নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেগেটিভিটিতে বিশ্বাস করি না; তাই এমন নাম বেছে নিলাম, যা বাস্তব নয়!
আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের এলাকায় এক ধরণের বিক্রেতারা আসতেন। চারকোন একটা পাতলা বক্স, উপরে থাকতো কাঁচের পার্টিশন, যার ভিতর থেকে ভিতরের সব দেখা যেতো। থাকতো মেয়েদের সাজ-সজ্জার জিনিষপত্র।
এনারা যখন আসতেন, উচ্চস্বরে "লেইস ফিতা" বলে চিৎকার করতেন। বাংলা ব্যান্ড শিল্পী জেমসের একটা গান ছিলো এই নামে। ব্লগে একজন আছেন লেইস নামে।
এমন বিক্রেতাদের মত আরও নানান ধরণের বিক্রেতা আসতো। হাড়িপাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থলীর বিভিন্ন জিনিষ বিক্রি হতো, ভ্যানে করে।
আমাদের পাশের বাসায় লিপি নামে একজন থাকতেন। আম্মার পরিচয়ের সুত্র ধরে আমরা তাকে লিপি আপা বলে ডাকতাম। উনার বলা ভূতের গল্প গুলি আমাদের মজা লাগতো। উনি যেসব গল্প করতেন, ভূত বলে যদি সত্যিই কিছু থাকতো, তাহলে বোধ হয় তারা আবার মরে যেতো, কিন্তু ভূত আর হতো না। সেগুলি পরে একদিন বলা যাবে। আজকে তার কেনা কাটার গল্প বলি।
আমাদের জানা ছিলো যে লিপি আপা ভালো দরদাম করতে পারেন। কিন্তু একদিন আমরা আমাদের নিজের চোখে সেই দামাদামী দেখার সুযোগ পেলাম। এই ঘটনা মনে পড়লে এখনও আমার হাসি যেমন পায়, কষ্টও পায় বিক্রেতাদের জন্য।
ঐদিন এক বিক্রেতা এসেছেন, তার সাথে মূলত থালা-বাটি, জগ-গ্লাস, কাপ-পিরিচ ইত্যাদি ছিলো। লিপি আপার চোখ আটকালো একটা কাঁচের চায়ের কাপের দিকে। বিক্রেতার দাবি যে এটা সহজে ভাঙ্গবে না। লিপি আপা কাপ নিয়ে এখানে ঘাই দেন, ওখান গুতা দেন, শেষে একটা ইটের কোনায় বাড়ি দিয়ে বসলেন! বহুত কসরত করেও ভাঙ্গতে পারলেন না। এবং দাবী করলেন যে উনি যেহেতু ফেইল মারছেন, তাই ঐটা উনি কিনবেন না!
এরপর তিনি তাকালেন কাঁটা চামুচ এর দিকে। দাম মোটামুটি পছন্দ হলো। গোটা খানে (মনে নাই কতগুলি) এর দাম জিজ্ঞাসা করলেন। বিক্রেতা জানালো ৩০ টাকা। উনি বললেন উনি ২০টাকার এক পয়সাও বেশী দিবেন না। বিক্রেতার সাথে সে কি জোরাজুরি। বিক্রেতা আর কোন ক্রেতার সাথেও কথা বলতে পারেন না!
প্রায় ১০-১৫ মিনিটের ক্যাচাকেচির পর বিক্রিতা একপ্রকার বিরক্ত হয়েই বললেন, ঠিকাছে, আপনি ২০টাকাই দেন। লিপি আপা মাথা নেড়ে বললেন, ২০টাকা কেন দিবো? আমিতো ২০টাকা বলি নাই। বলেছি ২০টাকার বেশী দিবো না। আমিতো মূলত এটা ১৫ টাকায় কেনার চিন্তা করতেছিলাম!
বিক্রেতার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝা গেলো যে সে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারতেছেন না! তবুও বিক্রেতা শেষ চেষ্টা স্বরূপ বলে দেখলেন ১৫ টাকাই দেন।
লিপি আপা মাথা নেড়ে বললেন, আমিতো ১৫ টাকায় কেনার চিন্তা করতেছিলাম, কিন্তু ভাবেছিলাম দাম বললবো ১০টাকা! আর দামাদামী করে ১০-১৫ টাকার মাঝে কোন কিছু দিবো।
বিক্রেতা এবার ধপ করে মাটিতে বসে পড়লেন। তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে যেন সাহায্য খুঁজলেন। কিন্তু লাভ হলো না। আশপাশ থেকে যারা ঘিরে আছে, সবাই লিপি আপার দামাদামীতে মজা পেয়ে গেছে।
বিক্রেতা এবার কাই-কুই করে অনেক অনুরোধ করলো ১৫টাকা দিতে। তাহলে তার অন্তত কেনা দামটা ওঠে। কিন্তু লিপি আপা এবার শক্ত হলেন ১০টাকায়।
বিক্রেতা বেশ খাবি খেয়ে গেলেন। আর কিছু সময় চেষ্টা করে বিক্রেতা তার হাত থেকে বাঁচতেই তাকে ১০টাকাতে দিতে রাজি হলেন। কিন্তু.... কিন্তু লিপি আপা নিবেন না। বলতেছেন আপনাকে কোন বিশ্বাস নাই। ৩০টাকা দাম বলে ১০টাকায় নামছেন। আমার তো মনে হয় ওটা আপনি ৫টাকাতেই দিতেন!
বিক্রেতা এবার কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝাপ দিয়ে লিপি আপার পায়ের সামনে পড়ে বললো, আপা মাফ করেন আমারে আপনার যা মনে চায় তাই দেন। কিন্তু আমারে অন্য কাষ্টমার গুলার সাথে কথা বলতে দেন।
লিপি আপা এবার বললেন, ঠিকাছে, আমি ১০টাকাই দিবো, কিন্তু আমাকে ঐ কাপটা দিতে হবে। আমি পরে ওটাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করবো। বিক্রেতা কিছু না বলে চামুচ আর কাপ এগিয়ে দিলেন। লিপি আপা তার ব্লাউজের ভিতর থেকে আধা ভেজা একটা নোট বের করলেন, নোটটার এমাথা টু ওমাথা ছেড়া, ক্লিয়ার টেপ দিয়ে জোড়া দেওয়া। কিন্তু বিক্রেতা কিচ্ছু বললেন না।
লিপি আপা চলেই যাচ্ছিলেন, কিন্তু কি মনে করে আবার পিছু ফিরলেন। জিজ্ঞাসা করলেন যে বিক্রেতার কাছে লবনের বাটি হবে কি না। বিক্রেতা বললেন হবে, বলে উঠে দাড়ালেন, এবং যত দ্রুত সম্ভব তার ভ্যান গাড়ি নিয়ে ভেগে গেলেন! লিপি আপা অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকলেন। বললেন, আরে আমি কিনলেই না তোমার ব্যবসা হবে!
এরপর বহু বছর কেটে গেছে। লিপি আপা এখন কোথায় থাকেন জানি না। কিন্তু কোন কিছু নিয়ে কেউ একটু দামাদামি করতে থাকলে তাকে আমি লিপি আপার গল্প বলি।
ছবিঃ লেইস ফিতা by Shariful Arif
০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:০০
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: ভুতের গল্পগুলো খুব মজার ছিলো - সব ছ্যাবলামীতে ভরা!
যোগাযোগ রাখার দরকার ছিলো, তাহলে আরও মজার কাহিনী জানা যেতো। - আমার বিদেশে আসা আর আম্মা মারা যাবার পর সব এলোমেলো হয়ে গেছে!
২| ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৮
মিরোরডডল বলেছেন:
আমার এক মামী যিনি সম্প্রতি মারা গেছেন, ঢাকার বাইরে থাকতেন।
একবার ঢাকায় বেড়াতে এলেন, কেনাকাটা করতে যাবে।
আর মানুষ পেলো না, আমাকে সাথে নিয়ে গেছে।
আমি তখন স্কুল গার্ল।
লিপি আপাতো তাও ভালো ৩০ টাকার জিনিস ২০ টাকা বলেছে।
মামী ৩০০০ টাকারটা ৩০০ টাকা বলে শুরু করে এই অবস্থা।
আমিতো আতংকিত, না যেনো দোকানদার বের করে দেয়
শপ মাত্র খুলেছে সকালে, তাই দোকানদারও বারগেইন করে যাচ্ছে।
এভাবে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দুই ঘণ্টা পর খালি হাতে ফিরে এলেন, ওনার নাকি কিছুই পছন্দ হয়নি।
আর আমি ততক্ষণে ক্লান্ত বিধ্বস্ত, রেগে গেলেও কিছু বলতে পারিনি আফটার অল গেস্ট, তার ওপর মুরুব্বি
০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:০১
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: হা হা হা হা
৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৯
বাকপ্রবাস বলেছেন: হুম লিপি আপা কেমন দরদাম করে জামাই নিল জানতে পারলে ভাল লাগত
০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:০১
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: লিপি আপা তো ১০ দিয়েছে, ওনার জামাই হলে দামাদামীর পরও নিতো না
৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫২
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: অনেক মজা পেলাম ভাই। কষ্ট লাগছে ঐ বিক্রেতার জন্য।
০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৪৯
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমারও মাঝে মধ্যে কষ্ট লাগে তার জন্য কষ্ট লাগে।
৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:৫১
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমাদের এক কাকি আছেন, উনার নামও লিপি এবং উনিও বেশ দরদাম করে জিনিস কিনতে পারেন।
০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:০১
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: দুনিয়াটা অদ্ভুত! অনেক কিছুই মিলে!
৬| ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯
ঢাবিয়ান বলেছেন: বিদেশে মনে এই সব লিপি আপাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে সব জিনিষের দাম লিখে রাখা হয়। এক দর কোণ প্রকার দর কষাকষির সুযোগ নাই ।
০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:০২
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: দেশ থেকে কেউ নতুন সৌদী আরবে আসলে তাদের এটাতে সব থেকে বেশী বিরক্ত লাগে!
৭| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:০৩
জুন বলেছেন: এই ঘটনা আমার নিজের কাছে অত্যন্ত অরুচিকর মনে হলো। একটা গরীব বিক্রেতার সাথে এই আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। দর কষাকষির একটা লিমিট থাকে। বড় বড় শপিং মলে তো তাদের ভিন্ন রূপ দেখি।
০৩ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৯
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আসলেই বিষয়টা অরুচিকর। এই আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়।
৮| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৩
বিড়ি বলেছেন: বেচারা ফেরিওয়ালার জন্যে মায়া লাগছে।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:০৯
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমারও!
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:০৪
মিরোরডডল বলেছেন:
উনি যেসব গল্প করতেন, ভূত বলে যদি সত্যিই কিছু থাকতো, তাহলে বোধ হয় তারা আবার মরে যেতো, কিন্তু ভূত আর হতো না। সেগুলি পরে একদিন বলা যাবে।
লিপি আপা যে মজার মানুষ, নিশ্চয়ই ভুতের গল্পগুলো খুব মজার ছিলো।
পরে কখন শেয়ার করবে?
বিক্রেতা এবার কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝাপ দিয়ে লিপি আপার পায়ের সামনে পড়ে বললো, আপা মাফ করেন আমারে আপনার যা মনে চায় তাই দেন। কিন্তু আমারে অন্য কাষ্টমার গুলার সাথে কথা বলতে দেন।
হা হা হা ..... আহা বেচারা!
লিপি আপা এখন কোথায় থাকেন জানি না।
যোগাযোগ রাখার দরকার ছিলো, তাহলে আরও মজার কাহিনী জানা যেতো।