাবে সম্মত হননি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, তিনি কংগ্রেসের মনোনয়ন চান না কারণ তাদের শ্নোগান-সর্বস্বতার চেয়ে বিজ্ঞান তাঁর কাছে অনেক বেশি প্রিয়। ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি কলকাতা উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র থেকে বামপন্থিদের সমর্থন নিয়ে নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দিতা করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। কলকাতার শিক্ষক সমাজ এবং তাঁর ছাত্ররা নির্বাচনী প্রচারকাজে তাঁকে সর্বতো সহযোগিতা করেছিল। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি লোকসভার সদস্য হিসাবে কাজ করে গেছেন।
লোকসভার সদস্য থাকাকালে তিনি সরকারের বহুমুখী নদী প্রকল্প, বৃহৎ শিল্প বিস্তার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-সংক্রান্ত সরকারি নীতিগুলির সোচ্চার সমালোচনা করতেন। শোনা যায়, সরকারি নীতির বিরোধিতা করে তিনি একা একাই ওয়াক-আউট করতেন। ভারতীয় পরমাণু কমিশনের কাজের ধীর গতি এবং গোপনীয়তার তিনি তীব্র সমালোচনা করতেন। এসব ক্ষেত্রে, তিনি মনে করতেন, সর্বাত্মক নীতির অভাবে জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। ভারতের শিল্পনীতি প্রণীত হয় ১৯৫৩ সালে। এ শিল্পনীতিতে কোনো সামাজিক তত্ত্বের ছাপ ছিল না, শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হবার কোনো চেষ্টা ছিল না। এ পরিকল্পনায় সুযোগভোগী সম্প্রদায়ের স্বার্থ সবদিক থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। লোকসভায় সাহা শিল্পনীতির এসব দুর্বলতা তুলে ধরে সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন।
ভারতবর্ষে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সাহা ছিলেন পথিকৃৎ। শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন স্নেহপ্রবণ। ছাত্রদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নিজের বেশ-ভূষার বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত উদাসীন, অথচ অভাবী দুঃস্থ ছাত্র ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য তাঁর হাত ছিল সদা প্রসারিত। শোনা যায়, তিরিশের দশকে তাঁর ছাত্র ছিলেন বাসন্তী দুলাল নাগ চৌধুরী। বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ খবর পাওয়া মাত্র সাহা গাড়ি পাঠিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ছাত্রদের স্নেহ করলেও তারা পড়ালেখায় ফাঁকি দিলে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হতেন। একবার তাঁর ছাত্ররা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে খেলা দেখতে চলে যায়। খেলার মাঠে বসা ছাত্ররা হঠাৎ শুনতে পায় মাইক্রোফোনে তাদের নাম ডাকা হচ্ছে, এবং তাদের এই মুহূর্তে ল্যাবরেটরিতে ফিরে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হচ্ছে। সাহা তাদের ভৎর্সনা করে বলেছিলেন, ‘তোমরা যদি নিজেরা খেলতে তাহলে বুঝতাম - কিন্তু শুধু বসে বসে দেখা নেহাতই বুদ্ধিহীনের কাজ।’
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, বিশেষত শিক্ষকের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি প্রায়ই নবম শতাব্দীতে রচিত সংস্কৃত গ্রন্থ রসেন্দ্র চূড়ামনী থেকে একটি শ্লোক উদ্ধৃত করতে পছন্দ করতেন - “অধ্যাপয়ন্তি যদি দর্শয়িতুং ক্ষমন্তে / সুতেন্দ্র কর্মগুরুবে গুরবস্ত এব।/ শিষ্যাস্ত এত বচয়ন্তি গুরোঃ পুরে যে।/ শেষারঃ পুনস্তম্ভয়ানিভনয়ং ভজন্তে।” যার অর্থ - ‘যা পড়ার তা যারা করে দেখাতে পারেন তারাই প্রকৃত শিক্ষক। প্রকৃত শিষ্যেরা গুরুর কাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অন্যেরা অভিনয় করে মাত্র।’
১৯৫০ খ্রি• ভারত-পকিস্তান বিভক্তি ও হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় উদ্বাস্তুতের জন্য মেঘনাদ সাহা গঠন করেন ইস্ট বেঙ্গল রিলিফ কমিটি। এছাড়া তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি, ফ্রেঞ্চ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, বোস্টন একাডেমি অব সায়েন্স প্রভৃতির ফেলো, ইন্টরন্যাশনাল এন্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, ভারতীয় বিজ্ঞানোৎকর্ষিণী সমিতি (ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অব সায়েন্স), কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রভৃতির এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সালে নিউটন-ত্রিশততম বার্ষিকীতে লন্ডন রয়্যাল সোসাইটির আমন্ত্রণে লন্ডনে যান। এর আগে ১৯৪৪ সালে ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক শুভেচ্ছা কমিশনের সদস্যরূপে ইউরোপ, আমেরিকা এবং ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণে রাশিয়া সফর করেন। আলেকজান্দ্রা ভোলটার মৃত্যু শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ইতালি সরকারের অতিথি ছিলেন সাহা। তাঁর চেষ্টায় ভারতীয় বিজ্ঞানোৎকর্ষিণী সমিতি এবং গ্লাস সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভারতে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি সারাজীবনে অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ : ‘The Principle of Relativity’, ‘Treatise on Heat’, ‘Treatise on Modern Physics’, ‘Junior Texbook of Heat with Meterology’।
তাঁর পোষাক পরিচ্ছদে কোনোদিন সৌখিনতা দেখা যায়নি। তাঁর এই আপাত-গ্রাম্য বহিরাঙ্গের জন্য জ্ঞান ঘোষ প্রভৃতি সহপাঠীরা তাঁকে ‘নিখাদ হীরা’ উপাধি দিয়েছিলেন। তাঁর নিজের ছেলে-মেয়েরা যখন জামা-জুতো নিয়ে খুঁতখুঁত করত, তিনি অবাক হয়ে বলতেন, ‘এত অপছন্দের কি আছে? তোমাদের বয়সে আমি কোনোদিন জুতোই পরিনি।’ ছোটবেলায় অনেক অভাব-অনটনের সাথে লড়াই করে তিনি বড় হয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের সহযোগিতা না পেলে তিনি এতদূর আসতে পারতেন না। তাই তাঁর এলাহাবাদ ও কলকাতার বাড়ির দরজা সবসময় ছাত্র ও আত্মীয়দের জন্য অবারিত ছিল। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলতেন, ‘আমি ছোটবেলায় অনেকের কাছে আশ্রয় পেয়েছিলাম। তখন আমার থাকবার অন্য কোনো জায়গা ছিল না। তাই যে সব ছাত্রদের কোথাও থাকার জায়গা নেই তাদের জন্য আমার দরজা সবসময়ই খোলা থাকবে।’ ১৯৪৫ সালে দেশবিভাগের পর তাঁর বহু আত্মীয়-স্বজন বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে যায়। কলকাতায় সাহার বাড়ি ছিল তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র। কত জনকে যে তিনি গোপনে মানি অর্ডার করে টাকা পাঠাতেন সে খবর তাঁর বাড়ির লোকজনও জানত না।
মার্কসের সাম্য চিন্তা মেঘনাদ সাহাকে আলোড়িত করেছিল। সাহা গান্ধীর পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতা হিসাবে অনেক বেশি অনুরক্ত ছিলেন লেনিনের প্রতি। লেনিনের দর্শনকে তাঁর মনে হয়েছিল অনেক বেশি যুক্তিসিদ্ধ। বিপ্লব পরবর্তী সোভিয়েত ইউনিয়ন যে উন্নত শিল্পায়নের পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনুন্নত দেশবাসীকে প্রগতির পথ দেখিয়েছিল তা সাহাকে মুগ্ধ করেছিল। সোভিয়েত প্রবর্তিত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতেও তিনি বিজ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন।
শৈশবে সাহা অভাব-অনটন মোকাবেলা করে বড় হয়েছেন, কিন্তু অভাবই তাঁর সামনে একমাত্র বাধা ছিল না। ছিল সামাজিক নানা কুসংস্কারের বাধা। ছোটবেলায় একবার সরস্বতী পূজার সময় পুরোহিত অত্যন্ত রুক্ষভাবে পূজাবেদীর ওপর থেকে তাঁকে নামিয়ে দেয়, কারণ তিনি উচ্চবর্ণের ছিলেন না। এ ঘটনা বালক মেঘনাদের মনে গভীর দাগ রেখে গিয়েছে। সম্ভবত ওই ঘটনার পর থেকেই মেঘনাদ পূজা-আর্চনার সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন। ধর্মের এই সংস্কার, জাত-পাত ইত্যাদি নিয়েও তার মনে গভীর সংশয় তৈরি হয়। পরবর্তীকালে তিনি যখন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র তখন প্রথম দিকে তিনি থাকতেন ইডেন হিন্দু হোস্টেলে। কিন্তু তাঁর প্রতি উচ্চবর্ণের ছাত্রদের দুর্বøবহার ছিল অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তারা তাঁর সঙ্গে এক টেবিলে বসে খেতেও অস্বীকার করে। এটাও সাহা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু একবার সরস্বতী পূজার মণ্ডপ উঠতে তাঁকে বাধা দেওয়ায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। সাহার বন্ধুরাও এতে গভীরভাবে ব্যথিত হন। এর প্রতিবাদে তাঁরা দলবেঁধে হোস্টেল ত্যাগ করে চলেন। এ কাজে নেতৃত্ব দেন জ্ঞান ঘোষ, সাথে যোগ দেন নীলরতন ধর ও ভূপেন ঘোষ। ওই সময় সাহা তাঁর ছোটভাই কানাইকেও কলকাতায় নিয়ে আসেন। দু’জনের পড়াশুনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ যোগাড় করতে সাহাকে অত্যন্ত পরিশ্রম করতে হত। টিউশনি করার জন্য তিনি সাইকেলে করে কলকাতার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটাছুটি করতেন।
বিজ্ঞানী হিসাবে সাহার সাফল্যের মূলে আছে অনুসন্ধিৎসা এবং চিন্তার স্বচ্ছতা - এই দুটি গুণ। কোনো বিষয়ে আদ্যোপান্ত না জেনে তিনি কখনো মন্তব্য প্রকাশ করতেন না। তিনি একদিকে ছিলেন স্বাধীনচেতা ও সাহসী, অন্যদিকে ছিলেন অত্যন্ত প্রখর বাস্তববুদ্ধি এবং যুক্তিবাদী। ভণ্ডামি তিনি একদম সহ্য করতে পারতেন না। স্পষ্টভাষণের কারণে অনেক সময় অনেকের কাছে তিনি অপ্রিয় হয়েছেন, লোকে তাঁকে ভুল বুঝেছে। কিন্তু তারপরও তিনি স্ব-মত প্রকাশে পিছ-পা হতেন না। বিজ্ঞানী বলতে আত্মভোলা জগৎ-সংসার সম্পর্কে উদাসীন মানুষের যে মূর্তি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে মেঘনাদ সাহা ছিলেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁর এক ছাত্রকে তিনি লিখেছিলেন, “পরিশ্রম করে যাও - স্বীকৃতি একদিন না একদিন আসতে বাধ্য।” তাঁর মধ্যে ছিল অদম্য আশাবাদ, বাধা-বিপত্তিকে বাধা বলে গণ্য না করার মানসিকতা।
মেঘনাদ সাহা জীবনের প্রত্যেকটি স্তরে বৈজ্ঞানিক বুদ্ধির প্রয়োগের বিশ্বাসী ছিলেন। জীবনের ব্যাপারে কোনো প্রকার ভণ্ডামির আশ্রয় নেওয়াকে তিনি ঘৃণা করতেন। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তিনি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নি। কারণ তাঁর মতে, ওতে কারোরই কোনো উপকার নেই, তাই এই অনুষ্ঠানেরও কোনো অর্থ নেই। তিনি চাইতেন সমাজের সর্বস্তরে যুক্তিভিত্তিক চিন্তার প্রসার হোক। তিনি বলতেন যে ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দের দিক থেকে বিজ্ঞান যা দিয়েছে তা ছিল অনেক ধর্মপ্রবর্তকের লক্ষ্য। কিন্তু তাঁরা তা দিতে পারেন নি। কিন্তু বিজ্ঞান সেটা দিতে পেরেছে। এদিক থেকে তিনি বিজ্ঞানকে ধর্মের বিকল্প হিসাবে দাঁড় করিয়েছিলেন।
অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরম্নদ্ধে তিনি সারাজীবন লড়াই করেছেন। আয়নীভবন বিষয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করার পর তিনি একবার ঢাকায় আসেন। একজন উকিল তাঁর কাছে জানতে চান কি বিষয়ে কাজ করে তিনি এত বিখ্যাত হলেন। অত্যন্ত উৎসাহ আর আগ্রহ নিয়ে তিনি তাকে নড়্গত্রদের উপাদান ও নানা প্রাসঙ্গিক বিষয় বোঝাতে বসলেন। কিন্তু শ্রোতা কিছুতেই বিস্মিত হল না। উকিল ভদ্রলোক কেবলই বলেন, ‘এ আর নতুন কি, এ সবই তো বেদে আছে।’ সাহা আপত্তি জানিয়ে বললেন, ‘অনুগ্রহ করে বেদের ঠিক কোনখানে নড়্গত্রদের আয়নীভবন সম্পর্কে এই তথ্যটি আছে দেখিয়ে দেবেন কি?’ ভদ্রলোক অবলীলাক্রমে উত্তর দেন, ‘আমি নিজে অবশ্য বেদ পড়িনি কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস সবই বেদে আছে।’ পরের কুড়ি বছরে সাহা বেদ, উপনিষদ, হিন্দু জ্যোতিষ আদ্যোপান্ত পড়ে ফেললেন। অন্ধ ও গোঁড়া ধর্মাবলম্বীদের ব্যঙ্গবাণে জর্জরিত করে তিনি লিখলেন প্রবন্ধ - ‘সবই ব্যাদে আছে’।
এতে তিনি লিখলেন - “... বিগত কুড়ি বৎসরে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ ইত্যাদি সমস্ত হিন্দুশাস্ত্রগ্রন্থ এবং হিন্দু জ্যোতিষ ও অপরাপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় প্রাচীন গ্রন্থাদি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া আমি কোথাও আবিষ্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব নিহিত আছে। সকল প্রাচীন সভ্যদেশের পণ্ডিতগণই বিশ্বজগতে পৃথিবীর স্থান, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহাদির গতি, রসায়ন বিদ্যা, প্রাণী বিদ্যা ইত্যাদি সম্বন্ধে নানারূপ কথা বলিয়া গিয়াছেন, কিন্তু তাহা সত্ত্বেও বাস্তবিক পক্ষ বর্তমান বিজ্ঞান গত তিনশত বৎসরের মধ্যে ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের সমবেত গবেষণা, বিচারশক্তি ও অধ্যাবসায় প্রসূত। একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি, এদেশে অনেকে মনে করেন, ভাস্করাচার্য একাদশ শতাব্দীতে অতি অস্পষ্টভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উলেস্নখ করিয়া গিয়াছেন সুতরাং তিনি নিউটনের সমতুল্য। অর্থাৎ নিউটন আর নূতন কি করিয়াছে? কিন্তু এই সমস্ত ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ শ্রেণীর তার্কিকগণ ভুলিয়া যান যে, ভাস্করাচার্য কোথাও পৃথিবী ও অপরাপর গ্রহ সূর্যের চর্তুদিকে বৃত্তাভাস (elliptical) পথে ভ্রমণ করিতেছে একথা বলেন না। তিনি কোথাও প্রমাণ করেন নাই যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করিলে পৃথিবীর ও অপরাপর গ্রহের ভ্রমণ কক্ষ নিরূপণ করা যায়। সুতরাং ভাস্করাচার্য বা কোনো হিন্দু, গ্রিক বা আরবীয় পণ্ডিত কেপলার-গ্যালিলিও বা নিউটনের বহুপূর্বেই মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছেন, এরূপ উক্তি করা পাগলের প্রলাপ বই কিছুই নয়। দুঃখের বিষয়, দেশে এইরূপ অপবিজ্ঞানপ্রচারকের অভাব নাই, তাঁহারা সত্যের নামে নির্জলা মিথ্যার প্রচার করিতেছেন মাত্র।” প্রবন্ধের শেষে তিনি উপসংহার টানলেন, “বর্তমান লেখক বৈজ্ঞানিক নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে হিন্দুর বেদ ও অপরাপর ধর্মের মূলতত্ত্ব বুঝিতে চেষ্টা করিয়াছেন। ইহাতে অবজ্ঞা বা অবহেলার কোনো কথা উঠিতে পারে না। তাঁহার বিশ্বাস যে, প্রাচীন ধর্মগ্রন্থসমূহ যে সমস্ত জাগতিক তথ্য (world-phenomena), ঐতিহাসিক জ্ঞান ও মানবচরিত্রের অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত, তাহাদের উপর বর্তমান যুগের উপযোগী ‘আধ্যাত্মিকতা’ প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না। ...”
১৯২২ সালে, তরম্নণ মেঘনাদ সাহা সুভাষচন্দ্র বসুর আমন্ত্রণে বঙ্গীয় যুব সম্মেলনে যে বক্তৃতা করেন তাতে তাঁর সমাজ ও ইতিহাস সচেতনতার গভীর ছাপ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “দুই হাজার বছর পূর্বে চীনবাসিগণ তাদের দেশের উত্তরে প্রকাণ্ড দেওয়াল তুলে মনে করেছিল যে তারা বৈদেশিক আক্রমণ হতে চিরকালের জন্য নিরাপদ হল, কিন্তু তা সত্ত্বেও মোগল মাঞ্চু প্রভৃতি জাতি তাদের পুনঃপুনঃ দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে। আমাদের সনাতন হিন্দু ধর্মের সংরক্ষকগণ মনে করেছিলেন যে আচার, ধর্ম ও কুসংস্কারের একটা চীনাপ্রাচীর তুলে ভারতের নিম্নবর্ণদিগকে চিরকাল পদতলে রাখবেন, কিন্তু তার ফল হল যে হাজার বৎসর ধরে তাঁরা ফুটবলের মতো একবার তুর্কি, একবার আফগান, ইংরাজের পদতলে নিক্ষিপ্ত হচ্ছেন। আমরা যদি মনে করি যে বর্তমানে সরল অনাড়ম্বর জীবনের একটা আদর্শ তুলে আমাদের জাতিকে পাশ্চাত্য যান্ত্রিক সভ্যতার স্রোতের প্লাবন হতে রক্ষা করতে পারব তাহলে একটা মস্ত ভুল হবে। ... সুতরাং আমাদের কর্তব্য, এই সমস্ত হতে দূরে না থেকে যাতে এই সমস্ত ব্যাপারে পারদর্শিতা লাভ করতে পারি। দেশের সকল রকম বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষিকে বিদেশীদের কবলমুক্ত করে নিজেদের হস্তগত করতে পারি। ত্যাগ খুবই বড় জিনিস, কিন্তু শক্তি ও কর্ম তার চেয়ে কম বড় জিনিস নহে, আমরা অনেক সময় আমাদের অযোগ্যতাকে ত্যাগ বলিয়া প্রচার করি।” তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সভ্যতার মূলমন্ত্র হচ্ছে বিজ্ঞান। আমি পূর্বেই বলেছি যে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করতে হবে এবং প্রকৃতির সাথে সংগ্রামে জয়ী হতে হলে আমাদের বিজ্ঞানের সেবা করতে হবে। এই দেশে প্রাকৃতিক শক্তিকে মানুষের কাজে লাগাবার জন্য ভবিষ্যতে যে বিরাট আয়োজন হচ্ছে তার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। কিন্তু এই সংগ্রামের উপযুক্ত হতে হলে নিয়তির উপর নির্ভরতা কমাতে হবে, জীবনব্যাপী সাধনা ও শিক্ষা করতে হবে।”
তিনি চাইতেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই হবে মৌলিক গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র। এমনকি পরমাণু বিজ্ঞান গবেষণাও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে করার পক্ষপাতি ছিলেন। লোকসভার এক বক্তৃতায় ভারতীয় শাকদের সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, “যতক্ষণ না বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাজকর্ম নতুনভাবে বিকশিত করার জন্য উপযুক্ত অর্থ দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ এই জাতীয় গবেষণাগারগুলি ভাল ফল দেখাতে পারবে না। আমি দুই প্রজন্মের ছাত্রদের শিক্ষা দিয়ে আসছি। আমাদের ছেলেরা তাদের উৎসাহ ও উদ্যোগে কারো চেয়ে খাটো নয়। ভাল বীজ আছে। কিন্তু তাদের জন্য কেমন ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে? এই ক্ষেত্র মরুভূমি সদৃশ। আমরা এদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা দিই। তারা কাজ করতেই চায়। কিন্তু আমাদের ওয়ার্কশপ, লাইব্রেরি ও গবেষণাগারগুলির হতদরিদ্র ও সেকেলে অবস্থা, কাজেই ছাত্রদের আমরা কিভাবে সাহায্য করব? আপনারা যে সব জাতীয় গবেষণাগার গড়ে তুলেছেন তা আমাদের কোনো কাজে আসবে না। আপনারা মন্দির তৈরী করেছেন, কিন্তু উপযুক্ত ভক্তেরা এসে মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবে এমন ব্যবস্থা করেন নি।”
তিনি বিশ্বাস করতেন, কাব্য-সাহিত্য বিজ্ঞানের পরিপূরক। সত্যদর্শী বিজ্ঞানীর প্রকাশভঙ্গিতে যে ভাষাগত অভাব বা দুর্বলতা থাকে তা কেবল কবিই মোচন করতে পারেন। সাহা তাঁর ‘কাব্য ও বিজ্ঞান’ নিবন্ধে লিখেছিলেন, “প্রকৃতির গোপন রহস্য কবিরই নিকটই ধরা দেয় - এর জন্য তিনি সত্যদ্রষ্টা। কোনো কোনো দেশে কবি ভবিষ্যৎ-দর্শী মহামানব, কারণ ভবিষ্যতের সুসমাচার তাঁহাদের মুখেই প্রচারিত হয়। কবিই শব্দব্রহ্ম - তাঁহার মধ্য দিয়া বিশ্বপ্রকৃতির অন্তরের ইচ্ছা মানুষের নিকট প্রকাশিত হয়। ... বিজ্ঞানীরা ভাষায় তেমন দক্ষ নহেন। কবির মতো জনগণের মন উচ্চমার্গে উদ্ধুদ্ধ করার শক্তি তাঁহাদের তেমন নাই।”
মানুষের প্রতি বিশেষত শ্রমজীবী মানুষের প্রতি বিজ্ঞানী সাহার মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল প্রবল। মানুষকে তিনি সম্মান দিতে জানতেন। আর সে সম্মান দেওয়ার শিক্ষা তিনি ছড়িযে দিয়েছিলেন নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-আত্মীয়স্বজন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। তাঁর মেয়ে কৃষ্ণা দাস লিখেছেন, “বাবার কাছে আমরা যে উদারতা ও সংযমের শিক্ষা পেয়েছিলাম, যে মূল্যবোধ শিখেছিলাম, সে কোনোদিন ভুলবার নয়। জাতপাত, ধর্ম নিয়ে কোনোদিন বাড়িতে কাউকে চিন্তা করতে দেখিনি। একদিন বাড়ির কাজের লোকটি আসেনি, বাবা তার নাম করে জিজ্ঞাসা করলেন যে সে কোথায়। আমি বললাম, ‘চাকরটা আজকে আসেনি।’ উনি খুব অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন - ‘চাকরটা কি? আমরা তো সবাই চাকর। কখনও ওভাবে বলবে না, ওর একটা নাম আছে।’ যে আত্মবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভীকতা ও উদারতা আমাদের ঘিরে ছিল, যার সংস্পর্শে আমরা বড় হয়েছি, যে মূল্যবোধ তিনি আমাদের দিয়েছিলেন, সে সব আজ কোথায়? জীবনে দিয়েছেন বহু, অসাধারণ সব ছাত্র তৈরী করে গেছেন, এমনটি অনেকদিন আর দেখবো না।”
১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি ভবনে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় যাবার পথে মেঘনাদ সাহা মৃত্যুবরণ করেন। বিশেষ বিমানে তাঁর মৃতদেহ কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সেদিন ছিল সরস্বতী পূজার দিন। তাঁর মৃত্যু সংবাদে কলকাতার সমস্ত পূজা বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
জগৎ সভায় বাংলার আর বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন হাতে গোনা যে অল্প কয়েকজন মানুষ - মেঘনাদ সাহা তাঁদেরই একজন। তাঁর মৃত্যুর পর ইতোমধ্যে অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেছে। বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয় যে একদিন এ বাংলার শ্যামল ভূমিতেই জন্মেছিলেন, বেড়ে ওঠেছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জগদীশ চন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বিশ্বমানের বিজ্ঞানী। সেদিন দেশ ছিল পরাধীন। শিক্ষা-দীক্ষা, বিজ্ঞান চর্চার পরিবেশ ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল। এত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল না। এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষার অনেক প্রসার হয়েছে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণ। অথচ আজকের বাংলাদেশ যেন এক নিস্ফলা মরুভূমি। শুধু বিজ্ঞান নয় - শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, শিক্ষা, সমাজ সংস্কার, রাজনীতি - সর্বত্রই এক দৈন্য দশা। এরকম একটি সময়ে আমরা যখন মেঘনাদ সাহাকে স্মরণ করছি - তখন আমরা একদিকে স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া সেইসব অমূল্য রত্নকে ছাত্র-যুবকদের সামনে, জনগণের সামনে তুলে ধরতে চাই, সাথে সাথে আজকের বন্ধ্যত্ব কাটানোর রাস্তাও খুঁজে পেতে চাই।
তথ্যসূত্র
১। মেঘনাদ সাহা - শান্তিময় চট্টোপাধ্যায়, এনাক্ষী চট্টোপাধ্যায় (ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া) নয়া দিল্লী, ১৯৯৪
২। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা - প্রশান্ত প্রমাণিক (জ্ঞান বিচিত্রা, কলকাতা) জানুয়ারি ২০০১
৩। কিশোর রচনা সংকলন - মেঘনাদ সাহা (সঙ্কলন ও সম্পাদনাঃ শান্তিময় চট্টোপাধ্যায়, এনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়; শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ, কলকাতা, ১৯৮৯)
৪। দেশ বিদেশের বিজ্ঞানী - অমরনাথ রায় (আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, মার্চ ১৯৯০)
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:০০
অ্যামাটার বলেছেন: ভাল পোষ্ট। কিন্তু এই তথ্যগুলো ব্লগে ফেলে না রেখে বাংলাউইকি কিংবা এন্সাইক্লোপিডিয়া-তে আপডেট করতে পারেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ২:৫৮
শয়তান বলেছেন: অসাধারন এক শিক্ষনীয় জীবনী ।