নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেডলি ট্রাভেল লাভিং ওয়ান।

মোরতাজা

আমি সাধারণের একজন। বেড়াতে, বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

মোরতাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ট্যুরের আত্ম কাহিনী!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৭

কিস্তি :৭৫: একটি ট্যুরের আত্ম কাহিনী!







অনেকক্ষণ ধরে হাঁটার পর আমরা সোমেশ্বরী নদীর তীরে। হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। আমাদের পকেটেও টাকা কড়ির সঙ্কট। তাই পার হওয়ার চেষ্টা করা বৃথা যাবে না। যথানিয়মে বিরিশিরি একাডেমীর দিক থেকে বাজারের দিকে হাঁটলাম। নদীর জল পেরিয়ে ওপারে ঘুমানোর জন্য গুলশান হোটেলে একটা কক্ষ পাওয়া গেলো। তবে বাথরুম গণ!

২০০২ সালের দিকের ঘটনা এটা। বিরিশিরি যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিল না। শেষে একদিন রাতে আমরা তিন বন্ধু-মাহমুদ, বাবু ও আমি রওয়ানা দিলাম নেত্রকোনোর বিরিশিরি। উদ্দেশ্য সোমেশ্বরী জল ছুঁয়ে হাজং পল্লী ঘুরে আসা। যে ভাবা সেই কাজ। কমলাপুর থেকে একটা মেইল ট্রেনে চেপে বসলাম। আশপাশে মানুষের চিৎকার চেচাঁমেচি এ সব দেখতে ও শুনতে ময়মনসিংহ পৌঁছালাম সকালে। তার আগে গফরগাঁও স্টেশন থেকে অতিরিক্ত লোক উঠে পুরো ট্রেনের অবস্থা বেসামালা। পাশের এক যাত্রী এ পরিস্থিতি যে হবে, সে কথা বলে রেখেছিলেন। আমরা প্রস্তুতও ছিলাম। যেহেতু আমাদের পকেটে টাকা নেই। তাই এ সব আমাদের সহ্য করতেই হাবে।

কিন্তু গোলমালটা অন্য জায়গায়। বিনামূল্যে রেল ভ্রমণ টিটি আমাদের রেল পুলিশে দেবে। আমরা বললাম দেন। তাহলে তো খাবারের কোনো চিন্তা নেই। আমাদের পকেটে যে টাকা নেই, তা টিটি বিশ্বাস করছে না। যা আছে সেটি কোনোভাবেই দুশ টাকা অতিক্রম করেনা, সেটা দিয়ে আমাদের দুইদিনের ভ্রশন শেষ করতে হবে, এটা টিটি কে বোঝানো গেলো না।

সকাল ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে হই চই। বাবু একটি টাকাও দেয়ার পক্ষে নয়। আমি ঝামেলা এড়ানোর জন্য অস্থির। টিটিকে কিছু চাপা পিটিয়ে ম্যানেজ করা হলো। বের হয়ে রিকশা নিলাম। কোথায় যাওয়া যায়? ভাবছিলাম। ভোর তখন। বললাম, চল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। ক্যাম্পাসে ঢোকার আগে পাখির কিচির মিচিরে অসাধারণ একটা ভোর দেখলাম। আমার দেখা অন্য রকম একটা ভোর। কিশোরী মেয়ের হাসির মতই লাস্যময়, নিষ্পাপ আবেগ ঝরা সেই ভোরে আমরা ব্রক্ষপুত্র নদের কিনারে গিয়ে বসলাম। সকাল হলো। নাশতার আয়োজন হলো। ভাবলাম বসে থেকে লাভ কি? নদী পার হয়ে ওপারের গ্রাম দেখে আসা যাক। সে সাথে দুপুরের খাবারটা যদি মাগনা সেরে নেয়া যায়, তাহলে মন্দ হয় না। ভাবনা মত কাজ হলো। নদীর পাশের চরের মানুষ যেমন খারাপ ব্যবহার করে, তেমনি এরা অতিথি পরায়ণ।

দুপুরের পর ময়মনসিংহ শহরে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে আসলাম। যাবো নেত্রকোনা। বিরিশিরি সম্পর্কে তখনো আমাদের বিস্তারিত কোনো ধারণা নেই। প্রথমবার যাচ্ছি। বাসে উঠলাম। অল্প ক’টা টাকা।। তাই কিছু টাকা দিয়ে নেত্রকোনা হাজির হবো। এ সময় পথে নেত্রকোনো সরকারি কলেজের এক শিক্ষকের সাথে পরিচয়। সে সময় বেশিরভাগ মানুষ লুঙ্গি পরতো। আমরা প্যান্ট পরে আছি। তাই একটু বাড়তি খাতির সবখানে! বাসঅলা খাতির করে সিটে বসালো। কিন্তু ভাড়া কম! এটা সে মানতে চাইলো না। তবে মানতে হয়েছে তাকে। আমাদের বাহাস দেখে ওই শিক্ষক এগিয়ে আসলেন। জানতে চাইলেন কোত্থেকে আসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনে আপ্লুত। অনেক কথা বললেন। থাকতেন জিয়া হলে। বাবুর জিয়া হল অ্যটাচমেন্ট। সেই সুবাধে খাতিরটা পাক্কা হলো। জানতে চাইলেন কই যামু। বললাম বিরিশিরি। ততক্ষণে আমরা বিরিশির যাওয়ার রাস্তার মাথা অতিক্রম করেছি। পরে উনি আমাদের সাথে একটা স্ট্যান্ডে নামলেন এবং খাইয়ে বাসে তুলে দিলেন।

সেখান থেকে আমরা শ্যামগঞ্জ হয়ে বিরিশিরি যাচ্ছি। রাস্তা জমিনের সাথে মিশে গেছে। বাসের ভেতর মানুষ আর মানুষ। প্রায়ই অ্যাকসিডেন্ট হয় বলে ড্রাইভার জানালেন। ভাঙ্গাচোরা ব্রিজ আর রাস্তা পেরিয়ে আমরা বিরিশিরি আসলাম।

নদী পার হয়ে গুলশান হোটেলে। সে সময়কার স্থানীয় এমপির হোটেল এটি। এ হোটেলের একপাশে সিনেমা হল। আমাদের বাংলা সিনেমা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ঘুম আসছিল বলে পারলাম না। সকালে উঠে সবচেয়ে ভালো রেস্টুরেন্টা খুঁজে ভাত খেলাম। এক সাথে দু বেলার খাবার। তারপর রওয়ানা করলাম হাজং পল্লী। নৌকায় পার হয়ে রিকশা বা ভ্যানে হাজং পল্লী যাওয়া যেতো। ১ টাকায় নৌকা পর করা হয় জনপ্রতি। আমরা ২ টাকা দিয়ে তিনজন পার হলাম। তার পর হাজং পল্লী যাওয়ার আগে শুনলাম সীমান্তে বিডিআর পোস্ট দেখার মত। গেলাম সেখানে। একটা ভ্যাে করেই অন্যদের সাথে শেয়ারে আমাদের এই যাত্রা। বিডিআর পোস্টের পাশের গির্জাসহ একটা খ্রিস্টান মিশনারি দেখে ভালো লাগলো। যাওয়ার পথেই টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতি সৌধ দেখে গেলাম। আমাদের মধ্যে ছবি তোলার খুব একটা প্রবণতা ছিল না। সাথে ক্যামেরাও আনা হয়নি। তাই ছবি তোলা হলো না। এটা নিয়ে কোনো আফসোসও নেই।

বিডিআর জওয়ানদের সাথে আলাপ ও রেস্ট নিয়ে হাজং পল্লীর পথে হাঁটছি। অনেকক্ষণ পর পল্লীতে আসলাম। ছোট ছোট টিলার ওপর গড়ে ওঠা বসতি নিয়ে গ্রামটা অসাধারণ। আমরা বিভিন্ন হাজং পরিবারের বাসায় গেলাম। তাদের রান্না বান্না ও খাবার সম্পর্কে জানলাম। পাহাড়ের চিপায় আবার একটা দোকান। তিন টাকার মুড়ি কিনে লাঞ্চটা সেরে ফেললাম সেখানেই। হাজং পল্লী থেকে নামার পর চিনামাটির পাহাড় দেখতে গেলাম। সেখান থেকে সোজা বিরিশিরি। হোটেলঅলা অনেক টাকা চার্জ করেছে। পরদিন সকালে বল্লাম ভাই টাকা নেই। ওর তো মাথায় হাত। পরে কিছু টাকা দিয়ে চলে আসলাম। বেচারা কেবল তাকিয়ে থাকলো।

তৃতীয় দিনের যাত্রাটা ভিন্ন। সকালে পরটা খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু টাকায় কুলাবে কিনা সন্দেহ। তবুও রিস্কটা নেয়া হলো। পরোটা খেলাম তিনজন মিলে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি বিরিশিরি স্ট্যান্ডে। একটা বাসে উঠলাম। বললো ডাইরেক্ট যাবে। ভাড়া ২০ টাকা করে। আমরা সেটার পুরোটা দিতে পারলাম না। মাঝপথে এসে তারা সব যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে পুরো গাড়ি কুমড়ো বোঝাই করলো। আমরা তো পুরাই বেক্কল হয়ে গেলাম। শুধু আমাদের বললো, আপনারা থাকেন, নিয়া যামু একটা চিপা দিয়া। আমরাও চিপা দিয়াই যাইতে চাই। কিন্তু বাস ভর্তি কুমড়ার মধ্যে যাওয়াটা যে খুবই রিস্কি সেটা আমরা জানতাম। একবার কুমড়ার তাল ভেঙ্গে গেলে ড্রাইভারসহ আমরা সবাই শেষ। মহিলাদের জন্য আগে নির্ধারিত ড্রাইভারের বাম পাশের টুলটাতে আমরা বসে আছি।

সন্ধ্যার একটু আগে আমাদের শ্যামগঞ্জ নামিয়ে দেয়া হলো। হাতে সময় আছে। কি করা যায় ভাবছিলাম। শেষ তক বাংলা সিনেমা দেখার ইচ্ছাপোষণ করলাম। সেখানে একটা সিনেমা হল আমাদের খুব পছন্দ হযেছে। মাটি দিয়ে বানানো দোতলা ঘর। সেই ঘরে বাঁশের ফার্ণিচার। অসাধারন একটা হল। টিকিট কেটে সিনেমা দেখা সম্ভব হবে না। তাই কাউন্টারে আলাপ করে ডিসিতে বসে পড়লাম। পুরাই ফাউল একটা সিনেমা। খোলামেলা। আড়াই ঘণ্টা ধরে দেখলাম। বের হয়ে দেখি রাস্তা ঘাট সব ফাঁকা। কী যে করবো, ভাবছি। কোনো গাড়ি নেই।

রাত ৯ টার দিকে একটা ট্রাক দেখে হাত তুললাম। বললাম ময়মনসিংহ যাবো। বললো, উইঠা পড়েন। পেছনে উঠে পড়লাম। আকাশে আধো চাঁদ। রাস্তার দুপাশে সবুজ গাছ গাছালী। জোরসে চলছে ট্রাক। সেই রকম একটা অনুভূতি। ময়মনসিংহ আসার পর ট্রাকঅলাকে ৫টাকা দিয়ে খোদা হাফেজ।

এবার ঢাকা ফেরার পালা। বাস অলারা আমাদের ডাকছে। পারলে কোলে করে বাসে তোলে। বললাম, টাকা নেই। বাসঅলা ভাবছে মশকরা করছি। পরে কয় টাকা দেওন লাগবো না। সে সময় বাসে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার ভাড়া তিরিশ টাকা। এটা অবশ্য লোকাল বাসে। বললাম, ঢাকা গিয়ে টাকা দোবো। তবে তিনজনের ৫০ টাকা। বাসঅলা রাজি। চড়ে বসলাম। রাত ২ টা কি তিনটার দিকে ডাকায় মহাখালীতে এসে নামলাম। হালকা বৃষ্টি এক রিকশালঅকে ডাকলাম। ক্যাম্পাসে যেতে সে রাজি। বললাম, ৫০ টাকা দেন। হলে গিয়া দিমুনে। তার থেকে টাকা নিয়ে বাস ভাড়া দিয়ে ছুটলাম ক্যাম্পাসে। নাবিস্কো পার হতেই প্রচণ্ড বৃষ্টি। আমরা তিনজন ভিজতেছি। রিকশাঅলা বললো ভেজার দরকার নেই। প্লাস্টিক নেন। আমরা সেটি শুনলাম না। বললাম, চাচা আপনি ভিজছেন! আমরাও ভিজবো! আহা কী মহান আমরা!

বঙ্গবন্ধু হল গেটে এসে নামলাম তখন চারটা বা তার একটু বেশি বাজে। রিকশাঅলা বললো, মামা ভাড়া দেন আর নাই দেন, একটা শার্ট দেন। আমি হাঁপানির রোগী। খুব খারাপ লাগলো। দ্রুত রুম থেকে গেঞ্জি এনে দিলাম, কারণ আমি শার্ট পরি না। তাই দিতে পারলাম। সাথে গামছা। পরে টাকা দিয়া বিদায় করলাম। সেই সাথে হঠাৎ করে অল্প টাকা নিয়ে ছুটে চলা একটি ট্যুরের সমাপ্তি ঘটলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.