![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাটির মানুষ ভিজলে কাদা হয় না কেন প্রশ্ন জাগে, মানুষ গড়া অন্যকিছুয় আমার শুধু এমন লাগে।
১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১।
ত্রিপুরার মনু থানার কলাছড়ি শরনার্থী ক্যাম্পটায় আজকের দিনটাও কেমন যেন অন্যান্য দিনের মতই কাটছিল আয়ুবের। গায়ের শার্টটা ময়লা হয়ে গেছে অনেক। আঠা আঠা অবস্থা। কয়েক জায়গায় ছিঁড়েও গেছে। কলারের দিকের দুটো বাটন ছাড়া বাকি বাটনগুলো গায়েব। মৃদু বাতাস এলে চাদরের মত উড়তে থাকে শার্টের বুকের নিচের দিক থেকে। হাফ প্যান্টটার অবস্থাও সঙ্গীন। জিপারের বদলে বাটন ছিল দুটো। একটা বাটন ঘরছাড়া হয়ে গেছে শার্টেরগুলোর মত। ঘর ছেড়ে পালাতে থাকা মানুষদের মত শার্ট প্যান্টের গোল বোতামগুলোও যেন হারিয়ে গেছে অন্য কোনো শরনার্থী শিবিরে। মাথার চুলগুলোয় আপন মনে হাত বুলায় আয়ুব। শনের মত শক্ত হয়ে গেছে। সাবান দিয়ে গোসল করা হচ্ছে না ঠিকমত। বেলা করে ঘুম ভেঙেছে আজ। গতরাতে ভাত ছিল না ক্যাম্পে। পায়ে হেঁটে বরাবরের মত হরিণা ক্যাম্পে গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে যদি ভাত পাওয়া যায় এই আশায়। ভাত পাওয়া যায়নি এবারে। সবাই বাহিরে মিশনে গেছে। কোথায় যেন এম্বুশ হবে পাকিস্তানি মিলিটারিদের। আয়ুব এম্বুশ শব্দের অর্থ বোঝে না। ইউসুফ চাচার মুখে শব্দটা শুনেছে দুয়েকবার। উনিও এম্বুশে গেছেন দেখে ভাত চাওয়ার মত ক্যাম্পে পরিচিত কেউ ছিল না কাল। সারা রাত অপেক্ষা করার পর যখন বুঝেছে ভাত পাবে না আজ ভোর দিকে খালি পেটেই ফিরে এসেছে। এসে কাউকে কিছু না বলে বাডোই বেগমের পাশে ঘুমিয়ে গেছে। গোলাম হোসেনের খবর নেই। তিনি কোথায় আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তাও জানে না আয়ুব। ফিরোজা বেগমেরও হদিস নেই। সবাই কেমন যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। বাডোই বেগম গোলাম হোসেনের ছোট বৌ। বিয়ে করে নিয়ে এসেছিলেন ফিরোজা বেগমকে তালাক দেয়ার দু মাসের মধ্যেই। যুদ্ধের এক বছর আগে হবে। নতুন বৌ। আয়ুবের থেকে পাঁচ ছয় বছরের বড় হবে বাডোই। মা ডাকটা তাই আসেন না কেন জানি আয়ুবের। নাম ধরেই ডাকে। গোলাম হোসেন বিয়ে করেছেন দেখে অন্যদিকে আয়ুবের মা ফিরোজা বেগম আবার বিয়ে বসেছিলেন। যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার সে নাকি আওয়ামীলীগ করতো, মেম্বার ছিল। পাকিস্তানি মিলিটারি ধরে নিয়ে গিয়ে উত্তরের ছড়ার ব্রিজটার ওপর দাঁড় করিয়ে এক সন্ধ্যায় গুলি করে মেরে ফেলেছে কিছুদিন আগে। শীতকালেও পানি ছিল ছড়ায়। লাশ ভেসে গিয়েছিল। ফিরোজা বেগম তার নতুন স্বামীর লাশ ছড়ার বাঁকে খুঁজে খুঁজে বের করেছিল। নতুন স্বামীর প্রতি টান জন্মেছিল কিনা আয়ুব জানে না। তবে ফিরোজা বেগম বড় মন দিয়ে সেই সংসার শুরু করেছিল পেছনের ঘরে তিন ছেলে রেখে এসে। বিয়ের পরেও বড় ছেলে আয়ুব অবুঝের মত বার বার পালিয়ে মায়ের শ্বশুড় বাড়িতে চলে যেত। ফিরোজা বেগম দুই ঘরের টান অতিক্রম করতে পারেনি তখনও। নতুন ঘরে আগের ঘরের ছেলে নিয়ে এলে কথা শুনতে হবে এই ভয়ে আয়ুবকে মুরগীর ঘরে লুকিয়ে রাখতো। ভাত খেতে দিত সেখানেই। আর ফজরের একদম আগে আগে বের করে দিত কয়েকটা পয়সা হাতে ধরিয়ে দিয়ে। মা-ছেলে কেউ কোনোদিন কাঁদেনি।
শরনার্থী শিবিরে চলে আসার আগেও আয়ুব ফিরোজা বেগমের সাথে শেষবার দেখা করে এসেছিল। ফিরোজা বেগম পোয়াতি হয়েছে নতুন স্বামীর ঘরে। শরীর স্বাস্থ্য আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। আয়ুবকে দেখেই সেবার ভর দুপুরে উত্তরের ছড়া পেরোনো মাত্র লাউ আর ঝিঙার ক্ষেতের আড়ালে টেনে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ফিরোজা। চাপা স্বরে দুশ্চিন্তা আর স্নেহ মেশানো গলায় বলেছিল, “তোরে নিয়া আর পারি না শানু! তোরে না কইছি এই বাড়িতে আর না আইতে? বলছি না আমি গোলাম হোসেনের ঘর ছাইড়া দিছি? তালাক দিছে আমারে জানস না?”
আয়ুব খালি গায়ে, খালি পায়ে এসেছে। কেবল একটা চেকের লুঙ্গি। সেটাও মালচোকা মারা। ছড়ার পানিতে ভিজে যেতে পারে এই জন্য। মায়ের কথা শুনে বোকার মত হাসে আয়ুব। রোদে পুড়ে গেছে চেহারাটা। কালো হয়ে যাচ্ছে। গোসল করে না মনে হয়। বোকা বোকা হাসি দিয়ে ফিরোজা বেগমকে বলে, “আমারে তো আর তালাক দেও নাই আম্মা। দিলে আব্বারে দিছো। যাউকগ্যা, তোমার প্যাড তো আবার ফুলছে আম্মা!”
পশ্চিমে হেলতে থাকা সূর্যটার উজ্জ্বল আলোয় ফিরোজা বেগম হেসে ফেলে, “তোর বইন হইবো বুজছস? ক্যান জানি মনে হইতেছে ছেলে হইবো না এইবার?”
আয়ুব আবার বোকার মত হাসে, “আমার লগে যাইবা মা?”
অবাক হয় ফিরোজা, “কি সব আবুল তাবুল কস?”
“যাবা না? আব্বা তো বাডুই বেগমরে নিয়াইছে। তুমি তো নাই। আমার কাছে থাকবা? আমি রাখমু তোমারে?” চোখ বড় বড় করে তাকায় আয়ুব।
ফিরোজা বেগমের তালাকের পর এই প্রথম চোখে পানি এলো। মাত্র সাত আট বছর বয়স হবে আয়ুবের। বাকি দুটোর বয়স তিন আর এক। ওরা বুঝবে না মা কি জিনিস। কিন্তু আয়ুব বুঝে গেছে। আরেকটা মা এনে এই ছেলেকে বোঝানো মুশকিল। গোলাম হোসেন সেটা বুঝবে না কখনো। আর বাডোই বেগমও জানবে না।
আয়ুবের শুকনো পাটের মত চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দেয় ফিরোজা বেগম, “আমার পা বান্ধারে শানু। পা বান্ধা। যদি কুনোদিন পায়ের বান্ধন খুইলা যায়- আমি আর কারো কাছে যামু না, তোর কাছেই আসমু কসম খোদার। তুই তখন আমারে রাখিস।”
আয়ুব পাট শাকের ঝোল আর আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছিল ঝিঙা ক্ষেতের ছায়ার মাঝে সেদিন। ফিরোজা বেগম খাবার লুকিয়ে এনে খাইয়েছিল বড় ছেলেকে। অনেক তৃপ্তি নিয়ে আয়ুব ভাত খেয়ে ফিরোজা বেগমের আচঁলে হাত মুছতে মুছতে ঢেঁকুর তুলে বলেছি, “আম্মা, এই ভাতের কথা আমি মনে রাখমু সারাজীবন।”
আয়ুব শুনেছে নতুন স্বামীর লাশ নিয়ে ফিরোজা বেগম ঘরে পৌছাতে পারেনি। ভ্যানে করে বাজার পর্যন্ত আসা মাত্র মেজ দেবর আর সেজ দেবর বড় ভাইয়ের লাশ কেড়ে নিয়ে ফিরোজা বেগমকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অলুক্ষুনে, অপয়া নানান অপবাদ জুটেছে ফিরোজা বেগমের কপালে। শ্বশুড় বাড়িতে আর পা রাখতে পারেনি। সাড়ে ছয় মাসের গর্ভে থাকা সন্তানকে নিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ফিরোজা বেগম। বাপের বাড়িতে সৎ মা। সেখানে ফেরার কোনো অর্থ নেই। আয়ুব উদ্দেশ্যহীন ভাবে ক্যাম্পের মাঝ দিয়ে হাঁটতে থাকে। ফিরোজা বেগমকে যদি হঠাৎ কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত- আয়ুব রেখে দিত তাকে।
বাডোই বেগমের কাছে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আব্বারও খোঁজ নেই। নুরী চাচীর অনেক বয়স করে শেষ বাচ্চাটা হয়েছে গতকাল। মেয়ে হয়েছে। চাচী বাঁচেনি। ক্যাম্পের লোকজনেরা নিজেরাই দাফন কাফন করে দিয়েছে সন্ধ্যা রাতে। চাচীর বড় ছেলে হায়দার ভাই যুদ্ধে গেছে অনেকদিন। কোনো খবর নেই বেঁচে আছে না মরে গেছে। চাচীর স্বামী সাত্তার মাস্টার গ্রামে পাকিস্তানি ঢোকার দিনেই গুলি খেয়ে মারা গেছে। মেজ মেয়ে রাহেলাকে ধরে নিয়ে গেছে পাকিস্তানি মিলিটারিরা। হায়দার ভাই যুদ্ধে গেছে দেখে গোছানো পুরো পরিবারটা নিমেষে শেষ হয়ে গেছে। রাহেলাকে নাকি অন্যান্য মেয়েদের সাথে পাকিস্তানি ক্যাম্পে গাড়িতে করে পাচার করে দিয়েছে। আয়ুবের চেয়ে তিন চার বছরের বড় ছিল মেয়েটা। দাখিল পরীক্ষা দিত মনে হয় সামনের বার। খুব ভাল ছাত্রী ছিল। দুই ক্লাস প্রমোশনও পেয়েছিল। সেও কোথায় চলে গেল।
আয়ুব হেঁটে হেঁটে ক্যাম্পের শেষ মাথায় টিউবয়েলটার কাছে আসে। সারাক্ষণ ভিড় ভাট্টা লেগেই থাকে এখানে। কেউ হাঁড়ি পাতিল ধোয়, কেউ গোসল করে, খাবার পানি নেয়। আজকেও অনেক ভিড়। পুরুষ মহিলা সমানে রয়েছে। সবাই কথা বলা বলি করছে। মৃদু, উচ্চ- সব ধরণেরই গুঞ্জর রয়েছে। আয়ুব আগে এমনটা দেখেনি। যদিও কৌতূহল লাগছে না তাদের কথা শোনার। এমনিতেই শীত পরেছে। কাপড় চোপড় একেবারেই নেই। গরম কাপড়ের কথাই সারাক্ষণ মাথায় ঘোরে।
ভিড় কাটিয়ে টিউবওয়েলটার কাছে এসে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে। আপনা আপনি সারাক্ষণ পানি পড়তে থাকে ওটা থেকে। পানির স্তর অনেক কাছেই বোধহয়। নিজে নিজে পানি আসে। আয়ুব মাথা ভেজাতে থাকে। খড় খড়ে শুকনো চুলগুলোয় আঙুল চালাতে থাকে। শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে গেছে যেন। কাটা হয়নি অনেকদিন। বরফ ঠাণ্ডা পানি। কাঁপুনি এসে যায় আয়ুবের। হালকা হালকা ভাবে শুনতে পাচ্ছে লোকজনের কথা বার্তা।
“শুনলাম মিত্র বাহিনীর ল্যাফটেনেট জেনারেল অরোরার কাছে নিয়াজি নাকি আত্মসমার্পন করছে? রেডিওতে আসছে?”
“ঐরকমই তো শুনতেছি। কিন্তু যুদ্ধ তো বলে থামে নাই এখনও। সইত্য কিনা কিছু বুজতেছি না।”
“আরে না না! হাচা হাচাই দ্যাশ স্বাদিন হইয়া গ্যাছে! কছম!”
আয়ুব মাথা ঘুরিয়ে তাকায় টিউবওয়েলের পানির নিচ থেকে। একদল ভীত মানুষকে দেখতে পায়। ছেঁড়া সোয়েটার, চাদর গায়ে দিয়ে সন্ত্রস্ত মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ভীত এবং আশার একটা মিশ্রণ রয়েছে সবার চোখে।
আয়ুব কিছু বুঝতে পারে না। কথাগুলো দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে সব। মাথা চেপে ধরে চুল থেকে পানি ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায় ও। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে চুপচাপ হেঁটে বেরিয়ে আসে ওখান থেকে। কুয়াশা চলে গেছে। রোদ আসছে উঁচু উঁচু গাছগুলোর ডালপালার ফাঁক ফোকর দিয়ে। আয়ুব ফিরে আসতে থাকে। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে বাডোই বেগম বেরিয়েছে। কোলে নুরী চাচীর নতুন মেয়েটা। কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে পুটলি বানিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে ক্যাম্পের লোকজন র্যাজিস্ট্রি করে নিয়েছে সকালে যে শরনার্থী শিবিরে আরেকটা বাচ্চার জন্ম হল। অথচ এই ছোট মানুষটার পরিবারের কারো খবর নেই।
আয়ুব দূর হতে একটা হৈ চৈয়ের শব্দ পাচ্ছে। বাংলাদেশ নাকি স্বাধীন হয়ে গেছে। অনেকদিন আগে শুনেছিল বাংলাদেশ নামটা। নতুন দেশ হবে আমাদের। সেই দেশটা এখন স্বাধীন হয়ে গেছে। পাকিস্তানি মিলিটারিরা চলে যাবে এখন। বন্দুকের গুলির আওয়াজ শোনা যায়। কোথাও কোথাও শঙ্খ বাজানোর শব্দ। স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সব কেমন নীরব, নীরবের মাঝে এই ছেঁড়া ছেঁড়া শব্দগুলো খুব বেমানান লাগছে। নীরব সংবোর্ধনা বিজয়ের। কেউ কেউ পোটলা পুটলি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে বাহিরে। মুখে ভীতি আর আনন্দের মেশা একটা ভাব। গ্রামে ফিরতে চায় সবাই। ঘরে ফিরবে। অনেকটা পথ।
আয়ুব উদাস মুখে তাকিয়ে থাকে মানুষগুলোর দিকে। চোখের ভুল মনে হল যেন। ভাল করে তাকায় আয়ুব। হায়দার ভাইয়ের মত একজনকে দেখা যাচ্ছে এদিকে এগিয়ে আসতে। লোকজনের পাশ কাটিয়ে কাঁচা রোদের মাঝ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে আসছে ষোল সতের বছর বয়সী একটা লম্বা ছেলে। মুখে ফিন ফিনে দাঁড়ি গোঁফ। গায়ের টি শার্টটা এক কালে রঙ খয়েরি ছিল হয়তো, এখন মেটে হয়ে গেছে। এখানে সেখানে ছিদ্র। প্যান্টের পা গোঁটানো। উস্কো খুস্কো চুল মাথায়। কাঁধে লম্বা একটা বন্দুক। কোমরে গুলির ছড়া। ফর্সা ছিল মানুষটা একটা সময়। এখন রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে চেহারা। শুকিয়ে আগের থেকেও লম্বা হয়ে গেছে।
আয়ুব ভেজা শার্ট আর ভেজা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। হায়দার ভাই তার দিকেই হেঁটে আসছে। গম্ভীর মুখ।
“হায়দার ভাই না? ভাই কই আছিলা?”
হায়দার কাছে এসে দাঁড়ায়। হাতে পায়ে প্রচুর কাঁটা ছেঁড়ার দাগ। “আঁর মা? আঁর মারে হবর হডে দিয়ুছ?”
আয়ুব নীরবে হাত তুলে ছড়ার পাড়টা দেখায়। গতরাতে ছড়ার ধারের বাঁশঝাড়টার কাছে কবর দেয়া হয়েছে নুরী চাচীকে। কোনো বেঁড়া বা খুঁটি দেয়া হয়নি এখনো। কাঁচা কবর। বাঁশঝাড়ের মৃদু বাতাসে দুলছে পাতা আর রোদের রেখাগুলো।
কোনো কথা না বলে হায়দার ঘুরে চলে যায় সেদিকে। বাডোই বেগমকে দেখা যায়, হায়দারকে দেখে কোলের হায়দারের নতুন বোনটাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পেছন পেছন। আয়ুব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হায়দার ভাইয়ের দিকে। ছেলেটা ছড়ার ধারে কবরটার কাছে গিয়ে একপাশে বসে পড়লো ধীরে ধীরে। বন্দুকটাকে পাশে রেখে চুপচাপ দুই পা বিছিয়ে লম্বা হয়ে বসে থাকে নুরী চাচীর কাছে। মানুষটা কাল রাতেও বেঁচে ছিল। এখন ঘুমিয়ে গেছে চারপাশের এতো বিশৃঙ্খলা আর শব্দের মাঝ থেকে। হায়দার একটু পর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে কবরটার পাশে। একটা হাত চোখের ওপর এনে ঘুমানোর মত চেষ্টা করতে থাকে।
বাডোই বেগম হায়দারে ছোট বোনটাকে নিয়ে বাঁশঝাড়ের কাছেই ছায়ার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে ইতস্তত মুখে। বাচ্চাটা কাঁদছে। খিদে পেয়েছে বোধহয়। এই আশ্রয় শিবিরে দুধ কে দেবে? কাল রাতে প্রথম এবং শেষবারের মত মেয়েটা দুধ পেয়েছিল মায়ের। আর পাবে না।
আয়ুব আপন মনে মাথায় হাত বুলায়। হায়দার ভাই ঘুমিয়ে গেছে নুরী চাচীর পাশে? এই ছড়াতেও উত্তরের ছড়ার মত সারাক্ষণ ভরাট পানি থাকে। সেই পানির শব্দ আর বাঁশপাতার আওয়াজ ভেসে আসে। হয়তো বা হায়দারের দীর্ঘশ্বাসও মিশে রয়েছে তার সাথে।
আচ্ছা? ফিরোজা বেগমও কি ফিরবে? আয়ুবকে খুঁজতে খুঁজতে? আয়ুব অধীর আগ্রহে তাকায় ভিড়ের দিকে। কেউ কি ফিরে আসছে তার খোঁজে? দেশটা কি সত্যি স্বাধীন হয়ে গেছে? সবাই আবার বাড়ি ফিরে যেতে পারবে? গোলাম হোসেন কোথায়? বাদশা? মনা? সবাই কোথায়?
আয়ুবের ভেজা শার্টে বাতাস লেগে পেছন দিকে উড়তে থাকে। পতাকার মত। ময়লা পতাকার মত। আয়ুবের শীত লাগছে খুব।
উপন্যাস – শঙ্খচূড়।
আজ আমাদের বিজয়ের দিন। কান্নার দিন। দীর্ঘজীবি হও বাংলাদেশ। তোমার কাঁধে অনেক মানুষের দীর্ঘশ্বাসের ভার রয়েছে।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৬
নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: বই আকারে :প
২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৪
সানজিদা হোসেন বলেছেন: বরাবরের মতই । অসাধারন
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩০
জলমেঘ বলেছেন: উপন্যাসের ছেড়া-ফাটা অংশ দিচ্ছেন। পুরোটা দিবেন কখন?