![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেখ মুজিবুর রহমানঃ
...................................
সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে ধরতে পারছি না। ফোন করলেই খবর পাই লালবাজার আছেন। লালবাজার পুলিশ হেডকোয়ার্টার।নূরুদ্দিন অনেক রাতে একটা বড় গাড়ি ও কিছু পুলিশ জোগাড় করে তাদের উদ্ধার করে আনার ব্যবস্থা করেছিল।
অনেক হিন্দু তালতলায়, ওয়েলেসলী এরিয়ায় ছিল। তাদের মধ্যে কিছু লোক গোপনে আমাদের সাহায্য চাইল। অনেক কষ্টে কিছু পরিবারকে আমরা হিন্দু এরিয়ায় পাঠাতে সক্ষম হলাম, বিপদ মাথায় নিয়ে। বেকার হোস্টেলের আশেপাশে কিছু কিছু হিন্দু পরিবার ছিল, তাদেরও রক্ষা করা গিয়েছিল। এদের সুরেন ব্যানার্জি রোডে একবার পৌঁছে দিতে পারলেই হয়।
আমি নিজেও খুব চিন্তাযুক্ত ছিলাম। কারণ, আমরা ছয় ভাইবোনের মধ্যে পাঁচজনই তখন কলকাতা ও শ্রীরামপুরে। আমার মেজো বোনের জন্য চিন্তা নাই, কারণ সে বেনিয়া পুকুরে আছে। সেখানে এক বোন বেড়াতে এসেছে। এক বোন শ্রীমামপুরে ছিল। একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের ম্যাট্রিক পড়ে। একেবারে ছেলে মানুষ। একবার মেজোজনের বাড়ি, একবার আমার ছোটবোনের বাড়ি এবং মাঝে মাঝে আমার কাছে বেড়িয়ে বেড়ায়। কারো কথা বেশি শোনে না। খুবই দুষ্ট ছিল ছোটবেলায়। নিশ্চয়ই গড়ের মাঠে এসেছিল। আমার কাছে ফিরে আসে নাই। বেঁচে আছে কি না কে জানে।
শ্রীরামপুরের অবস্থা খুবই খারাপ। যে পাড়ায় আমার বোন থাকে, সে পাড়ায় মাত্র দুইটা ফ্যামিলি মুসলমান। কলকাতা শহরে শুধু মরা মানুষের লাশ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। মহল্লার পর মহল্লা আগুনে পুড়ে গিয়েছে। এক ভয়াবহ দৃশ্য! মানুষ মানুষকে এইভাবে হত্যা করতে পারে, চিন্তা করতেও ভয় হয়। লেডী ব্র্যাবোর্ন কলেজে রিফিউজিদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দোতলায় মেয়েরা, আর নিচে পুরুষরা। কর্মীদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আমাকেও মাঝে মাঝে থাকতে হয়। মুসলমানদের উদ্ধার করার কাজও করতে হচ্ছে। দু'এক জায়গায় উদ্ধার করতে যেয়ে আক্রান্তও হয়েছিলাম। আমরা হিন্দুদেরও উদ্ধার করে হিন্দু মহল্লায় পাঠাতে সাহায্য করেছি। মনে হয়েছে, মানুষ তার মানবতা হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিন ১৬ই আগস্ট মুসলমানরা ভীষণভাবে মার খেয়েছে। পরের দিন মুসলমারা হিন্দুদের ভীষণভাবে মেরেছে। পরে হাসপাতালের হিসাবে সেটা দেখা গিয়েছে।
এদিকে হোস্টেলগুলিতে চাউল, আটা ফুরিয়ে গিয়েছে। কোন দোকান কেউ খোলে না, লুট হয়ে যাবার ভয়েতে। শহীদ সাহেবের কাছে গেলাম। কি কর যায়? শহীদ সাহেব বললেন, “নবাবজাদা নসরুল্লাহকে (ঢাকা নবাবা হাবিবুল্লাহ সাহেবের ছোট ভাই, খুব অমায়িক লোক ছিলেন, শহীদ সাহেবের ভক্ত ডেপুটি চিফ হুইপ ছিলেন) ভার দিয়েছি, তার সাথে দেখা কর।” আমরা তাঁর কাছে ছুটলাম। তিনি আমাদের নিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে গেলেন এবং বললেন, “চাউল এখানে রাখা হয়েছে তোমরা নেবার বন্দোবস্ত কর। আমাদের কাছে গাড়ি নাই। মিলিটারি নিয়ে গিয়েছে প্রায় সমস্ত গাড়ি। তবে দেরি করলে পরে গাড়ির বন্দোবস্ত করা যাবে।” আমরা ঠেলাগাড়ি আনলাম, কিন্তু ঠেলবে কে? আমি নূরুদ্দিন ও নূরুল হুদা (এখন ডিআইটির ইঞ্জিনিয়ার) এই তিনজনে ঠেলাগাড়িতে চাউল বোঝাই করে ঠেলতে শুরু করলাম। নূরুদ্দিন সাহেব তো ‘তালপাতার সেপাই’- শরীরে একটুও বল নাই। আমরা তিনজনে ঠেলাগাড়ি করে বেকার হোস্টেল, ইলিয়ট হোস্টেলে চাউল পৌঁছে দিলাম। এখন কারমাইকেল হোস্টেলে কি করে পৌঁছাই? অনেক দূর, হিন্দু মহল্লা পার হয়ে যেতে হবে। ঠেলাগাড়িতে পৌঁছান সম্পূর্ণ অসম্ভব। নূরুদ্দিন চেষ্টা করে একটা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি জোগাড় করে আনল। আমরা তিনজন কিছু চাল নিয়ে কারমাইকেল হোস্টেলে পৌঁছে ফিরে আসলাম।(চলবে)
সূত্র: শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ।
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২০
তপ্ত সীসা বলেছেন: ভালো। শেয়ার করতে থাকেন ভায়া
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:১৮
সারোয়ার ইবনে গিয়াস বলেছেন: ইতিহাস কথা বলে।
৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৪
সাব্বির জুবাইর বলেছেন: অনেক তথ্যপূর্ণ লেখা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৪১
প্রামানিক বলেছেন: দারুন একটা পোষ্ট দিচ্ছেন। এখনকার প্রজন্মকে এসব জানা দরকার।