নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিস্তি :৭৬ : তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা
রাঙামাটি যাবার আয়োজন। শীতকালে যাওয়া। অল্প ক’জন আমরা। ট্যুরিস্ট সোসাইটির এ ট্যুর করার জন্য যথেষ্ট সাহসের দরকার ছিল। কারণ গিরিপথে বাস রিজার্ভ নিয়ে যেতে সাহস হচ্ছিল না। এখন রাস্তা অনেক চওড়া ও নিরাপদ হয়েছে। সে সময়, ২০০৪ সালের দিকে রাস্তা খুব একটা ভালো ছিল না। এখানে সেখানে গর্ত।
ট্যুরে যাওয়ার জন্য বেশি লোক পাওয়া গেলো না। সাকুল্যে ১৫ কি ২০ জন। সারা রাত জার্ণি করে সকালে পৌঁছালাম রিজার্ভ বাজারে। চন্দন দাকে আগেই বলা ছিল। তাই উঠলাম গ্রিণ ক্যাসলে। ফ্রেশ হয়ে গ্রিণ রেস্টুরেন্টে নাশতাটা খেয়েই লেকে। আধো মেঘে ঢাকা সূর্য। নৌকা চালাচ্ছে কামাল। পেশিবহুল কামালকে দক্ষ চালক বলেই জানি। বৌদ্ধ বিহার ও রাবাড়ি ঘুরে আমরা লেকের ভেতর অনেক দূর এলাম।
সে সময় আমি আর বাবু ট্যুরে একটু বেশি দুষ্টুমি করতাম। যেমন নৌকায় বসলে নৌকা দোলানো। পাহাড়ে চড়ার জন্য দুর্গম রাস্তাটা ঠিক করা এমন সব, করা হতো বেশি। বয়সটাও কম ছিল। তাই রিস্কগুলো মাথায় থাকতো না। এখন তো লেকে নৌকায় চড়ার আগে দোয়া দরুদ পড়ে নিই। কারণ এক দশকেরো বেশি সময় ধরে যে সব নৌকা দেখছি, সেগুলো এখনো আছে। মাঝে মধ্যে একটু মেরামত করে আবারো চলে। নৌকার ভেতর এমনিতে পানি জমে। তবে ইদানিং বেশি জমে। মাঝিকে জিগাইলে বলে, এইটা কোনো ব্যাপার না। তার ওপর ১০ জনের চড়ার উপযোগি নৌকায় ২০ জন চড়ানো যেনো রেওয়াজ। তবে এ সব আমরা সব সময় এড়িয়ে চলতাম। এখন আরো বেশি চলি। আসল কথায় আসি, আমরা দুজনে যেটা করলাম তা হলো লেকের মাঝখানে দুজন নৌকার দুই মাথায় গিয়ে দুলছি। পায়ের তালে তালে সে নৌকা দুলছে। এতে খুবই ভয় পেয়ে গেলো অনেকে। বিশেষ করে গ্লোরিয়া গমেজ। আমারে ঘনিষ্ঠতম এ কন্যা তার ছোট ভাইকে নিয়ে গিয়েছিল সেই ট্যুরে। ওর ভাইয়ের নাম বোধ হয় জনি গমেজ। নৌকা দুলাতেই গ্লোরিয়া জোরে চিৎকার দিলো। আমরা প্রথম পাত্তা দিলাম না। পরে মনে হলো আসলেই ভয় পাচ্ছে। তাই দোলাদুলি বন্ধ!
অনেক দূর আসার পর শুভলং ঝর্ণার এক ফোঁটা দুই ফোঁটা পানি এবং শুভলং বাজারে বদরুজ কোম্পানির রেস্তোরায় ভাত খেয়ে আবার ঝুলন্ত ব্রিজের দিকে রওয়ানা হলাম। সন্ধ্যার একটু আগে প্যাদা টিং টিং হয়ে ঝুলন্ত ব্রিজ ত্যাগ করছি। আকাশে অসংখ্য তারার মেলা। সেই ট্যুরে অনেকেই ছিল, যাদের নাম এখন মনে পড়ছে না। এমন তারা ভরা রাত, লেকের স্বচ্ছ জলধারা, দূরে মিটি মিটি করে জ্বলছে জেলেদের জালের পাশে বাতি। কী অপরূপ। কী অসাধারণ, মোহনীয় দৃশ্য।
এমন একটা সময়ে গান না হলে জমে? জমে না। মিটিকে বললাম- গান ধরতে। নতুনদের এগিয়ে রাখার জন্যই বলা। ও তখনো আমাদের সংগঠনে নতুন সদস্য। আমাদের পুরনো শিল্পী মৌ তো আছেই। মিটি গাইল না। না ভাইয়া গান পারি না। এই সব। পরে মৌকে বললাম, তুমিই গাও! মৌ আবার বলত না, না ভাইয়া গলা ভালো নেই। গাওয়ার মুড নেই। এত্ত সব কথা ও বলেনি বললেই চলে।
মৌ গান ধরলো,সেই গান যেটি আমার খুবই ভালো লাগে। তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা। ও গেয়ে যাচ্ছে। মোটর নৌকার শব্দ কান ফাটিয়ে পাহাড়ের গায়ে আঁচড়ে পড়ছে। আমরা সুর মেলাচ্ছি। কী অপরূপ একটা সন্ধ্যা। কী মহোনীয়। অনেক দিন মনে রাখার মত। গানে গানে সন্ধ্যার আলো ছায়া মাড়িয়ে আমরা রিজার্ভ বাজারের মসজিদ ঘাটে এসে নৌকা ভিড়ালাম। সেই সাথে একদিনের রাঙামাটি লেকের ভ্রমণ শেষ।
©somewhere in net ltd.