![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা সময় ছিল যখন মানুষের হৃদরোগ হত না। জীবন যাত্রা জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারন করার পরেই এই রোগ শুরু হয়। তবে কম লোকই এই রোগের শিকার হতেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তিরাই এই রোগে আক্রান্ত হতেন। সেদিনের তুলনায় আজ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আসুন, আমরা জানি, কিভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।
আমাদের হৃদপিন্ডঃ
আমাদের হৃদপিন্ডের বাইরের দিকে (গায়ে) করোনারী আরটারী নামে দু’টো বেশ মোটা ধমনী এবং তাদের অজস্র শাখা-প্রশাখা আছে। ১২/১৩ বছর বয়স থেকেই এই ধমনির ভেতরের দিকে “তেল” জমতে থাকে। ডাক্তারী পরিভাষায় এই তেলের নাম সিরাম কোলেস্ট্রল এবং সিরাম ট্রাইগ্লিসারাইডস। জীবদেহের চর্বি থেকে যে তেল আসে তার নাম কোলেস্ট্রল এবং উদ্ভিদ থেকে যে তেল আসে তার নাম ট্রাইগ্লিসারাইডস।আমাদের দেশে একজন মানুষের সাধারনতঃ দৈনিক ১৮ গ্রামের বেশি তেলের প্রয়োজন হয়না। অথচ প্রতিদিন আমরা এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি তেল গ্রহন করি। ফলে প্রতি দিনই অল্প অল্প করে তেল ধমনী এবং তাদের শাখা-প্রশাখার ভেতরের গায়ে জমা হতে থাকে।সাধারনতঃ এই পথের কোন কোন অংশে বেশি বেশি করে তেল জমে। তবে পথের শতকরা ৭০ ভাগ অবরুদ্ধ হলেও আমরা টের পাইনা। এর বেশি হলেই আমরা বুঝতে পারি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বুকের বাদিকে ব্যাথা শুরু হয়। এই ব্যাথা বা দিকে সরে গিয়ে বা হাতে গিয়েও পৌছাতে পারে। কোন কোন রোগী বুকের মাঝখানেও ব্যাথা অনুভব করেন। কালে-ভদ্রে বুকের ডান দিকেও ব্যাথা হয়ে থাকে। হাটতে শুরু করলে যদি এই ব্যাথা বাড়ে এবং বিশ্রাম নিলে যদি কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে এটি হৃদরোগের ব্যাথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই ব্যাথাকে বলে “এঞ্জাইনা” ।
আগেই বলেছি, করোনারী ধমনীতে বা এর শাখা-প্রশাখার এক বা একাধিক জায়গায় অবরোধ হতে পারে। শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ অবরোধ হলে আমরা ভাল ভাবেই চলাফেরা করতে পারি। শতকরা ৯৫ ভাগ পর্যন্ত অবরোধ হলেও আমরা বেঁচে থাকতে পারি। এর বেশি অবরোধ হওয়ার অর্থ মৃত্যু খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে।
বিভিন্ন কারনে আমাদের রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যেতে পারে। এর পর অনেক সময় রক্তের মধ্যে ছোট ছোট ডেলা সহ রক্ত যখন অবরুদ্ধ ধমনী বা শাখা ধমনির ভেতর দিয়ে যেতে থাকে তখন বিপত্তি ঘটে। বুকে চাপ অনুভূত হয়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, ব্যাথা হয়, ঘাম হয়। এটি হৃদরোগের প্রাথমিক অবস্থা।অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেখানে অবরোধ হয়েছে তার কাছাকাছি হার্টের মাংসপেশী শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা শতকরা ৫ থেকে ৬ ভাগ কমে যায়।
প্রথম যখন বুকে ব্যাথা শুরু হয় তখন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখবেন কি কারনে ব্যাথা হয়েছে। কারন,ব্যাথা হওয়া মানেই হার্টের রোগ নয়।প্রাথমিক পরীক্ষায় রোগীর হার্টের রোগ বোঝা গেলে ই সি জি , টি এম টি, রক্তের লিপিড প্রোফাইল এবং সুগার পরীক্ষা করা হয়।
ধরে নেওওয়া যাক রোগটি হার্টেরই, অর্থাৎ ব্যাথাটি এঞ্জাইনার ব্যাথা। অধিকাংশ সময় ডাক্তার সাহেবরা এর জটিল মেকানিজম বোঝাতে যান না। বলেন, রোগীর অবস্থা তেমন ভাল মনে হচ্ছেনা । ২/১ দিনের মধ্যে এঞ্জিওগ্রাফ করাতে হবে। সম্ভব হলে আজি হাসপাতালে ভর্তি করে দিন। রোগী যদি বলে সংগে করে তো টাকা পয়সা নিয়ে আসিনি। ডআক্তার সাহেব বলবেন তাকা বড় কথা নয়, বড় কথা আপনার সু-চিকিৎসা। টাকা কাল বা পশু দেবেন । আজ ভর্তি হয়ে যান, কাল বেড নাও পেতে পারেন। রোগী ভাববে দেশে তাহলে এমন আন্তরিক ডাক্তারও আছেন।
হৃদরোগ চিকিৎসার গতানুগতিক চিন্তা ধারার ডাক্তার সাহেবরা এমতাবস্থায় রোগীকে বাইপাস সার্জারি বা এনঞ্জিওপ্লাস্টি করার পরামর্শ দেন। এতে রোগীর প্রচুর টাকা খরচ হয়, অথচ রোগ স্থায়ি ভাবে ভাল হয় না । সাময়িক উপশম হয় মাত্র । কিছুদিন পর আবার একই সমস্যা দেখা দেয় । কারন - অপারেশনে রোগের মূল কারন কে দূর করা হয় না।
সত্তরের দশকেও এই রোগের জন্য অপারেশন শুরু হয়নি। কেবল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হত, আশির দশকে শুরু হয় বাইপাস সার্জারি। সবাই ভেবেছিলেন ব্লকের স্থায়ি সমাধান পাওয়া গেছে। নব্বই এর দশকে শুরু হয় এঞ্জিওপ্লাস্টি। তখন লোকে বলেছে এটাই শ্রেষ্ঠ সমাধান। কিন্তু দু’টো পদ্ধতিরই ক্ষতিকর সাইড এফেক্ট দেখা দিল। প্রিয় পাঠক চলুন সংক্ষেপে হার্টব্লকেজ ও এর চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোচনা করি।
হৃদরোগের কারনঃ
হৃদরোগের অনেক কারন আছে। প্রাথমিক জ্ঞানের জন্য আমরা এখানে প্রধান কারনগুলো উল্লেখ করবো ,
1. তেলযুক্ত খাদ্য গ্রহন।
2. মানসিক চাপের মধ্যে থাকা।
3. রক্তে এল ডি এল (খারাপ) কোলেস্ট্রলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং এইচ ডি এল (ভাল) কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমে যাওয়া।
4. খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্টের অভাব।
5. উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস এবং মদ খাওয়া।
6. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও ওজন বৃদ্দি।
7. তামাক (বিড়ি,সিগারেট,গুল,জর্দা) খাওয়া।
এগুলোর মধ্যে মনসিক চাপ এমন একটি ক্ষতিকর প্রক্রিয়া যা একাই হৃদরোগ সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক চাপের ফলে অনেক সময়ইঃ
1. রক্তের চাপ বেড়ে যায়।
2. হৃদপিন্ডের স্পন্দন বেরে যায়।
3. রক্তের তেল(ফ্যাট) জমা হওয়ার কাজ দ্রুততর হয়।
4. রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়।
5. করোনারী এবং অন্যান্য ধমনীগুলো অধিক ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
6. রক্তে “ক্লট” তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
7. ধমনীগিলোর ভিতরের দিকে(গায়ে) কোলেস্ট্রল ও ট্রাইগ্লিসারাইড জমা হতে থাকে।
হার্ট এটাকঃ
করোনারি আরটারীতে রক্ত প্রবাহ অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেলে হার্টের পেশির কোন কোন অংশ অকেজো হয়ে পড়ে। সে কারনে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে গেলে তাকে “হার্ট এটাক” বলে । চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নাম “মায়ো কারডিয়াল ইনফারকশন”।
হার্ট এটাক হয় সাধারনত করোনারি আরটারি ডিজীজের কারনে। করোনারি আরটারির ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে পলির মতো কোলেস্ট্রল ও ট্রাইগ্লিসারাইড জমে এর ভেতরটা বন্ধ হয়ে যায়। এটাই হলো করোনারি আরটারি ডিজীজের অন্যতম প্রধান কারন।
বিপধের আশঙ্কা দেখা দেয়,যদি করোনারি আরটারির ভেতরটা শতকরা ৭০ ভাগের অধিক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এবং রক্তের ক্লট বা রক্তের ডেলা করোনারি আরটারির ভেতরটা বন্ধ করে দেয় ফলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় । এবং যা অঞ্চলে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়, সেখানকার অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাব ঘটে , ওখানকার পেশিগুলো নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ফলে তখন হার্ট এটাক হয়।
যাদের হার্ট এটাক হয় তাদের শতকরা ৯০ জন পুরুষ। ধমনীর অবরুদ্ধ জায়গায় রক্তের ক্লট বা ডেলা আটকে গিয়ে হার্টের মাংসপেশির শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাকে মৃদু হার্ট এটাক বা মায়ো কারডিয়াল ইনফারকশন বলে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ রোগী বেঁচে যান।
ধমনী অবরোদের ফলে হার্টের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাকে মারাত্মক হার্ট এটাক (সিভিয়ার) বলে। সিভিয়ার হার্ট এটাক হলে তিন ভাগের একভাগ রোগী বাড়ীতেই মারা যায়। গ্রামে মারা যান শতকরা ১০০ জন। হাসপাতালে বা ডাক্তার সাহেবের কাছে পৌছাবার আগে মারা যান তিন ভাগের এক ভাগ। বাকী তিন ভাগের এক ভাগের মধে অনেকে আবার হাসপাতালেই মারা যান।শতকরা ৯৫টি ক্ষেত্রে অজ্ঞানতার কারনে হৃদরোগ হয়। অর্থাৎ কেন হৃদরোগ হয় এবং এই রোগকে কি ভাবে আটকানো যায় তা না জানার কারনেই হৃদরোগ হয়ে থাকে। ১০ জন রোগির মধ্যে ৯ জন রোগির হার্টের মাংসপেশীতে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয় না।সাধারনতঃ একটু বেশি বয়সে হৃদরোগ হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সেও এই রোগ দেখা যায় । তবে মানসিক চাপ অত্যাধিক হলে ২৫ বছর বয়সেও এই রোগ হতে পারে।
হার্ট এটাক এড়াবার উপায়ঃ
ধরুন আপনার এঞ্জাইনা হয়েছে। এর অর্থ আপনার করোনারী আরটারী বা তার কোন শাখায় একটি বা একাধিক ব্লকেজ আছে। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেননা , আপনার হার্ট এটাক না হোক। সেক্ষেত্রে কি করবেন আপনি? সহজ পরামর্শ হচ্ছে - “অবরোধকে আপনি বাড়তে দেবেন না। আপনি যদি এটাকে কম করে আনতে পারেন ,তাহলে হার্ট এটাক আর কখনো হবেনা”।
আপনি ব্যায়াম করবেন। তার সংগে যোগাসন ও ধ্যান, নিয়মিত এবং সুবিধা মত। উচ্চতা অনুসারে ওজন ঠিক রাখবেন। ধুমপান একদম নয়। নয় মদ্যপান। মানসিক চাপের উপর নিয়ন্ত্রন রাখবেন। নিরামিষ খাবেন। মাংস একদম নায়। দুধ ও দুগ্ধজাত জিনিস খাবেন না। কোন প্রকার তেল খাবেন না। প্রচুর পরিমানে সালাদ আর ফল খাবেন। ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি ফল খাবেন না। খেয়াল রাখতে হবে-
1. কোলেস্ট্রল যেন 120 থেকে 130 mg/dl এর মধ্যে থাকে।
2. ট্রাইগ্লিসারাইড থাকতে হবে 60 থেকে 100 mg/dl এর মধ্যে।
3. এইচ ডি এল 40 থেকে 60 mg/dl এর মধ্যে এবং এল ডি এল কে রাখুন 70 mg/dl এর মধ্যে।
4. খালি পেটে ব্লাড সুগার 70mg/dl থেকে 100mg/dl এবং খাবার 2 ঘন্টা পরে 140mg/dl চেয়ে কম রাখতে হতে ।
5. রক্তচাপ যেন 120/80 mm Hg থাকে।
নেট থেকে সংকলিত
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩০
niriho বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই, আপনি ই প্রথম কমেন্ট করলেন আমার ব্লগে। সেফ হলে মড়ু ও আপনাকে দুই জনকেই মিষ্টি খাওয়াবো
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১৭
ইকরাম উল্যাহ বলেছেন: শুভকামনা সেফ হন তাড়াতারি!
