![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীটা গোল। যেখানেই যাই এই গোলের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে।আর আমি যেখানে সেখানেই গণ্ডগোল।
জীবনে প্রথম লেখকসম্মানী পেয়েছিলাম বাবার হাতে
নকীব মাহমুদ
:::::::::::::::::::
বাবাকে নিয়ে আয়োজন করে কোনোদিন লেখা হয়নি আমার৷ অথচ মাকে নিয়ে কতো কতো লিখেছি! ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ সবকিছুতেই মায়ের ছবি এঁকেছি৷ এমনটা কেনো হলো? কেনো বাবার কথা কোনোদিন লিখিনি আমি? তাহলে কী আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি না? যদি ভালোই বাসি তবে কেনো লিখলাম না বাবাকে নিয়ে একটা লেখাও?
সত্যিই কি বাবাকে নিয়ে লিখিনি কিছু?
সত্যি কথা হলো— আমি আমার বাবাকে অনেকবেশী ভালোবাসি৷ তবে এই ভালোবাসার কথাটা যেমন বাবাকে কোনোদিন বলতে পারিনি মুখফুটে তেমনী 'বাবা’ 'বাবা’ বলে লিখতে পারিনি কোনোদিন৷ আড়ালে আবডালে লিখেছি বাবাকে নিয়ে৷ অবাককরা খুশির ব্যাপার হলো, পত্রিকার পাতায় ছাপা অক্ষরে আমার লেখা দ্বিতীয় গল্পটাই বাবাকে নিয়ে৷ পাঠকের অগোচরে নিয়ে এসেছি আমি আমার বাবাকে৷ বাবার জীবনের বড়ো একটা চিত্র তুলে এনেছিলাম আমি৷ গল্পটা দুই হাজার ন'য়ে ছাপা হয়েছিলো রঙীন সাকোতে৷ কপাল নামে৷ এরপর আরো পরিমার্জিত রূপে বছর দুয়েক আগে লিখনীর ঈদ সংখ্যায় এসেছিলো৷ এই রোদ এই মেঘ নামে৷
এছাড়াও অ-নে-ক দিন আগে বাবার জীবনের ওপর ভিত্তি করে একটা উপন্যাসও লেখা শুরু করেছিলাম! বেশ কিছুদূর লিখেছিলাম৷ তারপর কিভাবে যেনো পুরো পান্ডলিপিটা হারিয়ে গেলো
আমি আমার বাবাকে বাঘের মতো ভয় করি৷ আমাদের পুরো পরিবারই বাবাকে বাঘের মতো ভয় করে৷ বাবাকে আমি কোনোদিন বলিনি, আব্বা, আমি লেখালেখি করি৷ ভয় করতো— বাবা একথা শুনে না জানি হুংকার দিয়ে ওঠে! কিন্তু কী আশ্চর্যের কথা! একদিন কিভাবে যেনো মামাতো বোনদের কাছ থেকে জেনে ফেলেছেন লেখালেখির কথাটা৷ তাও আবার পত্রিকায় লিখি! কী দুঃসাহসের কথা— আমি পত্রিকায় লিখি!
একদিন আমাদের নিজেদের দোকানে বসাছিলাম আমি আর বাবা৷ দোকানের অন্য কর্মচারীরা বাসায় চলে এসেছে৷ দোকানে একা আমি আর বাবা৷ হঠাৎ বাবা বলে উঠলেন— শোনলাম, তুমি নাকি লেখালেখি করো? পত্রিকায় নাকি তোমার নাম আসে?
আমি ভয়ে আঁটোসাটো হয়ে আছি৷ জবাব দিচ্ছি না কোনো৷ বাবাই বলে ওঠেন— লেখো, মনোযোগ দিয়া লেখো! শুধু তাই নয়, সেদিন বাবা আমার হাতে দশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, যাও, মার্কেটের সামনের থেইকা এক গেলাস দুধ কিন্না খাইয়ো!
আমি আজও ভুলতে পারি না, দশ বছর আগে সেই যে আমার লেখালেখির কথা শুনে দশ টাকার একটা চকচকে নোট আমার হাতের মধ্যে গুজে দিয়েছিলেন বাবা!
আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ট পুরুশদের মধ্যে একজন হলেন আমার বাবা৷ প্রতিদিন বাবাকে দেখে দেখে আমি পুরুশ হতে শিখি৷
এখন আর বাবাকে বাঘ মনে হয় না৷ এখন যখন তখন বাবার সাথে কথা বলি নির্ভয়ে৷ কি রাজনীতি কি অর্থনীতি, বাবার সাথে সবকিছুতেই তুমুল মাতি! বাবার সাথে এখন প্রচন্ড নির্ভয়ে মিটিং করি৷ ঘরের সদস্যদের ভবিষ্যত নিয়া ভাবনা ভাবি৷
বাবাকে এখন আর আব্বা আব্বা মনে হয় না৷ বাবাকে এখন বাবার মতোই মনে হয়৷
বাবা এখন জীবনের শেষ সময়গুলো পার করছেন৷ কেনো জানি মনে হয় বাবাকে আর বেশিদিন কাছে পাবো না৷
বাবা কোনোদিন ইশকুলে পড়েন নাই৷ অক্ষর শেখেন নাই৷ অথচ কী দারুনভাবেই না বাবা কথা বলেন! বড়ো বড়ো মানুশের সাথে মেশেন! কী চেয়ারম্যান কী এমপি সবার সাথেই প্রতাপ নিয়ে চলেন বাবা!
বাবাকে কখনো কখনো দার্শনিক দার্শনিক মনে হয় আমার কাছে৷ আমি গত বছর থেকে নতুন একটা কাজ শুরু করেছি৷ আমাকে দেয়া বাবার গুরুত্বপূর্ণ উপদেশগুলো ডাইরি করে রাখছি৷ ডাইরি থেকে দুয়েকটা কথা এখানে লিখে দিতে ইচ্ছে করছে খুব৷ তবে তুলেই দিলাম৷
১, অন্যকে ঘায়েল করার জন্যে তুমি এমন শক্তি কিনে এনো না যেটা শেষে তোমার উপরই চড়াও হবে!
২, কাজে নামলে তোমাকে ভাবতে হবে তুমি শ্রমিক৷ তুমি কি পড়েছো, কতোটুকু পড়েছো সেটা ভাবলে কিছুই করতে পারবে না৷
৩, শোনো, যখন ব্যবসা করবা তখন মন দিল দিয়া ব্যবসা করবে৷ দোকান রেখে কোনোদিক যাবে না৷ মনে রাখবা, মৃত্যু আর কাষ্টমার কখন আসবো আল্লা ছাড়া কেউ কইতে পারে না৷
৪, ইয়ং বয়সটা হইলো কাজের বয়স৷ এই বয়সে যতো বেশি পারবা কাজ করবা৷ বুড়া হইলে মনে কাজ করতে মন চাইবো না৷ মনে চাইলেও শরীরে সায় দিবো না৷
আজ এই এখন আমার দার্শনিক বাবাকে মন থেকে বলছি, আব্বা, আপনেরে আমি ভালোবাসি৷
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৪
নকীব মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ!
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৮
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: লেখার নিচে সবুজ বাটন ক্লিক করলে একটা বক্স আসবে! ওখানে প্রতি উত্তর করবেন। তবে নোটিফিকেশন পাওয়া যায়!
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: বাবা ছেলের মিথস্ক্রিয়া খুব ভাল লেগেছে! দারুন!