নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিস্তি :৬৮: হুমায়ূন স্যারের সাথে আমার স্মৃতি!
হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার কথা হয় ২০০৫ সালে। ১৩ নভেম্বর সকালে। আমি ও আলোকচিত্রি নাসিদ শিকদার তার ধানমিণ্ডর দখিন হাওয়ায় যাই। জন্মদিনে তার হাতে একটা ফুলে তোড়া তুলে দিই। আমাদের সোফা দেখিয়ে বললেন, বসো, বসো। তার জন্মদিনে শাওন একটা ক্যালেন্ডার বানিয়েছিলেন, তার এক কপি করে উপহারও দিলেন। আমাকে ডেকে নিলেন তার শোবার ঘরে। লেখকদের শোবার ঘর যেমন হয় তেমনই, অগোছালো। এটাই স্বাভাবিক। দেয়ালের সাথে লাগানো তার খাটের মাথার দিকটা। আমাকে বললেন, বসো। অনেক কথা হলো, তার বেড়ে ওঠা, জন্মদিন এবং অন্য সব বিষয় নিয়ে। ঘণ্টা দুয়েক ছিলাম। তারপর দখিণ হাওয়া থেকে বের হলাম।
ভাবছিলাম আমার কৈশোর পেরোনার সময়টার কথা, যার বই পড়ে বড় হয়েছি সে মানুষটার মুখোমুখি আমি, ভাবতে ভালো লাগছিলো। স্যারের সহজ করে কথা বলা এবং আরো সহজে কাছে টেনে নেয়ার একটা অসীম ক্ষমতা আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে কেবল তার কথা শুনছিলাম। অনেক প্রশ্ন জমা ছিল তার কিছুই অনেকগুলোয় তাকে করা হয়নি। করা হয়নি কারণ তার মত একজন মানুষকে প্রশ্ন করতে আমি ভয় পাচ্ছিলাম।
হুমায়ূন আহমেদকে আমি এর আগেও সারাসরি দেখেছিলাম কিন্তু এত কাছ থেকে কথা বলা হয়নি।। সম্ভবত ২০০৫ কিম্বা ২০০৬ সালে হিমুর মধ্যদুপুর বের হলো। বই মেলার আগেই এ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হলো ধানমিন্ডর রবীন্দ্র সারোবরে। আমি অ্যাসাইনমেন্ট কভার করার জন্য গেলাম। একটা বই আমাকে দেয়া হলো, আমার জীবনে কোনো লেখকরে অটোগ্রাফ নেয়ার ইচ্ছে পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু হুমায়ূন স্যারের বেলায় ভিন্ন। তার একটা সই দরকার। স্যার বক্তব্য রেখে নেমে এলেন। আমি তার পাশে গিয়ে সালাম দিলাম। বলল, ও তুমি। কেমন আছ? ভালো আছি। একটু আড়ষ্ট আমি। কি বলবো। বুঝতে পারছিলাম না। ভয়ে ভয়ে মধ্যদুপুর বইটা এগিয়ে বললাম, স্যার আপনি চাইলে এখানে কিছু একটা লিখে দিতে পারেন। স্যার আমার ভয় ও বোকামি দেখে- হাসলেন। বললেন, কলম দাও। আমি কলম এগিয়ে দিলাম। উনি আমার স্ত্রীর নাম জানতে চাইলেন। তার নাম লিখে শুভেচ্ছা জানিয়ে সই করলেন। এটাই কোনো লেখকের কাছ থেকে আমার নেয়া বা চাওয়া একমাত্র অটোগ্রাফ।
ওই বছরই হিমুর মধ্য দুপুর নিয়ে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা স্যারের সাথে নুহাশ পল্লীতে আড্ডা দিবেন। আগের রাতে আমি সেন্টমার্টিন থেকে ঢাকা ফিরেছি। আমার নিউজ ম্যানেজার খলিলী ভাই বললেন, নুহাশপল্লী যেতে হবে। আমাদের সেখানে নিয়ে গেলো একটি পিআর ফার্ম। আমার সাথে ছিলেন সে সময়কার আমার দেশের রিপোর্টার, বর্তমানে সমকালের মুন্না মিয়া। মুন্না আমার দেখা অসাধারণ সহযোগি একজন মানুষ। যেতে যেতে মুন্না ভাই বললেন, তার ফিচার এডিটর হুমায়ূন স্যারের সাথে আলাপ করে তাকে একটা বড় লেখা দিতে বলেছেন। আমি যেন তাকে হেল্প করি। বললাম, এটা কোনো ব্যাপার না।
নুহাশপল্লীতে পৌছানোর পর একটা গাছের নিচে স্যার আমাদের সাথে আ্ড্ডা দিচ্ছিলেন। অনেক কথা বলছিলেন। আমার প্রিয় হিমু চরিত্র নিয়ে স্যারকে জিজ্ঞেস কলারাম। স্যার বললেন, এটা অসাধারণ একটা চরিত্র। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বিচিত্র সব ইচ্ছে হয়। কিন্তু সে সব সে প্রকাশ করে না, বা করতে পারে না। কিন্তু সে এ সব লালন করে। আমি মানুষের মনের সে কথাটি এ চরিত্রের মধ্যে বলতে চেয়েছি। মিসির আলী নিয়েও অনেক কথা বললেন।
তার অনেক বই পড়েছি, সে সব থেকে কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম। স্যার অল্প বিস্তর জবাব দিচ্ছিলেন। এক ফাঁকে বললেন, আমি কিন্তু ইন্টারভিউ দিচ্ছি না। আলাপে সীমাবদ্ধ রেখো। আমি পরের দিকে কম বলছি। শেষের দিকে বললেন, তুমি দমে গেলা কেন? আমি হাসলাম। স্যারও হাসলেন। বললেন, সাংবাদিকরা শুধু ইন্টারভিউ করতে চায়। তাই বললাম। মন খারাপ করছ? বললাম, না স্যার।
স্যার তার ছেলে নিষাদকে দেখিয়ে বললেন, এটা হলো সবচেয়ে ছোট হিমু এবং তার শশুরকে (শাওনের বাবা) দেখিয়ে বললেন এটা হলো বুড়ো হিমু। ওই দিন তারা দু’জনেই হলুদ পাঞ্জাবী পরেছিলেন। তবে স্যার তার মতই ছিলেন। শাওনও হলুদ পাঞ্জাবী পরেছিল।
আড্ডার শেষে স্যারের সাথে ছবি তুলছিলাম। অনেকগুলো ছবি তোলা হলো। এক পর্যায়ে স্যার শাওনকে ডাকলেন, আমাকে বললেন, শাওনের সাথে ছবি তোলো। আমি যাই। শাওনের সাথেও আমার বেশ কয়েকটি ছবি তোলা হয়েছে। ফেসবুকে সে সব আপলোড করা আছে। অনেকে হয়তো তা দেখে থাকবেন। স্যারের সাথে তার দখিন হাওয়া ও নুহাশপল্লীর স্মৃতি আমার প্রায় মনে পড়ে। তাই তার মৃত্যুবার্ষিকীকে আমার স্মৃতিচারণের কিছু ছন্দ পতন ঘটিয়ে এ পর্বাটি লিখলাম। সামনের পর্ব থেকে আবার ২০০২ সালের গল্প হবে।
©somewhere in net ltd.