নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিস্তি ৫০
ছাত্র রাজনীতির সবচেয়ে খারাপ দিকটা হলো খুন, যে কোনো বিচারেই এটা নিকৃষ্টতম কাজ। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা ছাত্ররাজনীতিকে ঘিরে রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ দুজন ছাত্র নেতা নিহত ও গুম হয়েছেন। তাদের একজন খোকন। আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। টিএসসিতে অনেক রাত আমরা আড্ডা দিয়েছি, এক সাথে। যশোর অঞ্চলে ওর বাড়ি। নাদুস নুদুস বডি। ছাত্র হিসাবেও খারাপ ছিল না। চেহারাই সব সময় ওজ্জ্বল্য ছিল। হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে আসত... আরে দোস্ত, কি খবর। ভালো আছিস।
এ রকম একটা আনন্দময় ছেলে গ্রুপ রাজনীতির বলি হলো। জহুরুল হক হলে ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলল ছাত্র দলেরই ছেলেরা। ও সে সময় আলিম গ্রুপ করতো। টিটু গ্রুপ তাকে পিটিয়েছে। হাসপাতালে নেবার জন্য তাকে নিয়ে আসা হযেছে হলের গেটে। কিন্তু ছাত্র নামের গুণ্ডারা সেই গেটও আটকে রেখেছে্ রক্ত ঝরছে, সে সাথে নিস্তেজ হয়ে আসছে এক তাজা প্রাণ। শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতারে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু বাঁচানো গেলো না।
গ্রামের মধ্য বিত্ত পরিবারের ছেলে খোকনকে হত্যার পর এর বিচার হবে বলে শুনেছিলাম, কিন্তু হয়নি। বরং ছাত্রনেতারা তলে তলে সমঝোতা করেছেন। খোকনের মত যারা ক্যাম্পাসে পা রাখে নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে, মা বাবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, তারা রাজনীতির বিষবাষ্পে আটকা পড়ে জীবন খুইয়ে মূল্য দেয়, সমাজ সভ্যতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তোমরা এখনো মানুষ হয়ে ওঠনি। খোকনের কথা মনে পড়লে এখনো খুব কষ্ট পাই, আমার সাংবাদিকতা জীবনে এ এক দুষ্ট ক্ষত। এ রকম কষ্ট আমি খুব কম পেয়েছি, চেনা জেনা একটা ছেলে দু একদিন আগেও আড্ডা মেরেছি যার সাথে, সেই ছেলে আর নেই। এটা মানতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু যাদের গ্রুপ করতো, যাদের জন্য জীবন বাজি রাখলো খোকন তারা তার রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে। এ বেঈমানরা একদিন ক্ষমতার মসনদে যাবে, মন্ত্রী হবে, রক্তে ভেজা ইতিহাস অনেকের জানা থাকবে না, জানতে চাইবেন না। এদের অমৃত বচন শ্রবণ করবে আমাদের সন্তানরা। কী নির্মম দুর্ভাগ্য জাতির।
আরেকজন ছাত্র নেতার কথা বলছি, দেলোয়ার। ডানপিটে ছেলে। সিগারেট ফুকছে টিএসসির পাঁচিলে বসে, আমাকে দেখা মাত্র সিগারেট লুকিয়ে হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এসে বলছে, ভাই কেমন আছেন!
আমার চোখে এখনো এমন দৃশ্য ভাসে। ছাত্রলীগের মহসিন হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল দেলোয়ার। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছেলেটা নেই। নিখোঁজ। নাই তো নাই ই। এভাবে নাই হয়ে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যার গ্রুপ করতো তারও কোনো হা পিত্যেশ দেখছি না।
তার খোঁজের দাবি নিয়ে সহযোদ্ধারা হাতে হাত রেখে দাঁড়ায়নি ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
দেলোয়ার সব সময় নিচের দিকে মাথা রেখে কথা বলত। সব সময় বলতো ভাই আমাদের দিকে খেয়াল রাইখেন। এ রকম একটা ছেলে নিজের দলের সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময় নেই হয়ে যাবে, এ কথা ভাবতে পারি না। তার খোঁজের অপেক্ষা তার মা এখনো পথ চেয়ে আছেন। আমার অনুজ ও প্রিয় বিশ্লেষক খোমেনি ওর নিখোঁজের এক বছর পর একটি লেখা লিখেছিল। সেটি পড়ে আমার কান্না এসেছে।
দেলোয়ারদের কি দোষ? এ সমাজ রাষ্ট্র এবং সন্ত্রাসী রাষ্ট্র যদি কাউকে নষ্ট করে তার দায় কার কতটুকু। আমি জানি না। কেবল জানি হত্যা কিম্বা গুম কোনোটাই আমি মানতে চাই না। আমি মানি না। আমি মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি। আমি চাই ছাত্র রাজনীতির এ অন্ধকার দিক আলোয় ভরে উঠুক, আর একটি ছাত্র মারা যাবে না ক্যাম্পাসে, গুম হবে না। আমরা এ জন্য আর একটি লেখাও লিখতে হবে না।
দেলোয়ার এবং খোকন, কিম্বা খোকন এবং দেলোয়ার তাদের জীবন থেখকে শিক্ষা নিক আজকের তারুণ্য।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৯
মোরতাজা বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০২
খাটাস বলেছেন: যত দূর জানি, সরকারি হল গুলোতে রাজনিতি না করলে থাকতে দেয় না। সাধারণ ছাত্ররা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না সিস্টেমের কারনে। আর যারা প্রথমেই পরাজিত হয়, ঘুরে দাঁড়ানো তাদের কঠিন। এই ছাত্র রাজনিতি তে নয়, দেশের রাজনিতির ধারায় পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এভাবেই মেধা গুলো নষ্ট হয়ে যাবে।