![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাচু পিকচু কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগের সময়কার একটি ইনকা শহর, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ২৪০০ মিটার ৭,৮৭৫ ফিট। এটি পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার (Valle de Urubamba) ওপরে একটি পর্বতচূড়ায় অবস্থিত। মাচু পিচুই সম্ভবতঃ ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শণ যাকে প্রায়শ ইনকাদের হারানো শহর বলা হয়। এটি ১৪৫০ সালের দিকে নির্মিত হয় কিন্তু এর এক শ বছর পর ইনকা সভ্যতা যখন স্পেন দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন এটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। কয়েক শ বছর অজ্ঞাত থাকার পর ১৯১১ সালে হাইরাম বিঙাম নামে এক মার্কিন ঐতিহাসিক এটিকে আবার সমগ্র বিশ্বের নজরে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে মাচু পিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণী দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠে। এটিকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এটি বর্তমান বিশ্বের সাতটি নতুন বিস্ময়েরও একটি। মাচু পিচু ঐতিহ্যবাহী ইনকা বাস্তুকলার এক অনুপম নিদর্শণ। পালিশ করা পাথর নির্মিত এই শহরের প্রধান স্থাপনাগুলো হচ্ছে ইন্তিউয়াতানা, সূর্য মন্দির এবং তিন জানালা ঘর ইত্যাদি। পুরাকীর্তিবিদদের কাছে মাচু পিচুর পবিত্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত অংশে এই স্থাপনাগুলো অবস্থিত। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে হাইরাম বিঙাম মাচু পিচু থেকে যে সব পুরাকীর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন সেসব ফেরত দেবার জন্য ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পেরু সরকার এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত পর্যটক সমাগমের ফলে এই প্রাচীন শহরের অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন উল্লেখ্য ২০০৩ সালে এখানে আগত পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৪০০,০০০ এরও বেশি ছাড়িয়ে যায়।
ওপরের ছবিটি কারো কারো মতে ধারণা করা হয় ইন্তিউয়াতানা ইনকাদের নির্মিত একটি মহাকাশ ঘড়ি
ইনকা সভ্যতার স্বর্ণযুগে ১৪৫০ সালের দিকে মাচু পিচু নির্মিত হয়। কিন্তু তার ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। সম্ভবত স্পেনীয় অভিযাত্রীদের আগমনের আগেই এই শহরের অধিকাংশ অধিবাসী গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল। মাচু পিচুর সন্ধানকারী হাইরাম বিঙাম এবং আরও অনেকেরই মতে এই সুরক্ষিত শহরটি ইনকাদের ঐতিহ্যগত জন্মস্থান অথবা সূর্য কুমারীদের পবিত্র কেন্দ্র ছিল।অন্য একটি মতবাদ অনুসারে মাচু পিচু একটি ইনকা লিয়াক্তা বা এমন একটি উপনিবেশ যা বিজিত অঞ্চল সমূহের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রনে ব্যবহৃত হত। আবার কেউ কেউ মনে করেন এটি একটি জেলখানা হিসাবে ভয়ংকর অপরাধীদের রাখার জন্য নির্মিত হয়েছিল। অন্যদিকে জন রো John Rowe এবং রিচার্ড বার্গার Richard Burger সহ আরও অনেকের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মাচু পিচু কোনও প্রতিরক্ষামূলক আশ্রয়স্থল নয় বরং এটি ইনকা সম্রাট পাচাকুতিকের Pachakutiq একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র । বেশির ভাগ পুরাতত্ত্ববিদই এই মতবাদকে সমর্থন করেছে। তাছাড়াও ইয়োহান রাইনহার্ড Johan Reinhard য়োহান্ রায়্ন্হার্ট্ এর উপস্থাপিত তথ্য এটা প্রমান করেন যে এই স্থানটিকে শহর নির্মানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল এর পবিত্র ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় অনেকেই ধারণা করেন এর পাহাড় চূড়াগুলোর অবস্থান প্রধান প্রধান জ্যোতির্মণ্ডলীয় ঘটনাবলীর সাথে সামঞ্জস্যতাপূর্ণ। এই দুর্গনগরীটি ইনকাদের রাজধানী কোস্কো Qusqu থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার বা ৫০ মাইল দূরে অবস্থিত। কিন্তু এর অবস্থান অজ্ঞাত থাকার কারণে অন্যান্য ইনকা নগরীর মত এই শহরটি কখনও স্পেনীয়দের দ্বারা আক্রান্ত এবং লুট হয় নি। কয়েক শ বছর জনমানবহীন থাকার ফলে শহরটি এক সময় ঘন জঙ্গলে ঢেকে যায় এবং তখন খুব কম লোকই এর অস্তিত্ব সম্বেন্ধে জানত। পরবর্তীকালে ১৯১১ সালের ২৪শে জুলাই মার্কিন ঐতিহাসিক এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রভাষক হাইরাম বিঙাম শহরটিকে বিশ্বের নজরে নিয়ে আসেন। আগেই মাচু পিচুতে গিয়েছিলেন এমন কিছু স্থানীয় মানুষ তাকে সেখানে নিয়ে যান। সেখানে বিঙাম শহরটির পুরাতাত্ত্বিক নিরীক্ষা এবং জরিপ করেন। তিনিই মাচু পিচুর নাম দেন ইনকাদের হারানো শহর এবং তার প্রথম বইটিও এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তিনি কখনওই স্থানীয় সেসব লোকদের কোনও উল্লেখ করেন নি যারা তাকে মাচু পিচুতে নিয়ে গিয়েছিলেন, এমনকি মাচু পিচুর উদ্ঘাটনে তাদের কোনও কৃতিত্বও স্বীকার করেন নি। তিনি তার গাইড হিসাবে শুধু স্থানীয় উপকথার উল্লেখ করেছেন।
বিঙাম অনেকটা ঘটনা চক্রেই মাচু পিচুর উদ্ঘাটন করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ইনকা শহর বিতকোসের সন্ধান করছিলেন। এটি পেরুতে স্পেনীয়দের আক্রমণের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ইনকা প্রতিরোধের স্থান এবং ইনকাদের শেষ আশ্রয়স্থল ছিল। বেশ কয়েক বছরের ভ্রমণ এবং অনুসন্ধানের পর ১৯১১ সালে কেচুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিঙামকে মাচু পিচু শহরে নিয়ে যায়। এই সম্প্রদায় মাচু পিচুতে ইনকাদের নির্মিত স্থাপনাগুলোয় থাকত। কিছু পরিবার ১৯১১ সালে শহরটি আবিষ্কারের সময় পর্যন্ত সেখানে বসবাস করত যদিও নগরীর আদি বাসিন্দাদের অধিকাংশই শহর তৈরির এক শ বছরের ভেতর মারা যায়। সে সময় মাচু পিচুতে কিছু মমি পাওয়া যায়। বিঙাম সেখানে বেশ কয়েকবার ভ্রমণ করেন এবং ১৯১৫ সাল পর্যন্ত সেখানে খনন কাজ পরিচালনা করেন। তিনি তার জীবদ্দশায় মাচু পিচুর আবিষ্কার নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন।সিমোন ওয়েসবার Simone Waisbard নামের একজন কোস্কো শহর গবেষিকা দাবী করেছেন যে এনরিকে পালমা Enrique Palma, গাবিনো সাঞ্চেস Gabino Sánchez, এবং আগুস্তিন লিসারাগা Agustín Lizárraga - এই ব্যক্তিত্রয় ১৯০১ সালে ১৪ই জুলাই মাচু পিচুর একটি পাথরে তাদের নাম খোদাই করেন। তার অর্থ এই তিন ব্যক্তি হাইরাম বিঙামের অনেক আগেই শহরটির খুজে পান। একই ভাবে কেউ কেউ দাবী করেন যে ফ্র্যাংকলিন Franklin নামের একজন প্রকৌশলী দূরবর্তী এক পাহাড় থেকে মাচু পিচুর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। তিনি ওই এলাকায় বসবাসরত টমাস পেন Thomas Paine নামক একজন ইংরেজ প্লিমথ ব্রেদ্রেন Plymouth Brethen খ্রিস্টান মিশনারিকে এই শহরটির কথা বলেন। পেন পরিবারের দাবী তিনি ও স্টুয়ার্ট ই ম্যাকনের্ন Stuart E McNairn, নামক তার একজন সঙ্গী মিশনারি ১৯০৬ সালেই মাচু পিচুতে যান।
১৯১৩ সালে জাতীয় ভৌগোলিক সংস্থা তথা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি National Geographic Society তাদের এপ্রিল মাসের পুরো সংখ্যাটি মাচু পিচুর ওপর প্রকাশ করলে শহরটি ব্যাপক প্রচারণা পায়। মাচু পিচুর আশপাশের ৩২৫.৯২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শহরের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও এই এলাকায় অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ।মাচু পিচুকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণায় মাচু পিচুকে বর্ণনা করা হয়েছে ধ্রুপদী বাস্তুকলার নিদর্শন ও ইনকা সভ্যতার অনন্য স্বাক্ষর হিসেবে। অতিরিক্ত পর্যটক সমাগম নিকটবর্তী আগুয়াস কালিয়েন্তেস Aguas Calientes শহরের অপরিকল্পীত নগরায়ন এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে বিলকানোতা Vilcanota নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে World Monuments Fund মাচু পিচুকে তাদের বিশ্বের সবচাইতে বিপন্ন ১০০টি স্থানের ২০০৮ সালের তালিকায় নিয়ে এসেছে।বিঙাম কোন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত প্রত্নতত্তবিদ ছিলেন না। ১৯০৬ সালে পেরুতে তিনি চারটি অভিযান পরিচালনা করেন। সে সময়ে তিনি সিমন বলিভারের পথ অনুসরন করে ভেনেজুয়েলা এবং কলম্বিয়াতে ভ্রমন করেন। সেই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন যা পরবর্তীতে তার পুরো জীবন বদলে দিয়েছিল। ১৯০৮ সালে চিলির সান্তিয়াগোতে অনুষ্ঠিত প্রথম প্যান আমেরিকান সাইন্টিফিক কংগ্রেসে একজন ডেলিগেট হিসেবে যোগদানের জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়। কনফারেন্স সমাপ্ত করে তিনি পেরু হয়ে ফেরার পথ ধরেন। পেরুতে অবস্থানকালীন একজন স্থানীয় চিফ অফিসিয়াল মিঃ নুনেজের সাথে তার পরিচয় হয়। নুনেজের অনুরোধে তিনি প্রি-কলাম্বিয়ান শহর, চক্কোকুইরাও Choqquequirao অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেন। সময়টা তখন ছিল ফেব্রুয়ারি, বর্ষাকাল। শেষপর্যন্ত তিনি চক্কোকুইরাও খুঁজে পান, কিন্তু সেটা ছিল অভিযানের মাত্র শুরু। ১৯১১ সালে তার এই ভ্রমনের উপর তিনি একটি বই প্রকাশ করেন।
Across South America; an account of a journey from Buenos Aires to Lima by way of Potosí, with notes on Brazil, Argentina, Bolivia, Chile, and Peru.
পেরুতে অনাবিষ্কৃত ইনকা শহরগুলোর আবিস্কারের প্রত্যাশায় বিঙাম শিহরিত ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১১ সালে তিনি ইয়েল পেরুভিয়ান এক্সপিডিশান এর আয়োজন করেন। ইনকাদের শেষ হারানো শহর ভিটকস এর অনুসন্ধান এবং মাউন্ট করপুনার শীর্ষে পৌছানোই ছিল এই অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য।বিঙাম তার প্রথম অভিযানে ইনকাদের হারানো শহরগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থান পরিবর্তনের সময় তিনি স্থানীয়দের কাছে ওইসব শহরগুলোর খোঁজ নিতে থাকেন। একদিন তিনি কিছু গুরুত্তপূর্ণ তথ্য পেয়ে যান। সেই তথ্য অনুযায়ী মাচুপিচু এবং হুয়ানা পিচুর আশপাশে প্রচুর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। মাত্রই তখন হুয়ানা পিচুর কাছাকাছি একটি নতুন রাস্তা করা হয়েছিল তাই তারা সেই রাস্তা অনুসরন করা শুরু করলো। মান্দর পাম্পা নামক এক জায়গায় পৌছে তারা এক রাত ক্যাম্প করলো। সেই রাতে তাদের সাথে পরিচয় হল মেলচর আরটেগার সাথে যিনি ছিলেন ওই এলাকার স্থানীয় মালিক। তার তথ্য অনুযায়ী হুয়ানা পিচু পর্বতের উপরে নদীর কাছাকাছি এক জায়গায় প্রচুর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। বিঙামের অনুরোধে দৈনিক ৫০ সেন্ট পারিশ্রমিকে আরটেগা তাদেরকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে রাজি হলো। পরদিন সকালে ২৪ জুলাই-১৯১১ সাল তারা যাত্রা শুরু করলো। আরটেগার দেখানো পথে অবশেষে তারা মাচুপিচু পর্বতের উপরের বিশাল ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌছাল, যা পরবর্তীতে বিঙাম নামকরন করেন মাচুপিচু ।যখন তিনি এই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন তখন এই শহর সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। আসলে বাহিরের পৃথিবীর কেউই কিছু জানত না কারন তখনকার স্প্যানিশ ইতিহাস এবং জার্নালে এই শহরের কোনও উল্লেখ নেই। তাই ঠিক কোন শহর এটা সেটা নিয়ে বিঙাম কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। তার দলের অন্যান্যদের মতে সম্ভবত এটা ছিল হারানো শহর ভিটকস অথবা ভিকাবাম্বা দ্যা ওল্ড। কিন্তু বিঙাম ততটা নিশ্চিত ছিলেন না। তাই তিনি ভিটকস এবং ভিকাবাম্বার অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকেন।
পরবর্তী মাসে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিঙাম লোয়ার উরুবাম্বা এবং ভিকাবাম্বা নদীর দিকে যাত্রা শুরু করেন। একসময় তারা একটি চাষাবাদের বাগানের কাছে পৌছল। স্থানীয় ইন্ডিয়ান শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে ইনকা ধ্বংসাবশেষের উপরে যেকোন তথ্যের জন্য বিঙাম আকর্ষণীয় পুরষ্কার ঘোষণা করলেন। অনেকে অনেক তথ্য দিল এবং বিঙাম সবগুলো তথ্য যাচাইয়ের জন্য স্থানগুলোতে ভ্রমন করলো, কিন্তু তেমন গুরুত্তপূর্ণ কোন কিছুর সন্ধান পাওয়া গেলনা। সবশেষে তার সাথে পরিচয় হয় ইভারিস্তো মগ্রোভেজোর সাথে, যিনি ছিল স্থানীয় একজন গ্রামপ্রধান। সে বিঙামকে তার গ্রামে আমন্ত্রন জানায়। সেখানে বিঙাম গ্রামের আদিবাসীদেরকে নদীর ধারে একটি বড় সাদা পাথরের কথা জিজ্ঞেস করেন। যেই পাথরের কথা বিঙাম পড়েছিলেন পুরনো পুঁথি এবং জার্নালে। হঠাৎ একজন আদিবাসী বলল অনেক বছর আগে নদীর কাছাকাছি পর্বতে সে এরকম একটি পাথর দেখেছিল। বিঙাম তার দল নিয়ে সেই পাথরের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে পরলেন। একটি ছোট জলধারার স্রোত অনুসরণ করে বিঙাম পৌছে গেলেন সেই বড় সাদা পাথরের কাছে এবং খুজে পেলেন হারানো শহর ভিটকস।
মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যাবধানে বিঙাম মাচুপিচু এবং ভিটকস খুঁজে পেয়েছিলেন। তারপরও তিনি সন্তুষ্ট ছিলেননা। ভিকাবাম্বা খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু এইবার ব্যাপারটা ছিল অনেক কঠিন। ঘন জঙ্গল এবং কঠিন পার্বত্য উপত্যাকার মধ্যে দিয়ে তিনি তার অভিযান চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলনা। একজন ইন্ডিয়ান তাকে জানায় যে একটি জায়গা আছে যেখানে কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে কিন্তু সেই জায়গায় যাওয়াটা অনেক বেশি কঠিন। তাকে ভয়ংকর ইন্ডিয়ানদের এলাকা দিয়ে যেতে হবে এবং এরা বাহিরের আগন্তুকদের একদমই পছন্দ করেনা। তারা সর্বদা বিষাক্ত তীর-ধনুক নিক্ষেপ করে। কিন্তু বিঙামের কাছে এই ঝুঁকিটা নেওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তা ছিলনা। তারা সেই ইন্ডিয়ানদের উপত্যাকার দিকে এগিয়ে গেল। অবিশ্বাস্যভাবে ইন্ডিয়ানরা তাদেরকে আক্রমণ তো করলোই না, বরং ইশারা ইঙ্গিত এবং ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাষায় তাদেরকে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করলো। সব বাধা অতিক্রম করে যখন তারা পর্বতের দূর কোনায় পৌছায়, তখন এস্পিরতো পাম্বা নামক এক জায়গায় অল্প কিছু ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান বিঙাম। তিনি ধরে নেন ভিকাবাম্বা দ্যা ওল্ড খুঁজে পেতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে আর বেশি সময় ব্যায় না করে তিনি ফিরে চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাচুপিচুই হচ্ছে ভিকাবাম্বা দ্যা ওল্ড। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বিঙামের মৃত্যুর পর এটা জানা যায় যে এস্পিরতো পাম্বাই হচ্ছে আসল ভিকাবাম্বা দ্যা ওল্ড, যা তিনি খুঁজে গিয়েছেন সারা জীবন। খুব বেশি ধ্বংসাবশেষ পরে আর সেখানে পাওয়া যায়নি কারন তাঁদের অভিযানের পরে স্প্যানিয়ার্ডরা বেশীরভাগ ভগ্নস্তূপই ধ্বংস করে দিয়েছে।
প্রথম অভিযানের সার্থকতার পরে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফির যৌথ অর্থায়নে ১৯১২ সালে বিঙাম পুনরায় পেরুতে অভিযান চালান। মূলত প্রথম অভিযানের ধ্বংসাবশেষ বিশ্লেষণ করাই ছিল এই অভিযানের উদ্দেশ্য। কিন্তু নতুন আর কোন ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন বিঙাম পরবর্তীকালে খুঁজে পাননি। ১৯৫৬ সালের ৬ জুন, ওয়াশিংটনে তাঁর নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় অসমসাহসী এই অভিযাত্রীর।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৯
নিউ সিস্টেম বলেছেন: ধন্যববাদ আশা করি খুবশিগ্রই পরের পর্ব পড়তে পারবেন ।
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৩৭
ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: অনেক নাজানা তথ্য জানা হল ভাই । পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৯
নিউ সিস্টেম বলেছেন: আপনাকেও ভাই ।
৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:১০
খোলা মনের কথা বলেছেন: চালিয়ে যান। ভাল লাগলো। ধন্যবাদ শুভেচ্ছা রইল
১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩১
নিউ সিস্টেম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পাশে পেয়ে ভালো লাগল ।
৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০০
মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার পোস্ট অনেক কিছু জানতে পারলাম ইনকো সম্পর্কে ।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩২
নিউ সিস্টেম বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৩৭
মুফতি উবায়দুল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ..
অনেক অজানা কিছু জানতে পারলাম...