নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'রাত কাটে নির্ঘুম; অস্থিরতায় পুরো দিন; সন্তানের কী হবে- সে চিন্তা কেড়ে নিয়েছে জীবনের সব আনন্দ-উৎসব- সুখ-শান্তি-চাওয়া-পাওয়ার সবটুকু। তবুও সন্তান যেন নিজে চলতে পারে'- এ টুকু চাওয়া ফেরদৌসীর। তার ছেলেটি অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে (এএসডি) ভুগছে।
আলাপে তিনি বলছিলেন, দু বছর বয়সে তার সন্তানের সমস্যাটা চোখে পড়ে। সে হিজিবিজি কথা বলছিলো। কারো সাথে কমিউনিকেট করছে না। তার ইচ্ছা মত চলছে। তখনই তারা শিশু হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে নিয়ে যান। তার পর ৪ বছর। চেষ্টা চলছে অবিরত। এ চেষ্টার শেষ কবে জানা নেই!
তবুও চেষ্টা করতে হবে- ফেরদৌসীর অসীম আত্মবিশ্বাস।একদিন এ প্রতিকূলতা ডিঙাবেন।
অটিজম, নিউরো ডিজঅ্যাবেলিটি, ডাউন সিনড্রম, কমিউনিকেশন ডিজ অর্ডার কিংবা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ধারণা করা হয়, এ রকম শিশুর সংখ্যা দেড় লাখের কিছু কম বেশি হতে পারে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ২০০৯ সালে পরিচালিত জরিপ অনুসারে, শুধু মাত্র ঢাকা বিভাগেই প্রতি হাজারে আটজন শিশু অটিজম আক্রান্ত।
অটিজম আক্রান্ত শিশুরা একা থাকতে পছন্দ করে, এক কথা বার বার বলে, কথা বলার চেয়ে ইশারায় কিংবা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে থাকে। কিছু বাচ্চার শারিরীক ও মানসিক সমস্যাও থাকে।
তবে অটিজম শনাক্ত করার জন্য দেশজুড়ে সরকারি মেডিকেল হসপিটালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র থাকলেও এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। জানলেও ঠিক মত সেবা পাওয়া যায় না। আছে নানা রকমের ভুল ধারণা। স্কুলগুলোতে প্রতি ১০ টি স্বাভাবিক বাচ্চার বিপরীতে ১ জন করে অটিস্টিক শিশুকে ভর্তি করার সরকারি নিয়ম থাকলেও সেটি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
অভিভাবকরা এ বিষয়ে সচেতনত হলে, সরকারের সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের দ্রুততার সাথে মূল স্রোতে আনা সম্ভব বলে মনে করেন অটিজম আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষক রোমেলা। তিনি রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান।
তার মতে, অটিজম নিয়ে দেশে এখনো সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শিশু মনস্তত্ব বুঝে, সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলানো এবং পরিবারের ভেতর থেকে সহায়তার হাত প্রসারিত হয়নি; যেটি হতে আরো সময় লাগবে। তবে যা আছে তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। বসে থাকা মানে বিপদ ডেকে আনা।
বিশ্বজুড়েই এখনো অটিজম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার প্রধান বিষয় মনে করা হয় অকুপেশনাল থেরাপি এবং খাদ্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ--- যেমন চিনি, ময়দা, দুধ ও দুধ দিয়ে জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা।কিছু খাবার আছে যে গুলো অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য ভালো নয়। তার ওপর অটিজম শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় মাপকাঠি সম্পর্কে চিকিৎসকদের মধ্যে জ্ঞানের অভাবও রয়েছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. শরিফা শাহজাদী।
তার মতে, দূষণমুক্ত পরিবেশ, বিষ ও ফরমালিনমুক্ত খাদ্য আর নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শিশুদের অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মূল স্রোতের দিকে নিয়ে আসা সম্ভব।
আলাপে তিনি বলছিলেন, যত ছোট অবস্থায় অটিজম শনাক্ত করা সম্ভব হবে; তত দ্রুতই এর ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার। সে গুলো বাচ্চার অবস্থার উপর নির্ভর করে।
বাচ্চাকে সময় দেয়া, তার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা, গল্প করা এবং পরে তাকে দিয়ে সে গল্পটা বলিয়ে নেবার চেষ্টা করা, সাধারণ স্কুলে তাকে ভর্তি করে শিক্ষা-পরিচর্যার মাধ্যমে তার মানসিক বিকাশ সম্ভব বলে ডা. শরিফার মত।
অকুপেশনাল থেরাপিস্ট উম্মে সায়কা নীলার সাথেও কথা বলেছিলাম। তিনি বলেন, পেডিয়াট্রিক, নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিওথেরাপিস্টের সহযোগিতায় প্রতিটি অটিস্টিক বাচ্চার জন্য আলাদা আলাদাভাবে ডিজাইন করে সমন্বিত চিকিৎসা দিলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
অনেক অটিস্টিক বাচ্চার কিছু মানসিক সমস্যা যেমন অতি চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, মনোযোগের সমস্যা, ঘন ঘন মনের অবস্থা পরিবর্তন হওয়া, বিষন্নতা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি থাকে। এ সব ক্ষেত্রে অনেক সময় মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
শিশু মনস্তাত্ত্বিক নার্সিস রহমানের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে- তিনি বলেন, একটা বাচ্চাকে প্রতিদিনের একটা রুটিন করে তা অনুসরণ করা দরকার। তার ইতিবাচক কাজের প্রশংসা, এ জন্য তাকে পুরস্কৃত করা এবং সব সময় তাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করার মধ্য দিয়ে তার মানসিক বিকাশ সম্ভব ।
তবে অনেকে এটি করতে চান না। ব্যস্ততাও এ ক্ষেত্রে একটা কারণ বলেন মনে করেন নার্সিস।
তবে মূল স্রোতে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন থাকলেও অনেক সময় বিদ্যালয়, সমাজ, পরিবারের মানুষের নেতিবাচক মনোভবের কারণে অভিভাবকদের চেষ্টাও সফল হয় না।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি--- স্কুলগুলোতে প্রতি ১০ জন স্বাভাবিক বাচ্চার সাথে ১ জন করে অটিস্টিক বাচ্চা ভর্তি নেবার কথা। কিন্তু সেটি দু'একটি স্কুল বাদে কেউ সেটি মেনে চলে না।
গত বছরের নভেম্বরে আমার নিজের কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত বাচ্চাকে ভর্তির জন্য নিয়েছিলেন অরণি উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলটি তার ভর্তি নিতে অস্বীকারই করেনি; উল্টো এ ধরণের বাচ্চা কী কারণে জন্মায় তা নিয়েও প্রশ্ন করেছে।
এমন যেখানে অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি সেখানে মূল স্রোতে অটিস্টিক বাচ্চাদের ফেরানোর বেশ চ্যালেঞ্জিং; তবে অসম্ভব নয়। সে জন্য কাজ করতে হবে।
দেশে অটিজম শনাক্ত করার জন্য শিশু বিকাশ কেন্দ্রছাড়াও বেসরকারি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান সিআরপি। সেখানে থেরাপির ব্যবস্থাও রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন । সেনাবাহিনী চালাচ্ছে প্রয়াস নামে একটি স্কুল। //
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৯
মোরতাজা বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮
অন্ধবিন্দু বলেছেন: তবে যা আছে তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। বসে থাকা মানে বিপদ ডেকে আনা। যথার্থ বলেছেন তিনি। লিখাটির মাধ্যমে আমাদের সচেতন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, মোরতাজা।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
মোরতাজা বলেছেন: পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। আশপাশে এ ধরণের কোনো আলামত থাকা শিশু দেখলে তার পরিবারকে সঠিক পরিচর্যার তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। ধন্যবাদ।
৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০১
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: তবে মূল স্রোতে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন থাকলেও অনেক সময় বিদ্যালয়, সমাজ, পরিবারের মানুষের নেতিবাচক মনোভবের কারণে অভিভাবকদের চেষ্টাও সফল হয় না।
অটিজম আক্রান্ত বাচ্চাদের প্রতি আমাদের যত্নবান হতে হবে।
ভালো একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯
মোরতাজা বলেছেন: আসলে বিষয়টি নিয়ে দিবস কেন্দ্রিক আলোচতি হয়। অথচ এটি আমাদের সব সময়কার সমস্যা-- দিনে দিনে বাড়ছে। এখনই এ দিকে নজর দেয়াটা জরুরী বলেই মনে করছি। তাই লিখলাম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৮
উল্টা দূরবীন বলেছেন: যেসব বাচ্চারা অটিজমে আক্রান্ত, তারা খুব অবহেলিত। এটা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আপনার লেখার মূলভাবটা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে এই শিশুদের প্রতি হয়তো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হতো। সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ এবং সেই সাথে আমার ব্লগ ঘুরে আসার আমন্ত্রণ।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৭
মোরতাজা বলেছেন: দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে আসলেই অনেক কিছু বদলে যাবে। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭
ফা হিম বলেছেন: এত ভালো একটা লেখায় কোন মন্তব্য নেই। অদ্ভূত!