নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসা: ৪

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৫৪

(৪)
পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙতেই সতুর কানে আসে ছোট ছোট কথার আওয়াজ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাঁহাতে ছোট্ট জানালাটা আস্তে করে খোলে সতু। পাল্লা সরাতেই ও লক্ষ্য করে বারান্দায় হরিদাসীর সাথে কথা বলছে একজন লোক। কথার মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে হা হু করে অস্থিরতার যন্ত্রণা ঢাকছে অমিত। হরিদাসীর অসহায়ত্বের কাছে এ মুহূর্তে লোকটাকে পরিত্রাতা মুরুব্বীর মতো দেখাচ্ছে।

লোকটাকে সতু স্মরণে আনতে চেষ্টা করে।

এ লোকটাই তো রেল স্টেশনের কাছে ভারতীয় অবৈধ পণ্যের ব্যবসা করে। ফড়িয়া পাইকার মিলিয়ে তার ব্যবসায় অনেক লোক; যাদের হাতে পুরো স্টেশন বাজারটা বলতে গেলে জিম্মি।

সতু লোকটার দৃষ্টি বরাবর পায়ের দিকে লক্ষ্য করে। একটু দূরে ঘরের মাঝখানে গতরাতে যে খুঁটিতে গৌরীকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, ও সেখানেই অর্ধচৈতন্য অবস্থায় খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে আছে মাটিতে। গতকাল ওর ভেজা কাপড়গুলো বদলানো হলেও কোন ছায়া-ব্লাউজ ওর শরীরে স্থান পায়নি। বুকের কাপড় বুকে নেই। আঁচলের দিকের খানিকটা কাপড় সাপের মতো কোলের ওপর পড়ে আছে। পিঠমোড়া করে হাত বাঁধা থাকায় ওর চন্দন রঙ স্ফীত বুক আলগা দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে কুমারী। উপর থেকে ফেলে দেয়া একটা মার্বেলখচিত নাভিদেশ। তার নিচে দু’একটি মাছির আনাগোনা। সতু বিষয়টি নিয়ে ভাবে। ওর ভাবনা, মাতৃত্বের গোপন প্রকোষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বারান্দায় চোখ রাখে সতু। দেখে লোকটা কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে গৌরীর শরীরে বারবার চোখ বুলাচ্ছে। তার আগ্রাসী চোখে আলোর ডানা কাঁপে, আর বুকের মধ্যে ইতরামির বিটুমিন যেন গলে গলে পড়ছে।

সতু আড়মোড়া ভেঙে জড়তা তাড়ায়। বিছানার পর উঠে বসে। তারপর ভেতরে হাঁক ছাড়ে- ‘মৌরী- মৌরী?’
‘আসি’ ভেতর থেকে উত্তর আসে।

কিছুক্ষণের মধ্যে দু’বছরের শুভকে কোলে করে মৌরী সতুর কাছে আসে। সতু বারান্দা, গৌরী এবং দরজায় ইঙ্গিত করে।

মৌরী সতুর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে পায়ে পায়ে দরজার দিকে এগোয়। গৌরীকে আড়াল করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে হরিদাসীর সাথে লোকটার কথোপকথন শোনে। এক সময় ঘরের ভেতর এসে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।

সতু এক কাপ চা হাতে বারান্দায় আসে। পেছনে মৌরী। সতু বুঝতে পারে হঠাৎ দরজাটা বন্ধ করার দায় লোকটা ওর উপরই ফেলছে। লোকটার দৃষ্টি ও আচরণ অনেকটা তারই আভাস দিচ্ছে। সতু কিছুই বোঝেনি এমন ভাব মুখে এনে লোকটার দিকে এগোয়।

হরিদাসী ওকে বসতে দিয়ে বলে, ‘শোন সতু, তুমি ওনার সাথে একটু যাও।’
‘কোথায়?’ সতু বসতে বসতে প্রশ্ন করে।
‘চরে একজন ওঝা আছে, খুব ভালো। এসব রোগের চিকিৎসায় অনেকেই উপকার পাইছে।’
‘এসব রোগ মানে কী রোগ?’ মৌরীর সাথে চোখাচোখি হয় সতুর।
বুঝলা না? গৌরীকে তো ভূতে ধরছে। ওঝা আইসা ঝাইড়া দিলে নাকি সব ঠিক অইয়া যায়। যাও বাবা, দেরী কইরো না, যাও।

আমি ভাবছিলাম কি, গৌরীকে একবার পাবনায় নিলে ক্যামন হয়? আমারতো মনে হয় এসব ভূতটুত কিছু না। ওর পাগলামির চিকিৎসা দরকার।

‘আরে বাবা, ওকি নিজে এসব করে? ওকে দিয়া করায়।’ হরিদাসী সুর করে কাঁদতে কাঁদতে বলে- ‘এত কইরা কইছি- ওরে পোয়াতি মানুষ, একটু বাইছা গুইছা চলিশ। কার কতা কেডা শোনে? আমি তো গরীব। মুখ্য-সুখ্য মানুষ। হায়রে ভগবান, আমার কী সুন্দর মাইয়াডা কী অইয়া গ্যাছে, হেহ-হেহ-হে...’ হরিদাসী মাথা চাপড়ায়।

সতু তাকে স্বান্তনা দেয়, ‘আপনি কাঁদবেন না’ । মৌরীকে ঈশারা করে। মৌরী হরিদাসীর পাশে গিয়ে বসে। তবু তার কান্না থামে না। সে সুর করে কাঁদে আর মাটিতে হাত চাপড়ায়, ‘কত কইরা কইচি সন্ধ্যার পর আতুর ঘরে দরজা দিবি, আগুনে ছ্যাক দিয়া ঘরে ঢুকবি, ছাড়া চুলে ঘরে বাইর অবি না, কত কইরা কইছি রক্তের ত্যানাগুলা যেখানে সেখানে ফালাইস না। আমারে সবাই বিষ দেহে...।’

‘ঠিক আছে, আমি এক্ষুনি যাচ্ছি। আপনি শান্ত হউন।’
সতু বারান্দা ছাড়ে।

...চলবে।

উপন্যাসঃ ভেঙে ভেঙে গড়া ভালোবাসা।
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী ।

[আগের তিনটি অংশ পড়তে আগের পোস্টগুলো দেখুন অথবা বাবু ফরিদীর ফেসবুক পেইজে যান।]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.